আর্কাইভ  বৃহস্পতিবার ● ২৮ মার্চ ২০২৪ ● ১৪ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   বৃহস্পতিবার ● ২৮ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

 width=
 
শিরোনাম: স্বাস্থ্যের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ফজলুল হক কারাগারে       কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা       লালমনিরহাটে পুকুরে জাল ফেলতেই জালে উঠে এলো যুবকের মরদেহ       কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা       রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা      

 width=
 

বিশেষ প্রতিবেদন: ‘জাতীয় পত্রিকা’ বলে আসলে কিছু নেই

বুধবার, ২০ জুন ২০১৮, রাত ১০:৪২

আশাফা সেলিম

জাতীয় সঙ্গীত শুনলেই আমরা গভীর শ্রদ্ধায় দাঁড়িয়ে যাই। কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে গাই- ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি...’। জাতীয় পতাকা, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, জাতীয় সংসদ, কবি, অধ্যাপক, ডাক্তারের প্রতিও শ্রদ্ধাবনত হই। ‘জাতীয়’ শব্দটিই আসলে শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় জাতির চেতনা ও স্বত্ত¡ায় মিশে আছে। গভীর সম্মানসূচক এই অভিধা আমাদের দেশপ্রেমের স্বাক্ষর বহন করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ‘জাতীয়’ অভিধাপ্রাপ্ত যেকোনো কিছুরই পরিচিতি সারাদেশে প্রায় সর্বব্যাপী। সর্বজনগ্রাহ্য। নিজ মহিমায় উজ্জ্বল। সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য বা ক্রাইটেরিয়ার ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃত। কিন্তু চরম ধাক্কা খেতে হয় রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ (সংবাদপত্র) ‘জাতীয় পত্রিকা’র ক্ষেত্রে এসে। চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর (ডিএফপির)-এর অনলাইন তথ্যমতে (র্সব-শষে হাল-নাগাদ: ১৮ এপ্রলি ২০১৮) ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকা ৪৭৬টি। প্রচলিত অর্থে এগুলোকেই ‘জাতীয় পত্রিকা’ বলা হচ্ছে। ‘জাতীয় পত্রিকা’ নামকরণের প্রক্রিয়াটিও অদ্ভ‚ত! ঢাকা থেকে প্রকাশিত হবে, এবং সারাদেশে যাবে। ব্যস! এটাই ‘জাতীয় পত্রিকা’র বহুল প্রচলিত ক্রাইটেরিয়া। কিন্তু ‘জাতীয়’ শব্দটি যুক্ত করে, রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভের এত সাধারণ সংজ্ঞায়ন কি ঠিক? এর উত্তর খুঁজতে গিয়ে পেলাম- চম্কে ওঠার মতো তথ্য; ‘জাতীয় পত্রিকা’ বলে আসলে কিছু নেই! এটি একটি ভেগ টার্ম বা বহুল প্রচলিত অস্বচ্ছ ধারণা। একটি অমীমাংসিত অসম্পূর্ণ শব্দবন্ধ বা অভিধা। ‘জাতীয় পত্রিকা’ শব্দবন্ধটির কোনো