আর্কাইভ  শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ● ১৫ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

 width=
 
শিরোনাম: জমি রেজিস্ট্রি করে না দেয়ায় বাবাকে কবর দিতে ছেলের বাঁধা ॥ পুলিশের হস্তক্ষেপে দাফন সম্পন্ন       নীলফামারীতে স্বামীর প্রথম বিয়ের খবরে নববধূ দ্বিতীয় স্ত্রীর আত্মহত্যা ॥ স্বামী গ্রেপ্তার       রংপুরবাসীর জন্য সরকারি চাকরি, পদ ১৫৯       স্বাস্থ্যের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ফজলুল হক কারাগারে       কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা      

 width=
 

কবি শেখ ফজলল করিম স্মৃতি পাঠাগারে ইউপি কার্যালয়

শুক্রবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, দুপুর ০২:০৫

নিয়াজ আহমেদ সিপন, লালমনিরহাট:‘কোথায় স্বর্গ কোথায় নরক কে বলে তা বহুদুর মানুষের মাঝে স্বর্গ-নরক মানুষেতে সুরাসুর’ কবি শেখ ফজলল করিমের এ কবিতাটি ছোট বেলায় পড়েননি এমন লোক খুজে পাওয়া দুষ্কর। উত্তর অঞ্চলের কবি বলে বর্তমানে তার কোন খবর নেই। অযত্ন আর অবহেলায় অতীত ঐতিহ্য হারাতে বসেছে কবির স্মৃতি বই পত্র থেকে শুরু করে পাঠাগারও। শুক্রবার (২৮ সেপ্টেম্বর) কবি শেখ ফজলল করিমের ৮২ তম মৃত্যু বার্ষিকী নিরবে কেটে যাচ্ছে। স্থানীয় কবির ভক্তরা জানিয়েছেন, প্রতিবছর কবি মৃত্যু বার্ষিকীতে হয় না মিলাদ মাহফিল এমনকি কোন আয়োজন। লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনায় কবি শেখ ফজলল করিমের স্মৃতি বিজড়িত গ্রামের বাড়িতে পারিবারিক ভাবে ছোট পরিসরে দোয়া আর মিলাদ মাহফিলের মাঝে সীমাবদ্ধ কবির মৃত্যুবার্ষকী। জানা গেছে, ২০০৫ সালে কবির স্মৃতি রক্ষার্থে কবি বাড়ির অদুরে কাকিনা বাজারে নির্মিত পাঠাগারটিতে নেই কোন কেয়ারটেকার, নেই পাঠক, রয়েছে বইয়ের সংকট। বর্তমানে পাঠাগারটি কাকিনা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ যেন সম্মানের নামে অপমান। কবির নামে এটা প্রহসন বলেও মন্তব্য করে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন কবি ভক্তরা। কবির বাড়ির সদস্যরা জানান, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সরকারের আমলা মন্ত্রী ও উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাসহ রাজনৈতিক নেতা, কবি লেখক অনেকেই কবির বাড়ি পরিদর্শনে এসে বিভিন্ন রকম প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেছেন। যা কখনই বাস্তবায়ন হয়নি। শুধুমাত্র কবির বাড়ি যাওয়ার রাস্তাটি পাকা হওয়া এবং কবির নামে কাকিনা বাজারে একটি দ্বিতল ভবনের পাঠাগার নির্মিত হলেও কবির বাড়িটি ও ব্যবহারিক সংগ্রহশালা এখন ধংসের পথে। সরকারী ভাবে কখনই পালিত হয় না কবির জন্ম বা মৃত্যুবার্ষিকী। পারিবারিক ভাবে সাধ্যের মধ্যে যতটুকু হয়। তাতে স্মরন করা হয় কবি