আর্কাইভ  শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ● ১৫ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: দিনাজপুরে ছিনতাইকৃত মালামাল উদ্ধারসহ ছিনতাইকারী চক্রের দুই সদস্য গ্রেপ্তার        জমি রেজিস্ট্রি করে না দেয়ায় বাবাকে কবর দিতে ছেলের বাঁধা ॥ পুলিশের হস্তক্ষেপে দাফন       নীলফামারীতে স্বামীর প্রথম বিয়ের খবরে নববধূ দ্বিতীয় স্ত্রীর আত্মহত্যা ॥ স্বামী গ্রেপ্তার       রংপুরবাসীর জন্য সরকারি চাকরি, পদ ১৫৯       স্বাস্থ্যের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ফজলুল হক কারাগারে      

 width=
 

সরকারের খাদ্য ও কৃষি বিভাগ: কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন

শুক্রবার, ১৭ মে ২০১৯, বিকাল ০৬:৩৭

রতন সরকার সাম্প্রতিক ধানের মূল্য-বিপর্যয় নিয়ে কাজ করতে গিয়ে নিজের মধ্যে নতুন কিছু প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে। প্রথমত সরকারের কিছু উইং; যেমন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ইত্যাদির নামের সঙ্গে কাজের আদৌ কোন মিল আছে কী-না। না-কী নামকরণের যথাযোগ্যতা প্রমাণ করতে গিয়ে আসল লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বুমেরাং হয়ে গেছে। মনে করি, নাম যখন ‘কৃষি সম্প্রসারণ’, তখন আবাদ বাড়ানোই যে এই দপ্তরটির কাজ সেটা পাগলও বুঝবে। তাই ধান, আলু, টমেটোর আবাদ বাড়াতে বাড়াতে লেজে-গোবরে হলেও এর নিয়ন্ত্রণের দায় তো আর তাদের নয়। তাই, গত বছরের তুলনায়; গত পাঁচ বছরে; গত ১০ বছরে অমুক ফসলের আবাদ সাত গুন বেড়েছে’ টাইপের খবর দিতে তাদের বড় আনন্দ। লাখ লাখ টন আলু, পটল, টমেটো ধান বা যে কোন ফসল ডাবল, ট্রিপল বাম্পার ফলনের ফলে কৃষকের মরণ হলেও এদের করার কী আছে ? প্রতি বছর মৌসুম শুরুর আগে ফসলওয়ারি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। বেঁধে দেয় আবাদের লক্ষ্যমাত্রাও। অর্থাৎ কতোটুকু জমিতে কোন ফসল হবে। তাদের দেয়া হিসাব ধরেই হয় ওই ফসলের আমদানি-রফতানি, গুদামজাত করা, মূল্য নির্ধারণসহ সব হিসাব। কিন্তু তাদের হিসাবটা যে মনে মনে কলা খাওয়া হিসাবের মতো তা কিন্তু বারবারই প্রমাণিত হচ্ছে। কারণ আবাদ ও উৎপাদনের পর আরেকটি সাফল্যের খবর তারা দেয়। তা হলো, এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৩ হাজার হেক্টর জমিতে বাঁকা বেগুনের চাষ বেশি হয়েছে বা এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এক লাখ টন মিষ্টিকুমড়া বেশি উৎপাদন হয়েছে। এই দপ্তরটির পরিসংখ্যান, যে কোন কাজে তাদের সক্ষমতার ওপর কতোটুকু ভরসা বা আস্থা আমরা রাখতে পারি, তার একটি প্রমাণ এবার নিচে উপস্থাপন করছি। এবারের বোরো মৌসুমের শুরুতেও নিশ্চয় আবাদ ও উৎপাদনের টার্গেট ঘোষণা করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। কতো কৃষকের কতো জমিতে বীজতলা হয়েছে, বীজ রোপণ থেকে ধান হলো। ধান পাকলো, পাকা ধান নিয়ে কৃষক মরণ দশায় পড়লো, খাদ্য বিভাগ সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা দিলো, নির্ধারিত সময়ের তিন সপ্তাহ পর জমির ধান নিয়ে কৃষকের যখন ত্রাহি ত্রাহি, সরকার যখন ধান-চাল ক্রয় অভিযান শুরু করতে চাইলো, তখন ‘প্রকৃত কৃষকের তালিকা’ দিতে না পারায় তিন সপ্তাহের বিলম্বিত সংগ্রহ অভিযানের পর আরও এক