লালমনিরহাট প্রতিনিধি: ভুয়া ওয়ারেন্টের তিন দিনের কারাবাস করতে হলো আলো বেগম(৩৫) নামে লালমনিরহাটের এক গৃহবধুকে।
বৃহস্পতিবার(১০ মে) সন্ধ্যায় ওয়ারেন্টটি ভুয়া প্রমানিত হওয়ায় আদালতের নির্দেশে তাকে মুক্তি দিয়েছে কারাকর্তৃপক্ষ।
এর আগে সোমবার (৭ মে) বিকেলে বগুড়ার জুডিশিয়াল আদালতের তিন বছরের সাজা ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ৬ মাসের কারাদন্ডের ওয়ারেন্টে তাকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় লালমনিরহাট সদর থানা পুলিশ।
নির্দোষ হয়েও কারাবাস করা গৃহবধু আলো লালমনিরহাট পৌরসভার স্টোরপাড়া এলাকার আলা উদ্দিনের মেয়ে। তিনি একই এলাকার বসুন্ধরা পাড়ার মাহি জুয়েলের স্ত্রী।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, গত ২২ এপ্রিল বগুড়া চীফ জুডিশিয়াল আদালত থেকে আলো বেগমের ৩ বছরের সাজা ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ৬ মাসের কারাদন্ডের একটি ওয়ারেন্ট আসে লালমনিরহাট পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে। ওই ওয়ারেন্টটি তামিলের দায়িত্ব পান সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মাহফুজ আলম।
ওই ওয়ারেন্ট মুলে গত ৭ মে সদর থানা পুলিশ আলোর বাবার বাসায় যায়। তাদের হাতের ওয়ারেন্টের সাজার বিষয়টি শুনে হতচকিত হয়ে পড়েন পুরো পরিবার। বাধ্য হয়ে আলোকে ধরতে তার স্বামীর বাসায় যায় পুলিশ। এ সময় নিজের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট দেখে বিস্মিত হন আলো ও তার স্বামী সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসের অপারেটর মাহি জুয়েল। জিবনে বগুড়া জেলাটি দেখেন নি তিনি। অথচ বগুড়া আদালত থেকে তার বিরুদ্ধের সাজার ওয়ারেন্ট এসেছে। এর আগে কখনো আদালতের নোটিশ আসেনি বলেও দাবি করেন আলোর পরিবার।
সাজার ওয়ারেন্ট মুলে গৃহবধু আলো বেগমের গ্রেফতারের বিষয়টি পুরো পাড়ায় গুঞ্জন শুরু হয়। অনেক বলার পড়েও পুলিশ তাকে আদালতের মাধ্যমে লালমনিরহাট কারাগারে পাঠায়।
এরপর নির্দোষ আলো বেগমের পরিবার ওয়ারেন্ট ও আদালতের নির্দেশের নথিপত্র নিয়ে হাজির হয় বগুড়া চীফ জুডিশিয়াল আদালতে। সেখানে নথি খুজে এ ওয়ারেন্ট ভুয়া মনে হলে তারা আদালতের বিচারকের স্মরনাপন্ন হন। বগুড়া অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল আদালতের বিচারক শ্যাম সুন্দর আদালতের নথিপত্র যাচাই করে আলো বেগমের বিরুদ্ধে দায়ের করা ওয়ারেন্ট ও সাজার পুরো বিষয়টি ভুয়া বলে আলোকে ছাড়ার আদেশ দেন। এমনকি ওয়ারেন্টে ব্যবহার করা সিলমোহর এ আদালতের নয় বলে প্রত্যায়ন প্রদান করেন বিজ্ঞ আদালত।
বগুড়া আদালতের এ ছাড় পত্রটি লালমনিরহাট পুলিশ সুপার কার্যালয় হয়ে আদালতে পৌছলে নির্দোষ আলোকে মুক্তি দেয়ার নির্দেশ দেন আদালত। এ নির্দেশনায় তিন দিন বিনা অপরাধে কারাবাসের পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় লালমনিরহাট কারাগার থেকে মুক্তি পান গৃহবধু আলো।
লালমনিরহাট সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মাহফুজ আলম জানান, পুলিশ সুপার কার্যালয় থেকে আসা ওয়ারেন্ট তামিলের নির্দেশনা পালন করতে আলোকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। আদেশটি জাল বলেও প্রথমে প্রতিয়মান হয়নি। তবে আজ পুনরায় নির্দেশনার আদেশ দেখে আমরা বিস্মিত। তবে আলো এ বিষয়ে অভিযোগ দিলেই বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
লালমনিরহাট পুলিশ সুপার(ভারঃ) এনএম নাসির উদ্দিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে। প্রথম দিকে জাল মনে না হওয়ায় আদালতের নির্দেশ মানতেই আলোকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তবে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।