আর্কাইভ  শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ● ১৫ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

 width=
 
শিরোনাম: স্বাস্থ্যের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ফজলুল হক কারাগারে       কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা       লালমনিরহাটে পুকুরে জাল ফেলতেই জালে উঠে এলো যুবকের মরদেহ       কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা       রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা      

 width=
 

আলুর আলোয় উদ্ভাসিত উত্তর জনপদ: ফসলের বহুমুখীকরনে দিন বদল

বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০১৩, দুপুর ০২:০৭

ইনজামাম-উল-হক নির্ণয়, নীলফামারী, ৩০ অক্টোবর॥ উত্তরের মঙ্গা অতীত। অভাব-অনটন না থাকার কারণ নেই, আবার না খেয়ে মরে যাওয়ার সেই দিনও নেই। ফসলের বহুমুখীকরণ দিন বদলে দিচ্ছে, আগাম চাষের আমন ধান গোলায় তুলেই আগাম আলু বুনতে শুরু করেছেন উত্তরজনপথের কৃষক। ধানের পর আলু উত্তরের জনপদকে আলোয় উদ্ভাসিত করে তুলবে। উত্তরাঞ্চলের কৃষকরা এখন কোন জমি আর পতিত ফেলে রাখছেন না। এক সময় মঙ্গা নামক এক দুঃসহ কাল কাটাতেন তারা। ফসল নেই, কাজ নেই, নেই খাবার। সেই মঙ্গাকে তাড়িয়ে দিয়েছে হাল আমলের আগাম ধান। আগাম ও স্বল্পমেয়াদী জাতের আমন ধান কর্তনের সঙ্গে সঙ্গেই কৃষকরা আলু রোপনে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। একদিকে চলছে ধানকর্তন, অন্যদিকে চলছে আলু রোপন। আবার কোথাও কোথাও আলুর গাছ গুলো লগলগ করে বেড়ে উঠছে। আলু রোপনকে ঘিরে প্রাণ ফিরে পেয়েছে উত্তরের নীলফামারী জেলা। ক'দিন আগে ব্রি-৩৩, ব্রি-৩৯, ব্রি-৪৯, ব্রি-৫৬ ও বীণা-৭ জাতের ধান কেটেছেন কৃষক। সেই জমিতে এখন আগাম আলুর বীজ বুনছে, গত বছরের ভালো ফলন তাদের আগ্রহ বাড়িয়েছে। ৫৫ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে বাজারে আসবে এই আলু। ফসলের মাঠে কৃষক ও কৃষি শ্রমিকদের বসে থাকার সময় নেই। প্রচুর কাজ হাতে। কাজ করে শেষ করতে পারছেনা। কৃষি শ্রমিকদের তাই পোয়া বারো। শ্রমের মুল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে বছরের এই সময়টা যে কৃষি শ্রমিকরা রাজধানী বা অন্যান্য শহরে দিন মজুরি করতে যেতেন, তারা মাঠেই রয়ে গেছেন।

