আর্কাইভ  শুক্রবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ● ৬ বৈশাখ ১৪৩১
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: পলাশবাড়ীতে আসামির ছুরিকাঘাতে বাদীর মৃত্যু, গ্রেফতার ১       মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের সন্তান-স্বজনের ভোটে না দাঁড়ানোর নির্দেশ       ভোজ্যতেলের দাম বাড়ল, খোলা তেলে সুখবর       বিএনপি নেতা সোহেলের নিঃশর্ত মুক্তি দাবিতে রংপুরে  মানববন্ধন ও সমাবেশ        খরার ঝুঁকিতে রংপুর অঞ্চল      

 width=
 

খালেদার নেতৃত্বের সমাপ্তি!

বৃহস্পতিবার, ৪ এপ্রিল ২০১৯, দুপুর ০৪:৩০

বিশ্বাসঘাতকতার চূড়ান্ত পর্যায় প্রকাশ হলে এখন সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে আন্দোলনে মুক্ত করতে সব পথ বন্ধ দেখছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। সমঝোতা ছাড়া ফখরুল-মোশাররফের হাতে আর কোনো প্রক্রিয়া নেই। সুলতান মনসুরের পথ ধরে বিএনপির ছয় প্রার্থীও সংসদে যাওয়ার নানান ইঙ্গিত দিচ্ছে। সরকার ও আন্তর্জাতিক মহলের ইঙ্গিতে খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তি পাওয়ার বিষয়ে জোরালো আলোচনা চলছে রাজনীতিকপাড়ায়। তবে শেখ হাসিনার সঙ্গে রাজনৈতিক কোনো সমঝোতায় খালেদা জিয়া মুক্তি পেতে চান না বলেও দাবি দলের বড় একটি অংশের।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, খালেদা জিয়া অসুস্থ হয়ে তৃতীয় দফায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তির পর থেকে বিএনপির কয়েকজন নেতার সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সমঝোতার গুঞ্জন উঠে। যদিও বিষয়টি কেউ স্বীকার করছেন না। সুলতান মনসুরদের পথ ধরে ফখরুলদের সংসদে যাওয়া, চিকিৎসার জন্য প্যারোলে খালেদা জিয়ার মুক্তিতে এরই মধ্যে একটা ইঙ্গিত পেয়েছে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। তবে এ নিয়ে পর্দার আড়ালে চলছে আলোচনা। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো থেকেও বিএনপিকে নানান ইঙ্গিত দেয়া হচ্ছে।

তবে বিএনপির একটি সূত্রের মত, শেখ হাসিনার সঙ্গে রাজনৈতিক সমঝোতায় খালেদা জিয়া মুক্তি নিতে চান না। তিনি বিএনপির সিনিয়র নেতাদের এ বিষয়ে এর আগে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন। তবে সমপ্রতি খালেদা জিয়া বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে সিদ্ধান্তে অটল থাকা থেকে কিছুটা পিছু হটছেন। প্রায় এক মাসের মতো রাগ-ক্ষোভে শক্ত ভূমিকায় থাকলেও সমপ্রতি বিএসএমএমইউতে আসার মধ্যে কিছুটা নরম হয়েছে বলে ধারণা করছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। বিএনপির একটি অংশ ও স্বজনরাও যে কোনা উপায়ে খালেদার মুক্তিতে এক হচ্ছেন। বিএনপির হাইকমান্ডের ধারণা, তারেক জিয়ার পরামর্শে দলের বড় একটি অংশ খালেদা জিয়াকে দেশের বাইরে নিয়ে চিকিৎসা করাতে চাচ্ছেন, প্রয়োজনে বড় ধরনের ছাড় দিয়ে হলেও। প্রধানমন্ত্রী চাচ্ছেন বিএনপি সংসদে আসুক, আর বিএনপিও একটা সমঝোতার কথা ভাবছে। এমন একটি গুঞ্জন গত কয়েকদিনে তৃণমূলেও ছড়িয়ে পড়েছে। তবে এর পেছনে রাজনৈতিক বড় অঙ্ক কাজ করছে বলেও অনেক নেতা মনে করছেন।

দলের একটি সূত্র বলেন, প্যারোলে মুক্তি প্রক্রিয়া তারেক জিয়ার নির্দেশেই চলছে। কারণ, তারেক চাইছেন খালেদা জিয়া দেশের বাইরে এলে আর তাকে (খালেদা জিয়াকে) বাংলাদেশে না পাঠাতে। শেষ সময়টা যাতে তিনি দেশের বাইরে পরিবারের সঙ্গে কাটাতে পারেন। কিন্তু এতে অসন্তুষ্ট দলের স্থায়ী কমিটিসহ তৃণমূলের বড় একটি অংশ। যারা আগেই তারেক জিয়ার নেতৃত্বকে পছন্দ করছেন না। খালেদা জিয়া এ ইস্যু নিয়ে দেশের বাইরে গেলে বিএনপিতে খালেদার নেতৃত্বের সমাপ্তি ঘটবে! কেননা, এতদিন তারেক জিয়ার ভূমিকার কারণে খালেদার মুক্তি প্রসঙ্গ অনেকবার দলীয় ফোরাম থেকে পিছিয়েছে। খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে তারেকের চাওয়া কী এখনো বিএনপিতে ধোঁয়াশা বলে মনে করছেন শীর্ষ নেতারা।

