আর্কাইভ  শুক্রবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ● ৬ বৈশাখ ১৪৩১
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: পলাশবাড়ীতে আসামির ছুরিকাঘাতে বাদীর মৃত্যু, গ্রেফতার ১       মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের সন্তান-স্বজনের ভোটে না দাঁড়ানোর নির্দেশ       ভোজ্যতেলের দাম বাড়ল, খোলা তেলে সুখবর       বিএনপি নেতা সোহেলের নিঃশর্ত মুক্তি দাবিতে রংপুরে  মানববন্ধন ও সমাবেশ        খরার ঝুঁকিতে রংপুর অঞ্চল      

 width=
 

উপজেলা নির্বাচনে ১৭ ভোট পাওয়া গুলবাগী এখন এমপি

মঙ্গলবার, ১ জানুয়ারী ২০১৯, দুপুর ১১:৫৬

ডেস্ক: 'গুলবাগী এমপি হলো, দেশত আর বাকি থাকল কে' ভোটের রাতে ফল দেওয়ার পর বগুড়া শহরের সাতমাথা চত্বরের পাশে একজন চায়ের দোকানি বলছিলেন এ কথা। তার সঙ্গে জনাদশেক ক্রেতার কথায় বগুড়া-৭ আসনে নবনির্বাচিত সাংসদ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে যে মাত্র ১৭ ভোট পেয়েছিলেন, তা জানা গেল। বিএনপি অধ্যুষিত এই এলাকায় ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে কোন আসনে দলটির কে জয়ী হলেন, কে হলেন না, আলোচিত সেই হিরো আলমের ভরাডুবি- সেই খবর ছাপিয়ে বগুড়ায় আলোচনায় এখন 'গুলবাগী'র বিরাট বিজয়। 'শওকত আলী গুলবাগী এমপি হয়েছেন'- এটা সবার মুখে মুখে। অথচ নির্বাচনের একদিন আগেও তাকে খুব বেশি কেউ চিনতেন না, যারা চিনতেন তারাও তাকে ভালো চোখে দেখতেন না। বগুড়ার মানুষের মুখে মুখে থাকা সেই গুলবাগীর প্রকৃত নাম রেজাউল করিম বাবলু। এ নামেই তিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৭ আসনে (গাবতলী-শাজাহানপুর) স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ট্রাক প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ভোটের আগে যার তৎপরতাই ছিল না, তিনিই ভোটের দিন মহাজোটের প্রার্থী এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির স্ত্রীসহ সাত প্রার্থীকে হারিয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। অন্য ছয় প্রার্থী মিলে যে ভোট পেয়েছেন, বাবলু একাই পেয়েছেন তার দ্বিগুণ। তার প্রাপ্ত ভোট এক লাখ ৯০ হাজার। বিষয়টি নিজের কাছেও যেন বিশ্বাস হচ্ছে না নবনির্বাচিত এই সাংসদের। গতকাল সোমবার এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বলছিলেন, 'যখন অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটে, অবিশ্বাস্য কিছু ঘটে, তখন এমন আলোচনা হবেই।' শাজাহানপুর ও গাবতলী এলাকার স্থানীয় কয়েকজন জনপ্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলে মনে হলো, সাধারণ মানুষের মতো তারাও বাবলুর এই সাংসদ হওয়াটা মেনে নিতে পারছেন না। তবে হিংসায় নয়, কারণটা অন্যখানে। বগুড়া শহরের সাতমাথা মোড়ে স্থানীয় সাংবাদিকসহ নানা পেশার লোকজনই বলছিলেন বাবলুকে নিয়ে নানা কথা। তাদের ভাষ্য, বাবলু রাজনীতিবিদ নন, একসময় জেলা আদালত এলাকায় টাইপিস্ট ছিলেন। সেখান থেকেই তার প্রতারণার হাতেখড়ি। তার পেশা মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করা। তিনি চাকরি দেওয়ার কথা বলে, আদালত থেকে জামিন করিয়ে দেওয়ার কথা বলে বা ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিতেন। মানুষের মুখে মুখে ছিল, প্রবাসী জামাতার টাকা মেরে নিজের নামে ট্রাক কেনার কথাও। কয়েক মাস আগেও তিনি অখ্যাত একটি টিভি চ্যানেলের বগুড়া প্রতিনিধি বলে পরিচয় দিতেন নিজেকে। ক্যামেরাম্যান