আর্কাইভ  শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ● ১৫ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

 width=
 
শিরোনাম: রংপুরবাসীর জন্য সরকারি চাকরি, পদ ১৫৯       স্বাস্থ্যের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ফজলুল হক কারাগারে       কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা       লালমনিরহাটে পুকুরে জাল ফেলতেই জালে উঠে এলো যুবকের মরদেহ       কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা      

 width=
 

ত্যাগের সেই মহিমা কোথায়?

বুধবার, ২২ আগস্ট ২০১৮, রাত ০৮:২২

লীনা পারভীন বছরে দু’টি ঈদ,আর ঈদ মানেই আনন্দ। বাঙালিদের জীবনে যে কয়েকটি জাতীয় উৎসব আছে তার মধ্যে ঈদ একটি অন্যতম উৎসব হিসাবেই বিবেচিত হয়ে আসছে। যদিও “ঈদ” মুসলমানের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব কিন্তু অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও এই উৎসবে অংশগ্রহণ করে আনন্দের সঙ্গেই। এসব দিনে যেহেতু সরকারি ছুটি থাকে তাই আনন্দের ভাগাভাগি হয়ে যায় সবার মাঝে। দুই ঈদের একটি হচ্ছে কোরবানির ঈদ যাকে আবার লোকাল ভাষায় অনেকে বড় ঈদও বলে থাকে। এই ঈদকে মুসলমানরা পালন করে ত্যাগের মাধ্যেম। আর এই ত্যাগ আমরা করে থাকি পশু জবাইয়ের মাধ্যমে। ছোটবেলা থেকেই জেনেছি কোরবানি দিতে হয় নিজের জন্য নয়। এই ত্যাগ মানে পবিত্র মন নিয়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে সমর্পণ। আর কোরবানির জন্যও যথাযথ নিয়ম আছে, আছে মাংস বিতরণের জন্য নিয়ম। আমি ধর্মীয় কোনও বাণী দিতে চাইছি না বা কোরবানির মহিমা নিয়েও লিখতে চাইছি না। তবে যে বিষয়টি আমার কাছে দৃষ্টিকটু মনে হচ্ছে সেটি হচ্ছে লোকজনের মাঝে একধরনের শো-অফ বা লোক দেখানো ভাব। প্রচারেই প্রসার কথাটি এখন ঈদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। যারা দেখানোর জন্য কিছু করেন তারাও চান যতটা প্রচার হয়। রোজার ঈদে আছে কে কত দামি পোশাক কিনলো আর কোরবানির ঈদে কে কত বড় গরু কত বেশি টাকা দিয়ে কিনলো তার প্রতিযোগিতা। রাস্তায় নামলেই এই সময়ে একটা কমন প্রশ্ন কানে আসে, ভাই দাম কত? আসলে এর মাধ্যমে আমরা কী জানতে চাই? দাম দিয়ে কী কার নিয়ত কতটা পবিত্র সেটা প্রকাশ পায়? না। দাম দিয়ে আমরা সেই ক্রেতাকে মাপতে চাই। তার সামাজিক মর্যাদাকে জানতে চাই। কার কত টাকা আছে সেটা জেনে নিতে চাই। ঈদের একটা জনপ্রিয় গান হচ্ছে,”ঘুরে ফিরে বারে বারে ঈদ আসে ঈদ চলে যায়, ঈদ হাসতে শিখায় ভালোবাসতে শিখায়, ত্যাগের মহিমা