স্টাফ রিপোর্টার।। রংপুরের বিশেষ জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি), জাপানি নাগরিক হোসিও কুনি ও মাজারের খাদেম রহমত আলী হত্যা মামলার আইনজীবী রথিশ চন্দ্র শুক্রবার সকাল থেকে নিখোঁজ রয়েছেন। তকে উদ্ধারে পুলিশ, র্যাব, পিবিআইসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা অভিযান অব্যাহত রাখলেও গত দুই দিনে তার কোন হদিস পায়নি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
আওয়ামী লীগ নেতা ও আইনজীবী অ্যাডভোকেট রথিশ কেন নিখোঁজ হলো, কারা এর সঙ্গে জড়িত, কিংবা কেউ কি অপহরণ করেছে, অপহরণের নেপথ্যের কারণই বা কী, জঙ্গিদের বিপক্ষে আইনজীবী অবস্থান নেয়ার কারণ কী তার কাল নাকি ডিমলা জমিদারের রাজ দেবোত্তর সম্পত্তি সাড়ে ৯ একর জমি দখলের বিরোধের কারণে নিখোঁজ। এ নিয়ে নগরজুড়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা ও গুঞ্জন।
যেসব বিষয় মাথায় নিয়ে অভিযান চলছে
১. রতীশ ভৌমিক কেন্দ্রীয় জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায়ও সাক্ষী ছিলেন। ওই মামলার রায়ে আজহারুলের ফাঁসির আদেশ হয়েছে। জামায়াত নেতা আজহারুলের বিরুদ্ধে অভিযোগের মধ্যে ছিল ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ ১১ জনকে অপহরণ করে রংপুর সেনানিবাসে নিয়ে এক সপ্তাহ আটকে রেখে নির্যাতনের পর ৩ এপ্রিল দখিগঞ্জ শ্মশানে নিয়ে নির্বিচারে গুলি করা। তাঁদের মধ্যে আইনজীবী রতীশের বাবা দীনেশ চন্দ্র ভৌমিক ওরফে মন্টু ডাক্তার ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। এই অভিযোগের পক্ষে দেওয়া সাক্ষ্যে রাষ্ট্রপক্ষের ১৩তম সাক্ষী রতীশ চন্দ্র ভৌমিক বলেন, তিনি ঘটনাটি তাঁর বাবার কাছে শুনেছেন। দীনেশ ১৯৮৯ সালে মারা যান।
২. রংপুর বিশেষ জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) হিসেবে তিনি সরকারপক্ষে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া দুটি মামলা পরিচালনা করেন। এর মধ্যে খাদেম হত্যা মামলায় গত ১৮ মার্চ সাত জঙ্গির মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়া হয়। গত বৃহস্পতিবার ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে পৌঁছার পরদিন এই আইনজীবী নিখোঁজ হলেন। এদিকে জাপানি নাগরিক কুনিও হোশি হত্যা মামলার সরকারপক্ষের প্রধান আইনজীবী ছিলেন রতীশ চন্দ্র ভৌমিক ওরফে বাবু সোনা। এ মামলায় গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণা করা হয়েছে। রায়ে ৫ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ ও একজনকে খালাস দেয়া হয়।
৩. নগরীর ডিমলা দেবত্তোর স্টেট নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে দ্বন্দ চলছিলো। এ ঘটনা নিয়ে হামলা-মামলার মত ঘটনাও ঘটেছে। গত বছরের ১৭ জুন নগরীর ডিমলা দেবত্তোর স্টেট পুকুরে মাছের পোনা অবমুক্ত করেন করা নিয়ে দেবত্তোর স্টেটের জমি সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে এসময় প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা ও জেলা প্রশাসকের গাড়ি বহরে আক্রমনের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় হিন্দু কল্যাণের ট্রাষ্টি এডভোকেট রথীস চন্দ্র ভৌমিক বাবু সোনা বাদী হয়ে ঐদিনই মামলা দায়ের করেন। এছাড়া গত ৪ জুলাই পুলিশ বাদী হয়ে আরও একটি মামলা দায়ের করেন। এসব মামলায় গত বছরের ১২ জুলাই মাহিগঞ্জ ডিমলা এলাকা হতে এজাহার নামীয় ১১ জন আসামীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এদিকে নিখোঁজ বাবু সোনার স্বজনরা জানায়, কিছুদিন ধরে তাঁকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছিল।
রংপুর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বনমালী পাল অভিযোগ করেন, বাবু সোনাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হলেও প্রশাসন কোনও উদ্যোগ নেয়নি। জাপানি নাগরিক হত্যা মামলায় জঙ্গিদের ফাঁসির আদেশ হওয়ার পর ৩/৪ দিন বাসায় পুলিশ পাহারা দিয়েছে। এরপর পুলিশ তার কোনও নিরাপত্তা দেয়নি। ১৮ মার্চ মাজারের খাদেম রহমত আলী হত্যা মামলায় জঙ্গিদের ফাঁসি হওয়ার পরও তার কোনও নিরাপত্তা দেয়নি পুলিশ।
রংপুরের অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন গতকাল সাংবাদিকদের জানান, তারা জঙ্গিদের বিষয়সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তদন্ত শুরু করছেন। অচিরেই ভালো খবর দিতে পারবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।