শেখ ফজলল করিমকে। কবির স্মৃতিগুলো রক্ষার্থে বাড়িটি মেরামত করে তার ব্যবহৃত জিনিসপত্রের সংরক্ষন, পাঠাগারটিতে একজন লাইব্রেরীয়ান(কেয়ারটেকার)সহ পর্যাপ্ত বইয়ের ব্যবস্থা করা এবং কবির জীবনী বা তার বিভিন্ন বই সংরক্ষন করে জেলা শহরে কবির নামে একটি পাঠাগার স্থাপন করার দাবী জানান বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসি। ২০০৫ সালে নির্মিত পাঠাগারটিতে ২০০৯ সালে দেখভালের জন্য উপজেলা প্রশাসন থেকে স্থানীয় আজিমুদ্দিন নামের এক ব্যক্তিকে ১ হাজার টাকা সম্মানীতে নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু বর্তমানে নতুন ইউপি কমপ্লেক্স ভবন নির্মানের কারনে কাকিনা ইউপি কার্যালয় হিসেবে অস্থায়ীভাবে কবির পাঠাগারটি ব্যবহৃত হচ্ছে বলে স্বীকার করেন ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল হক শহিদ। তিনি বলেন, বন্ধ থাকায় উপজেলা প্রশাসনকে মৌখিক জানিয়ে অস্থায়ী ভাবে পাঠাগারে চলছে ইউপি কার্যালয়। কাকিনা উত্তর বাংলা ডিগ্রী কলেজের শিক্ষার্থী সোহান,পদক,পল্লব, জেসমিন আরা জুতিসহ অনেকেউ জানান,কবির স্মৃতি ধরে রাখতে সরকারের কোন উদ্যোগ নেই। বরংচ উল্টো কবির স্মৃতি পাঠাগারটিতে ইউপি কার্যালয় বসিয়ে সম্মানের  নামে কবিকে অপমান করা হচ্ছে। পাঠাগারটি চালুসহ কবির স্মৃতি ধরে রাখতে সরকারী ভাবে উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানান তারা। তারা আরো জানান, ইউপি কার্যালয় হোকস আমাদের তাতে কোন আপত্তি নেই ! কিন্তু বর্তমানে সেটি তালা বন্ধ করে রেখেছে ইউপি চেয়ারম্যান। তিনি যখন আসেন বই পড়ার সুযোগ থাকে না । ওনার দলীয় নেতকর্মীদের নিয়ে তিনি ব্যাস্ত থাকেন । নিভৃত পল্লী গাঁয়ে সাহিত্য, কাহিনী উপন্যাস প্রবন্ধসহ গদ্য রচনার স্থান ছিল লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা। ১৮৮২ সালের ১৪ এপ্রিল সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন তিনি। মাত্র ১৩ বছর বয়সে পার্শ্ববর্তী বিনবিনা গ্রামের গনি মোহাম্মদ সর্দারের মেয়ে বসিরন নেছা খাতুনের সাথে বিয়ে হয় কবির। ১৮৯৯ সালে মধ্যে ইংরেজী পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হন তিনি। কাকিনার মত অজো পাঁড়া গায়ে নিজ বাড়ীতে শাহাবিয়া প্রিন্টিং ওয়ার্কস নামের ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন কবি। তার বৈচিত্র্যময় রচনায় ফুটে উঠেছে সম-সাময়িক ঘটনা, চিন্তা-চেতনা, ধর্ম দর্শন, সাম্প্রদায়িক বিরোধ, সমাজ সংস্কার, নারী শিক্ষাসহ সমাজ পরিবর্তন ও মননশীলতা অঙ্গীকার। জীবদ্দশায় সাহিত্য কর্মের স্বীকৃতি পেয়েছিলেন কবি শেখ ফজলল করিম। তিনি মোট ৫৫টি গ্রন্থ লিখে ছিলেন সংরক্ষনের অভাবে যার অনেক গুলোর এখন আর হদিস মিলে না। সাহিত্য চর্চার সুবিধার্থে স্থানীয় জনসাধারনের জন্য উম্মুক্ত কবি বাড়ীতে ১৮৯৬ সালে করিমস্ আহামদিয়া লাইব্রেরী নামের একটি পাঠাগার স্থাপন করেছিলেন, যার কোন চিহৃই আজ আর অবশিষ্ট নেই। কবির উপদেশ মূলক রচনা ‘পথ ও পাথেয়’ গ্রন্থের জন্য পেয়েছিলেন রৌপ্য পদক। পরবর্তী বাংলা ১৩২৩ সনে ভারতের নদীয়া সাহিত্য পরিষদ তাকে সাহিত্য বিশারদ উপাধিতে ভূষিত করেন। কিন্তু ১৯৩৬ সালের ২৮সেপ্টেম্বর কবি শেষ নিশ্বাস ত্যাগের পর অরক্ষিত হয়ে পড়ে কবি শেখ ফজলল করিমের গ্রামের বাড়ী। উত্তর বাংলা কলেজের প্রভাষক সুভাস চন্দ্র বলেন, কবির পাঠাগারটি সঠিক পরিচালনার জন্য আজ এমন অবস্থা। বর্তমানে বই পত্র জন্য পাঠাগারটি এমন অবস্থা করে রেখেছে। পাঠারগারটি পরিচালনা করার জন্য সঠিক লোক থাকলে বা সব সময় খোলা থাকলে শিক্ষার্থীরা কিছু জানবে কিছু শিখবে। কবি বাড়ির ভিতরে একটি কক্ষে কবির ব্যবহৃত টুপি, দাড়ি, দোয়াত-কলম, ছোট্ট কোরআন শরীফ, ম্যাগনিফাইং গ্লাস ও কিছু বোতাম সংরক্ষন করে রেখেছেন কবি বাড়ির রক্ষক প্রপুত্র (নাতি) ওয়াহিদুন্নবী। তিনিও বয়সের ভারে নাজুক হয়ে পড়েছেন। তিনি বলেন, 'কবির স্মৃতি ধরে রাখতে যত্ন করছি কিন্তু আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় সংস্কার করতে পারছি না। দীর্ঘদিন এমনি পড়ে থাকায় কবি ব্যবহৃত জিনিস গুলো নষ্ট হতে চলেছে।’ কবির (নাতি) ওয়াহিদুন্নবী আক্ষেপ নিয়ে বলেন, সরকার যায় আর আসে কিন্তু কবির দিকে কেউ থাকায় না। আমার কানে আসে অনেক বরাদ্ধ আসে কবির নামে কিন্তু িএসব কোথায় যায় তার কোন খবর নেই । পাঠাগারটিতে প্রচুর পরিমানের বই রাখা উচিৎ কিন্তু সেখানে এখন ইউপি চেয়ারম্যানের লোকজন থাকে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার রবিউল হাসান যোগদান করার সময় আমাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন, কবির সব বিষয় তিনি দেখবেন কিন্তু কোথায়! তারও কোন খবর নেই । জেলা সদরের প্রাণকেন্দ্রে তার নামে একটি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থাকলেও শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় সেখানেও পালিত হচ্ছে না মৃতবার্ষিকী। ফলে এ প্রজন্মের অনেকেই জানেন না কবি শেখ ফজলল করিম সম্পর্কে। লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কের পাশে কাকিনায় কবির স্মৃতির উদ্দেশ্যে ছোট্ট একটি স্মৃতিফলক রয়েছে যা কবির বাড়ির দিক নির্দেশনা হিসেবে কাজ করে। এ ছাড়া আর কোন উল্লেযোগ্য প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হয়নি।বিভিন্ন সময়ে মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, রাজনৈতিক নেতা, সরকারী কর্মকর্তাদের দেয়া প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন হলে কবি শেখ ফজলল করিমের স্মৃতি চিহ্ণগুলো সংরক্ষন হওয়ার পাশাপাশি কবি বাড়িটি দেশের উল্লেখযোগ্য স্থানে পরিনত হবে।

মন্তব্য করুন


 

Link copied