শিখায়।” আসলেই কি ঈদ আমাদেরকে ত্যাগের মহিমা শিখায়? বছরের দুটি দিনে দুটি ঈদের পালনের যে প্রস্তুতি দেখা যায় সেখানে কতটা ত্যাগ আর কতটা লোক দেখানোর উদ্দেশ্য থাকে? প্রতিযোগিতার এই বাজারে এখন কোরবানির পশু কেনাও হয়ে গেছে এক ধরনের প্রতিযোগিতার ইভেন্ট। কার গরু কত বড় আর বেশি দামের এ নিয়ে চলে জরিপ। পাড়ায় পাড়ায় চলে গুঞ্জন। এবার আবার নতুন করে জানতে পারলাম কেউ একজন বেশ কয়েকটি গরু আমেরিকার ট্যাক্সাস থেকে এনেছেন যার মধ্যে সবচেয়ে বড় গরুটি বিক্রি হয়েছে ২৮ লাখ টাকা দিয়ে। গরু কিনেই থেমে যাননি। তিনি আবার অত্যন্ত সুন্দর ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সেই গরু প্রদর্শনেরও ব্যবস্থা করেছেন। লোকজন সেই গরু দেখতে যাচ্ছে এবং সেলফিও তুলছে। প্রথমত অবাক বিষয় হচ্ছে, গরু কেন আমেরিকা থেকে আনতে হবে? সেই গরু আনার খরচ কতটা? যিনি এনেছেন তিনি কোন চিন্তাধারা থেকে গরুগুলো এনেছেন? নিশ্চয়ই গরুগুলো আনতে ট্যাক্স দিতে হয়েছে। সেখানে কি কারও কোনও ভূমিকা ছিল? অবশ্যই কে গরু আনবেন আর কত দিয়ে বিক্রি করবেন বা কিনবেন সেটি প্রত্যেকের ব্যক্তিগত বিষয় কিন্তু এর সাথে কোরবানির যে মহিমা সেটি বা কতটা সম্পর্কিত?। যিনি ২৮ লাখ টাকা দিয়ে গরু কিনেছেন তার আয়ের উৎসই বা কী? আমাদের দেশে এমন কজন আছেন যিনি এত টাকা দিয়ে গরু কোরবানি দিতে পারেন? কোরবানির উদ্দেশ্য যদি হয় সৃষ্টিকর্তার নামে উৎসর্গ তাহলে তিনি কি গোটাটাই এই উদ্দেশ্যেই উৎসর্গ করেছেন? জানিনা এর কত অংশ তিনি গরিবদের মাঝে বিলিয়ে দিবেন। সবচেয়ে ভালো হতো যদি তিনি এত টাকা দিয়ে গরু না কিনে এর থেকে একটি অংশ আশপাশের দরিদ্রদের মাঝে বণ্টন করে দিতেন। এর পাশাপাশি আরেক গ্রুপ আছে যারা কোরবানি এলেই শুরু করে দেয় এর বিরোধিতা করা। যারা এটিকে বিশ্বাস করেন এবং যারা কোরবানিকে সমর্থন করছেন তাদের অনুভূতিকে আহত করার অধিকার কি আমার আছে? যতদিন আমাদের সমাজে সবার মাঝে এক ধরনের বোধের জন্ম না নিচ্ছে ততদিন আমি চাইলেই কি বন্ধ করে দিতে পারবো পশু হত্যা? তাহলে তো বলতে হবে গরু ও ছাগলের মাংস খাওয়াও বন্ধ করে দেয়া উচিত। যারা কোরবানির ঈদ এলেই মাঠে নেমে যান, গালিগালাজ করেন তারা সবাই কি মাংস খাওয়া বাদ দিয়েছেন? দেন নি। জানিনা কেন, দিনে দিনে আমাদের মাঝে উৎসবের ধারণাগুলো নষ্ট হতে শুরু করেছে। কী গ্রাম কী শহর সব জায়গাতেই এখন একধরণের প্রাণহীন অবস্থার তৈরি হয়েছে। বাচ্চারা সারাবছর স্কুলের পড়াশুনার চাপে ভুলেই যায় উৎসবের মজা কোথায়। নতুন জামা কিনে লুকিয়ে রাখার কী মজা সেটাই বা বুঝবে কেমন