আর্কাইভ  বৃহস্পতিবার ● ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ● ৫ বৈশাখ ১৪৩১
আর্কাইভ   বৃহস্পতিবার ● ১৮ এপ্রিল ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: পলাশবাড়ীতে আসামির ছুরিকাঘাতে বাদীর মৃত্যু, গ্রেফতার ১       মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের সন্তান-স্বজনের ভোটে না দাঁড়ানোর নির্দেশ       ভোজ্যতেলের দাম বাড়ল, খোলা তেলে সুখবর       বিএনপি নেতা সোহেলের নিঃশর্ত মুক্তি দাবিতে রংপুরে  মানববন্ধন ও সমাবেশ        খরার ঝুঁকিতে রংপুর অঞ্চল      

 width=
 

জাতীয় নজরুল সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন॥জয় হোক জয় হোক -শান্তি জয় হোক, সাম্যের জয় হোক

শুক্রবার, ২০ এপ্রিল ২০১৮, রাত ১০:১৯

নজরুলের সাম্যবাদ একান্তই হৃদয়লদ্ধ বিষয়। দর্শন, তত্ত্ব আর মননশীলতার পরিবর্তে নজরুলের সাম্যবাদে মূলত প্রাধান্য পেয়েছে বাঁধভাঙা আবেগ আর উচ্ছ্বাস। তবু নজরুলের কবিতায় যে সাম্যবাদী চিন্তার প্রকাশ ঘটেছে, সেখানে, তাঁর সমাজ-সচেতনতা এবং সুষম প্রতিষ্ঠার আত্যন্তিক আকাক্সা স্বতঃই প্রকাশিত। তাঁর এই সাম্যবাদী ভাবনা বাংলা কবিতার ইতিহাসে নতুন মাত্রা সংযোজন করেছে, সন্দেহ নেই। মানুষকেই তিনি সর্বদেশ সর্বযুগ সর্বকালের পরম-জ্ঞাতি হিসেবে মেনেছেন এবং জেনেছেন। এ-প্রসঙ্গে তাঁর সুস্পষ্ট উচ্চারণর গাহি সাম্যের গান-মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান। নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্ম জাতি,সব দেশে, সব কালে, ঘরে ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি। নজরুলের সাম্যবাদ একান্তই হৃদয়লদ্ধ বিষয়। দর্শন, তত্ত্ব আর মননশীলতার পরিবর্তে নজরুলের সাম্যবাদে মূলত প্রাধান্য পেয়েছে বাঁধভাঙা আবেগ আর উচ্ছ্বাস। তবু নজরুলের কবিতায় যে সাম্যবাদী চিন্তার প্রকাশ ঘটেছে, সেখানে, তাঁর সমাজ-সচেতনতা এবং সুষম প্রতিষ্ঠার আত্যন্তিক আকাক্সা স্বতঃই প্রকাশিত। তাঁর এই সাম্যবাদী ভাবনা বাংলা কবিতার ইতিহাসে নতুন মাত্রা সংযোজন করেছে, সন্দেহ নেই। একুশ শতকে নজরুল- এ স্লোগানকে সামনে রেখে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের চিন্তা-চেতনা, আদর্শ, দর্শন এবং তার সমস্ত সৃষ্টিকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেয়ার ল্েয নীলফামারীতে শুরু হওয়া তিন দিন ব্যাপী জাতীয় নজরুল সম্মেলন-২০১৮ এর দ্বিতীয় দিন আজ শুক্রবার “সামাজিক সাম্য ও নজরুল” বিষয়ে আলোচনায় আলোচকগণ কবি নজরুল ইসলামের পটভুমি নিয়ে এ সব কথা তুলে ধরেন। বিকাল চারটায় শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে নীলফামারীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আজহারুল ইসলামের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন নজরুল একাডেমীর সচিব ও প্রকল্প পরিচালক আব্দুর রহিম, সম্মিলিত সংস্কৃতি জোটের আহবায়ক আহসান রহিম মঞ্জিম, নীলফামারী সরকারী কলেজের অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক, নজরুলগীতি শিল্পী অসিত কুমার ধর। আলোচকগণ বলেন কাজী নজরুল ইসলাম কখনো উচ্চারণ করেছেন বিদ্রোহের বাণী, কখনো বা গেয়েছেন সাম্যের গান। ১৯২৫ সালে ‘সাম্যবাদী’ কাব্য প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নজরুল ইসলাম সাম্যের কবি হিসেবে সুপরিচিত হয়ে ওঠেন। তাঁর ‘সর্বহারা’ (১৯২৬) কাব্যেও সাম্যবাদী চিন্তার প্রকাশ ঘটে। এ দুই কাব্যে নজরুলের সাম্যবাদী চিন্তার প্রতিফলন ঘটেছে, তা দর্শন-পরিশ্রুত নয়, বরং একান্তই রোমান্টিক মানসপ্রবণতাজাত। ফলে বিদ্রোহের মতো নজরুলের সাম্যবাদী চিন্তাও মূলত আবেগ আর উচ্ছ্বাসের প্রকাশ। নজরুলের সাম্যবাদ প্রধানত তাঁর নিজস্ব ভাবনাজাত-মানবতাবাদই যার মৌল ভিত্তি। মানুষের মুক্তি, নর-নারীর বৈষম্যমোচন এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতি তাঁর সাম্যবাদী চিন্তার প্রধান বৈশিষ্ট্য। মানুষকে, মানুষের ধর্মকে নজরুল বড় করে দেখেছেন আজীবন। তিনি চেয়েছেন মানুষের কল্যাণ, সমাজের উন্নতি, স্বদেশের স্বাধীনতা। তাই হিন্দু কিংবা মুসলমান নয়, বিদ্রোহের জন্য মানুষের প্রতিই ছিল তাঁর উদাত্ত আহ্বান। তিনি কল্পনা করেছে এক সাম্যবাদী সমাজের, যেখানে নেই শোষণ বৈষম্য আর সাম্প্রদায়িক বিভেদ- গাহি সাম্যের গান-/ যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা-ব্যবধান, / যেখানে মিলিছে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুসলিম-ক্রীশ্চান/ গাহি সাম্যের গান ! / কে তুমি? পার্সী? জৈন? ইহুদী? সাঁওতাল, ভীল, গারো? / কনফুসিয়াস? চার্বাক-চেলা? বলে যাও, বল আরো। /... মিথ্যা শুনিনি ভাই,/ এই হৃদয়ের চেয়ে বড়ো কোনো মন্দির-কাবা নাই। নজরুল ইসলাম বিশ্বাস করেন, পৃথিবীতে মানুষের চেয়ে কোনো কিছু বড় কিংবা মহৎ হতে পারে না। তাই মানুষকেই তিনি নিবেদন করেন তাঁর সকল শ্রদ্ধা, সকল ভক্তি ও ভালোবাসা।মানুষকেই তিনি সর্বদেশ সর্বযুগ সর্বকালের পরম-জ্ঞাতি হিসেবে মেনেছেন এবং জেনেছেন। এ-প্রসঙ্গে তাঁর সুস্পষ্ট উচ্চারণ— গাহি সাম্যের গান। আলোচনা শেষে এই সম্মেলন ঘিরে স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে নজরুল গীতি, নৃত্য ও কবিতা প্রতিযোগীতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরন শেষে নজরুলের জীবন-পরিক্রমার উপর তথ্যচিত্র প্রর্দশন করা হয়। এরপর সাংস্কৃতিক পর্ব শুরু হয় সমেবেত কন্ঠে দুটি গান। গানের কথা হলো- জয় হোক জয় হোক - শান্তি জয় হোক, সাম্যের জয় হোক, সত্যের জয় হোক জয় হোক॥ সর্ব অকল্যাণ পীড়ন অশান্তি সর্ব অপৌর“ষ মিথ্যা ও ভ্রান্তি, হোক য়, য় হোক জয় হোক জয় হোক॥ অপর সমবেত গানটি হলো - মোরা ঝঞ্ঝার মত উদ্দাম, মোরা ঝর্ণার মত চঞ্চল। মোরা বিধাতার মত নির্ভয়, মোরা প্রকৃতির মত সচ্ছল।। আকাশের মত বাঁধাহীন, মোরা মরু সঞ্চার বেদুঈন,(মোরা) বন্ধনহীন জন্ম-স্বাধীন, চিত্ত মুক্ত শতদল।। গান দুটি পরিবেশন করে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের শিল্পী ও স্থানীয় শিল্পীবৃন্দ। এরপর একক গান পরিবেশ করেন সালাউদ্দিন আহমেদ ও ইয়াসমীন মুশতারী,রতনা বর্ধন,কল্পনা আনাম, হোসনে আরা লিপি,শাহানা ইসলাম ও চন্দ্রাবতী রানী। একক গান শেষে কবিতা,নৃত্য পরিবেশন করে ঢাকা ও নীলফামারীর শিল্পবৃন্দ। আগামীকাল শনিবার (২১ এপ্রিল) সন্ধ্যায় তিনদিন ব্যাপী জাতীয় নজরুল সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর। উল্লেখ যে গতকাল বৃহস্পতিবার (১৯ এপ্রিল) সকালে নীলফামারী শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে এই সম্মেলনের উদ্ধোধন করেছিলেন কবি পৌত্রী ও কবি নজরুল ইনস্টিটিউট ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য খিলখিল কাজী।

মন্তব্য করুন


 

Link copied