বিশেষ প্রতিনিধি॥ নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার উপর দিয়ে প্রবহিত কুমলাই নদীর গতিপথ রুদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। অবৈধভাবে নদী দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে একের পর এক অবকাঠামো। অথচ এক সময় কুমলাই নদীতে ছিল উত্তাল প্রবাহ ও ঘ্রাণের স্পন্দন ও মাছ ধরার আদর্শ গন্তব্য। এখন ছবিটা বদলে গিয়েছে। কুমলাই নদীর সেই যৌবনে ভাটা পড়ায় হারিয়ে গেছে নদীর অস্তিত্ব। আর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে কৃষি,পরিবেশসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে। কুমলাই নদীটি আর নদী নেই।
নদীর পাড়ের বাসিন্দা সুধেন চন্দ্র রায় বলেন, আমরা যখন ছোট ছিলাম, নদী দিয়ে বড়বড় নৌকা চলাচল করতে দেখেছি। বর্তমানে কুমলাই নদীটি কাগজে কলমেই রয়েছে বাস্তবে নদী এখন প্রভাবশালীদের দখলে।
আজ বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) সরেজমিনে গেলে জানা যায়, ভারতের ধুপগুড়ির বুক চিরে কুমলাই নদী বাংলাদেশের নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পূর্বছাতনাই ইউনিয়নের দোলপাড়া হয়ে খগাখড়িবাড়ি ও টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের কিছু অংশ ছুঁয়ে গয়াবাড়ি ইউনিয়ন হয়ে খালিশাচাঁপানী ইউনিয়নের ছোটখাতা দিয়ে নাউতারা নদীতে গিয়ে মিলিত ছিল। পূর্বছাতনাই এলাকায় কুমলাই নদীর জমির পরিমান প্রায় ১০ একর, খগাখড়িবাড়ি ও টেপাখাড়িবাড়ি এলাকায় ৬ একর, গয়াবাড়ি এলাকায় ১৫ দশমিক ৮১ একর ও খালিশা চাঁপানী এলাকায় ১৫ একর। এতে সর্বমোট নদীর জমির পরিমান দাঁড়ায় ৪৬ দশমিক ৮১ একর।কুমলাই নদীর এই পরিমান জমির মধ্যে পূর্বছাতনাই,খগাখড়িবাড়ি ও টেপাখড়িবাড়ি এলাকা হয়েছে আবাদী জমি ও বসত বাড়ি। গয়াবাড়ি এলাকায় এসে দেখা যায় ১৫ দশমিক ৮২ একর নদীর মধ্যে ৪ একর নদীর জমি সরকারি ভাবে মাছ চাষের জন্য লিজ দেয়া হয়েছে একটি মৎসজীবি সমিতিকে। আর বাকী জমি ১১ দশমিক ৮১ একর জমি দখল হয়ে গেছে। সঠিবাড়ি এলাকায় নদীর গতিপথটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
সঠিবাড়ি এলাকার প্রবীন ব্যক্তি নিবারন সরকার। রোজ ভোরে প্রাতভ্রমণে তিনি হাটেন। কুমলাই নদীর কথা বলতেই তিনি বললেন কুমলাই নদীর শীর্ণ চেহারা দেখে মন খারাপ হয়ে যায় তাঁর। বিড়বিড় করে বলতে থাকেন, “এটা নদী কে বলবে!”ছেলেবেলায় দেখা চনমনে কুমলাই এখন কোথায়? এমন প্রশ্ন রেখে ৬৫ বছর আগের স্মৃতি হাতড়ান। ইশারা করে বলেন, “ওই যে বাঁকটা দেখা যায়, ওখানে সাঁতার শিখেছি।” এখন নদী দখল হয়ে গেছে। নদীর গতি পথ সঠিবাড়িতে বন্ধ করে দিয়েছে ওরা। কুমলাই এখন দুই ভাগ। একভাগে পশ্চিমে আরেক ভাগ পূর্বে। পূর্বের দিকে নদীও আর নেই। যে যেমন করে পেরেছে দখল করে নিয়েছে। আরেক প্রবীন ব্যাক্তি মাসুদ মিয়া জানালেন কুমলাই নদীর অধিকাংশ এলাকা সঠিবাড়ি বাজারের ব্যবসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে।
এলাকার সচেতন মহল ও কৃষকরা বললেন কুমলাই নদীকে বাঁচাতে হবে। অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করতে হবে, নদীকে নদীর জায়গা দিতে হবে। নদী থাকলে খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের এলাকার কৃষক ও পরিবেশ রক্ষার স্বার্থ উদ্ধার করতে হবে। তাই এলাকাবাসী কুমলাই নদী উদ্ধারের দাবি তুলেছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শাহিনুর আলম এ ব্যাপারে বলেন আমরা এ জেলার প্রতিটি নদীর জায়গা নিয়ে জরিপ কাজ শুরু করেছি। কুমলাই নদীতেও জরিপ করা হচ্ছে। জরিপ শেষে আমরা নোটিশের মাধ্যমে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করবো।