আর্কাইভ  শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ● ১৫ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

 width=
 
শিরোনাম: রংপুরবাসীর জন্য সরকারি চাকরি, পদ ১৫৯       স্বাস্থ্যের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ফজলুল হক কারাগারে       কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা       লালমনিরহাটে পুকুরে জাল ফেলতেই জালে উঠে এলো যুবকের মরদেহ       কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা      

 width=
 

কুমিল্লার ইটভাটির নিহত ১৩ জন শ্রমিক নীলফামারীর॥ শ্রমিকদের গ্রামে এখন শুধুই আহাজারি

শুক্রবার, ২৫ জানুয়ারী ২০১৯, রাত ০৮:৩৪

ইনজামাম-উল-হক নির্ণয়,নীলফামারী ২৫ জানুয়ারি॥ শোকের সাগরে ভাসছে নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার দুটি ইউনিয়নের তিন গ্রাম। আজ শুক্রবার(২৫ জানুয়ারী) ভোর সোয়া ৫টার দিকে পূর্বাঞ্চলের কুমিল্লার চৌদ্দ গ্রাম উপজেলার ঘোলপাশা ইউনিয়নের নারায়ণপুর এলাকায় কাজী অ্যান্ড কোং নামের একটি ইটভাটায় কয়লার ট্রাক উল্টে ঘুমন্ত যে ১৩ জন শ্রমিক নিহত ও ৩ জন আহত হয় তাদের সকলের বাড়ি উত্তরাঞ্চলের নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার গ্রামে। নিহতদের মধ্যে জলঢাকা উপজেলার মীরগঞ্জ ইউনিয়নের দুই গ্রাম রাজবাড়ি ও পাঠানপাড়া গ্রামের ৭ জন এবং শিমুলবাড়ি ইউনিয়নে আরাজি শিমুলবাড়ি গ্রামের ৪জন রয়েছে। এ খবর প্রকাশিত হলে জলঢাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া। প্রাণ হারানো শ্রমিকদের বাড়িতে বাড়িতে ছুটে আসেন প্রতিবেশী ও স্বজনরা। নিহতরা হলেন- জলঢাকা উপজেলার শিমুলবাড়ি ইউনিয়নের আরাজি শিমুলবাড়ি গ্রামের অমল চন্দ্র রায়ের ছেলে মনোরঞ্জন রায়(১৫), মৃত জগদীশ চন্দ্র রায়ের ছেলে মৃনাল চন্দ্র রায়(১৬), রাজবাড়ি গ্রামের ধৌলু বর্ম্মনের ছেলে কনক চন্দ্র(৩২), খোকারাম রায়ের ছেলে বিকাশ রায়(৩২), মীরগঞ্জ ইউনিয়নে নিজপাড়া কুড়ারপাড় গ্রামের কেশব চন্দ্র রায়ের ছেলে শঙ্কর চন্দ্র রায়(১৬), অমল চন্দ্র রায়ের ছেলে প্রশান্ত রায় দীপু(১৫), মানিক চন্দ্র রায়ের ছেলে তরুন চন্দ্র রায়(১৫), সুরেশ চন্দ্র রায়ের ছেলে রঞ্জিত কুমার(৩০), কামিক্ষা রায়ের ছেলে অমিত চন্দ্র রায়(১৯), রাম প্রসাদ চন্দ্রের ছেলে বিপ্লব কুমার রায়(১৫) এবং পাঠানপাড়া গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে মো. সেলিম(১৫), নুর আলমের ছেলে মোরসালিন(১৮) ও ফজলুল হকের ছেলে মো. মাসুম (১৬)। আজ শুক্রবার সকালে সরেজমিনে ওই তিন গ্রামে গেলে চোখে পড়ে এলাকাগুলোর মানুষজন যেন শোকে পাথর। নিহতদের প্রতিজনের বাড়িতে চলছে কান্নার গগণ বিদারক আহাজারী, স্বজনদের মাটিতে গড়াগড়ি। স্বজনরা জানান ইটভাটির মালিকের গতকাল বৃহস্পতিবার(২৪ জানুয়ারী) সন্ধ্যায় ৭ দিনের মজুরী দেয়ার কথা ছিল। মজুরী পেয়েই তারা সকলেই রাতের বাস ধরে বাড়ি ফিরতো। কিন্তু মালিকপক্ষ ওই দিন মজুরী টাকা দিতে ব্যর্থ হয়। ফলে মালিকের কথা মত শুক্রবার বিকালে মজুরীর টাকা নিয়েই তারা রাতের গাড়ীতে বাড়ি ফিরবে। কিন্তু তার আগেই ঘটে গেল এই মর্মান্তিক ঘটনা। নিহতদের স্বজনরা আরো জানায়, এলাকায় কামলা কাজের মজুরী কম বলে ওরা বিদেশ খাটে। ওদের সকলে কুমিল্লার ইটভাটির কাজে যাওয়ার ২২ দিন হয়েছে। প্রতি সপ্তাহে তারা বিকাশের মাধ্যমে বাড়িতে টাকা পাঠায় কেউ চার হাজার কেউ বা ৫ হাজার। বৃহস্পতিবার ইটভাটির মালিক মজুরীর টাকা পরিশোধ করলে হয়তো তাদের এ ভাবে মরতে হতো না। এ জন্য তারা ইটভাটির মালিককে দায়ি করে তার বিচার দাবি করেছে। নিহত কনক চন্দ্র রায়ের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় মা কনিকা বালা ২ মাস আগে মারা গেছে। অসুস্থ্য বৃদ্ধ বাবা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রয়েছে। কনকের স্ত্রী ববিতা রানী বাড়ির উঠনে গড়াগড়ি দিচ্ছে আর চিৎকার করে কাঁদছে। কনকের এক মেয়ে এক ছেলে। বন্যারানী (৯) চতুর্থ শ্রেনীর ছাত্রী, কৌশিক (৮) দ্বিতীয় শ্রেনীর ছাত্র। বৃহস্পতিবার রাতে মোবাইলে বাবার সঙ্গে দুই ভাই বোন কথা বলেছে। স্কুলের খাতা লাগবে জরুরী এ কথা বলেছে বাবাকে মেয়েটি। ছেলেটি বলেছে বাবা কমলা নিয়ে আসিও আমি কমলা খাবো। অবুঝ দুই ছেলে মেয়ে অপেক্ষা করছে শনিবার সকালে বাবা আসবে।