সপ্তাহ অতিবাহিত হতে চললো, প্রকৃত কৃষকের তালিকা কৃষি বিভাগ দিতে না পারায় এক দানা ধানও কিনতে পারলো না খাদ্য বিভাগ। চারা বপন থেকে ফসল বাজার পর্যন্ত পৌছাতে অন্তত চার চারটি মাস অতিক্রমের পরও কৃষকের তালিকা না হওয়ার পেছনে যুক্তিটা কী? প্রকৃত তালিকা তৈরির কথা বলা হচ্ছে। তাহলে প্রশ্ন তো জাগবে, অপ্রকৃত তালিকাও আছে না-কী? বলতে না চাইলেও বার বার তালিকা তৈরি করা হলে বাড়তি আয়-ইনকামের সুযোগ থাকে বৈ-কী। ডিজিটাল বাংলাদেশে, কৃষকের ডাটাবেজ নেই, হাস্যকর। এ বড়ই হাস্যকর। হাস্যকর আরও ঘটনা আছে। তবে কৃষকের ঘরে যখন মরা কান্না তখন দায়িত্বশীল গণমাধ্যম-কর্মী হিসাবে হাস্যকর কোন আলোচনা না করাই শ্রেয়। তবে দুর্ভাগা-কৃষকদের নিয়ে তামাশার কিছু পরিসংখ্যান জানাই। বৃহত্তর রংপুরের ৫টি ও বৃহত্তর দিনাজপুরের ৩টি জেলা নিয়ে দুটি কৃষি অঞ্চল রংপুর বিভাগে। বিভাগের খবর দিতে তাই দুটিকে যদি যোগ করি তবে এ বছর চাল আকারে ৩১ লাখ ২৬ হাজার ২৪ মেট্রিকটন বোরো উৎপাদন হয়েছে। এই ৮টি জেলা থেকে এবার ২ লাখ ৪৭ হাজার ৭৫০ মেট্রিকটন ধান, ২৩ হাজার ৪৪০ টন ধান কেনার ঘোষণা দিয়েছে খাদ্য বিভাগ। সেই হিসাবে রংপুর জেলার ৮টি উপজেলা থেকে ২৫ হাজার ৯১৬ টন চাল ও তিন হাজার ৯৯৮ টন ধান কেনার কথা। কিন্তু জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, রংপুর জেলায় ১০টি খাদ্য গুদামের ধারণক্ষমতা ২০ হাজার মেট্রিকটনের। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সাড়ে ১৭ হাজার মেট্রিকটন খাদ্যশস্য মজুদ ছিলো। অতএব চাইলেও ঘোষণা অনুযায়ী ওই পরিমাণ ধান-চাল অন্তত এই মুহূর্তে চাইলেও কিনতে পারবে না খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়। তবে বর্তমান মজুদ শেষ হবার পর খাদ্য নিয়ন্ত্রণ দপ্তর যখন ধান-চাল কিনতে শুরু করবে ততো দিনে কৃষকের ধানে মজুদ গড়ে উঠবে বড় ব্যবসায়ীদের গুদাম বা মিলে। ধান-চালের পেছনে গত কয়েক দিনের ঘোরাঘুরিতে একটা বিষয় খুব ভালোভাবেই উপলব্ধি করতে পেরেছি, তা হলো অদৃশ্য কোন নিয়ন্ত্রণ। নিয়ন্ত্রণটা ধানের দামে। প্রথম দিন কাজে নেমেই প্রকার ভেদে ধানের দাম পেয়েছি ৪২০ থেকে ৫৫০টাকা। অর্থনীতির সূত্র অনুযায়ী সরবরাহ বাড়লে পণ্যের দাম কমবে। সপ্তাহ আগে কৃষি বিভাগের তথ্য ছিলো ১০ ভাগ ধান কাটার। সপ্তাহ অন্তে এখন ৫০ ভাগের কাছাকাছি। হিসাব অনুসারে দাম তো পড়ে যাবার কথা আরও। কিন্তু ৪২০ থেকে ৫৫০ টাকায় স্থির থাকলো যে? তো এই স্থিরতা নিয়ন্ত্রণ করছেটা কে? উত্তর জেনেছি। কিন্তু বলতে পারছি না যে এর নিয়ন্ত্রণ করছে ভয়ঙ্কর শক্তিশালী কালোবাজারি মুনাফাখোরি সিন্ডিকেট। যারা প্রতি বছর নতুন ধান বাজারে আসার আগে পুড়নো স্টক ছেড়ে দিয়ে ধানের দাম ফেলে দেয় এবং পানির দামে ধান কিনে সারা বছরের চালের চড়া বাজারের সুফল ভোগ করে মনের সুখে। সাধারণ কৃষকও বোঝে এই অবস্থার কথা। কারণ প্রতি বছর একই স্টাইলে তাদের শোষণ করছে কালোবাজারি মহাজনি সিন্ডিকেট। তারা এটাও জানে সরকারের কৃষি বিভাগ, খাদ্য বিভাগ এই সিন্ডিকেটের সুবিধা অনুযায়ী কাজ করে। তাই সম্প্রসারণ বলি আর নিয়ন্ত্রণ। এর কোনটাই আসলে সরকারের হাতে নেই। এ যেন সেই কানা ছেলের নাম পদ্মলোচনের মতো।

লেখক : রতন সরকার, সময় টিভি’র রংপুর ব্যুরো প্রধান। ই-মেইল : ratannilphamari@gmail.com

মন্তব্য করুন


 

Link copied