আর্কাইভ  শুক্রবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ● ৬ বৈশাখ ১৪৩১
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: পলাশবাড়ীতে আসামির ছুরিকাঘাতে বাদীর মৃত্যু, গ্রেফতার ১       মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের সন্তান-স্বজনের ভোটে না দাঁড়ানোর নির্দেশ       ভোজ্যতেলের দাম বাড়ল, খোলা তেলে সুখবর       বিএনপি নেতা সোহেলের নিঃশর্ত মুক্তি দাবিতে রংপুরে  মানববন্ধন ও সমাবেশ        খরার ঝুঁকিতে রংপুর অঞ্চল      

 width=
 

কারাবন্দি অসুস্থ খালেদা জিয়ার চিকিৎসা দেশে নাকি বিদেশে

শনিবার, ৩১ মার্চ ২০১৮, দুপুর ০২:৩৫

বৃহস্পতিবার রাতে বিএনপির সিনিয়র নেতারা খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের নিয়ে গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠক করেন। গতকাল সকালে অসুস্থ খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে নিয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য তার নিঃশর্ত মুক্তি চাই। কারামুক্তির পর দেশে নাকি বিদেশে চিকিৎসা করাবেন এ বিষয়ে তিনি নিজেই সিদ্ধান্ত নেবেন। বিএনপির সংবাদ সম্মেলনের পর রাজধানীর ধানম-িতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যাপারে তিনি বলেন, প্রয়োজন অনুযায়ী তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। চিকিৎসকরা পরামর্শ দিলে তাকে বিদেশে পাঠানো হবে। এ অবস্থায় রাজনৈতিক মহলে আলোচনা হচ্ছে। তা হলে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা দেশে, নাকি বিদেশে হবে; আদৌ তিনি অসুস্থ কিনা এসব প্রশ্নও ঘুরপাক খাচ্ছে। এ অবস্থায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে খালেদা জিয়ার নিয়মিত চিকিৎসক মাহমুদুল হাসান শুভর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জেলখানায় আসার পর তিনি (খালেদা জিয়া) যে অবস্থায় এসেছিলেন, এখন তার চেয়ে ভালো আছেন। ওনার হাঁটুতে সামান্য সমস্যা আছে। তবে তার বড় কোনো সমস্যা নেই। তাহলে কি সরকার খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠিয়ে দিতে চাচ্ছে, এমন কথা শোনো যাচ্ছে। এ বিষয়ে সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, গুজবে কান দেবেন না। সকাল সাড়ে ১০টায় সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকারের অধীনে বিএনপি চেয়ারপারসন নিরাপদ নন। তার কারারুদ্ধ অবস্থায় অসুস্থ হওয়াটাকে কোনোমতেই আমরা স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারি না। আশঙ্কা করছি, অন্য স্বৈরাচাররা যেভাবে প্রতিপক্ষকে অপসারণ করার চেষ্টা করেন, সে ধরনের অপসারণ করার চেষ্টা এখানে হতে পারে বলে আমি আশঙ্কা করি। মির্জা ফখরুল আরও বলেন, কারাগারে যে পরিবেশে তাকে রাখা হয়েছে, সেটা তার প্রাপ্য নয়। এতে স্বাস্থ্য অবনতির দিকে যাচ্ছে বলেই আমরা আশঙ্কা করছি। তাকে যে খাবার দেওয়া হয়, সেটাও সঠিকভাবে পরীক্ষা করা হয় কিনা, আমরা বলতে পারি না। সরকারের উচিত বিষয়টা খোলাসা করা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন-উৎকণ্ঠিত। কারা তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছেন; কীভাবে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে, এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্টভাবে কোনো সংবাদই পাইনি। তার রোগটা কী, কারা কর্তৃপক্ষ ও সরকারের কাছ থেকে এর কোনো ব্যাখ্যা পাইনি। অতিদ্রুত তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের দিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি। এখানে আমার সুস্পষ্ট প্রস্তাব হচ্ছে, অবিলম্বে ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ব্যবস্থা করতে হবে এবং তাদের সুপারিশ অনুযায়ী পবরর্তী চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। মির্জা ফখরুল বলেন, এ জন্য সর্বোত্তম ব্যবস্থা হচ্ছে, অবিলম্বে তাকে জামিনে মুক্তি দিয়ে তার চিকিৎসার জন্য বাইরে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ আপনারা জানেন, ইতোমধ্যে তিনি যে চিকিৎসাগুলো নিয়েছেন, সবই প্রায় বিদেশে করিয়েছেন। সেটার ফলোআপ করাটা অত্যন্ত জরুরি। উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানো হবে কিনা প্রশ্ন করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা সুনির্দিষ্টভাবে বলেছি এখন তার নিঃশর্ত মুক্তি চাই, যাতে তার উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা দেশে হোক বিদেশে হোক আমরা করতে পারি। যেহেতু উনি বাইরে চিকিৎসা করেছেন, সেজন্য উনি সিদ্ধান্ত নেবেন দেশে চিকিৎসা করবেন নাকি বিদেশে করবেন। এক প্রশ্নে বলেন, আমরা প্যারোলে মুক্তির কথা বলিনি। আমরা বলেছি তাকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। মুক্তি তার প্রাপ্য। ওনার জামিন হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। এখন তাকে মুক্তি দেওয়া যেতে পারে। মুক্তি পেয়ে তিনি দেশে হোক, বিদেশে হোক চিকিৎসা নেবেন। বৃহস্পতিবার কারাগারে সাক্ষাৎ স্থগিত হওয়ার প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, চেয়ারপারসনের সঙ্গে কারাগারে সাক্ষাৎ হওয়ার কথা ছিল, কারা কর্তৃপক্ষ তা স্থগিত করেছে। অবশ্যই আমরা আবার সাক্ষাৎ চাইব। কিন্তু তারা এখন কাউকে সাক্ষাৎ করতে দিচ্ছেন না। খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার জন্য সরকার মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে কারাগারে রেখে দিয়েছে এবং উচ্চ আদালতের জামিন পর্যন্ত কার্যকর করা হচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, সরকারের উদ্দেশ্য একটাই বিরোধী দলকে স্তব্ধ করে দেওয়া এবং দেশের জনপ্রিয় নেত্রীকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখা। নীলনকশার একদলীয় শাসনব্যবস্থা তারা নিরঙ্কুশ করতে চায়। আজকে বিশ্ব স্বীকৃত হয়েছে বাংলাদেশে একটা স্বৈরাচার সরকার রয়েছে।

