রাবি প্রতিনিধি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) সাংবাদিক আরাফাত রাহমানের ওপর হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলার অগ্রগতি না হওয়ায় ও আসামীদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর ২টায় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মরত সাংবাদিকরা এই মানবন্ধন করেন।
মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি শিহাবুল ইসলাম বলেন, আরাফাতের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনার এক বছর পূর্ণ হলেও এখনও কোন বিচার পাইনি। সে সময় আরাফাতের ওপর যেসব ছাত্রলীগ নেতারা হামলা চালিয়েছিল তাদের কাউকে গ্রেপ্তার করেনি। এমনকি তদন্ত প্রতিবেদন পর্যন্ত আদালতে দাখিল করেনি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করলেও প্রশাসন তাদের ব্যাপারে নিরব ভ‚মিকা পালন করছে।
সংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম জাহিদ বলেন, শুধু আরাফাতের ওপর নয় সাম্প্রতিক সময়ে জগন্নাথ এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও সাংবাদিকদের ওপর ছাত্রলীগ হামলা চালিয়েছে। সারাদেশে ধারাবাহিকভাবে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা বেড়েই চলেছে। কিন্তু কোনো ঘটনারই বিচার হচ্ছেনা।
রাবি প্রেসক্লাবের সভাপতি রবিউল ইসলাম তুষার বলেন, একবছর আগে আরাফাতের উপর যে ছাত্রলীগ নেতারা হামলা করেছিল তাদের শাস্তি না হওয়ায় সাংস্কৃতিক কর্মীসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর ওই ছাত্রলীগ নেতারা আবার হামলা করেছে। এভাবে বার বার হামলার ঘটনা ঘটালেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করা দুঃখজনক।
রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক আলী ইউনুস হৃদয়ের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য দেন রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হুসাইন মিঠু, প্রচার সম্পাদক আহমেদ ফরিদ, রাবি সাংবাদিক সমিতির সহ-সভাপতি রাশেদ রিন্টু, রাবি প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মানিক রায়হান বাপ্পি ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হক সোহাগ।
জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই রায়হান বলেন, ভ্ক্তুভোগীর চিকিৎসা প্রতিবেদন হাতে পেয়েছি। মামলার তদন্ত প্রায় শেষের দিকে। আশা করছি এ মাসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, দায়িত্ব নেয়ার পরে আরাফাত রাহমানের পক্ষ থেকে কোন লিখিত অভিযোগ আসেনি। আমার জানা মতে এটা গত প্রক্টরের সময়ের ঘটনা। এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।
দায়িত্ব হস্তান্তর হলে নতুন করে আবেদন দিতে হয় কিনা এমন প্রশ্নে প্রক্টর বলেন, পূর্বের অভিযোগের কাগজ কে কোথায় রাখছে আমি জানি না।
গত বছরের ১০ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে দেশ ট্রাভেলসের বাস ভাঙচুরের ছবি তোলার সময় আরাফাতের ওপর হামলা করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ওই দিনই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়। এছাড়া হামলায় অংশ নেয়া ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে নগরীর মতিহার থানায় হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করা হয়।
দায়েরকৃত ওই মামলায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের চার নেতার নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১০ জনের নামে হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করা হয়। ছাত্রলীগ নেতারা হলেন, সহ-সভাপতি আহমেদ সজীব, আইনবিষয়ক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বিজয়, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান কানন এবং সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান লাবন।
এছাড়া হামলার ওই দিন রাতেই হামলার ঘটনায় সাইফুল ইসলাম বিজয় ও মাহমুদুর রহমান কাননকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। পরে ওই বছরের নভেম্বর মাসে ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান কাননের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয় এবং চলতি বছরের ৪ ফেব্রæয়ারি ছাত্রলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বিজয়ের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নেয় ছাত্রলীগ।