বিএনপি সূত্রগুলো বলছে, খালেদা জিয়াসহ আটক নেতাকর্মীদের মুক্তি ও দাবি আদায়ের কর্মসূচি নিয়ে এ মুহূর্তে রাজপথে যেতে চাচ্ছে না বিএনপি। ড. কামালকে সংসারে এনে সব হারিয়েছে। তাই সব দিক বিবেচনা করে আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি কৌশলে দলকে শক্তিশালী করতে পদক্ষেপ নিয়ে এগুচ্ছে। সব স্তরে সাংগঠনিক পুনর্গঠন, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে কর্মিসভার মাধ্যমে মাঠের নেতাদের চাঙ্গা করতে সফর অব্যাহত রেখেছে দলটি। এদিকে এখনো ভেতরে ভেতরে বড় একটি অংশ মির্জা ফখরুল ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। নরম ফখরুলের কাছ থেকে এখনো ক্ষমতাসীন দল সুবিধা নিচ্ছে, এমন অভিযোগ দলের ভেতরে-বাইরে আছে। দলের সব কঠিন ইস্যুগুলোও তিনি সহজভাবে গ্রহণ করছেন! বিএসএমএমইউতে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়েও তিনি পজেটিভ! ড. কামালের ঐক্যতেও তিনি পজেটিভ! একাদশ সংসদ নির্বাচনে সকাল ১০টার আগেই অনেক প্রার্থী রাতে সিল মারার অভিযোগ এনে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেয়, তখনো মহাসচিব পজেটিভ ভাষায় গণমাধ্যমকে বলেছেন, এখনো জয়ের ব্যাপারে বিএনপি আশাবাদী। এছাড়া মহাসচিব নিয়ে বিএনপিতে বড় একটি গুজব তৈরি হয়েছে, ফখরুল যদি সংসদে যান তাহলে তিনি মন্ত্রিত্ব পাবেন। কেননা, সবসময় ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী সরল, ফখরুলে দুর্বল! দ

লের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মির্জা আব্বাসসহ দলের বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা প্রকাশ্যে বক্তব্য দিয়ে আন্দোলন চেয়েছেন। কিন্তু ফখরুলের কাছ থেকে আসে ভিন্ন সুর! ফখরুল বলেন, আগে সংগঠন শক্তিশালী তারপর ‘দুর্বার’ আন্দোলন। বিএনপির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, আমরা খালেদা জিয়াকে আইনিভাবে মুক্ত করতে চেষ্টা করেছি, কিন্তু পারিনি। আন্দোলন ছাড়া অন্য আর কোনো মাধ্যম নেই তাকে মুক্ত করার। তার শারীরিক অবস্থার কঠিনতর অবনতি হয়েছে। জেল কোডে লেখা- ‘কেউ যদি তার পছন্দের ডাক্তারকে দেখাতে চায় তাহলে সেই সুযোগ দিতে বাধ্য থাকিতে হবে।’ কিন্তু সরকার চাচ্ছে খালেদা জিয়া যাতে বিএনপির নেতৃত্ব না দিতে পারেন। আন্দোলন ছাড়া সরকারের হিংস্র নীতিতে খালেদা জিয়া মুক্ত হবেন, বিশ্বাস করেন না মওদুদ। এ জন্য রাজপথের আন্দোলনে সজাগ থাকার পরামর্শ দেন তিনি।

স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, খালেদা আর ওবায়দুল কাদের এক নয়। খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে দেয়ার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এখন তার মুক্তির আন্দোলন ছাড়া আর কোনো পথ নেই। স্থায়ী কমিটির সদস্য মঈন খান বলেন, খালেদা জিয়া শুধু তিনবারের প্রধানমন্ত্রীই নন, একজন সেনাপ্রধানের স্ত্রী এবং এদেশের একজন নাগরিকও। তার চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার আছে। খালেদাকে এভাবে কোনো সভ্য সরকার আটক রাখতে পারে না। দলের হাইকমান্ডকে ইঙ্গিত করে মঈন খান বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে, অধিকার কেউ দেয় না, অধিকার আদায় করে নিতে হয়। জেলের তালা ভেঙে খালেদাকে মুক্ত করার ব্যবস্থা নিতে হবে। বিএনপির প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা রাজপথে না নামলে জনগণ নামবে না। রাজনৈতিক দল আন্দোলনের প্রথম সারিতে থাকলেই জনগণ নামবে।

তবে এ বিষয়ে গতকাল গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও সুপ্রিম কোর্ট বার সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। তিনি বলেন, কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিষয় নিয়ে তিনি (খালেদা জিয়া) এবং তার পরিবার কোনো আবেদন করেনি। এমনকি সরকারের পক্ষ থেকেও প্যারোলে মুক্তি নিয়ে কোনো প্রস্তাব দেয়া হয়নি। আমরা মামলায় জামিন পেয়েছিলাম, তখন তার মুক্তিতে আর কোনো বাধা ছিল না। কিন্তু সরকার জামিনের পরই আরও বেশকিছু মামলা দিয়ে তাকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখিয়েছে। এতে বোঝা যায়, বেগম জিয়াকে মুক্তি দেয়ার ব্যাপারে সরকারের কোনো সদিচ্ছা নেই। বিএনপির এই যুগ্ম মহাসচিব বলেন, বেগম জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিষয়টি গণমাধ্যমের সৃষ্টি বলেই মনে হচ্ছে। প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে আমাদের পক্ষ থেকে এমন কোনো প্রস্তুতি আমরা নেইনি এবং সরকারের পক্ষ থেকেও এখন পর্যন্ত আমাদের সাথে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি।

মন্তব্য করুন


 

Link copied