আর্কাইভ  বৃহস্পতিবার ● ২৮ মার্চ ২০২৪ ● ১৪ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   বৃহস্পতিবার ● ২৮ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

 width=
 
শিরোনাম: স্বাস্থ্যের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ফজলুল হক কারাগারে       কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা       লালমনিরহাটে পুকুরে জাল ফেলতেই জালে উঠে এলো যুবকের মরদেহ       কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা       রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা      

 width=
 

১২ মণ ধানে একটি বালিশ!

শুক্রবার, ২৪ মে ২০১৯, বিকাল ০৫:১২

রেজানুর রহমান 

অংকটা বেশ জটিলই মনে হচ্ছে। আমার এক বন্ধু ই-মেইলে অংকটা পাঠিয়েছে। ধরো একটি বালিশের দাম পাঁচ হাজার ৯৫৭ টাকা। একটি বালিশ কিনতে হলে একজন কৃষককে কত মণ ধান বিক্রি করতে হবে? বন্ধুর হঠাৎ এ ধরনের প্রশ্নে আমি কিছুটা অবাক। হঠাৎই বা সে কেন বালিশের সঙ্গে ধানের বাজারকে টেনে আনলো? পরে একটু খোঁজ-খবর নিয়ে বন্ধু প্রশ্নের মাজেজাটা বুঝতে পারলাম এবং যারপরনাই অবাকও হলাম। আমরা যারা মধ্যবিত্ত মানুষ তাদের কাছে ৫শ’ টাকা দিয়েও বালিশ কেনা সাধ্যের বাইরে গিয়ে দাঁড়ায়। সেখানে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে নির্মাণাধীন ভবনে অতিথিদের ঘুমানোর জন্য যে বালিশ কেনা হয়েছে তার একেকটির দাম নাকি ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৯৫৭ টাকা। বন্ধুর প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে দেখলাম, দেশের একজন কৃষক যদি এ ধরনের একটি বালিশ কিনতে চান তাহলে তাকে কম করে হলেও ১২ মণ ধান বিক্রি করতে হবে। হিসাবটা আরও একটু খোলাসা করি। একটি বালিশের মূল্য ৫ হাজার ৯শ ৫৭ টাকা। এক মণ ধানের মূল্য ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা। কাজেই ৫ হাজার ৯৫৭ টাকা জোগাড় করতে হলে একজন কৃষককে কম করে হলেও ১২ মণ ধান বিক্রি করতে হবে। অনেকে হয়তো প্রশ্ন করতে পারেন আপনি হঠাৎ বালিশ নিয়ে পড়লেন কেন? ৫ হাজার ৯৫৭ টাকার বালিশের কথা শুনেই হইচই শুরু করে দিয়েছেন। অথচ লক্ষ টাকা মূল্যের একটি বালিশও এই দেশের ভাগ্যবান অনেক মানুষ ব্যবহার করেন। সে খবর কি আপনি রাখেন? তাছাড়া কৃষকেরই বা দরকার কি এত দামি বালিশ নিয়ে স্বপ্ন দেখার? কৃষক থাকুক কৃষকের মতো, অন্যরা থাকুক অন্যদের মতো... খামোখা কথা বাড়িয়ে লাভ কী ভাই! সত্যি বলতে কী, এ ব্যাপারে আর কথা বাড়ানোর কোনও ইচ্ছাই ছিল না। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব আশরাফুল আলমের একটি ‘পোস্ট’ পড়ে আবারও যারপরনাই অবাক হলাম। তবে সে কথায় পরে আসছি। তার আগে বালিশ বিষয়ক কিছু কথা বলতে চাই। বালিশ কেন দরকার? ঘুমানোর জন্যই তো নাকি? অনেকে অবশ্য বালিশকে নানাভাবে ব্যবহার করেন। ঘুমানো ছাড়াও খাটের গায়ে বালিশ রেখে তাতে হেলান দিয়ে অনেকে বই পড়েন, সংবাদপত্রে চোখ মেলান, জম্পেশ আড্ডাও দেন। আবার কেউ কেউ আছেন বালিশ কোলে রেখে আড্ডা দেন, ফোনে কথা বলেন। তার মানে ঘুমানো ছাড়াও বালিশকে অনেক কাজে ব্যবহার করি আমরা। কাজেই বালিশ আমাদের জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বালিশ ছাড়া কি আপনি ঘুমাতে পারবেন? অনেকে হয়তো বলবেন এই দেশে বালিশ ছাড়া কত মানুষই তো ঘুমায়। কতজনের খোঁজ রাখেন আপনি? ইটের বালিশে মাথা রেখে ঘুমাতে দেখেছেন কাউকে? তেল চিটচিটে বালিশ দেখেছেন? কবে কোন দিন কেনা হয়েছিল। বছরের পর বছর ধরে একই বালিশের ব্যবহার চলছে। বাবা যে বালিশে মাথা রেখে ঘুমিয়েছেন, ছেলেমেয়েরাও সেই একই বালিশে ঘুমায়। কেউ কখনও হয়তো ভাবেইনি হাজার টাকার বালিশ লাগবে। সেখানে প্রায় ৬ হাজার টাকার একটি বালিশের কথা শুনে আমার মতো অনেকেই হয়তো অবাক হয়েছেন। ঘটনা আরও আছে। মাত্র ৬ হাজার টাকার বালিশের কথা শুনে আমার মতো যারা একটু অবাক হয়েছেন তারা হয়তো এবার বিস্মিত হবেন। মনে মনে হয়তো ভাববেন এই দেশে এতকিছু হয়?

