আর্কাইভ  বৃহস্পতিবার ● ২৮ মার্চ ২০২৪ ● ১৪ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   বৃহস্পতিবার ● ২৮ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

 width=
 
শিরোনাম: স্বাস্থ্যের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ফজলুল হক কারাগারে       কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা       লালমনিরহাটে পুকুরে জাল ফেলতেই জালে উঠে এলো যুবকের মরদেহ       কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা       রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা      

 width=
 

তিস্তায় পানি থাকলে নৌকা থাকবে কোথায়

সোমবার, ২৮ মে ২০১৮, সকাল ০৮:২৬

জয়া ফারহানা নদীকে ছুরি দিয়ে আঘাত করলে নদীর কী এমন এসে যায়? সব বাক্যের আক্ষরিক কিংবা ধারণাগত অনুবাদ করলে তার মর্ম পুরোপুরি আত্মস্থ করা যায় না। ‘তিস্তার বুকে ছুরির আঘাত’ আত্মস্থ করতে চাইলে উত্তরাঞ্চলের কৃষকদের পানির অভাবে শুকিয়ে মরার কষ্টকে আত্মস্থ করতে হবে। তিস্তার বঞ্চনা আত্মস্থ করার মন বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের বড় একটি অংশের আছে বলে তো মনে হয় না। অন্তত তাদের কথাবার্তা শুনে তাই মনে হয়। ব্যক্তিস্বার্থ, ক্ষমতার মোহ এবং অন্ধ আনুগত্য তাদের এমনই আচ্ছন্ন করে রেখেছে যে, তারা নিজের দেশের বিপক্ষে এবং অন্য দেশের পক্ষে কথা বলেন। এই বুদ্ধিজীবীদের যখন প্রশ্ন করা হয় তিস্তা প্রসঙ্গে এবার কী বলবে ভারত? জবাবে তারা মোদি-মমতার সম্পর্কের টানাপড়েনের কথা বলেন। ভারতের আন্তঃরাষ্ট্রীয় রাজনীতির সমস্যার কথা বলেন। সামনে নির্বাচন তাই কেন্দ্র ও প্রদেশের বিভিন্ন সমীকরণ মিলিয়ে বলেন মোদি সাহেবের পক্ষে এবার তিস্তা চুক্তি করা সত্যি কঠিন। শুনে আমরা স্তম্ভিত হই। বুঝে উঠতে পারি না ইনারা কোন দেশের বুদ্ধিজীবী? ভারতের রাজনীতি, মমতা-মোদি সম্পর্ক কিংবা ভারতের নির্বাচন যাই থাকুক, সেটা বাংলাদেশের দেখার বিষয় নয়। আমরা আমাদের পাওনা পানি চাই। ভারতের আন্তঃরাজনীতি দেখার দায়িত্ব বাংলাদেশের নয়। সবচেয়ে বড় ব্যাপার, তিস্তা নিয়ে ভারত যা করছে তা আন্তর্জাতিক নদী আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তবু তিস্তার পানি পাওয়ার জন্য বাংলাদেশ ভারতের কাছে কেবল কাতর আবেদন-নিবেদনই করে যাচ্ছে। একবারও আন্তর্জাতিক আইনের সুযোগ গ্রহণের কথা ভাবছে না। কেন? পানির দরকষাকষিতে বাংলাদেশ নিজেকে কেন দুর্বল ভাববে? দুই. আন্তর্জাতিক নদীর পানি ব্যবহারসংক্রান্ত হেলসিংকি নীতিমালার চার ও পাঁচ অনুচ্ছেদে পরিষ্কার বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক নদীর ওপর যে কোনো প্রকল্প নির্মাণে প্রতিটি অববাহিকাভুক্ত রাষ্ট্রের সম্মতি নিতে হবে। এবং অববাহিকাভুক্ত রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষতি বিবেচনায় আনতে হবে। হেলসিংকি নীতিমালার ২৯ অনুচ্ছেদ বলছে, অভিন্ন নদীর পানি ব্যবহারে যে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে এক অববাহিকাভুক্ত রাষ্ট্র অন্য অববাহিকাভুক্ত রাষ্ট্রকে অবহিত করবে। হেলসিংকি নীতিমালা লঙ্ঘনের দায়ে ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা ঠুকতে পারে। মেকং নদী কমিশনের কথা এখানে বলা যেতে পারে। কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড, লাওস ও ভিয়েতনামের অভিন্ন নদী মেকং। জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে মেকং নদী কমিশন গঠন হওয়ার পর মেকংয়ের অংশীদার প্রত্যেকটি দেশ সমান পানি পাচ্ছে। ইউরোপের দানিয়ুব নদীর পানি ১২টি দেশ সমানভাবে ভাগ করে নিচ্ছে। নীলনদের পানি সমানভাবে বণ্টন হচ্ছে