আর্কাইভ  শুক্রবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ● ৬ বৈশাখ ১৪৩১
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: পলাশবাড়ীতে আসামির ছুরিকাঘাতে বাদীর মৃত্যু, গ্রেফতার ১       মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের সন্তান-স্বজনের ভোটে না দাঁড়ানোর নির্দেশ       ভোজ্যতেলের দাম বাড়ল, খোলা তেলে সুখবর       বিএনপি নেতা সোহেলের নিঃশর্ত মুক্তি দাবিতে রংপুরে  মানববন্ধন ও সমাবেশ        খরার ঝুঁকিতে রংপুর অঞ্চল      

 width=
 

রৌমারীতে ২ শিশুর মৃত্যু: মাতব্বরদের অব্যাহতি, মায়ের বিরুদ্ধে চার্জসীট

মঙ্গলবার, ১০ এপ্রিল ২০১৮, বিকাল ০৭:৫৬

তৈয়বুর রহমান, কুড়িগ্রাম: মাতাব্বদের মিথ্যা অপবাদ ও নির্যাতনের হুমকিতে পালিয়ে যাওয়ার সময় মায়ের কোল থেকে বানের পানিতে পড়ে দুই শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশ আদালতে রহস্যজনক ও অদ্ভুদ চার্জশীট দিয়েছে। ঐ মামলার এজাহারভূক্ত গ্রাম্য মাতাব্বরদের নাম বাদ দিয়ে শিশু দু’টির হতদরিদ্র মা শিরিনা খাতুনকে অভিযুক্ত করে চার্জসীট দেয়ায় পুলিশের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে, কুড়িগ্রাম জেলার ব্রহ্মপূত্র নদ বিচ্ছিন্ন রৌমারী থানায়। গত বছরের ২ অক্টোবর রাত ১০টার দিকে গ্রাম্য মাতাব্বদের মিথ্যা অপবাদ আর শত শত মানুষের উপস্থিতিতে শালিসী বৈঠকে পাথর নিক্ষেপ করে নির্যাতন করার হুমকি দেয়ায় রাতের অন্ধকারে প্রবাসি স্বামীর বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় গৃহবধু শিরিনা আক্তার। ২ শিশু সন্তান কোলে নিয়ে বানের পানি পার হয়ে যাওয়ার পথে সীমান্ত ঘেষা জিঞ্জিরাম নদীর তীব্র স্রোতের পানিতে পড়ে যায় ওই গৃহবধু। এসময় আয়শা সিদ্দিকা ৪ কিলোমিটার দূরে ভেসে গিয়ে একটি চরে আটকা পড়লেও তার কোল থাকা আড়াই বছরের আয়শা সিদ্দিকা ও ৭ মাসের রাকিবুল হাসান স্রোতের টানে ভেসে যায়। ঘটনার ৫দিন পর থানা পুলিশ ওই দুই শিশু সন্তানের লাশ উদ্ধার করে। উপজেলার সীমান্ত ঘেসা পাটাধোয়া পাড়া গ্রামে ওই ঘটনার পর গৃহবধু শিরিন আক্তারের শ্বাশুরি সাহাতন বেগমকে দিয়ে হত্যা মামলা দায়ের করায় পুলিশ। এতে মা শিরিন আক্তার এবং ১১জন গ্রাম্য মাতাব্বরের নাম উল্লেখ করা হয় এজাহারে। এরমধ্যে মা শিরিন আক্তার, গ্রাম্য মাতাব্বর ওমেদ আলী ও হাছেন আলীকে গ্রেপ্তার দেখানো হয় এবং তাদেরকে আদালতে প্রেরণ করে পুলিশ। এজাহারে যাদের নাম রয়েছে তারা হলেন, গ্রাম্য মাতাব্বর আব্দুল হাই, আশরাফুল ইসলাম, শামসুল আলম, মিনহাজ আলী, সামসুজ্জামান এবং গ্রামবাসি ফিরোজা বেগম, মাইদুল ইসলাম, ফরহাদ হোসেন, খুশি মিয়া সহ ৯ জনকে পলাতক দেখানো হয়। সম্প্রতি মাতব্বরদের সকলকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে পুলিশ শুধুমাত্র অসহায় মা’কে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশীট প্রদান করে। অথচ মাতব্বররা পাথর নিক্ষেপ করে নির্যাতন করবে এ ভয়ে অসহায় মা বুকের ধন ২ সন্তানকে আগলে নিয়ে রাতের অন্ধকারে গ্রাম ছাড়ার সময় পানিতে ডুবে প্রাণ হারায়। ঐ দূর্ঘটনায় মা কোন রকমে প্রাণে বেঁচে যায়। অথচ মাতব্বরদের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়ে পুলিশ ওই হতভাগ্য মাকে মামলার মূল আসামী করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে। এলাকায় গুঞ্জন রয়েছে পুলিশ ১১ আসামির কাছ থেকে প্রায় ১০ লাখ টাকার বাণিজ্য করেছে। মামলার বাদি অভিযুক্ত শিরিন আক্তারের শ্বাশুরি সাহাতন বেগম বলেন, ‘ওই ঘটনার জন্য দোষী গ্রাম্য মাতাব্বররা। আমার ছেলের বউ’র কোনো দোষ নাই। গ্রাম্য মাতাব্বররাই শালিসী বৈঠক করেছে, আমগোর বাড়িতে আইসা মিথ্যা অপবাদ দিছে, গ্রাম ছাড়ার কথা কইছে। শালিসী বৈঠকে নির্যাতনের হুমকি দিছে আমার ছেলের বউ’কে। পুলিশ ট্যাহা খাইয়া মামলা থিকা তাগরে নাম বাদ দিছে। যারা আমার ছেলের বউ’কে মিথ্যা অপবাদ দিয়া গ্রাম থ্যাইকা তাড়াইছে আমি তাগরের বিচার চাই।’ সাহাতন বেগমের স্বজন আব্দুল মালেক অভিযোগ করে বলেন, ‘গ্রামের ওই মাতাব্বররাই শালিসী বৈঠক বসিয়েছিল। তাদের ভয়ে মা দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময়ে নদীর ¯্রােতের মুখে পড়ে। মাইনসে কয় মাতাব্বদের কাছ থেকে পুলিশ মেলা ট্যাহা খাইছে।’ উল্লেখ্য যে, সীমান্ত ঘেষা পাটাধোয়া পাড়া গ্রামের আব্দুর রহমানের স্ত্রী শিরিনা আক্তার। আব্দুর রহমান ওমান দেশে থাকেন। বাড়িতে তার বয়স্ক মা সাহাতন বেগম আর স্ত্রী শিরিনা আক্তার দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে বসবাস করে। হাটখরচ ও বাচ্চার খরচের জন্য তাদের স্বজন ফরহাদ হোসেন নামের এক যুবক যাতায়াত করত। এটা ভালো চোখে দেখতে পারত না অভিযুক্ত ওই মাতাব্বররা। ঘটনার দিন সন্ধ্যা রাতে ফরহাদ নামের ওই যুবক শিরিনা আক্তারের বাড়িতে গেলে মিথ্যা কাহিনী সাজায় মাতাব্বর অভিযুক্ত মাইদুল ইসলাম ও খুশি মিয়া নামের দুইজন। রাতেই গ্রামের আশরাফুল ইসলামের বাড়িতে এক শালিস বৈঠক করে ফরহাদ হোসেনকে ডেকে নিয়ে মারপিট শুরু করে মাতাব্বরা। অপরাধ গৃহবধু শিরিনা আক্তারের সঙ্গে তার অবৈধ সম্পর্ক। এ অপরাধে মাতাব্বররা বাড়িতে গিয়ে শিরিনা আক্তারকে হুমকিধামকি দেয় এবং রাতেই গ্রাম ছাড়ার হুমকি দেয়। বাড়ি না ছাড়লে সকালে শত শত মানুষের উপস্থিতিতে বিচার করা হবে। ভয়ে বন্যার সময় ২ শিশু সন্তানকে নিয়ে রাতেই বাড়ি ছেড়ে রাজীবপুরের শিবেরডাঙ্গী গ্রামে বাবার বাড়ি রওনা দেয় শিরিনা আক্তার। ওই সময়ে পাহাড়ি ঢলে সীমান্ত এলাকায় বন্যায় রাস্তাঘাট ডুবে ছিল। পানি ভেঙ্গে যাওয়ার সময় হঠাৎ করেই জিঞ্জিরাম নদীর অথৈ পানি আর তীব্র ¯্রােতের মুখে পড়ে শিরিনা আক্তার। এসময় তার কোল থেকে ২ সন্তান ¯্রােতের পানিতে ভেসে যায়। সংঙ্গত কারণে এ হত্যাকান্ডের প্ররোচনা কিংবা পারিপার্শিকতা তৈরির জন্য ঐ মাতব্বররাই দায়ি। এদিকে মূল অভিযুক্তদের নাম বাদ দিয়ে আদালতে চার্জশীট প্রদান করা হয়েছে কিসের ভিত্তিতে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এস,আই আশরাফ আলী বলেন, ‘তদন্তে যে তথ্য পেয়েছি তার ভিত্তিতে চার্জশীট প্রদান করা হয়েছে। এজাহারে নাম থাকলেও অভিযুকদের বিরুদ্ধে তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি তাই তাদের অব্যাহিত দেয়া হয়েছে।’ তবে টাকা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন। অভিযোগ প্রসঙ্গে থানার অফিসার ইনচার্জ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘মা শিরিনা আক্তারই তার ২ শিশু সন্তানকে পানিতে ফেলে হত্যা করেছে।’

মন্তব্য করুন


 

Link copied