আর্কাইভ  শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ● ১৫ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

 width=
 
শিরোনাম: রংপুরবাসীর জন্য সরকারি চাকরি, পদ ১৫৯       স্বাস্থ্যের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ফজলুল হক কারাগারে       কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা       লালমনিরহাটে পুকুরে জাল ফেলতেই জালে উঠে এলো যুবকের মরদেহ       কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা      

 width=
 

কুমিল্লায় ১৩জন নিহত শ্রমিকের মরদেহ নীলফামারীতে পরিবারের কাছে হস্তান্তর

শনিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০১৯, রাত ০৯:১৩

স্টাফ রিপোর্টার,নীলফামারী ২৬ জানুয়ারি॥ কুমিল্লায় কয়লা বোঝাই উল্টে যাওয়া ট্রাকচাপায় ঘুমন্ত ইটভাটির ১৩ জন নিহত শ্রমিকের মরদেহ তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে নীলফামারী জেলা প্রশাসন। সরকারী ভাবে মরদেহগুলো বহন করে নিয়ে এসে আজ শনিবার(২৬ জানুয়ারী) সকাল ৮টায় জলঢাকা উপজেলার শিমুলবাড়ি ইউনিয়নের রাজবাড়ি কর্নময়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে স্বজনদের কাছে মৃতদেহ হস্তান্তর করেন নীলফামারী জেলা প্রশাসক বেগম নাজিয়া শিরিন। এ সময় প্রত্যেকের পরিবারকে নগদ ২০ হাজার টাকা, ১টি করে কম্বল ও শুকনো খাবার দেওয়া হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুজাউদৌলা, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার সুভাশিষ চাকমা, নীলফামারী জেলা সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আরিফা সুলতানা লাভলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা কান্তি ভুষন রায়, শিমুলবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হামিদুল হক ও মীরগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হুকুম আলী। এর আগে কুমিল্লা থেকে একটি কাভার্ড ভ্যানে ভোরে জলঢাকা উপজেলার শিমুলবাড়ি ও মীরগঞ্জ এলাকায় লাশ নিয়ে আসা হয়। এদিকে দুই ইউনিয়নের ১৩টি তাজা প্রাণ এভাবে শেষ হয়ে যাওয়ায় ঘটনা এলাকার কেউ মেনে নিতে পারছেন না। এরা সকলেই হতদরিদ্র পরিবারের সদস্য। পরিবারের উপার্জনকারী ব্যক্তি ছিলেন তারা। সরেজমিনে ওই তিন গ্রামে গেলে চোখে পড়ে এলাকাগুলোর মানুষজন যেন শোকে পাথর। নিহতদের প্রতিজনের বাড়িতে চলছে কান্নার গগণ বিদারক আহাজারী, স্বজনদের মাটিতে গড়াগড়ি। স্বজনরা জানান ইটভাটির মালিকের গত বৃহস্পতিবার(২৪ জানুয়ারী) সন্ধ্যায় ৭ দিনের মজুরী দেয়ার কথা ছিল। মজুরী পেয়েই তারা সকলেই রাতের বাস ধরে বাড়ি ফিরতো। কিন্তু মালিকপক্ষ ওই দিন মজুরী টাকা দিতে ব্যর্থ হয়। ফলে মালিকের কথা মত শুক্রবার(২৫ জানুয়ারী) বিকালে মজুরীর টাকা নিয়েই তারা রাতের গাড়ীতে বাড়ি ফিরবে। কিন্তু তার আগেই ঘটে গেল এই মর্মান্তিক ঘটনা। নিহতদের স্বজনরা আরো জানায়, এলাকায় কামলা কাজের মজুরী কম বলে ওরা বিদেশ খাটে। ওদের সকলে কুমিল্লার ইটভাটির কাজে যাওয়ার ২২ দিন হয়েছে। প্রতি সপ্তাহে তারা বিকাশের মাধ্যমে বাড়িতে টাকা পাঠায় কেউ চার হাজার কেউ বা ৫ হাজার। বৃহস্পতিবার ইটভাটির মালিক মজুরীর টাকা পরিশোধ করলে হয়তো তাদের এ ভাবে মরতে হতো না। এ জন্য তারা ইটভাটির মালিককে দায়ি করে তার বিচার দাবি করেছে। নিহত কনক চন্দ্র রায়ের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় মা কনিকা