রাষ্ট্রস্বীকৃত বা অফিসিয়াল সংজ্ঞা নেই! কোনো পত্রিকার পাতায়ও ‘জাতীয় পত্রিকা’ লেখা থাকে না। এমনকি গুগল সার্চ ইঞ্জিনও এ বিষয়ে কোনো আর্টিকেল বা সংবাদ খুঁজে পায়নি। তার মানে, বাংলাদেশের ৪৭ বছরের ইতিহাসে ‘জাতীয় পত্রিকা’ নামের অস্পষ্টতার বিষয়টি উত্থাপিতই হয়নি? অথচ সব মহলে এই শব্দবন্ধটি বহুল ব্যবহৃত, সুপ্রতিষ্ঠিত। অনেকেই উচ্চারণ করেন। লেখেনও অফিসিয়ালি। এমনকি আইনের গুরুত্বপূর্ণ দালিলিক গ্রন্থ ‘নেগোশিয়েবল ইন্সট্রুমেন্ট অ্যাক্ট (এনআই অ্যাক্ট)’-এর ইলেক্ট্রনিক ভার্সনে `Bangla national newspaper' কথাটি লেখা আছে। অথচ ‘ন্যাশনাল নিউজপেপার’ বা ‘জাতীয় পত্রিকা’ শব্দবন্ধ দুটোর কোনো অফিসিয়াল অস্তিত্ব খুঁজে পেলাম না। যুগ যুগ ধরে এই নামটি টিকে আছে মূলত মানুষের মুখে মুখে! অসম্পূর্ণ, অস্পষ্ট ধারণার উপর ভিত্তি করে। সম্প্রতি ‘জাতীয় পত্রিকা’য় একটি বিজ্ঞাপন ছাপানোর জন্য একজন অ্যাডভোকেট আমার কাছে জানতে চান- ‘জাতীয় পত্রিকা’ কোন্টি বা কোন্গুলো? এর ক্রাইটেরিয়া বা বৈশিষ্ট্য কী? তিনি একটি দৈনিকের নাম উল্লেখ করে বললেন (যেটি বগুড়া ও ঢাকা থেকে একযোগে ছাপা হয়), “এই পত্রিকাটি কি জাতীয়? এতে ছাপালে সেটা কি জাতীয় পত্রিকায় ছাপা হয়েছে বলা যাবে? কারণ আমাকে সেটা লিগ্যালি প্রমাণ করতে হবে।” এরপর তিনি দেখালেন ‘নেগোশিয়েবল ইন্সট্রুমেন্ট অ্যাক্ট বা সংক্ষেপে এনআইঅ্যাক্ট-১৮৮১ (কপিরাইট-২০১০)’-এর চেক ডিসঅর্নার বিষয়ক ঈঐঅচঞঊজ ঢঠওও-এ লেখা আছে- “by publication in a daily Bangla national newspaper having wide circulation”. তাই, ‘জাতীয় পত্রিকার লিগ্যালি ইউজেবল সংজ্ঞা দরকার”। তবে আমার মতে, এই নির্দেশনাটি অসম্পূর্ণ। কারণ, ‘ওয়াইডলি’ (বিস্তৃতভাবে) শব্দটি দিয়ে বোঝা যায় না সংখ্যায় কতগুলো হলে, বা কতদূর গেলে তা ওয়াইড বা বিস্তৃত হয়। ‘জাতীয় পত্রিকা’র সংজ্ঞা তথা অফিসিয়াল স্বরূপ খুঁজতে গিয়ে প্রায় দুমাস ধরে অনুসন্ধান চালালাম। ইন্টারনেটে তথ্য মন্ত্রণালয়, পিআইবি, ডিএফপিসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের ওয়েব পেইজগুলো ঘাঁটলাম। পত্রিকার ডিক্লারেশন বা আবেদন ফর্মগুলো ডাউনলোড করলাম। কিন্তু ‘জাতীয় পত্রিকা’র সংজ্ঞা, তালিকা বা কংক্রিট কিছু খুঁজে পেলাম না। পেলাম প্রচলিত ধারণারই পুনরাবৃত্তি। বিষয়টি নিয়ে ঢাকা ও রংপুরের পত্রিকা-সংশ্লিষ্ট প্রায় দু ডজন বিশিষ্টজনের কাছে একটি কমন প্রশ্ন রেখেছিলাম: ‘জাতীয় পত্রিকা বলতে কী বুঝি? এর অফিসিয়াল সংজ্ঞা কী’। উত্তরে প্রায় সবাই বলেছেন- ‘যেসব পত্রিকা ঢাকা থেকে বের হয়, এবং সারাদেশ কাভার করে, সেগুলোকেই জাতীয় পত্রিকা বলে’। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বিএসএস) অ্যাডমিন ইনচার্জ মোহাম্মাদ আলী খান (অপু) ইমেইলে জাতীয় পত্রিকার সংজ্ঞা পাঠিয়েছেন- “রাজধানী ঢাকা থেকে প্রকাশিত এবং সারা দেশে (জাতীয়ভাবে) প্রচারিত যেকোনো পত্রিকাকে জাতীয় পত্রিকা হিসেবে নির্ণয় করা হয়”। পিআইবির লেকচারার শুভ কর্মকার ঢাকা ভার্সিটির ছাত্রদের করা একটি গবেষণায় বেরিয়ে আসা সংজ্ঞা ইমেইলে পাঠিয়েছেন- “ঢাকা থেকে প্রকাশিত অন্তত ১৫ পৃষ্ঠার দৈনিককে জাতীয় পত্রিকা বলা হয়”। তবে শুভর নিজের মত- “সংবাদপত্রটি পুরো জাতির কাছে পৌঁছছে কি না, পুরো জাতি পড়তে পারছে কি না; যদি পারে, তবে সেটাকেই জাতীয় পত্রিকা বলা উচিত”। অপরদিকে, বাংলাদেশ প্রেস ইন্সটিটিউটের (পিআইবি) মহাপরিচালক মো. শাহ আলমগীর বলেছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন- “জাতীয় পত্রিকা বলে আসলে কিছু নেই। ঢাকা থেকে প্রকাশিত পত্রিকাগুলোকেই সাধারণত জাতীয় পত্রিকা বলা হয়ে থাকে। তবে কোনো পত্রিকার পক্ষ থেকে বলা হয় না যে, আমরা জাতীয় পত্রিকা। এটি একটি প্রচলিত ধারণা। তবে, কখনো কখনো বিভিন্ন অর্গানাইজেশনের নামের সাথে জাতীয় শব্দটি বসিয়ে দেয়া হয়। এটা ঠিক না। তাই, ‘জাতীয়’ শব্দটির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য একটি অথিরিটি থাকা দরকার”। চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর (ডিএফপির)-এর মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইসতাক হোসেনকে আমি মোবাইলে ‘জাতীয় পত্রিকা’র সংজ্ঞার সংকটের কথা জানালে তিনি সম্মতি জানান এবং তাঁর পরামর্শে ডিএফপির পরিচালক (বিজ্ঞাপন ও নিরীক্ষা) আবুল কালাম মোহাম্মদ শামসুদ্দিন আমাকে ফোন করে জানান- “প্রত্যেকটি উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ে যাদের সার্কুলেশন আছে, তারা জাতীয় পত্রিকা বলে দাবি করে।....এটা হলো সাংবাদিকদের দাবি। ‘জাতীয় পত্রিকা’র অফিসিয়ালি কোনো অস্তিত্ব নেই। তাই এর সংজ্ঞা বা বৈশিষ্ট্যও নেই...”। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মিডিয়া বিশেষজ্ঞ ও সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার প্রফেসর ড. গোলাম রহমানের মতে, “জাতীয় পত্রিকা বলতে ধারণা করা হয়, পুরো দেশকে কাভার করে, এমন পত্রিকা। কিন্তু এর কোনো অফিসিয়াল সংজ্ঞা বা গ্রামার নাই। জাতীয় বলে আসলে কিছু নাই। থাকাটা জরুরিও না। পত্রিকার ক্ষেত্রে তো ডিএফপি নির্ধারিত গ্রেড আছে; এ গ্রেড বি গ্রেড সি গ্রেড। জাতীয় পত্রিকা হিসেবে ডিফাইন করা না করায় কোনো সুবিধা-অসুবিধা বা সমস্যার কথা তো শুনিনি”। মিডিয়া বিশেষজ্ঞ ও বিশিষ্ট মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, দি ডেইলি এশিয়ান এইজ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও বেগম রোকেয়া বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বললেন- “সেই বৃটিশ কলোনিয়াল আমলে, যেগুলো প্রভিন্সে ছাপা হতো, সেগুলো প্রভিন্সিয়াল বা আঞ্চলিক, আর ক্যাপিটাল অর্থাৎ লন্ডন থেকে ছাপা হলে সেগুলোকে ন্যাশনাল বলা হতো। সেই ধারণাই গত ৪৭ বছরে কেউ পাল্টায়নি। প্রচলিত নিয়মে, কোন্টি জাতীয় পত্রিকা, সেটা বলা মুশকিল। কিন্তু, জাতীয়করণ বলতে, কোনো একটি/দুটি পত্রিকার সরকারিকরণ চাই না; বরং আমি শত ফুল ফুটুক নীতিতে বিশ^াসী”। উত্তরবাংলা ডটকমের সম্পাদক ড. শাশ^ত ভট্টাচার্য বললেন- ‘জাতীয় পত্রিকা একটি ভেগ টার্ম। আসলে এর কোনো প্রকৃত সংজ্ঞা বা স্বরূপ খুঁজে পাওয়া যায় না’। বেগম রোকেয়া বিশ^বিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাবিউর রহমান প্রধান বললেন- ‘জাতীয় পত্রিকার কোনো জাতীয় চরিত্র নেই! ঢাকা থেকে প্রকাশ হয়ে সারাদেশে গেলেই যদি তাকে ‘জাতীয়’ বলা হয়, তাহলে এমন অনেক পত্রিকা আছে, যেগুলো সারাদেশ তো দূরের কথা, ঢাকারই সব জায়গায় যায় না। আমি ছাত্রাবস্থায়ও এর সংজ্ঞা পাইনি; ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াতে গিয়েও এর কোনো সুনির্দিষ্ট ধারণা দিতে পারি না, তাতে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। তাই সরকারিভাবে এর একটা সুরাহা হওয়া উচিত। দৈনিক যুগান্তরের সিনিয়র সহকারী সম্পাদক, বিশিষ্ট কলামিস্ট মাহবুব কামাল বলেন- ‘জাতীয় পত্রিকা বলাটা ঠিক না। বলা উচিত মেইনস্ট্রিম বা মূলধারার পত্রিকা”। অন্যদিকে, অনলাইন পত্রিকা বা নিউজ পোর্টালগুলোর ক্ষেত্রে এই নামকরণ কেমন হবে? ঢাকা থেকে প্রকাশিত একটি অনলাইন পত্রিকাকে কি ‘জাতীয়’, আর রংপুর থেকে প্রকাশিত অনলাইন পত্রিকাকে স্থানীয় বলবো? সেটা কেন হবে? দুটোরই তো প্রচারপরিধি বিশ^ব্যাপী। তাহলে তো এই দুটোকেই বলা উচিত ‘আন্তর্জাতিক পত্রিকা’ বা ‘বিশ^ পত্রিকা’। আমার প্রস্তাব ‘জাতীয় পত্রিকা সংজ্ঞায়ন/নির্ধারণ/বৈশিষ্ট্যায়ন/চরিত্রায়ন কমিটি’ (অথবা অন্য কোনো নামে) অথবা কর্তৃপক্ষ/কমিশন গঠন করে ক্রাইটেরিয়া ঠিক করে রাষ্ট্রীয়ভাবেই ঘোষণা করা যেতে পারে কোন্টি বা কোন্গুলোকে জাতীয় পত্রিকা বলা হবে। সেই সাথে অন্য যেসব বিষয়ের সাথে যথাযথ/যুক্তিযুক্ত কারণ ছাড়া ‘জাতীয়’ নামটি যত্রতত্র জুড়ে দেয়া হয়, সেগুলোর ব্যাপারেও পর্যায়ক্রমে সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার। কারণ ‘জাতীয়’ শব্দটি আসলে সমগ্র জাতির প্রতিনিধিত্বকারী, খুবই মর্যাদাপূর্ণ স্পর্শকাতর একটি শব্দ। তাই এর ব্যবহারও হওয়া উচিত রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে। প্রতিবেদক: ছড়াকার, সংস্কৃতিকর্মী ও অনিয়মিত কলামিস্ট।  ইমেইল: ashafa.salim@gmail.com

মন্তব্য করুন


 

Link copied