আর্কাইভ  শুক্রবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ● ৬ বৈশাখ ১৪৩১
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: পলাশবাড়ীতে আসামির ছুরিকাঘাতে বাদীর মৃত্যু, গ্রেফতার ১       মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের সন্তান-স্বজনের ভোটে না দাঁড়ানোর নির্দেশ       ভোজ্যতেলের দাম বাড়ল, খোলা তেলে সুখবর       বিএনপি নেতা সোহেলের নিঃশর্ত মুক্তি দাবিতে রংপুরে  মানববন্ধন ও সমাবেশ        খরার ঝুঁকিতে রংপুর অঞ্চল      

 width=
 

বিশেষ প্রতিবেদনঃ নির্বাচনী মাঠে এরশাদের দুই মেয়ে

বৃহস্পতিবার, ৭ নভেম্বর ২০১৩, সকাল ০৫:৫৯

আকস্মিকভাবে এরশাদের দুই পালিত কন্যার আবির্ভাব হওয়ায় দলের নেতা-কর্মীরা খুব একটা বিস্মিত না হলেও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তাঁদের উদয় হওয়ায় ক্ষুব্ধ। তবে এরশাদের স্ত্রী ও জাতীয় পার্টির সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম রওশন এরশাদেরও ওই কন্যাদের সম্পর্কে জানা নেই শোনার পর তাঁরা কিছুটা বিস্মিত হয়েছেন। জাতীয় পার্টির নেতাদের সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি দলের প্রেসিডিয়াম সভায় পালিত কন্যাদের বিষয়ে এরশাদের কাছে জানতে চান রওশন। এরশাদকে সাবেক ফার্স্ট লেডি রওশন বলেন, ‘আমি যাদের চিনি না তারা তোমার পালিত কন্যা হয় কিভাবে। জানা গেছে, এরশাদ এ বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।’

সম্প্রতি এরশাদ ঘোষণা দিয়েছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সোনারগাঁ ও সিদ্ধিরগঞ্জ নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে জাতীয় পার্টির হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তাঁর পালিত কন্যা অনন্যা হোসেইন মৌসুমী এবং গাইবান্ধার পলাশবাড়ী ও সাঘাটা নিয়ে আসনে দলের প্রার্থী হবেন দিলারা খন্দকার শিল্পী। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম মসিহ নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে দলের প্রার্থী হবেন বলে স্থানীয় নেতা-কর্মীরা আশা করেছিলেন। আর এরশাদ গাইবান্ধায় বর্তমান এমপি ও দলের সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. টি আই এম ফজলে রাবি্বকে বাদ শিল্পীর নাম ঘোষণা করেছেন।

এসব ঘটনায় এরশাদের ওপর ক্ষুব্ধ সংশ্লিষ্ট এলাকার জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা। তাঁরা বলছেন, এরশাদ একজন ‘রহস্যপুরুষ’ হওয়ায় তাঁর পক্ষে রওশনের অজান্তেও পালিত কন্যা থাকা স্বাভাবিক। তবে এসব পালিত কন্যাদের রাজনীতিতে আনার বিষয়ে নেতা-কর্মীদের অন্তত একবারের জন্য হলেও মতামত নেওয়া উচিত ছিল। অনেকে ক্ষোভের সঙ্গে বলেছেন, দীর্ঘ দুই যুগ পর্যন্ত দল করেও যদি কেউ মনোনয়ন না পেয়ে পালিত কন্যারা মনোনয়ন পেয়ে যান তবে আগামীতে এরশাদকে পালিত কন্যা ও পালিত পুত্রদের দিয়েই দল চালাতে হবে।

পালিত কন্যাকে এরশাদের প্রার্থী ঘোষণা দেওয়ায় এরই মধ্যে দল থেকে পদত্যাগ করেছেন প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম মসিহ। একটি জাতীয় দৈনিককে তিনি বলেছেন, ‘প্রতি নির্বাচনের সময় এলেই জাতীয় পার্টি একটি সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে যায়। এবারও একটি সিন্ডিকেট কাজ করে যাচ্ছে। বিভিন্ন কারণে জাতীয় পার্টির অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ দেখে আমি পদত্যাগ করেছি।’ তিনি বলেন, ‘জাতীয় পার্টি শুধু লেজুড়বৃত্তির কারণে আজও ক্ষমতায় আসতে পারেনি। ভবিষ্যতেও পারবে কি না সন্দেহ আছে।’

