রবিউল ইসলাম দুখু: নগরীর অভ্যন্তরিন সড়কে রিক্সা, অটো রিক্সার ভাড়ার নির্ধারিত কোন তালিকা নেই। ভাড়া নিয়ে যাত্রী চালকের মধ্যে বচসা লেগেই থাকে। যাতায়াতের জন্য প্রতিনিয়ত ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নগরবাসিকে। রিক্সা, অটো রিক্সা চালকদের কাছে জিম্মি হয়ে আছেন। মেট্রোপলিটন পুুলিশ চালুর পর থেকে রংপুর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় যাতায়াত খরচ কমাতে, অধিকাংশ রিকশা, অটোরিকশাসহ বিভিন্ন পরিবহন চালকদের হয়রানি ও দুর্ব্যবহার বন্ধে নগরবাসীর মধ্যে টাউন সার্ভিস চালুর দাবি দিন দিন আরো জোরালো হয়ে উঠছে।
সরকারি কলেজের ছাত্রী অপারজিতা বেগমের বাড়ি নগরমীরগঞ্জ এলাকায় ।তিনি জানান, প্রাইভেট পড়িয়ে লেখাপড়ার খরচ চালাচ্ছেন। প্রতিদিন কলেজে যাতায়াত করতে তার ৬০ টাকা খরচ হচ্ছে। টাউস সার্ভিস চালু হলে এত টাকা লাগতো না।
দমদমা এলাকার জুই, আরিফা আক্তার ও মনি চাকরি করেন নগরীর এক বেসরকারি হাসপাতালে। তারা জানান,অটোতে যাতায়াত করতে গিয়ে তারা যে বেতন পান তার অর্ধেক চলে যায়। টাউন সার্ভিস চালু হলে অল্প টাকায় যাতায়াত করতে পারবেন। সাশ্রয় হতো অর্থ।
একই এলাকার কৃষক আনজান, শাহিল মিয়া, ময়নাল, হিরা, জাহান আলী জানান- অটো ও চাজার রিক্সায় কৃষি পণ্য সিটি বাজারে নিয়ে য়েতে বেশ খরচ পড়ে। টাউন সার্ভিস চালুু হলে এত খরচ পড়তো না।
সিও বাজারের রাজিয়া ও লিমা আক্তার পড়েন কারমাইকেলে। তাদের প্রতিজনের প্রতিদিন ৫০ টাকার বেশি খরচ হয়। সেই সাথে অপচয় হয় সময়।
নগরীর সাতমাথা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় মোড়- মর্ডান- দমদমা-দর্শনা- টার্মিনাল হয়ে মেডিকেল মোড়। আর মেডিকেল মোড় থেকে সিও বাজারসহ বিভিন্নস্থানে যাতয়াতের জন্য টাউন সার্ভিস বাস অত্যন্ত জরুরী। সকাল ৮টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত এসব রোডে লোকজনের যাতায়াত অব্যাহত থাকে। অফিস আদালত ব্যবসা বাণিজ্যসহ নানান কাজে নগরীতে চলাফেরার জন্য সবাইকে রিক্সা, অটো রিক্সা ব্যবহার করতে হয়।
জানা যায়, আশির দশকের পর ছোট আকারে রংপুর নগরীতে কয়েকটি বাস নিয়ে বেসরকারি উদ্যোগে চালু হয় টাউন সার্ভিস। যানবাহন সংকট এবং ভাড়া অপেক্ষাকৃত কম থাকায় যাত্রা শুরুর পর পরই নগরবাসির কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে টাউন বাস সার্ভিস। বিশেষত নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির নাগরিকদের যাতায়াতের ক্ষেত্রে প্রথম পছন্দ হয়ে ওঠে সেই বাসগুলো। নগরীর ভেতরে পর্যায়ক্রমে এই বাস সার্ভিস চালুর উদ্যোগ সামনে রেখে শহর শহরতলির কয়েকটি সড়কে প্রথমে যাতায়াত শুরু করে। নগরীর ১০টি পয়েন্টে প্রথমে যাত্রা শুরু হয়। এই বাসগুলোই ছিল নগরবাসির একমাত্র গণপরিবহণ। সম্প্রসারিত হওয়ার পরিবর্তে অনিয়ম অব্যস্থার কারণে ব্যাপক চাহিদা সত্বেও যাত্রা শুরুর কয়েক মাসের মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়। তার পর থেকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নগরবাসিকে। কিন্তু বর্তমানে নগরীর প্রধান প্রধান রাস্তা চার লেন করা হয়েছে। এছাড়াও গত ১৬ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারান্সের মাধ্যমে রংপুর মেট্রাপলিটনের উদ্ধোধন করেন। এর পর থেকে পুনরায় টাউন সার্ভিস চালুর দাবিতে সোচ্চার হচ্ছেন নগরবাসী।
মেট্রাপলিটন চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট রেজাউল ইসলাম মিলন বলেন- অটো, রিক্সা এবং চার্জা চালিত অটো রিক্সার চালকদের কাছে যাত্রীরা জিম্মি হয়ে পড়েছে। এ থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় টাউন সার্ভিস চালু।
মেট্রাপলিটন চেম্বার অব কমার্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট সামসুল আলম কোয়েল- বলেন- এটি বিভাগী শহর। প্রতিদন শত শত লোক বাইরের জেলা ও উপজেলা থেকে আসেন। টাউন সার্ভিস চালু হলে তারা উপকৃত হবেন।
সুজন রংপুরের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন জানান, টাউস সার্ভিস চালু হউক সবাই চায়। তবে এই টাউন সার্ভিস চালু হলে দুর্ঘটনা কমবে না বাড়বে সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখা উচিত।
রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, টাউন সার্ভিস চালু বর্তমান সময়ের অন্যতম দাবি। এ ব্যাপারে আলোচনা হচ্ছে- দ্রুত চালু হবে।