নিয়োগের কথা বলে তিনজনের কাছ থেকে টাকা নিলেও আর নিয়োগ দিতে পারেননি। এ নিয়ে দেনদরবার করেন স্থানীয় সাংবাদিকরাও। শাজাহানপুর উপজেলার গোহাইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলী আতোয়ার তালুকদার ফজু বলছিলেন, তিনি দীর্ঘদিন চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। নানা সময়ে নানা ঘটনায় রেজাউল করিম বাবলুর বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছেন। এসব ঘটনায় কয়েক দফা সালিশ-দরবার করেছেন। তবে তিনি এখন তাদের এমপি! এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রেজাউল করিম বাবলু বলেন, এমন কথা তার কানেও আসে। তবে এগুলো একেবারেই ভুয়া। তিনি কখনও এ ধরনের বাজে কাজ করেননি। নতুন নির্বাচিত হওয়া এই সাংসদের দাবি, তিনি পেশায় সাংবাদিক। আর সমাজের কাজ করতে গিয়ে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মানুষ নানা ধরনের অপপ্রচার চালায়। তার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। বাবলুর এলাকা শাজাহানপুরের বাসিন্দারা জানালেন, কিশোরকালেই বাবলু নানা 'দুই নম্বরী' শুরু করেন। ছাত্রজীবনে স্থানীয় গোয়াইল এলাকায় এক বাড়িতে গৃহশিক্ষক থাকার সময় জাল টাকা তৈরির সময় মেশিনপত্রসহ হাতেনাতে ধরাও পড়েন। ওই সময়ে মুচলেকায় ছাড়া পান তিনি। অবশ্য বাবলু বলছিলেন, সেই আগের কথা তার মনে নেই। তবে এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি, ঘটনার কথা নয়। তিনি জানালেন, তিনি শাজাহানপুর প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। এখন স্থানীয় একটি অনলাইনের সম্পাদক। আলোচনায় না থেকেও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি প্রায় দুই লাখ ভোট পেলেন কীভাবে- সে বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে স্থানীয় রাজনীতিবিদদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেল, বগুড়া-৭ আসনে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের জন্ম। এজন্য এ এলাকাটি বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও এখানে বিপুল ভোটে বারবার নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু এবার মামলায় সাজা খাটার কারণে প্রার্থী হতে পারেননি। বিএনপির পক্ষ থেকে গাবতলী উপজেলা চেয়ারম্যান মোরশেদ মিলটন মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করেন। তবে উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ না করার অভিযোগে প্রার্থিতা বাতিল হয়। শেষ পর্যন্ত বিএনপি বাধ্য হয়ে নির্বাচনের একদিন আগে স্বতন্ত্র প্রার্থী বাবলুকে সমর্থন দিলে তার কপাল খুলে যায়। অবশ্য গতকাল বিএনপির এই সমর্থনের কথা অস্বীকারই করতে চাইলেন ভোটে পাস করা রেজাউল করিম বাবলু। তিনি দাবি করেন, গত শুক্রবার তিনি টেলিভিশনের খবরে দেখতে পান বিএনপি তাকে সমর্থন দিয়েছে। তবে তার সঙ্গে কারও যোগাযোগ হয়নি। এখন স্বতন্ত্র সাংসদ থাকবেন, নাকি বিএনপিতে যুক্ত হবেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা পরিস্থিতিই বলে দেবে। কী করতে হবে তা ভবিষ্যতের ওপর নির্ভর করবে। অনেক অভিযোগের মধ্যে এলাকা ঘুরে বাবলুর কিছু ভালো কাজের তথ্যও মিলেছে। তিনি গত কয়েক বছর ধরে স্থানীয় মাঝিড়া বটতলা এলাকায় পুরো রমজান মাসজুড়েই মানুষের মাঝে বিনামূল্যে ইফতার বিতরণ করেন। প্রতি শুক্রবার এলাকার বিভিন্ন মসজিদে জুমার নামাজ শেষে নিজের উদ্যোগে ধর্মীয় বয়ানও দেন।

মন্তব্য করুন


 

Link copied