করে? মুরুব্বিদের কাছ থেকে সালাম করে সালামি নেওয়ার কী উত্তেজনা সেটাই বা কোথায়? বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া এই প্রজন্ম এখন উৎসবকেও খণ্ডিত করে জানতে শিখছে। "ধর্ম যার যার উৎসব সবার" এই শিক্ষাটা যেন হারিয়ে যেতে বসেছে আমাদের মাঝ থেকে। এককেন্দ্রীক সংস্কৃতিতে বেড়ে উঠা সন্তানরা তাদের পাশের বাসার খোঁজই রাখে না। রাস্তার ওই পাড়ের কোনও বাচ্চা খেয়ে আছে না খেতে পায়নি সে কথা ভাবার মত মনটাই জন্মাচ্ছে না। পোশাক কেনার উত্তেজনা যতটা না আত্মিক তার চেয়ে বেশি লোক দেখানো। এখনতো কেউ কেউ আবার ঈদ শপিং এর জন্য দেশের বাইরেও যাচ্ছে। 'দাম" নয়, পোশাকের নতুনত্বই যে আকর্ষণীয় এই ধারণাটাই পাল্টে যাচ্ছে। ঈদ মানে এখন নিজের ঘরের চারদেয়ালের মাঝে বসে কোরমা পোলাও খেয়ে ঘুম দেওয়া, বড়জোড় কারও বাসায় দাওয়াত খেতে যাওয়া। এখন আর দলে দলে পাড়ার প্রতিবেশীদের বাসায় গিয়ে কারও বাসায় দুপুরের, কারো বাসায় রাতের খাবার রেওয়াজ নেই। এটাকে এখন প্রেস্টিজ হিসাবে দেখা হয়। ধর্মীয় উন্মাদনা কেড়ে নিয়েছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সেই আদি চেহারা। এখন আমরা অনেক বেশি তর্কে লিপ্ত হই নানা বিষয়ে। অথচ এসব উৎসবের মাঝ দিয়ে যে সামাজিক একটা ঐক্য গড়ে ওঠে এবং এই ঐক্যই হচ্ছে আমাদের বাঙালি সমাজের প্রধান সৌন্দর্য, এই জায়গাটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ধর্ম পালনের জায়গাটি একান্তই ব্যক্তিগত একটি বিষয়। কিন্তু এখন কেউ কেউ আবার সেটিকে এক প্রকার সামাজিক চাপ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে। এত বিভাজন, এত বিভক্তি আমাদের মাঝ থেকে উৎসবের সেই চিরচেনা চেহারাটিকে নষ্ট করে দিচ্ছে। কলুষিত করে ফেলছে এর সার্বজনীন গ্রহণযোগ্যতাকে। আমরা চাই উৎসবগুলো থাকুক উৎসবের মতো করেই। ঈদ পার্বনে আনন্দে মেতে উঠুক গোটা জাতি। এর মাঝ দিয়েই আবার ফিরে আসুক মানুষের মানুষের সম্পর্কের সেই আত্মার সম্পর্কগুলো। আমাদের সন্তানেরা শিখুক কেমন করে উৎসবকে প্রাণের উৎসবে রূপ দিতে হয়। তারাও শিখবে ঈদ কেবল আমার একার জন্য নয়। কেবল গাদা গাদা নতুন কাপড় কেনা আর বাজারের বড় প্রাণীটি কেনাই ঈদ নয়। ঘরে বসে কোরমা পোলাও খাওয়ার মাঝে নেই কোনও উৎসবের মজা। বরং আমার পাশের বাসার বন্ধুটিকে ডেকে এনে একসঙ্গে সেমাই খাওয়াতেই লুকিয়ে আছে ঈদের আসল মজা, মাজেজা। ঈদ, পূজা হয়ে উঠুক আমাদেরে সবার মিলনমেলার জায়গা। লেখক: সাবেক ছাত্র নেতা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

মন্তব্য করুন


 

Link copied