আর্কাইভ  মঙ্গলবার ● ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ● ৩ বৈশাখ ১৪৩১
আর্কাইভ   মঙ্গলবার ● ১৬ এপ্রিল ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: আজকের মেধাবী শিক্ষার্থীরাই হবে স্মার্ট বাংলাদেশের কারিগর –রংপুরে স্পীকার       রংপুরে বৃষ্টি নামে এক নারীর মরদেহ উদ্ধার       কুড়িগ্রামে অষ্টমীর স্নান করতে এসে মারা গেলেন পুরোহিত       বাস-পিকআপ সংঘর্ষে ১১ জন নিহত       উপজেলা পরিষদ নির্বাচন: রংপুরে ৩০ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র দাখিল       

 width=
 

কে আমার বাবা: জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট

বৃহস্পতিবার, ২২ নভেম্বর ২০১৮, রাত ০৮:৩৩

তুরিন আফরোজ ১৯৯৯ সালের ১৯শে জানুয়ারী মুক্তি পায় মান্না, পপি, আমিন খান, রাজীব এবং হুমায়ুন ফরীদি অভিনীত সম্পূর্ণ রঙিন ছায়াছবি ‘কে আমার বাবা’। ছায়াছবিটির কাহিনী লিখেছেন আব্দুল্লাহ জহির বাবু, চিত্রনাট্য দিয়েছেন মনতাজুর রহমান আকবর। ছায়াছবিটি পরিচালনা করেছেন মনতাজুর রহমান আকবর। আর প্রযোজনা করেছেন নায়ক ডিপজল। ‘কে আমার বাবা’ ছায়াছবিটির কাহিনী অনেকটা এরকম যে, নায়ক জীবনের (মান্না) আসল বাবা আলতাফের (রাজীব) গুরুতর অপরাধের কারণে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। তখন জীবনকে সমাজের চোখে সন্তান পরিচয় দিয়ে বড় করে তোলে তার নকল বাবা আমীর (হুমায়ুন ফরীদি)। কিন্তু এক সময় সত্য প্রকাশিত হয়ে পড়ে এবং তখন সবাই জানতে পারে যে জীবনের আসল বাবা হলো সেই যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামী আলতাফ। ‘কে আমার বাবা’ ছায়াছবিটির ক্লাইম্যাক্সটা ঠিক এখানেই। এখন কথা হলো এই যে সদ্য ভূমিষ্ঠ ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’- এই যে তার নির্বাচনী লাফ-ঝাপ – এই সব কিছুর পিছনে আমার একটা প্রশ্নই মাথায় ঘুরে ফিরে আসছে আর তা হলো ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’-এর বাবা কে? অর্থাৎ ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’-এর মূল নেতা কে? অন্যভাবে বলতে গেলে, যদি আগামী নির্বাচনে ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’ বিপুল ভোটে জয় লাভ করে, তবে দলটির মূল নেতা কে হবেন? অথবা, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’ যদি সরকার গঠন করে তবে তাদের মাঝে দেশের প্রধানমন্ত্রী কে হবেন? প্রশ্নটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ বাংলাদেশে আমরা ওয়েস্ট মিনিস্টার টাইপের গণতন্ত্র চর্চা করি। আর যদি না করি, অথবা এক্ষেত্রে পান থেকে চুন খসলেই ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’-এর বড় বড় ডাক্তার সাহেবরা চিৎকার করে ওঠেন ‘দেশ গেল, দেশ গেল’ বলে। কথায় কথায় উদাহরণ টানেন ওয়েস্ট মিনিস্টার ধাচের গণতন্ত্রের সূতিকাগার নামে পরিচিত দেশ ব্রিটেনের। তাদের কথায় যুক্তি রয়েছে, কেননা ১২১৫ সালে ম্যাগনাকার্টা চুক্তির মধ্য দিয়ে যে গণতন্ত্রের যাত্রা শুরু হয়েছিল ব্রিটেনে, গণতন্ত্রের এ ধারাবাহিকতা এখন বিশ্বব্যাপী অনুসরণ করা হচ্ছে। আর তাই আমাদেরও উচিৎ কায়মনোবাক্যে ওয়েস্ট মিনিস্টার টাইপের গণতন্ত্র চর্চা করা। এই যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ঠিক ওয়েস্ট মিনিস্টার টাইপ সংসদীয় গণতন্ত্রের আলোকে ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে। ভুলে গেলে চলবে না, ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল মুজিবনগরের ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে’ যে সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়, তা ছিল রাষ্ট্রপতি পদ্ধতির সরকার। সেখানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে করা হয়েছিল রাষ্ট্রপতি। তার অনুপস্থিতিতে সৈয়দ নজরুল ইসলামকে করা হয় উপরাষ্ট্রপতি বা অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি। কিন্তু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু যখন বাংলাদেশে ফিরে এলেন, ঠিক এর পরদিন সরকারপদ্ধতির পরিবর্তন ঘটিয়ে মোটামুটি ব্রিটিশ ওয়েস্ট মিনিস্টার পদ্ধতির সংসদীয় গণতান্ত্রিক সরকারপদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়। এর জন্য ১১ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি একটি আদেশও জারি করেন। স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৭২ সালের ১১ জানুয়ারির সেই আদেশ বা অধ্যাদেশের মূল্য সীমাহীন। সেটি ছিল রাষ্ট্রের সাময়িক সময়ের জন্য ‘সংবিধান’, যার নাম ছিল ‘দ্য প্রভিশনাল কনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশ অর্ডার, ১৯৭২’। সেই সাময়িক সাংবিধানটি ছিল অতি সংক্ষিপ্ত, এক পৃষ্ঠার মতো; কিন্তু এর বিষয়বস্তু ছিল অতি গুরুত্বপূর্ণ। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশেই তা রচিত হয়েছিল। ১১ মাস পরে ’৭২-এর ডিসেম্বরে যে সংবিধান কার্যকর হলো, সেটির ভিত্তি ছিল ১১ জানুয়ারির রাষ্ট্রপতির সেই আদেশ। সেই আদেশের বিষয়বস্তুর একটি পটভূমি আছে। সেই আদেশে ধারণ করা হয়েছিল ১৯৫৪ সালের নির্বাচনী অঙ্গীকার ২১ দফা, ১৯৬৬-র ছয় দফা এবং ১৯৬৯-এর ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফার চেতনা। অর্থাৎ, বাংলাদেশের জনগণের দাবি সংসদীয় গণতান্ত্রিক সরকার। সেই দাবির প্রতি সম্মান দেখাতেই বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রপ্রধানের সর্বোচ্চ পদ ছেড়ে সরকারপ্রধানের দায়িত্ব নেন। রাষ্ট্রপতির ওই আদেশের ভিত্তিতে সরকার পুনর্গঠন করা হয়। প্রবাসে গঠিত সরকার বিলুপ্ত হয়। নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম বঙ্গবন্ধুকে ১২ জানুয়ারি সকালে বঙ্গভবনে শপথ পাঠ করান প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। তিনি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীকে শপথ পাঠ করান রাষ্ট্রপতি হিসেবে। নতুন মন্ত্রিসভাও সেদিন গঠিত হয়েছিল। তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছিল ব্রিটিশ ওয়েস্ট মিনিস্টার পদ্ধতির সংসদীয় গণতন্ত্র দিয়ে। ১৯৭৩ সালের মার্চে প্রথম নির্বাচনের মাধ্যমে তা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়। ব্রিটিশ ওয়েস্ট মিনিস্টার পদ্ধতির সংসদীয় গণতন্ত্রের একটি অনন্য দিক হচ্ছে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলো তাদের দলীয় নেতৃত্বের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। প্রথা হচ্ছে, The leader of the party that wins the most seats in a general election is appointed as the Prime Minister. অর্থাৎ নির্বাচনের মাধ্যমে যে রাজনৈতিক দল সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করে, সেই রাজনৈতিক দলের সর্বোচ্চ নেতাই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পান। ঠিক একই রকমভাবে, বাংলাদেশের সংবিধানের ৫৬(৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, ‘যে সংসদ-সদস্য সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থাভাজন বলিয়া রাষ্ট্রপতির নিকট প্রতীয়মান হইবেন রাষ্ট্রপতি তাঁহাকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করিবেন।’ তাহলে তো ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’-এর কথা মাথায় আসলেই ঘুরে ফিরে সেই ‘কে আমার বাবা’ ছায়াছবিটির কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। এই যে ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন করতে বিপুল উৎসাহে আগুয়ান হচ্ছে, আমাদের ওয়েস্ট মিনিস্টার পদ্ধতির সংসদীয় গণতন্ত্র অনুযায়ী তাদের প্রধান নেতা আসলে কে? কে হবেন কাণ্ডারি? নির্বাচনে জিতলে কে হবেন প্রধানমন্ত্রী? ড. কামাল হোসেন নাকি নির্বাচনই করবেন না। ‘সময়ে সরব’ রব সাহেবের এক সেনাপতির সৈন্য দল। কে নেতা, কে যে কর্মী বুঝে পাই না! ‘ভাইবার মান্না’ যে কোন সময়ে জীবন দিয়ে দিতে পারেন। এই রাজনৈতিক ক্ষণজন্মা (বক্তৃতায়) পাঁচ বছরের প্রধান মন্ত্রিত্বকালে আজীবন জীবন দান করে যাবেন – লাভের লাভ তো কিছু হবে না! গয়েশ্বর আর ফখরুল সাহেবদের কাছে ‘হেলমেট ব্যবসা’ নাকি প্রধানমন্ত্রীত্বের চেয়েও জমজমাট! এছাড়া ‘রানীমাতা’ কে ‘লঙ্কা বিজয়’ না করে নিজেরা প্রধানমন্ত্রীত্ব গ্রহণ করবেন তা কি হয়? বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী অংক কষতে ব্যাকুল– ৩ দিনে সরকার পতন করে ১৯টি ভোট বিয়োগ দিয়ে কি করে গোলপোস্টে বল ঢুকিয়ে ম্যাচ জেতা যায় এই এখন তার হিসেব নিকেশের বিষয়। জটিলেশ্বরের জটিল সমীকরণ! কতদিনে সমাধান মেলে কে জানে! আর বাকি থাকে ‘ভাইজান’। দণ্ডিত এবং ফেরারী আসামী। তাহলে তো সত্যিই ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’-এর জন্য এক বড় প্রশ্ন – ‘কে আমার বাবা?’

মন্তব্য করুন


 

Link copied