আর্কাইভ  শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ● ১৫ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

 width=
 
শিরোনাম: রংপুরবাসীর জন্য সরকারি চাকরি, পদ ১৫৯       স্বাস্থ্যের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ফজলুল হক কারাগারে       কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা       লালমনিরহাটে পুকুরে জাল ফেলতেই জালে উঠে এলো যুবকের মরদেহ       কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা      

 width=
 

জনস্বার্থে উচ্চ আদালতে বাংলাভাষা ব্যবহারের গুরুত্ব

বৃহস্পতিবার, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, দুপুর ১১:৫১

অ্যাডভোকেট এ এ এম মুনীর চৌধুরী অনেক কাল আগে কবি রামনিধি গুপ্ত বলেছেন, ‘নানান দেশে নানান ভাষা,/ বিনে স্বদেশী ভাষা পুরে কী আশা \’ বাংলাভাষার প্রতি গভীর মমতায় কবি অতুল প্রসাদ সেন লিখেছেন, “মোদের গরব, মোদের আশা,/ আ-মরি বাংলাভাষা/ মাগো তোমার কোলে, তোমার বোলে,/ কতই শান্তি ভালবাসা।” ভাব প্রকাশের অন্যতম প্রধান মাধ্যম ভাষা। প্রত্যেক মানুষ ¯্রষ্টার অসামান্য কল্যাণে মায়ের কোল থেকে যে ভাষা শিখে ভাবপ্রকাশ ও জ্ঞানার্জনে স্বাভাবিকভাবে বিকশিত হয় তা-ই মাতৃভাষা। বাঙ্গালীর মাতৃভাষা বাংলা। হাজার বছরে সমৃদ্ধ এই ভাষার মান অতি উচ্চ। ব্রিটিশ শাসনের শৃংখলমুক্ত হয়ে ১৯৪৭ সালে পূর্ব বাংলা আর এক হাজার মাইল ব্যবধানে পশ্চিম-পাকিস্তানকে নিয়ে গঠিত হয় পাকিস্তান রাষ্ট্র। দ্বি-জাতি তত্বের ভিত্তিতে গঠিত পাকিস্তানী শাসনের শুরুতেই রাষ্ট্র ভাষা নিয়ে বাঙ্গালীদের সাথে বিবাদ শুরু করে পশ্চিমা শাসকেরা। সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙ্গালী রাষ্ট্রে উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার হীন চক্রান্তে মেতে ওঠা শাসকদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় বাংলার মানুষ। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ সালাম, বরকত, রফিক, শফিক, জব্বার সহ ছাত্র-জনতা ভাষার দাবীতে বুকের রক্ত দিয়ে যে স্বাধিকার আন্দোলনের সূচনা করে সেই দাবী-আন্দোলনের পথ ধরেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে ৬৯’এর গণ অভ্যুত্থান, ৭১’এর মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাঙ্গালীর শ্রেষ্টতম অর্জন এই স্বাধীন বাংলাদেশ। স্বাধীনতার পর জাতি গঠনের ক্ষেত্রে নাগরিকদের সবচেয়ে বড় সম্পদ হচ্ছে মহান সংবিধান। যা ১৯৭২ সালে রচিত। এই সংবিধানের প্রস্তাবনাতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ভিত্তিতে বাঙ্গালী জাতির আশা-আকাংখা এবং রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন গভীর তাৎপর্যের সাথে বিবৃত হয়েছে। বাংলাভাষায় রচিত সংবিধানের ৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে “প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা।”জন চাহিদা এবং সংবিধানের নিশ্চয়তার ভিত্তিতে দেশের শিক্ষার মাধ্যম ও রাষ্ট্রের সকল কর্ম সম্পাদনে ভাষার মাধ্যম হিসেবে বাংলা ভাষাকে প্রধান মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করার অঙ্গীকার নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালিত হয়ে আসছে। মাতৃভাষার গুরুত্ব ও মাতৃভাষার জন্য বাঙ্গালীর আত্মোৎসর্গ ও বীরত্ত¡পূর্ণ সংগ্রামের ইতিহাসকে ধারণ করে জাতিসংঘ ১৯৯৯ সালে ‘২১শে ফেব্রুয়ারী’কে প্রতিবছর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে সারাবিশ্বে পালন করার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই থেকে প্রতিবছর ২১শে ফেব্রুয়ারী আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। মাতৃভাষা