আর্কাইভ  মঙ্গলবার ● ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ● ৩ বৈশাখ ১৪৩১
আর্কাইভ   মঙ্গলবার ● ১৬ এপ্রিল ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: কুড়িগ্রামে অষ্টমীর স্নান করতে এসে মারা গেলেন পুরোহিত       বাস-পিকআপ সংঘর্ষে ১১ জন নিহত       উপজেলা পরিষদ নির্বাচন: রংপুরে ৩০ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র দাখিল        ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ডোমার ও ডিমলায় মনোনয়ন জমা দিলেন ৩৫ জন       নীলফামারীতে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী নারীকে গণধর্ষন -গ্রেপ্তার ৬      

 width=
 

ঠাকুরগাঁওয়ে ফুলে-ফলে ভরে গেছে পাম বাগান; প্রতারণার আশঙ্কায় চাষি

রবিবার, ৩ নভেম্বর ২০১৩, দুপুর ০১:৫৪

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে,জেলায় ১২ দশমিক ৫৩ হেক্টর জমিতে পাম গাছের বাগান রয়েছে। এছাড়াও বসত বাড়ির আশে পাশে ১৭ দশমিক ৫২ হেক্টর জমিতে রয়েছে পামের গাছ ।

ভাতগাঁও গ্রামের পাম চাষি শরিফুল ইসলাম জানান,আব্দুল রাজ্জাক নামে কৃষি বিভাগের আউলিয়াপুর ইউনিয়নের তৎকালিন উপ সহকারি কৃষি কর্মকর্তার কাছ থেকে পাম গাছের চারা কিনেছিলেন। তিনি টাঙ্গাইলের বখতিয়ার এগ্রো লিমিটেড নামের এক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পাম গাছের চারা এনে তাদের সরবরাহ করেছেন।চারা সরবরাহের সময় তারা প্রচার করেছিলেন,ঘরে ঘরে পামগাছ লাগিয়ে তেলের পারিবারিক চাহিদা মেটানো যায়;বিক্রি করে বাড়তি আয়ও হয়। তিন থেকে চার বছর পর তা থেকে ৭৫ থেকে ৯০ কেজি পর্যন্ত তেল পাওয়া যায়। একটি গাছ থেকে বছরে পাঁচ-ছয় হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব।

তেল আহরণের সহজ পদ্ধতি সম্পর্কে বিক্রয় প্রতিনিধিরা সেসময় জানান,ফল আহরণ করে কিছুক্ষণ পানিতে সিদ্ধ করে চাপ দিলেই রস বের হবে। জ্বাল দিলেই অতিরিক্ত পানি বাষ্প হয়ে উড়ে যাবে। এরপর লাল রঙের যে তেল পাওয়া যাবে,তা পরিশোধন ছাড়াই রান্নায় ব্যবহার করা যাবে।

পামচাষি আব্দুল জব্বার বলেন,তিন বছর আগে ১৩০টি পামগাছের চারা কিনে লাগিয়েছি। পরিচর্যার পর গাছে ফল এলেও এখন তা কাজে আসছে না।প্রতিনিধির বলে দেওয়া পদ্ধতিতে তেল বের করার চেষ্টা করেও ফল হয় নি। এই ফল নিয়ে এখন কি করবো তা বুঝে উঠতে পারছিনা। তাই জমি ফেলে না রেখে বাড়ানে মিষ্টি কুমড়ার চাষ করেছি। ভাতগাঁও গ্রামের আরেক পাম চাষি কামিনী সরকার বলেন, তার বাবা ফুলেন চন্দ্র সরকার লোকজনের কথা শুনে ৫০০ পাম গাছের চারা লাগিয়েছিলেন। বাবা মারা যাওয়ার পর তার রেখে যাওয়া বাগান পরিচর্যা করেছি। গাছে ফল এলে রাজ্জাক সাহেবের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানিয়েছেন- পাম গাছের প্রথম দিকের ফল থেকে তেল পাওয়া যাবে না।আমরা প্রতারিত হয়েছি কিনা বুঝতে পারছিনা।

অন্যদিকে সাসলা পিয়ালা গ্রামের কয়েকজন চাষি পামগাছের বাগান করেন। তারা সবুজ বাংলা এগ্রো লিমিটেডের স্থানীয় বিক্রয় প্রতিনিধি আবু হানিফার কাছ থেকে দেড় বছর আগে প্রতিটি চারা ৬৪০ দরে কিনে নেন। ওই টাকার মধ্যেই সবুজ বাংলা এগ্রো লিমিটেডের বাগানের চারা রক্ষনাবেক্ষন ও পরিচর্যা করার কথা।

পাম চাষি কলিম উদ্দিন বলেন, পরিচর্যার দায়িত্ব থাকলেও কোম্পানীর লোকজন ভালোভাবে পরিচর্যা না করায় চারা রাগানোর এগারো মাস পর তাদের বাগানে যেতে মানা করে দিয়েছি। গাছে ফল এলে সেগুলো কি করবেন?এপ্রশ্নের জবাবে তিনি জানান,আবু হানিফা (গ্রামের বিক্রয় প্রতিনিধি) আমাকে বলেছে কোম্পানীর লোকজন ফল নিয়ে যাবে। আবু হানিফার সঙ্গে যোগাযোগ করে সবুজ বাংলা এগ্রো লিমিটেডের যোগাযোগ ঠিকানা ও নম্বর চাওয়া হলে তিনি বলেন, ম্যানেজারের নম্বর পরির্তন হয়ে যাওয়ায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। কাজ না থাকায় তাদের সঙ্গে আমারও যোগাযোগের তেমন আগ্রহ নেই ।

আউলিয়াপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো.জাফরুল্লাহ জানান,তাঁর ইউনিয়নে চাষিরা সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি পামের গাছ লাগিয়েছেন।তিনি নিজেও একটি বাগানে ১২৫টি পামের গাছ লাগিয়েছেন। মো.জাফরুল্লাহ বলেন,পাম বাগানে ফল আসার পর চাষিরা প্রায় আমার কাছে এসে হতাশার কথা জানান। বুঝে উঠতে পারছিনা এই ফল নিয়ে কি করা যায়। বিভিন্ন লোকজনের সঙ্গে কথা বলে সন্তোষজনক উত্তর না পেয়ে এখন প্রতারণার আশঙ্কা করছি।

চারা সরবরাহকারী আব্দুল রাজ্জাক বলেন, আমিই পাম চাষের সফল উদোক্তা বখতিয়ার এগ্রো লিমিটেডের মালিক ওসমান গনির কাছ থেকে চারা সংগ্রহ করে চাষি পর্যায়ে সরবরাহ করেছিলাম। এলাকার মাটি ও আবহাওয়ার কারণে সেসব অনেক পামগাছে আগাম ফল এসেছে। চাষিরা বুঝছেনা যে প্রথম দিকের পামফল থেকে তেল পাওয়া যাবে না। পামের সুফল পেতে আরও দুই-এক বছর অপেক্ষা করতে হবে।

ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) উপ-পরিচালক মো. বেলায়েত হোসেন জানান, বিষয়টি আমরা জেনেছি। পাম চাষিদের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মন্তব্য করুন


 

Link copied