সেন্ট্রাল ডেস্ক: রংপুর জেলায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড) স্থাপনের জন্য উপযুক্ত জমি নির্বাচন করা হয়েছে। রংপুর জেলা প্রশাসন গঙ্গাচড়া উপজেলায় প্রায় ২৫৪ দশমিক ২৩ একর খাস জমি চিহ্নিত করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) ব্যবস্থাপক (বিনিয়োগ উন্নয়ন) বরাবর পাঠিয়েছেন। জেলা প্রশাসকের দাবি, জমিটি ১নং খাস খতিয়ানভূক্ত। তাই অধিগ্রহণের প্রয়োজন নেই। এছাড়া শ্রমিকের সহজলভ্যতা থাকায় প্রস্তাবিত এলাকায় শ্রমঘন শিল্প কারখানা স্থাপনের সুযোগ রয়েছে। ২০০৮ সালে রংপুর বিভাগে উন্নীত হওয়ায় সারাদেশের সাথে এমনকি ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চল, নেপাল ও ভুটানের সাথে ব্যবসায়িক যোগাযোগ বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু জেলার একমাত্র বিসিক শিল্প নগরীতে দীর্ঘদিন থেকে শিল্প সম্প্রসারণের জন্য প্রয়োজনীয় জমি এবং অবকাঠামো সুবিধা না থাকায় শিল্প কারখানা নির্মাণে উৎসাহী হচ্ছেন না নতুন উদ্যোক্তারা। তাই উদ্যোক্তাদের সুবিধার্থে এবং এ অঞ্চলে ব্যাপক কর্মসংস্থানের জন্য ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরে এসএজেড স্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছিলেন।
তাদের দাবির প্রেক্ষিতে বেজা’র ব্যবস্থাপক যুগ্ম সচিব (বিনিয়োগ উন্নয়ন) মনিরুজ্জামান সরকারি খাস জমি প্রাধান্য দিয়ে রংপুর জেলায় ২শ থেকে ৩শ একর বা তদুর্ধ্ব জমি এসইজেড প্রতিষ্ঠায় জরুরি ভিত্তিতে কিছু তথ্য প্রেরণের জন্য রংপুরের জেলা প্রশাসককে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করেন। প্রায় ১ বছর আগে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড) স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় জমির তথ্য চেয়ে বেজা কর্তৃপক্ষ রংপুরে জেলা প্রশাসনে পত্র প্রেরণ করলেও তা অজ্ঞাত কারণে ব্যবস্থা গ্রহণে উদ্যোগী হতে দেখা যায়নি। ফলে উদ্যোক্তা এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অবশেষে বর্তমান জেলা প্রশাসক এনামুল হাবীব রংপুরে যোগদান করেই উদ্যোগী হয়ে বিভিন্ন উপজেলায় পরিদর্শন করে উপযুক্ত জমির সন্ধান করতে থাকেন। অবশেষে গঙ্গাচড়া উপজেলায় এসইজেড স্থাপনের জন্য উপযুক্ত খাস জমি নির্বাচন করে ২০১৮ সালের ১৮ জুন বেজা’র ব্যবস্থাপক যুগ্ম সচিব (বিনিয়োগ উন্নয়ন) বরাবর পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রেরণ করেন। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এসইজেড স্থাপনের জন্য প্রস্তাবিত জমিটি হচ্ছে আর এস ১ নং খাস খতিয়ানভুক্ত (বাস্তবে দোলা ও ডাঙ্গা)। এটি গংগাচড়া উপজেলার লক্ষীটারী ইউনিয়নের ইচলি মৌজায়। দাগ নং ৬৬৮।
প্রস্তাবিত স্থানটি তিস্তানদীর ওপর নির্মিত শেখ হাসিনা সড়ক সেতুর উত্তর প্রান্তের লাগোয়া এবং কাকিনা (লালমনিরহাটের কালিগঞ্জ উপজেলা) রংপুর সড়কের পশ্চিম পাশে অবস্থিত। এই স্থান হতে সড়ক, রেল ও নৌ তিন পথেই যোগাযোগ স্থাপন সহজ। এটি রংপুর হতে ১০ কিলোমিটার এবং লালমনিরহাট জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার কাকিনা রেলস্টেশন হতে ৪ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। পাশাপাশি নৌ পথে এ স্থান হতে সহজেই নীলফামারী ও লালমনিরহাট জেলার বিভিন্ন উপজেলা এবং রংপুর জেলার কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার সাথে যোগাযোগ সম্ভব। এছাড়াও প্রস্তাবিত স্থান থেকে লালমনিরহাটের বুড়িমারীস্থল বন্দরের সাথে সড়ক ও রেলপথে যোগাযোগও সম্ভব। ফলে কম খরচে বুড়িমারী স্থল বন্দরের মাধ্যমে ভারত, নেপাল ও ভুটানে সড়ক ও রেল পথে পণ্য পরিবহণ করা