বালা ২ মাস আগে মারা গেছে। অসুস্থ্য বৃদ্ধ বাবা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রয়েছে। কনকের স্ত্রী ববিতা রানী বাড়ির উঠনে গড়াগড়ি দিচ্ছে আর চিৎকার করে কাঁদছে। কনকের এক মেয়ে এক ছেলে। বন্যারানী (৯) চতুর্থ শ্রেনীর ছাত্রী, কৌশিক (৮) দ্বিতীয় শ্রেনীর ছাত্র। গত বৃহস্পতিবার রাতে মোবাইলে বাবার সঙ্গে দুই ভাই বোন কথা বলেছে। স্কুলের খাতা লাগবে জরুরী এ কথা বলেছে বাবাকে মেয়েটি। ছেলেটি বলেছে বাবা কমলা নিয়ে আসিও আমি কমলা খাবো। অবুঝ দুই ছেলে মেয়ে পেল না খাতা ও কমলা। দেখতে পেল বাবার মরদেহ দেহ। নিহত বিকাশ রায়ের বাড়িতে দেখা যায় তার ৭ বছরের একটি ছেলে প্রকাশ রায়। ছেলেকে সু-শিক্ষায় গড়বেন বলে এবার কেজি স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছেন। অবুঝ শিশুটি অপেক্ষায় ছিল বাবা এলে কেজি স্কুলের ড্রেস বানিয়ে নেবে। স্বামী হারা পূর্বিতা রানী মাটিতে মাথা ঠুকরে আহাজারী করছিল।তবে নিহত রনজিৎ কুমারের স্ত্রী শোভা রানী গগণ বিদারক আহাজারী করে বলছিল স্বামী তার ৫ মাস ধরে বাড়ি আসেনি। রাতে মোবাইলে জানায় শুক্রবার মজুরীর টাকা পেয়ে গাড়িতে চড়বে। কিন্তু তার লাশ এলো বাড়িতে। একমাত্র আট বছরের প্রতিবন্ধি মেয়েটি এর কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলনা। দশম শ্রেনীর ছাত্র মনোরঞ্জন রায়। সেও নিহত হয়েছে সেখানে। আগামী বছর এসএসসি পরীক্ষা দেবে বলে প্রস্তুতি নেয়ার আগে দিনমজুরী করে টাকা জোগাতে ছুটে গিয়েছিল ২২ দিন আগে ওই কুমিল্লায়। মা অসুস্থ তাই সে গতকাল শুক্রবার বিকালে মজুরীর টাকা হাতে পেলে রাতেই গাড়িতে উঠে আজ শনিবার বাড়িতে এসেই মাকে ডাক্তার দেখাবে বলেছিল। কিন্তু সে এলো লাশ হয়ে।নিহত তরুন চন্দ্র রায় ইটভাটির ওই কাজে তার বাবা মানিক চন্দ্র রায়ের সঙ্গেই গিয়েছিল। বাবা ও ছেলে পৃথক ইটভাটিতে কাজ করে। তরুনের মা সবলা রানী বার বার মুর্ছা যাচ্ছিল ছেলের মৃত্যুতে। নিহত সকলের বাড়িতেই একই অবস্থা। এদিকে শ্রমও মন্ত্রনালয় হতে নিহতদের পরিবারকে এক লাখ ও আহতদের পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা করে প্রদানের ঘোষনা করা হয়েছে। উল্লেখ যে,গতকাল শুক্রবার(২৫ জানুয়ারী) ভোর সোয়া ৫টার দিকে পূর্বাঞ্চলের কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ঘোলপাশা ইউনিয়নের নারায়ণপুর এলাকায় কাজী অ্যান্ড কোং নামের একটি ইটভাটায় কয়লার ট্রাক উল্টে ঘুমন্ত ১৩ জন শ্রমিক নিহত হয়। নিহতরা হলেন- নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার শিমুলবাড়ি ইউনিয়নের আরাজি শিমুলবাড়ি গ্রামের অমল চন্দ্র রায়ের ছেলে মনোরঞ্জন রায় (১৫),মৃত জগদীশ চন্দ্র রায়ের ছেলে মৃনাল চন্দ্র রায় (১৬), রাজবাড়ি গ্রামের ধৌলু বর্ম্মনের ছেলে কনক চন্দ্র (৩২),খোকারাম রায়ের ছেলে বিকাশ রায়(৩২), মীরগঞ্জ ইউনিয়নে নিজপাড়া কুড়ারপাড় গ্রামের কেশব চন্দ্র রায়ের ছেলে শঙ্কর চন্দ্র রায় (১৬), অমল চন্দ্র রায়ের ছেলে প্রশান্ত রায় দীপু(১৫),মানিক চন্দ্র রায়ের ছেলে তরুন চন্দ্র রায় (১৫),সুরেশ চন্দ্র রায়ের ছেলে রঞ্জিত কুমার (৩০), কামিক্ষা রায়ের ছেলে অমিত চন্দ্র রায়(১৯) রাম প্রসাদ চন্দ্রের ছেলে বিপ্ল¬ব কুমার রায় (১৫) ও পাঠানপাড়া গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে মো. সেলিম (১৫), নুর আলমের ছেলে মোরসালিন (১৮) ও ফজলুল হকের ছেলে মো. মাসুম (১৬)। #

মন্তব্য করুন


 

Link copied