বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০১৩, রাত ০৯:১৭
ডেস্ক: অক্সিজেন দিতে না পারায় সন্ধ্যা থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে অবশেষে না ফেরার দেশে চলে গেলেন লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার বাড়াইপাড়া গ্রামের হতদরিদ্র বৃদ্ধা নছিরন বেগম। বুধবার গভীর রাতে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবার ভোরে তার মৃত্যু হয়। তবে মারা যাওয়ার পরেও নিস্তার পায়নি বৃদ্ধা নছিরন। ওয়ার্ড থেকে লাশ নিচে নামিয়ে আনার জন্য দাবি করা হয় একশ’ টাকা। নছিরনের স্বজনরা তা দিতে না পারায় স্ট্রেচার দেয়নি কর্মচারীরা।শেষ পর্যন্ত নিজেরাই লাশ কাঁধে করে নিচে নামিয়ে আনেন স্বজনরা। শেষ পর্যন্ত লাশ বাড়িতে নিয়ে যাবার টাকা না থাকায় দিনভর লাশ সামনে রেখে ভিক্ষে করে টাকা সংগ্রহ করে তার ছেলে ও স্বজনরা। পরে সে টাকায় লাশ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতাল সূত্র জানায়, লালমনিরহাটেরবাড়াইপাড়া গ্রামের এন্তাজ আলীর স্ত্রী বৃদ্ধা নছিরন অসুস্থ অবস্থায় বুধবার বিকেলে রংপুরে আসেন চিকিৎসা নিতে। চিকিৎসকরা জরুরি ভিত্তিতে তাকে রমেক হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেন। সেই সাথে তাকে জরুরি ভিত্তিতে অক্সিজেন দেয়ার পরামর্শ দেন।পরামর্শ অনুযায়ী নছিরনকে রমেকের কার্ডিওলজি বিভাগে ভর্তি করা হয় বুধবার সন্ধ্যায়। কিন্তু সন্ধ্যা থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত বার বার কাকুতি মিনতি করার পরেও হাসপাতাল থেকে অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়নি। ফলে মৃতু যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে ভোরে মারা যান। এদিকে, মৃত নছিরনের লাশ হাসপাতালের ওয়ার্ড থেকে নিচে নামিয়ে আনার জন্য কর্মচারীদের অনুরোধ করা হলে তারা একশ’ টাকা দাবি করে। দাবিকরা টাকা দিতে না পারায় তারা স্ট্রেচার দেয়নি নিহতের স্বজনদের। শেষ পর্যন্ত কাঁধে করে লাশ নিয়ে নিচে নামিয়ে আনা হয়। এদিকে, চিকিৎসার জন্য টাকা ফুরিয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়ে হতদরিদ্র নছিরনের স্বজনরা। বাধ্য হয়ে হাসপাতালের সামনেই মায়ের লাশ নিয়ে ছেলে শফিকুল ভিক্ষে শুরু করে। তার কাকুতি মিনতিতে অনেকেরই মন গলে। ছেলে শফিকুল জানান, সন্ধ্যা থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত তার মা শ্বাসকষ্টে কাহিল হয়ে পড়ে। বার বার কাকুতি মিনতি করার পরেও অক্সিজেন দেয়া হয়নি। রাত ৩টায় এক চিকিৎসক চিরকুটে ট্যাবলেটের নাম লিখে বাইরে থেকে আনতে বলেন। অনেক কষ্টে ওষুধ নিয়ে এসে খাওয়ানোর পর আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন তার মা। ভোরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। শফিকুল দাবি করেন, চিকিৎসকদের অবহেলা আর বিনা চিকিৎসায় তার মার মৃত্যু হয়েছে। তাদের সহায়-সম্বল কিছুই নেই। যে টাকা নিয়ে এসেছিলো বাইরে থেকে ওষুধ কিনেই তা ফুরিয়ে গেছে। লাশ বাড়িতে নেয়ার মতো কোনো টাকা নেই। তাই বাধ্য হয়ে মায়ের লাশ নিয়ে ভিক্ষে করতে বসতে হয়েছে। এদিকে মায়ের মৃত্যুর পর শফিকুলের আহাজারিতে হাসপাতালের বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। মায়ের লাশ নিয়ে কাঁদতে দেখে অনেক রোগী ও তাদের স্বজনরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। শেষ পর্যন্ত তিন হাজার টাকা সংগ্রহ করে শফিকুল তা দিয়ে মাইক্রোবাস ভাড়া করে। পরে মায়ের লাশ নিয়ে রওনা দেয় বাড়ির দিকে। বিনা চিকিৎসায় নছিরনের মৃত্যুর জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা তা জানতে চাইলে রমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. রেজাউল ইসলাম কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
মন্তব্য করুন
টপ নিউজ’র আরো খবর
সংশ্লিষ্ট
ভারত থেকে ৩ দিনের মধ্যে পেঁয়াজ আসবে: বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী
পেঁয়াজ রপ্তানি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করল ভারত
মালিকপক্ষকে জলদস্যুদের ফোন, যে কথা হলো
কমলো সোনার দাম