প্রতিষ্ঠার অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা ও সর্বোচ্চ গৌরব থাকার পরেও আমরা এখনও রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরে জনগণের চাহিদা মত মাতৃভাষা বাংলাকে ব্যবহার করতে পারছি কিনা এটাই আজকের মূল প্রতিপাদ্য। বাংলাদেশের সর্বত্র তথা সরকারী অফিস, আদালত, আধা-সরকারী, স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানকর্তৃকবিদেশের সাথে যোগাযোগ ব্যতিত অন্যান্য সকল ক্ষেত্রে নথি ও চিঠিপত্র, আইন-আদালতের সওয়াল-জবাব এবং অন্যান্য আইনানুগ কার্যাবলী বাংলায় লেখার তাগিদ অনুভব করে ১৯৮৭ সালে বাংলাভাষা প্রচলন আইন জারি করা হয়। ৪টি ধারা সম্বলিত সংক্ষিপ্ত এই আইনটি প্রচলিত থাকার পরও সরকারী অফিসে বাংলা ভাষার ব্যবহার হলেও আইন-আদালত বিশেষ করে উচ্চ আদালতে এখনও মাতৃভাষা বাংলা আশানুরুপ ভাবে ব্যবহার হচ্ছে না। দেশে প্রচলিত দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে উচ্চ আদালতে ইংরেজী ভাষা ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু উচ্চ আদালতে মাতৃভাষা ব্যবহারের গুরুত্ব সবাই অনুভব করছেন। এই বাস্তবতায় উচ্চ আদালতে বাংলাভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে কী অন্তরায় রয়েছে সেটিই বিবেচ্য বিষয়।প্রথমত: বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩ এর আলোকে রচিত-বাংলাভাষা প্রচলন আইন, ১৯৮৭ তে আদালত তথা উচ্চ আদালতে মাতৃভাষা বাংলা ব্যবহারের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়নি। অবশ্য এর যথেষ্ট কারণ ও যৌক্তিকতা রয়েছে। দেশে প্রচলিত অনেক আইন ইংরেজী ভাষায় ব্রিটিশ আমলে প্রণীত এবং সেগুলি এখনও কার্যকর। পাশাপাশি আইন-আদালতে ইংরেজী, ফার্সী এবং আরবী ভাষার অনেক শব্দ তথা নামপদ প্রচলিত তথা ব্যবহৃত হয় যেগুলির বাংলা শব্দ এখনও নির্ণীত ও অনুমোদিত হয়নি। উচ্চ আদালতে মাতৃভাষা বাংলা ব্যবহার বিষয়ে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের একটি গুরুত্বপূর্ণ নজির এ প্রসঙ্গে প্রণিধানযোগ্য। বিজ্ঞ বিচারপতি এ আর এম আমিরুল ইসলাম চৌধুরীর ১৯৯১ সালে প্রদত্ত একটি রায়ে বলা হয়েছে উচ্চ আদালতে বাংলাভাষা ব্যবহারের প্রত্যাশা পূরণ করতে হলে সর্বাগ্রে প্রয়োজন বাংলাভাষা প্রচলন আইন ১৯৮৭ এর প্রয়োজনীয় সংশোধন। এই রায়টি পর্যালোচনা করে প্রখ্যাত আইনজীবী প্রয়াত কামাক্ষানাথ সেন লিখিত একটি নিবন্ধে উচ্চ আদালতে বাংলাভাষা প্রচলনের জন্য কতিপয় বাধা দূরীকরণে গুরুত্বারোপ করে সুপারিশ করা হয়েছে। যথা- ক) আদালতে বাংলাভাষা ব্যবহারের আইনগত বাধা অপসারন করতে হবে, খ) বাংলা ভাষায় সকল আইন প্রণয়ন করতে হবে ও অতীতে প্রণীত সকল আইন বাংলায় অনুবাদ করতে হবে, গ) ভাষাবিদ, বিচারক ও আইনজীবী সমন্বয়ে পরিভাষা কমিটি গঠন করতে হবে, ঘ) মুদ্রাক্ষরিক ও সাঁটলিপিকার সংক্রান্ত অসুবিধা দুর করতে হবে, ঙ) বাংলা একাডেমী ও বার কাউন্সিলকে বাংলায় বই প্রকাশের ক্ষেত্রে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে, চ) সর্বোপরি বাংলা ব্যবহারে মানসিকতার উন্নয়ন ঘটাতে হবে। একথা অনস্বীকার্য যে, জনগণের বোধগম্য ভাষায় উচ্চ আদালতে বিচারিক কাজ নিস্পন্ন হওয় প্রয়োজন। বিচারপ্রার্থী জনগণের এটি স্বাভাবিক প্রত্যাশা। সরকার, বিচারক সমাজ এবং আইনজীবীগণ বিষয়টি সম্যক উপলদ্ধি করেন। উচ্চ আদালতের বিচারপতি, আইনজ্ঞ ও বুদ্ধিজীবী সমাজ তাঁদের বক্তব্যে এবং লেখায় উচ্চ আদালতে বাংলাভাষার ব্যবহারকে গুরুত্ব দিয়ে প্রায়শই আলোকপাত করে থাকেন। সুতরাং উল্লেখিত সুপারিশগুলি যথাযথভাবে মূল্যায়ন করে মাতৃভাষা ব্যবহারের বাধা অপসারনের এখনই সময়। লেখক: আইনজীবী, মানবাধিকারকর্মী ও পরিবেশবাদী সংগঠক।

মন্তব্য করুন


 

Link copied