আর্কাইভ  শনিবার ● ২০ এপ্রিল ২০২৪ ● ৭ বৈশাখ ১৪৩১
আর্কাইভ   শনিবার ● ২০ এপ্রিল ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: ডিমলা উপজেলা নির্বাচন॥ এমপির ভাই, ভাতিজা ও ভাতিজি বউ প্রার্থী-তৃণমূলে ক্ষোভ       কিশোরী গৃহকর্মীকে খুন্তির ছ্যাকা; রংপুর মেডিকেলে মৃত্যু যন্ত্রণায় পাঞ্জা লড়ছে নাজিরা       সারাদেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি       হিট অ্যালার্টে ৭ দিন স্কুল বন্ধের দাবি       শিল্পী সমিতির নতুন সভাপতি মিশা, সম্পাদক ডিপজল      

 width=
 

ঘোলাটে হচ্ছে পরিস্থিতি

রবিবার, ৫ আগস্ট ২০১৮, সকাল ০৭:৩৭

ডেস্ক রিপোর্ট: নিরাপদ সড়কের দাবিতে অটল শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিপরীতে নিরাপত্তার অজুহাত তুলে রাস্তায় গাড়ি না নামাতে পরিবহন মালিকরা অনড় থাকায় দেশজুড়ে এক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বাস মালিক-শ্রমিকদের অঘোষিত ধর্মঘটে ভেঙে পড়েছে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা। জিম্মি হয়ে পড়া সাধারণ মানুষের সীমাহীন ভোগান্তির পাশাপাশি ভোগ্যপণ্যের বাজারেও প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এর মধ্যেই ফেসবুকে নানারকম গুজব ছড়িয়ে উত্তাপ ছড়ানো হচ্ছে। আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টার একটি অডিওবার্তাও গতকাল শনিবার ফাঁস হয়। গুজব ও নানামুখী বক্তব্য বিবৃতিতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন দেশের সাধারণ মানুষ। প্রথমে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন রাজধানীতে সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন তা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। গতকাল রাজধানীসহ বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ-যুবলীগের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনাও ঘটে। কোথাও কোথাও মারমুখী দেখা গেছে পরিবহন শ্রমিকদেরও। সরকারের নানামুখী পদক্ষেপের পরও সংকট না কেটে বরং ঘনীভ‚ত হওয়ায় সব মিলিয়ে বিশ্লেষকদের ধারণা, যতই দিন যাচ্ছে পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে উঠছে। গতকাল ফেসবুকে শিক্ষার্থীর চোখ উপড়ে ফেলা ও চারজনকে আটকে রাখার একটি গুজবকে কেন্দ্র করে রাজধানীর ঝিগাতলায় শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে তাদের সঙ্গে ছাত্রলীগ-যুবলীগের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় বেশ কয়েকজন আহত হন। খবরটি ভিত্তিহীন ও ফেসবুকে তৈরি বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। ফেসবুক লাইভে ওই গুজব ছড়ানোর অভিযোগে গতকাল রাতে গ্রেপ্তার হন অভিনেত্রী নওশাবা আহমেদ। রাতেই ২৪ ঘণ্টার জন্য থ্রি-জি ও ফোর-জি ইন্টারনেট সেবা বন্ধের ঘোষণা আসে। উসকানি ছড়ানোর অভিযোগে মামলা হয় ২৮টি ফেসবুক ও টুইটার আইডির বিরুদ্ধে। সরকার ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবারই বলা হচ্ছে, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সুযোগসন্ধানীরা ঢুকে পড়েছে। তারা নানাভাবে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। এর মধ্যেই বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর ফোনালাপের একটি অডিও ফাঁস হয়। যাতে তাকে এক তরুণকে ‘ঢাকায় মানুষজন নামিয়ে দেওয়ার’ নির্দেশ দিতে শোনা যায়। বিএনপির শীর্ষ নেতারাও আন্দোলন নিয়ে নানা ধরনের কথা বলছেন। গত ২৯ জুলাই শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামার পর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের দাবি মেনে নেওয়ার কথা জানিয়ে ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহবান জানিয়েছেন। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোকে তিনি বিভিন্ন নির্দেশনাও দিয়েছেন। গতকালই বাসচাপায় নিহত দিয়া ও রাজীবের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শহীদ রমিজ উদ্দিন স্কুল ও কলেজকে পাঁচটি বাস উপহার দেন প্রধানমন্ত্রী। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পাশাপাশি তাদের আন্দোলন বিএনপি-জামায়াত ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে চাচ্ছে বলেও সতর্ক করছেন। গতকাল ঝিগাতলায় আওয়ামী লীগের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে হামলার পর তিনি বলেছেন, শিক্ষার্থীদের মতো স্কুলের পোশাক পরে দুর্বৃত্তরা এ হামলা চালিয়েছে। অন্যদিকে রাতে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি সেখানে (জিগাতলা) মুহুর্মুহু গুলি হয়েছে, তাতে অনেক শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়েছে।’ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ গতকাল এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের হাসির কারণেই দেশ অস্থিতিশীল হয়েছে। তিনি পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে সরকারকে আপস না করারও আহবান জানিয়েছেন। একই দিনে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ঝাঁকুনিতে সরকার সচেতন হয়েছে।  শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় আরও সক্রিয় হয়েছে পুলিশ। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আজ রবিবার থেকে দেশব্যাপী ট্রাফিক সপ্তাহ পালনের ঘোষণা দিয়েছেন। দুপুরে শাহবাগে শিক্ষার্থীদের কাছে গিয়ে একাত্মতা প্রকাশ করে ঢাবি ছাত্রলীগ। শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো যৌক্তিক বলে একমত প্রকাশ করেছেন সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী। দাবি পূরণে নেওয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপও। বারবার শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরার আহবান জানানো হচ্ছে। তারপরও তারা রাস্তা ছাড়ছে না। বাস মালিকরাও বাস না নামানোর সিদ্ধান্তে অনড়। এরই মধ্যে ছড়ানো হচ্ছে নানা গুজব। এ পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন দেশের সাধারণ মানুষ। সরকারও চিন্তিত। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সুযোগে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার তৎপরতা চলছে এমন আশঙ্কাই জোরালো হয়ে উঠছে। নিরাপদ সড়কের আন্দোলন শুরুর পর এই পর্যায়ে এসে পরিস্থিতি ক্রমেই ঘোলাটে হয়ে পড়ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। শিক্ষার্থীদের দাবি মানার পাশাপাশি পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের রাস্তায় গাড়ি বের করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল থেকে বারবার বলা হচ্ছে। তারা তাতে কর্ণপাত না করে গতকাল ঘোষণা দিয়েছেন দিনের মতো রাতেও দূরপাল্লার বাস বন্ধ রাখা হবে। কোথাও কোথাও পরিবহন শ্রমিকদের বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে। গতকাল মাদারীপুর-শরীয়তপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের নাজিমউদ্দিন কলেজ গেটের সামনে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন মাদারীপুরের পরিবহন শ্রমিকরা। আগের ৬ দিনের মতো গতকালও রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব, মিরপুর, মহাখালী, মধ্যবাড্ডা, উত্তরা, আসাদগেটসহ বিভিন্ন এলাকায় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেয়। বেশিরভাগ এলাকায় যানবাহনের কাগজপত্র তল্লাশি করেছে। প্রায় প্রতিটি প্রধান সড়কেই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অবস্থান ছিল। কোথাও কোথাও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদেরও উপস্থিতি ছিল। গত কয়েক দিনের মতো দেশের অন্য শহরের রাজপথেও নেমেছিলেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল সকালে রাজধানীর ঝিগাতলায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদর দপ্তরের গেটের সামনে কয়েকশ শিক্ষার্থী জড়ো হয়। তারা প্ল্যাকার্ড হাতে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’সহ ৯ দফা দাবি সংবলিত শ্লোগান দেয়। দুপুর ২টার দিকে মাথায় হেলমেট পরা ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কর্মীরা লাঠি হাতে অতর্কিত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরাও প্রতিরোধ করে। এতে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টাধাওয়া ও ইটপাটকেল ছোড়াছুড়ি হয়। বিজিবির সদস্যরা গেট থেকে সামনে এসে যুবকদের থামানোর চেষ্টা করেন। এরই মধ্যে ধানমÐিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে এক ছাত্রের চোখ উপড়ানো ও চারজনকে আটকে রাখার খবরে উত্তেজিত হয়ে ওঠেন শিক্ষার্থীরা। সায়েন্স ল্যাব এলাকা থেকে এসে যোগ দেন আরও শিক্ষার্থী। তারা মিছিল নিয়ে গিয়ে কার্যালয়ে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাধে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল ছোড়ে। আন্দোলনকারী দুই শিক্ষার্থীকে পুলিশ আটক করে। বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দাবি করেন সংঘর্ষে ১৭ আহত হয়েছেন। পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মারুফ হোসেন সরদার জানান, ‘পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। আমরা অত্যন্ত ধৈর্য ধরে আছি। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। পরিস্থিতি দেখে আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।’

মন্তব্য করুন


 

Link copied