আর্কাইভ  শুক্রবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ● ৬ বৈশাখ ১৪৩১
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: পলাশবাড়ীতে আসামির ছুরিকাঘাতে বাদীর মৃত্যু, গ্রেফতার ১       মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের সন্তান-স্বজনের ভোটে না দাঁড়ানোর নির্দেশ       ভোজ্যতেলের দাম বাড়ল, খোলা তেলে সুখবর       বিএনপি নেতা সোহেলের নিঃশর্ত মুক্তি দাবিতে রংপুরে  মানববন্ধন ও সমাবেশ        খরার ঝুঁকিতে রংপুর অঞ্চল      

 width=
 

নীলফামারীতে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন

শুক্রবার, ৬ জুলাই ২০১৮, রাত ০৯:২৩

ইনজামাম-উল-হক নির্ণয়, নীলফামারী ৬জুলাই॥ নীলফামারীতে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ জেলা শাখার ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শুক্রবার বিকাল ৫টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর এমপি। উদ্বোধক ছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মানবধিকার কর্মী এড. সুলতানা কামাল। এসময় সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেছেন, বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ। আমরা একটা মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছি এবং বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অসাম্প্রদায়িক শ্লোগান সেটি আমরা বুকে ধারণ করেছিলমা ১৯৭১ সালে। সেই শ্লোগন হলো জয় বাংলা। এই জয় বাংলা শ্লোগানটি বাংলাদেশের সকল মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জয় বাংলা শ্লোগান উচ্চারণের মধ্য দিয়ে বাংলার হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ও মুসলমানসহ সব ধর্মের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলন। যার বিনিময়ে আমরা একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র পেয়েছি। মন্ত্রী বলেন, ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার। আমাদের পরিচয় আমরা বাঙ্গালী। বাংলার হিন্দু, বাংলার বৌদ্ধ, বাংলার খ্রিষ্টান, বাংলার মুসলমান আমরা সবাই বাঙ্গালী। এটাই আমাদের পরিচয়, আমরা বাঙ্গালী। এই পরিচয় নিয়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি, এই পরিচয় নিয়ে ৩০ লক্ষ মানুষ জীবন দিয়েছে। এ ধরণের ত্যাগের বিনিময় স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং সেটা নিয়ে গর্ভ করার অহংকার পৃথিবীতে খুব কম দেশের আছে, কম জাতির আছে। কিন্তু আমাদের দূভাগ্য। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যা করা হলো। এবং সেই হত্যাকান্ডকে অনেকে বর্ণনা করেন কতিপয় বিপদগামী সেনাবাহিনীর সদস্যরা ওই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছিল। ব্যপারটা এতো সহজ সরল ভাবে ছিলনা। ব্যাপারটা অনেক গভীরে ছিল, ষড়যন্ত্র অনেক বৃস্ত্রিত ছিল এবং তার শিখড় অনেক ছড়ানো ছিল। যেই শক্তি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে ছিল, দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক এই সমস্ত চক্র একত্রিত হয়ে এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছিল। কারণ তারা কোন দিনই বাংলাদেশের জন্মটাকে মেনে নিতে পারেনি। আর পারেনি বলেই তারা সারাক্ষণ অপচেষ্ঠা চালিয়েছে যে কিভাবে এই দেশটাকে ধ্বংস করা যায়। তারা মনে করেছিল যদি বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা যায় তাহলে বাংলাদেশটা আর টিকবে না ধ্বংস হয়ে যাবে। সংস্কৃতিমন্ত্রী আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধের ডাক দিয়েছিলেন ধর্ম ভিত্তিক রাষ্ট্র ভেঙ্গে অসম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গড়া, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়া এবং গরীব দুঃখি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য। আমরা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে দেশ স্বাধীন করলাম। বঙ্গবন্ধু অসম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক এবং গরীব দুঃখি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে যখন রাষ্ট্র সাজাচ্ছেন ঠিক সেই সময় ১৯৭৫ সালে দেশবিরোধী দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্র বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলো। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর র্দীঘ ২১টা বছর এই বাংলাদেশ উল্টা পথে হেটেছে। যেটা থেকে আমরা বের হয়ে আসার চেষ্টায় মুক্তিযুদ্ধের ভেতর দিয়ে একটা ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র ভেঙ্গে একটি অসম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গড়ার, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়া, গরীব দুঃখি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার যে সংগ্রাম আমরা করেছিলাম সেটাকে উল্টো পথে নিয়ে গেলে ওই দেশ বিরোধীরা। আবার সেই ধর্মী উন্মোদনা, আবার সেই ধর্মীয় অপপ্রচার এবং ধর্মকে পুজি করে রাজনৈতিক স্বার্থ উদ্ধারের অপচেষ্টা যেটা পাকিস্তানী আমলে পুরোটাই করা হয়েছে। সম্প্রদায়িক শক্তি সবসময় ষড়যন্ত্রই করেছে উল্লেখ করে মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন ‘১৯৫২ সালে যখন আমরা বাংলা ভাষার জন্য আন্দোলন করলাম তখন বলা হয়েছিল এটা ভারতে ষড়যন্ত্র, এটা হিন্দুরা করছে। বঙ্গবন্ধু যখন বাঙ্গালীর অধিকার আদায়ের কথা বললেন তখন বঙ্গবন্ধু হয়ে গেলে ভারতের দালাল, হিন্দুদের দালাল। এই সম্প্রদায়িক শক্তি ষড়যন্ত্র করে বাঙ্গালীদের সবসময় দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করেছিল। এখনও করছে।’ সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মানবধিকার কর্মী এড. সুলতানা কামাল বলেছেন, শুধু ধর্ম দিয়ে একটি রাষ্ট্র তৈরী হয়না এমনকি ভাষার ভিত্তি দিয়ে রাষ্ট্র তৈরী হয়না। তার চেয়ে বেশি কিছু লাগে। আমি প্রমাণ দিচ্ছি; সৌদি আরব থেকে শুরু করে গোটা মধ্য প্রাচ্যের পুরো ভুখন্ডের জনসংখ্যার শতকরা ৯৯ ভাগ মানুষ মুসলাম এবং তারা সবাই আরবি ভাষায় কথা বলেন। তাহলে এই গোটা মধ্যপ্রাচ্যটা কেন একটা আরবি দেশ হলোনা কেন? পাকিস্তুানের যে সজ্ঞা ধর্ম ভিত্তিক রাষ্ট্র। তাহলে সেই সজ্ঞাটা ওই মধ্য প্রাচ্যে কেন লাগানো হলো না যে মধ্য প্রাচ্য ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র। তাহলেতো সব মিলে একটা দেশ হয়ে যেত। পাকিস্তানের পাশে আফগানিস্তান আছে, ইরান আছে আরো বেশ কটি মসুলমানে ভরা দেশ আছে। তারা একটা দেশ হয় না কেন। আসলে খালি ধর্ম ভিত্তি দেশ হয় না। একটা দেশ তৈরী হয় সেটি হলো যে, ‘ সংস্কৃতি, সভ্যতা, ইতিহাস এসবের ভিত্তি। এটা না থাকলে একটা জাতির ভিত্তি তৈরী হয়না, একটা রাষ্ট্রও তৈরী হয়না। এজন্যই একটা ইরাকের মানুষ বলে আমি ইরাকী, মিশরের লোক বলে আমি মিশরী। কারণ তাদের দেশটা তৈরী হয়েছে সংস্কৃতি, সভ্যতা, ইতিহাসের ভিত্তিতে। তাই এই মানুষ গুলো আগে তাদের দেশের পরিচয় দেয় এবং পরে তাদের ধর্মের পরিচয় দেয়। ঠিক একই ভাবে আমরা আমাদের পরিচয়টা দেয় প্রথমে আমরা বাঙ্গালী এবং পরে নিজ নিজ ধর্ম। আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার। এই যে ২১টা বছর আমরা উল্টো পথে হাটলাম। এই উগ্রবাদী গোষ্টি বার বার আমাদের উল্টো পথে হাটাতে বিভ্রান্ত করেছে। দেশটাকে সাম্প্রদায়িক বানানোর চেষ্টা করছে। এখন আমাদের সবচেয়ে বড় লড়াই শুরু হয়েছে সম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই। স্বাধীন বাংলাদেশে এটাতো হবার কথা ছিলনা। এই লড়াইতো ১৯৭১ সালে করে এসেছি। কিন্তু আজো সেই লাড়াই করতে হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশটাকে অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়তে। তার এই লড়াই মুক্তিযুদ্ধের সকল শক্তি একত্রিত হন এবং সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গুড়ে তুলুন।’ জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি গোড়াচাঁদ অধিকারীর সভাপতিত্বে প্রধান বক্তা ছিলেন হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এড. রানা দাস গুপ্ত। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রী যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনিন্দ্র কুমার নাথ, সাংগঠনিক সম্পাদক স্বপ্না বিশ^াস। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের জেলা সাধারণ সম্পাদক বাবু খোকা রাম রায়, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুজার রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আরিফা সুলাতানা লাভলী, জেলা পুজা উদযাপন পরিষদের সভপাতি এড. অক্ষয় কুমার রায়, সাধারণ সম্পাদক রমেন্দ্র বর্দ্ধন বাপীসহ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের বিভিন্ন ইউনিটের নেতৃবৃন্দ। এর আগে সকালে মন্ত্রী নিজ বাসভবনের সামনে জেলা সদরে অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ১৫ পরিবারের মাঝে এক বান্ডিল করে ঢেউটিন, তিন হাজার করে টাকা ও ব্যক্তিগত তহবিল থেকে একটি রিক্সা বিতরণ করেন। #

মন্তব্য করুন


 

Link copied