দিলারা খন্দকার শিল্পী : গাইবান্ধায় ফজলে রাবি্বর আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা শিল্পী পেশায় একজন ব্যারিস্টার।সূত্রকে তিনি বলেন, ‘আমি দুই বছর ধরে জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে এসেছি। আমার পিতা খন্দকার ওসমান গনি দুদুও জাতীয় পার্টির নেতা।’ শিল্পী বলেন, ‘প্রার্থী হওয়ার গ্রিন সিগন্যাল পাওয়ার পর থেকে আমি গাইবান্ধায় নির্বাচনী এলাকাতেই বসবাস করছি। মাঝেমধ্যে ঢাকায় যাই। তখন স্যারের (এরশাদ) সঙ্গে তার দেখাসাক্ষাৎ হয়। গত মাসের শেষ দিকে এরশাদের সঙ্গে দেখা হয়েছে।’ জানা গেছে শিল্পী গাইবান্দায় মা-বাবার সঙ্গেই থাকেন। মাঝেমধ্যে ঢাকায় গিয়ে আইন পেশার প্র্যাকটিস করেন।

শিল্পী  দাবি করেন, তিনি এরশাদের পালিত কন্যা নন। পালিত কন্যা হলো মৌসুমী। তবে এরশাদ তাঁকে মেয়ের মতো জানেন। শিল্পী বলেন, তাকে পালিত কন্যা হিসেবে নয়, বৃহত্তর রংপুরের একজন ব্যারিস্টার হিসেবেই এরশাদ মনোনয়ন দিয়েছেন। তিনি বলেন, গাইবান্ধায় জাতীয় পার্টির প্রার্থী গত ছয়বার নির্বাচিত হয়েছেন। তিনিও নির্বাচিত হবেন। বর্তমানে ফজলে রাবি্ব অসুস্থ। তাই তাঁকে এবার মনোনয়ন দেওয়া হয়নি।

এদিকে জাতীয় পার্টির এক প্রেসিডিয়াম সদস্য জানিয়েছেন, ‘ফজলে রাবি্ব অসুস্থ হলেও ছয় বারের নির্বাচিত এ সংসদ সদস্যকে বাদ দিয়ে তাঁর স্থলে নতুন কাউকে মনোনয়ন দেওয়া ঠিক হয়নি। নতুন প্রার্থী শিল্পীকে এলাকার কোনো নেতা-কর্মীরা চিনত না। হঠাৎ করে তাঁকে প্রার্থী ঘোষণা করায় এলাকায় সমালোচনার ঝড় বইছে।’

অনন্যা হোসেইন মৌসুমী : এদিকে নারায়ণগঞ্জে মনোনয়ন পাওয়া মৌসুমীর বাবার নাম মোহাম্মদ কিরণ। তিনি সোনারগাঁ এলাকার একজন কৃষক। মৌসুমী ও তাঁর এক ভাইকে রেখে তাঁর বাবা আরেক বিয়ে করেন। তাঁর মাও আবার বিয়ে করেন। মৌসুমী সোনারগাঁ একটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ঢাকায় চলে আসেন। স্থানীয় এক সাংবাদিক জানান, নারায়ণগঞ্জে একটি নাচের অনুষ্ঠানে মৌসুমীর সঙ্গে এরশাদের পরিচয় হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নারায়ণগঞ্জের এক নেতা জানান, মৌসুমীদের সোনারগাঁয়ে তেমন কোনো পরিচয় নেই। স্থানীয় লোকজন মৌসুমীদের বাড়িকে ওক্কাবাড়ি বলে জানে। মৌসুমীর স্বামীর নাম সুজন। তিনি বেসিক্যালি কোনো কাজ করেন না। সম্প্রতি এরশাদ নিজে একজন শিল্পপতিকে বলে তাঁকে গার্মেন্টের ঝুট নামানোর কাজ দিয়েছেন। নারায়ণগঞ্জের লোকজন সুজনকে মামা বলে ডাকে। মৌসুমীকে নিয়ে দলের ত্যাগী নেতাদের কর্মীদের কাছ থেকে নানা কথা শুনতে হচ্ছে। কিন্তু দলের মর্যাদা রক্ষায় ও বহিষ্কারের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে চান না।

মৌসুমীর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। তবে জাতীয় পার্টির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন, শিল্পীর মতো মৌসুমী এখন নির্বাচনী মাঠে প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

জাতীয় পার্টির কয়েকটি সূত্রে জানা যায়, এ দুই পালিত কন্যাকে মাঝেমধ্যে এরশাদের বাসায় কেউ কেউ দেখেছেন। হঠাৎ করে তাঁরা জাতীয় পার্টির গুরুত্বপূর্ণ নেতা হয়ে গেলেন কী করে, তা নেতা-কর্মীদের জানা নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় পার্টির এক প্রেসিডিয়াম সদস্য জানান, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে এরশাদকে (স্যারকে) ৩০ বছর ধরে চিনি। তাঁর বাসায় আমার যাতায়াত। আমি পালিত কন্যাদের এরশাদের বাসায় দেখেছি। তবে হঠাৎ তাঁরা প্রার্থী হওয়ায় আমি আশ্চর্য হয়েছি। তিনি বলেন, স্যারের এ ধরনের পদক্ষেপে দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ উৎসঃ   কালের কন্ঠ

মন্তব্য করুন


 

Link copied