তিনি বলেন, ‘গত বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ও যখন মেডিক্যাল কোচিং করে তখন কয়েকটা ছেলের সঙ্গে ঝামেলা হয়েছিল। তারা ওকে মারধর করে মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। মোবাইলে গালাগালি করে। তারা সবশেষ একটা হুমকি দিয়েছিল মোবাইলে মেসেজ দিয়ে। তারা আমার ছেলেকে বলছিল, ‘দ্যাখ তোর মোবাইলে কি পাঠাই, টাকা দিবি, নাহলে র্যাব দিয়ে ধরিয়ে দেবো।’ আমি ওই সময় ঢাকা থেকে বদলি হয়ে রংপুরে চলে আসি। পুরো বিষয়টি ছেলে আমাকে ফোনে বলে। ছেলের কাছে ওই নাম্বার চাইলাম। ফোন দেওয়ার পর আমার সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করলো। চেক করে দেখলাম, সেটি সরকারি নম্বর। এরপর আমি ছেলেকে শাহজাহানপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে বলি। সে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর জিডি করে। জিডি নম্বর ১৫৭৪। এরপর আমার ছেলে ওই সিমটা বন্ধ করে দেয়। কিছুদিন আগে সে আবার ওই সিম চালু করে। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তুমি কেন আবার এই সিম চালু করেছো? তখন সে বললো, এতো দিনে আর সমস্যা হবে না।’
ওসি বলেন, ‘সিমটা চালু করার পরই গতকাল র্যাব বাসায় গিয়ে তাকে গ্রেফতার করলো। আমার ছেলে সহজ সরল। তার কাছে কোনও প্রশ্নপত্র ফাঁসের তথ্য ছিল না। তার কাছে এ রকম কোনও এলিমেন্ট ছিল না। এটা ষড়যন্ত্র। তাকে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
র্যাবের বিরুদ্ধে সরাসরি কোনও অভিযোগ না তুলে তিনি বলেন, ‘র্যাব বা পুলিশের দোষ দিয়ে লাভ নেই। কোনও চক্রের কাছ থেকে তথ্য পেয়েই আমার ছেলেকে তারা গ্রেফতার করেছে। কিন্তু আমরা এই ষড়যন্ত্রের বিষয়ে আগেই জিডি করে রেখেছিলাম।’
এর আগে বৃহস্পতিবার (৫ এপ্রিল) বিকালে রাজধানীর শাহজাহানপুর এলাকা থেকে মো. এহসানুল কবিরকে গ্রেফতার করা হয়। র্যাবের গণমাধ্যম শাখা থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এহসানুল কবির রাজধানীর মালিবাগ বাজার রোডের শেলটেক ড্রিম ভবনের একটি ফ্ল্যাটে থাকতো। তার বাবা বাবুল মিয়া ডিএমপিতে একাধিক থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ফ্ল্যাটটি তাদের নিজেদের। ওসি রংপুরে বদলি হলেও তার স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়ে ঢাকার ওই বাসাতেই ছিলেন। তাদের গ্রামের বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গি উপজেলার গোরিয়ালি এলাকায়।
র্যাব জানিয়েছে, এহসানুল কবির টাকার বিনিময়ে মোবাইল ফোনে ইন্টারনেটসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে প্রশ্নপত্র বিতরণের প্রলোভন দেখাতো। সে শিক্ষার্থীদের কাছে ভুয়া প্রশ্নপত্র হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার ইত্যাদির মাধ্যমে বিতরণ করতো।’
এহসানুল কবির নিজের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের ‘Per Question ৩০০ টাকা HSC’ এবং ফেসবুকের নিজস্ব আইডি ‘Kusen Deta’ খুলে প্রশ্নফাঁস সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রচারণা চালাতো। সে নিজেই ওই গ্রুপগুলোর অ্যাডমিন।
র্যাবের দাবি, ‘সে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্নভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং এ সংক্রান্ত লোভনীয় ও অনৈতিক প্রচারণা চালিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে টাকা আদায় করতো।’
র্যাব বলছে, এহসান কবিরের ব্যবহৃত মোবাইলে ম্যাসেঞ্জার গ্রুপের সদস্য সংখ্যা হাজারের বেশি। নামে-বেনামে তার নামে ফেসবুকে এবং হোয়াটসঅ্যাপে অনেক গ্রুপ রয়েছে।
‘সবাইকে প্রশ্ন দেবো, তবে অরজিনাল ছাত্র হতে হবে, আগে কমন, পরে টাকা’, ‘প্রশ্ন আউট হওয়া মাত্রই আমি তোমাদের দিয়ে দেবো, রিয়েল প্রশ্ন বের হলে আমিই দেবো, তোমাদের বলতে হবে না।’ তার বিভিন্ন ম্যাসেঞ্জারে এ ধরনের লেখা পাওয়ার দাবি করেছে র্যাব। খবর-বাংলাট্রিবিউন