কিন্তু তাদের বাবা যে না ফেরার দেশে চলে গেছে তারা তখনও বুঝে উঠতে পারেনি। নিহত মোরছালিনে বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার বাবা নিথর হয়ে বসে আছেন। মুখে কোন কথা নেই। গ্রামবাসী জানায় ছেলেকে কোরআনে হাফেজ করবেন বলে মাদ্রাসায় ভর্তিও করে দিয়েছিলেন তিনি। নিহত বিকাশ রায়ের বাড়িতে দেখা যায় তার ৭ বছরের একটি ছেলে প্রকাশ রায়। ছেলেকে সু-শিক্ষায় গড়বেন বলে এবার কেজি স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছেন। অবুঝ ছেলেটি বাবা ফিরবেনা আর বুঝতে পারেনি। তবে স্বামী হারা পূর্বিতা রানী মাটিতে মাথা ঠুকরে আহাজারী করছিল। তবে নিহত রনজিৎ কুমারের স্ত্রী শোভা রানী গগণ বিদারক আহাজারী করে বলছিল স্বামী তার ৫ মাস ধরে বাড়ি আসেনি। রাতে মোবাইলে জানায় শুক্রবার মজুরীর টাকা পেয়ে গাড়িতে চড়বে। একমাত্র আট বছরের প্রতিবন্ধি মেয়েটি এর কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলনা। দশম শ্রেনীর ছাত্র মনোরঞ্জন রায়। সেও নিহত হয়েছে সেখানে। আগামী বছর এসএসসি পরীক্ষা দেবে বলে প্রস্তুতি নেয়ার আগে দিনমজুরী করে টাকা জোগাতে ছুটে গিয়েছিল ২২ দিন আগে ওই কুমিল্লায়। বৃহস্পতিবার রাতে মা ভারতী রানীর সঙ্গে কথা বলেছে। মা অসুস্থ তাই সে শুক্রবার বিকালে মজুরীর টাকা হাতে পেলে রাতেই গাড়িতে উঠে শনিবার বাড়িতে এসেই মাকে ডাক্তার দেখাবে বলেছিল। কথা গুলো বলছিল তার দিনমজুর বাবা। নিহত তরুন চন্দ্র রায় ইটভাটির ওই কাজে তার বাবা মানিক চন্দ্র রায়ের সঙ্গেই গেছে কুমিল্লা। তবে একস্থানে তারা কাজ করেনি। বাবা পৃথক ইটভাটিতে কাজ করেন।তরুনের মা সবলা রানী বার বার মুর্ছা যাচ্ছিল ছেলের মৃত্যুতে।নিহত সকলের বাড়িতেই একই অবস্থা। তবে গ্রামের মানুষজনকে মন্তব্য করে বলতে শোনা যায়,আর কাউকে বিদেশ খাটতে যেতে দেয়া হবেনা। নিজ এলাকায় কাজ করে যা কামাই হবে তা দিয়েই কষ্টে সংসার চলবে। সরেজমিনে দেখা যায় শিমুল বাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হামিদুল ইসলাম ও মীরগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হুকুম আলী নিহতদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের খোজ খবর নিতে। তারা নিজের পক্ষে সহযোগীতাও করেছেন তাদের। নীলফামারী জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিন নিহত ১৩ জন ইটভাটি শ্রমিকদের পরিবারের প্রতি শোক ও সমবেদনা জানিয়ে বলেন, মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় আমরা প্রত্যেকে মর্মাহত। নিহত শ্রমিকদের প্রতিটি পরিবারকে নীলফামারী জেলা প্রশাসনের পক্ষে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেয়া হবে। স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনকে নিহত শ্রমিকদের বাড়িতে পাঠিয়ে তাদের সঠিক তালিকা করা হয়েছে। তিনি আরো জানান এরইমধ্যে ১৩ শ্রমিকের প্রত্যেকের পরিবারের জন্য কুমিল্লা জেলা প্রশাসন থেকে ২০ হাজার করে টাকা নীলফামারীতে প্রেরন করেছে। তিনি জানান শুক্রবার বিকালে কুমিল্লা হতে মরদেহ কফিনে নীলফামারীর পথে পুলিশ পাহাড়ায় রওনা হয়েছে। মরদেহ এসে পৌছালে নিহতদের পরিবারকে ২০ হাজার করে অর্থ বুঝিয়ে দেয়া হবে।

মন্তব্য করুন


 

Link copied