রংপুর কৃষি আঞ্চলিক অফিসের তথ্য মতে, চলতি বছরে এখনও আলু উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হয়নি। তবে গতবছরের লক্ষমাত্রাকে সামনে নিয়ে অচিরেই আলু উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ঘোষনা করা হবে। সুত্র মতে গত বছর এবার রংপুর বিভাগের আটটি জেলায় ১ লাখ ৫৪ হাজার ৯৪৮ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এরমধ্যে রংপুর জেলায় ৫০ হাজার ২১৮ হেক্টর, কুড়িগ্রামে ৫ হাজার ৫৪২হেক্টর, লালমনিরহাটে ৪ হাজার ৭৫৬ হেক্টর, গাইবান্ধায় ৯ হাজার ৮৯ হেক্টর, নীলফামারীতে ১৮ হাজার ৯৯৪ হেক্টর, দিনাজপুরে ৩৫ হাজার ৪৭৭ হেক্টর, ঠাকুরগাঁয়ে ২২ হাজার ১৮৬ হেক্টর, পঞ্চগড়ে ৮ হাজার ৬৮৬ হেক্টর জমিতে আলু রোপন করা হয়। বাজারে যার আলু যত আগে উঠবে, তার লাভ তত বেশি। আগেভাগেই আলু আবাদ করছি নবান্নের বাজারটা ধরতে হবে।" আর দিনা কয়েক পরই আমন ধান কাটা শুরু হয়ে যাবে। এই ধান ঘরে তুলে গ্রামে শুরু হবে নবান্নের উৎসব। নবান্নে নানা ধরনের সবজির সঙ্গে আলু মিশিয়ে বাহারি তরকারির কদরও বেশি।জানালেন নীলফামারীর কিশোরীগঞ্জ উপজেলার উত্তর দুরাকুটি গ্রামের আলু চাষী আলম হোসেন। এবার আবহাওয়া অনুকূল, বীজের দাম কম। প্রয়োজনীয় সারের সরবরাহও স্বাভাবিক। নীলফামারী জেলা সদর, কিশোরীগঞ্জ, সৈয়দপুর, জলঢাকা উপজেলায় আলু চাষ নিয়ে প্রচন্ডব্যস্ততা। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মাঠের পর মাঠ কর্মব্যস্ত। নারী-পুরুষ সবাই মহাখুশী। জিয়ারুল, শাবুল, বেলাল, টিটো, জহুরুল, খোকন, মানিক, প্রতিমা রায়, গোলাপী রানী রায়, রঞ্জিতা রাণী, রঞ্জিত এবং আরও অনেকেই কাজ করছেন আনন্দ নিয়ে। পারিশ্রমিক পাচ্ছেন দিনে ২০০ টাকা। বাড়ি ফিরে সন্তানের ক্ষুধার্ত চোখ দেখতে হবে না, এই ভাবনাতেই তাদের কাজের গতি যেন বেড়ে গেছে। তারা জানায় এবার ধর্মভেদে দূঁর্গা পূঁজো ও কোরবানীর ঈদটা তাদের ভালই কেটেছে। রংপুর অঞ্চলের নীলফামারী,লালমনিরহাট,কুড়িগ্রাম,রংপুর সদর,গাইবান্ধায় এক সময় তীব্র অভাব ছিল। আগাম জাতের হাইব্রিট ধানের চাষ এসব এলাকার অন্ধকার দুর করেছে। মঙ্গাকে করেছে অতিত। নীলফামারীর জেলা সদরের চাপড়া গ্রামের কৃষক রমজান আলী বলেন, তিনি এবার সাত বিঘা জমিতে ব্রি-৩৩ ধান আবাদ করেছিলেন। ধান বিক্রি করেই আলু আবাদের খরচ বহন করছেন। বেড়াডাঙ্গার কৃষক কামরুজ্জামান ১৭ বিঘা জমিতে আলু আবাদ করছেন। কিশোরীগঞ্জ উপজেলার পুটিমারী, কালিকাপুর ও পানিয়ালপুকুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায় অন্য রকম এক দৃশ্য। যতদূর চোখ যায় ততদূর শুধু আলু আবাদ চলছে। কিশোরীগঞ্জ উপজেলার নিতাই ইউনিয়নের গাংবের গ্রামের আলুচাষী আলহাজ্ব আবুল কালাম আজাদ। জানালেন আগাম জাতের আমন ধান আবাদ করেছিলেন। সেই জমিতেই আলু করছেন। ফলন নিয়ে খুব আশাবাদী পানিয়ালপুকুর এলাকার আলুচাষী মোছারুল। তিনি গতবার পাঁচ বিঘা জমিতে আলু আবাদ করলেও এবার দ্বিগুণ করেছেন। একই উপজেলার পুটিমারী ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামের আলুচাষী রবিউল ইসলামের সাথে কথা বলে জানা গেল, কৃষকরা গ্রানুলা জাতের আলুই বেশি লাগাচ্ছে। এ ব্যাপারে জানতে নীলফামারী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মহসীন রেজা বলেন, সবচেয়ে বেশি আগাম জাতের আলু চাষ হয় নীলফামারী,রংপুর লালমনিরহাট জেলায়। নীলফামারী জেলায় এ পর্যন্ত ১ হাজার ৩৯৬ হেক্টরে আগাম আলু রোপন করেছে কৃষক। এখনও রোপনের কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। তিনি আরো বলেন এখন পর্যন্ত নীলফামারীর শুধুমাত্র কিশোরীগঞ্জ উপজেলার ৪ হাজার ১৮৫ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের গ্রানুলা আলু লাগানোর কাজ শেষ হয়েছে। এই উপজেলায় প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতেই আলু করবে কৃষক। উত্তর জনপদ এবারও আলুর খুব ভালো ফলন হবে, বুকভরা আশা নিয়ে মাটির বুকে আলুর বীজ বুনছেন কৃষক। সেই বীজে মিশে আছে সোনালী দিনের স্বপ্ন।

মন্তব্য করুন


 

Link copied