মিসর, সুদান ও ইথিওপিয়ার মধ্যে। বাংলাদেশ কি ইথিওপিয়ার চেয়ে দুর্বল যে তিস্তার পানির ন্যায্য পাওনা বুঝে নিতে পারবে না? সবচেয়ে বড় কথা, ভারতকে সবচেয়ে বৈরী চোখে দেখে যে পাকিস্তান তাকেও ভারত সিন্ধু নদীর পানি কড়ায়-গ-ায় বুঝিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। অন্যদিকে এবারও মোদি সাহেব বলেছেন, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের সবচেয়ে সোনালি সময় অতিক্রম করছে। কিন্তু সেই স্বর্ণোজ্জ্বল রঙ কোথাও দেখতে পাচ্ছি না। বরং পানির অভাবে রুপালি তিস্তা শুকিয়ে ধূসর হয়েছে। বাংলাদেশের কৃষি শতভাগ সেচনির্ভর। যে সম্পর্কের মধ্যে সেচের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিস্তার রুপালি রঙ ঝলসে টিনে রূপান্তরিত হয়, সেই সম্পর্ককে স্বর্ণালি সময় বললে মোদি সাহেবের দিক থেকে ঠিক হয়। কিন্তু বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমরা কিছুতেই একে সোনালি সময় বলতে পারি না। তিন. ১৯৭৪ সালের ৪ এপ্রিল গঙ্গা নদীর ওপর ফারাক্কা বাঁধ চালু হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ধীরে ধীরে মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর গঙ্গা চুক্তির সময় ভারত বাংলাদেশকে প্রস্তাব দিয়েছিল আসামে জঙ্গিগোপা থেকে বাংলাদেশের রংপুর ও দিনাজপুরের ওপর দিয়ে ৬৪ কিলোমিটার যাওয়ার পর পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের ওপর দিয়ে ফারাক্কার কিছুটা উজানে গঙ্গা নদীতে ২০০ মাইল লম্বা ও ৩০০ ফুট গভীর একটি খাল খনন করা হবে। তা হলে নাকি ব্রহ্মপুত্রের পানি গঙ্গায় যাবে। এই প্রস্তাবে বাংলাদেশের ১১টি নদী আড়াআড়িভাবে বিচ্ছিন্ন হতো এবং যমুনার সাতটি উপনদী ও একটি শাখা নদীর পানি থেকে বঞ্চিত হতো বাংলাদেশ। বন্ধু বাংলাদেশের জন্য ভারতের এই প্রস্তাব মেনে নেওয়া হলে বাংলাদেশের ১ লাখ ৬১ হাজার হেক্টর জমি নষ্ট হতো। এই হলো বন্ধু ভারতের প্রস্তাবের নমুনা। যে বছর তিস্তা চুক্তি হয়েই যাচ্ছে, সে বছরও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশকে ইছামতি, দুধকুমারসহ কয়েকটি গৌণ নদীর সঙ্গে চুক্তির প্রস্তাব দিলেন। তিস্তার বদলে দুধকুমার, ইছামতি দেখানো বাঙালকে হাইকোর্ট দেখানোর মতোই। এই হলেন কাঠবেড়ালির ভূমিকা পালনকারী মমতা। তিস্তা চুক্তির জন্য তার ওপরই নাকি বাংলাদেশের আস্থা রাখতে হবে। শিয়ালের কাছে মুরগি রাখার প্রস্তাব। চার. পানি মোটেও সহজ ব্যাপার নয়। ইরাক যুদ্ধের প্রধান কারণ পানি। ফোরাত নদীর পানি। ইসরায়েলের নিজস্ব পানির উৎস নেই। তাকে পানি কিনে আনতে হয় বাইরে থেকে। তার দরকার ছিল ফোরাত নদীর পানি। বাংলাদেশের জন্যও পানি মোটেই সহজ ব্যাপার নয়। বাংলাদেশ পানিসমৃদ্ধ দেশ। মিঠা পানিতে বাংলাদেশ পৃথিবীর সবচেয়ে সমৃদ্ধ দেশ। যদিও নদী নিয়ে ভারতের নানা কারিগরি প্রকল্পের কারণে বাংলাদেশের প্রখ্যাত মিঠা ধীরে ধীরে লবণাক্ত হচ্ছে। বাংলাদেশ ভারতের সবচেয়ে বড় বাজার। নিরাপত্তার সবচেয়ে বড় স্টেকহোল্ডার। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর সূত্র উল্লেখ করেÑ ‘আমাদের সময়ে’ প্রকাশিত ‘এবার প্রতিদান চান শেখ হাসিনা’ শিরোনামে প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বলেছেন আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হারালে পশ্চিম ও পূর্ব দুদিকেই পাকিস্তান নিয়ে ঘর করতে হবে ভারতকে। দুদিকে পাকিস্তান নিয়ে ঘর করার বিপদ ভারত কেন উপলব্ধি করতে পারছে না, প্রশ্ন সেটাই। ভারত উপলব্ধি করুক বা না করুক, আমরা তো আর ভারতের তৈরি করা কারবালার মহাপরিকল্পনাকে সমর্থন করতে পারি না। সেচব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল বাংলাদেশের কৃষি পানি না পেয়ে ধ্বংস হয়ে গেলে যে ক্ষতি, তা কি ফিনিশড বিদ্যুৎপ্রাপ্তিতে মিটবে? শুধু কৃষির কথাই বা বলি কেন, তিস্তার পানি না পাওয়ার কারণে বাংলাদেশকে যে পরিমাণ পরিবেশগত বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হচ্ছে, সেই ক্ষতির অঙ্কও কি কেউ হিসাব করেছেন? বাংলাদেশে পানি চাহিদার নব্বই ভাগ পূরণ হওয়ার কথা ব্রহ্মপুত্র, গঙ্গা এবং এর উপনদীগুলোর মাধ্যমে। কী পরিমাণ পানি বাংলাদেশ পাচ্ছে সেখান থেকে? ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত গঙ্গা চুক্তি অনুযায়ী যে পরিমাণ পানি পাওয়ার কথা, তা পাচ্ছে না বাংলাদেশ। ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত গঙ্গা চুক্তিতে ১৯৪৯ থেকে ১৯৮৮ পর্যন্ত ৪০ বছরের গঙ্গার মোট প্রবাহ বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশ ও ভারতের জন্য প্রতি ১০ দিনের পালাবদলে বণ্টন শিডিউল করা হয়েছিল। যাতে বলা হয়, শুকনো মৌসুমে প্রথম ১০ দিন ভারত কম নিয়ে বাংলাদেশ ৩৫ কিউসেক পানি দেবে। পরবর্তী ১০ দিন বাংলাদেশ কম নিয়ে ভারতকে ৩৫ কিউসেক পানি দেবে। চুক্তি অনুযায়ী কি পানি পাচ্ছে বাংলাদেশ? ১৯৯৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পদ্মায় পানির উচ্চতা ছিল ১০ দশমিক ৪৩ মিটার। ১৯৯৮ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ১০ দশমিক ৪০ মিটার। ১৯৯৯ সালে ওই একই তারিখে ১১ দশমিক ১২ মিটার। ২০০০ সালে ১০ দশমিক ৪৯ মিটার। ২০০১ সালে ১০ দশমিক ১৭ মিটার। ২০০২ সালে ১০ দশমিক ৬৫ মিটার। ২০০৩-এ ৯ দশমিক ৫৫ মিটার। ২০০৪-এ ৯ দশমিক ৬২ মিটার। ২০০৫-এ ৯ দশমিক ১২ মিটার। ২০০৬-এ পানির উচ্চতা দাঁড়ায় ৮ দশমিক ৫৮ মিটার। এই হলো চুক্তিতে পাওয়া পানির বঞ্চনার হিসাব। পানি নিয়ে ভারতের আধিপত্যের কারণে এভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী কোনো নদী থেকেই পানির ন্যায্য হিসাব পায়নি বাংলাদেশ। পাঁচ. ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ৫৪টি ট্রান্স বাউন্ডারি বা আন্তর্জাতিক নদী থেকে গড়ে ১০ লাখ ৭৩ হাজার ১৪৫ মিলিয়ন ঘনমিটার পানি প্রবাহিত হয়। কিন্তু এই আন্তর্জাতিক নদীগুলোর ওপর ভারত বাঁধ দেওয়ায় বাংলাদেশের নদীগুলোর পানির পরিমাণ বিপজ্জনক মাত্রায় কমে গেছে। ভারতের একক সিদ্ধান্তে বাস্তবায়ন হওয়া আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের কারণে বাংলাদেশের মৃত নদীর সংখ্যা ১৯০টি এবং ৯৯ শতাংশ নদীর গভীরতা আশঙ্কাজনক মাত্রায় কমে গেছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তরও গেছে নেমে। নলকূপে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। আর আর্সেনিকের সমস্যা তো আছেই। বাংলাদেশের নদীর পানির লবণাক্ততা দিন দিন বাড়ছে। মিঠা পানির মাছ বিলুপ্তির পথে। ভারত একতরফা পানির প্রবাহ আটকে রেখে বাংলাদেশের নদীগুলোকে শুকিয়ে মারছে। মূল নদীর সংযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে বহু নদী। জলাবদ্ধতা, লবণাক্ততা, মরুময়তা, জীববৈচিত্র্য ধ্বংস এবং জলজ প্রাণের আবাসভূমি চূড়ান্তভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভূগর্ভস্থ জলাধারের পানির অতিমাত্রায় ব্যবহারের কারণে স্তর যত নিচে নেমে গেছে, তাতে আগামীতে পানের যোগ্য পানি, সেচের পানির জন্য হাহাকার সৃষ্টি হবে। রবীন্দ্র-নজরুল সাহিত্য মস্তিষ্ক মনন ঋদ্ধ করে সন্দেহ নেই। মহান বাণীতে মনও ভরে। কিন্তু প্রাণ বাঁচে না। প্রাণ বাঁচাতে পানির দরকার। নৌকাকে গন্তব্যে পৌঁছাতে নদীতে পানি থাকাও দরকার। লেখক: কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক

মন্তব্য করুন


 

Link copied