গত বুধবার খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, আজ (বুধবার) মামলার তারিখ ধার্য ছিল। খালেদা জিয়াকে আজ আদালতে আনা হয়নি। আদালতের পরোয়ানার ফিরতি কাগজ (কাস্টডি পরোয়ানা) দেখেছি, খালেদা জিয়া অসুস্থ। এদিকে দলের সম্পাদকম-লীর সভা শেষে সংবাদ সম্মেলন করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এক প্রশ্নে বলেন, বেগম জিয়া অসুস্থ আছেন, এটা বিএনপির মহাসচিব জোরগলায় উচ্চারণ করেছেন। এটা যদি সত্যি হয়, তা হলে তার যে ধরনের অসুস্থতা, তার ওপর নির্ভর করে সুচিকিৎসার জন্য অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অবশ্যই আমাদের দেশে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। যদি সে রকম প্রয়োজন হয় অবশ্যই আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। চিকিৎকদের সঙ্গে কথা বলে দেখতে হবে এটা কি টার্মিনাল ডিজিজ না নরমাল ডিজিজ। টার্মিনাল ডিজিজ হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দেশের চিকিৎসকরা যদি বোর্ড বসিয়ে বলে যে বিদেশে পাঠাতে হবে, তা হলে পাঠাব। খালেদা জিয়ার অসুস্থতার মাত্রা বুঝে তার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী সব ব্যবস্থাই সরকার নেবে। তিনি জেলে আছেন বলে তার প্রতি সরকার অমানবিক আচরণ করবে না।

খবর-দৈনিক আমাদের সময়

মন্তব্য করুন


 

Link copied