সহজ। এমনকি তিস্তা নদী ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নৌ চ্যানেল বিস্তৃত করে ভারতে পণ্য পরিবহন সম্ভব। প্রস্তাবিত এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ আছে। এছাড়া প্রস্তাবিত জমির লাগোয়া পূর্ব পাশে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের এবং ইন্ট্রাকো সোলার পাওয়ার লিমিটেড নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সোলার পাওয়ার প্লান্ট স্থাপনের কাজ চলছে। প্রয়োজনে উৎপাদিত সৌরশক্তি এ অর্থনৈতিক জোনে স্থাপিত শিল্পে ব্যবহার করা যাবে। তবে জমিটি বন্যামুক্ত উচ্চতায় নিতে হলে ১৫ ফিট মাটি ভরাটের প্রয়োজন হতে পারে। অবশ্য তিস্তা নদীর নৌ চ্যানল চালুর সিদ্ধান্ত নিয়ে নদী ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করে খুব সহজে জমি ভরাট করা সম্ভব। প্রস্তাবিত জমিটি সিটি করপোরেশন, পৌরসভা বা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অন্তর্ভুক্ত নয় এবং জনপ্রতিনিধিদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। সরেজমিনে গত মঙ্গলবার সকালে গংঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষীটারী ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, ইচলি মৌজার ৬৬৮ নং দাগে খাস জমিতে চলছে পুরোদমে আবাদ। কিছু লোকজন কাঁচা এবং টিনশেড বাড়ি করে বসবাস করছেন।
এসময় কথা হয় স্থানীয় সার্ভেয়ার (আমিন) মোফাজ্জল হোসেনের সাথে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে জমি মাপার পেশার সাথে সম্পৃক্ত। তিনি নিশ্চিত করে বলেন, ইচলি মৌজার ৬৬৮ নং দাগের জমি ১ নং খাস খতিয়ানের। আগে ব্রিজ না থাকায় ওই জমির প্রতি দখলদারদের তেমন দৃষ্টি ছিলো না। কিন্তু এখন যাতায়তের সুবিধার জন্য অনেকের চোখ পড়েছে জমিটি ওপর।
রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র প্রেসিডেন্ট রেজাউল ইসলাম মিলন বলেন, রংপুরে এসইজেড স্থাপনের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আমাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে। তাদের চাহিদামতো প্রস্তাবিত জমি নির্বাচন করে গুরুত্বপূর্ণ কাগজ পত্রাদি বর্তমান জেলা প্রশাসক এনামুল হাবীব বেজা কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছেন। তিনি বলেন, এসইজেড স্থাপিত হলে ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চল, নেপাল ও ভুটানের সাথে ব্যবসায়িক যোগাযোগ বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে।পাশাপাশি ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। তিনি দ্রুত এসইজেড স্থাপনের পরবর্তী কর্মকান্ড শুরু করার জন্য বর্তমান সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন। তিনি আরও বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্শির বাড়ি রংপুর। তাই তিনি (মন্ত্রী) ভালো করে জানেন, পিছিয়ে পড়া এ অঞ্চলের ব্যবসাবাণিজ্য সম্প্রসারণে এসইজেড স্থাপনের কোনো বিকল্প নেই।
জেলা প্রশাসক এনামুল হাবীব জানান, রংপুরে যোগদান করে তিনি জানতে পারেন এসইজেড স্থাপনের জন্য জেলা প্রশাসনের কাছে খাস জমিকে প্রাধ্যন্য দিয়ে ২শ থেকে ৩শ একর বা তদুর্ধ্ব জমির নির্বাচন করে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য চেয়ে বেজার ব্যবস্থাপক (বিনিয়োগ উন্নয়ন) পত্র দিয়েছেন। তিনি দ্রুত তার আট উপজেলার ইউএনওদের ওই ধরনের জমি আছে কীনা তা জানানোর জন্য তাগদা দেন। পরে গঙ্গাচড়া উপজেলায় কাঙ্খিত জমির খোঁজ মিলে। ইতোমধ্যে প্রযোজনীয় কাগজ পত্রাদি পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এখন সম্ভাব্যতা যাচাইসহ পরবর্তী কার্যক্রম শুরু হবে।