এবার অনুজ প্রতিম আশরাফুল আলম খোকনের ফেসবুক পোস্টটি উল্লেখ করতে চাই। তিনি লিখেছেন– “বালিশের দাম নিয়ে আপনি চিন্তিত? ভাবছেন দেশ রসাতলে যাচ্ছে? ভাবনা চিন্তা করা ভালো। কিন্তু বেশি চিন্তিত হইয়েন না। সব দেশেই অঘটন ঘটে, এর প্রতিকার না হলে সমস্যা। শেখ হাসিনার সরকার তাৎক্ষণিক এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন। কেন এরকম হলো এর তদন্ত চলছে। আপাতত বিল বন্ধ। বাকি শাস্তিও হবে। কোনও অনিষ্টকারী শেখ হাসিনার হাত থেকে রেহাই পায় না। ইতিহাস তা-ই বলে।

কিন্তু আপনি কি জানেন বাংলাদেশে ১৯৯১ সালের ২৯ মার্চ ৭৮ হাজার টাকার ৬টি বালিশ কেনা হয়েছিল ৪ লক্ষ ৬৮ হাজার টাকা দিয়ে। বিশ্বের বিখ্যাত কোম্পানির বালিশ। যার বর্তমান মূল্য ৪০ লক্ষ টাকার কাছাকাছি। এই বালিশগুলো কেনা হয়েছিল বেগম খালেদা জিয়ার জন্য। আপনি কি আরও জানেন, এই বেগম খালেদা জিয়ার জন্যই ২০০২ সালে ইতালি থেকে ৬টি বালিশ কেনা হয়েছিল। যার একেকটির মূল্য ছিল ১ লাখ ৩২ হাজার টাকা।” ওরে বাব্বা! বালিশের এত দাম? কেন এত দামি বালিশ লাগে মানুষের? কার টাকায় এই ধরনের বালিশ কেনা হয়? নিশ্চয়ই জনগণের টাকায়। যে জনগণ ছেঁড়া ময়লা বালিশে ঘুমায় তাদের ট্যাক্সের টাকায় নিশ্চয়ই? দেশের জনগণ ছেঁড়া বালিশের ওপর মাথা রেখে ঘুমাবেন আর আপনি/আপনারা লাখ টাকার বালিশে আরাম আয়েশ করবেন, এটা কতটা মানবিক?

লেখার শুরুতে একটি বালিশ সমান ১২ মণ ধানের কথা তুলেছিলাম। সেখানে একটি বালিশের দাম ছিল প্রায় ৬ হাজার টাকা। তাহলে ১ লাখ টাকা মূল্যের একটি বালিশ কিনতে হলে বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী কত মণ ধান বিক্রি করতে হবে ভাবুন তো একবার? অংকটা বোধকরি আরও জটিল হয়ে গেলো।

এবার আরও বেশি অবাক হয়েছেন নিশ্চয়ই? আসুন আরও কিছু অবাক করা তথ্য জানাই আপনাদের। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আবাসিক ভবনের কেনাকাটার ভয়াবহ চিত্র দেখে আপনারা বোধকরি আরও অবাক হবেন। আসুন দেখি পরিস্থিতিটা কেমন? আবাসিক ভবনের জন্য একেকটি কেটলি কেনা হয়েছে ৭ হাজার ৭৫৭ টাকায়। সেই কেটলি ভবনে ওঠাতে খরচ দেখানো হয়েছে ২ হাজার ৯৪৫ টাকা। রুম পরিষ্কারের মেশিন একেকটা কেনা হয়েছে ১২ হাজার ১৮ টাকায়। ভবনে তুলতে খরচ দেখানো হয়েছে ৬ হাজার ৬৫০ টাকা। একেকটি ইলেকট্রিক আয়রন কিনতে খরচ দেখানো হয়েছে ৪ হাজার ১৫৪ টাকা। ভবনে একটি আয়রন তুলতে খরচ দেখানো হয়েছে ২ হাজার ৯৪৫ টাকা। একেকটি টেলিভিশন কেনা হয়েছে ৮৬ হাজার ৯৭০ টাকায়। ওই একটি করে টেলিভিশন ভবনে ওঠানোর জন্য খরচ দেখানো হয়েছে ৭ হাজার ৬৩৮ টাকা। একটি করে ফ্রিজ কেনা হয়েছে ৯৪ হাজার ২৫০ টাকায়। ভবনে একটি করে ফ্রিজ ওঠানোর খরচ দেখানো হয়েছে ১২ হাজার ৫২১ টাকা। আলোচিত সেই বালিশের একটির দাম ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৯৫৭ টাকা। ওই একটি করে বালিশ ভবনের জন্য ওঠাতে খরচ দেখানো হয়েছে ৭৬০ টাকা। একটি করে ওয়্যারড্রোবের দাম করা হয়েছে ৫৯ হাজার ৮৫৮ টাকা। ভবনে একটি করে ওয়্যারড্রোব উঠানোর জন্য খরচ দেখানো হয়েছে ১৭ হাজার ৪৯৯ টাকা। একটি করে বিছানার চাদরের দাম ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৯৮৬ টাকা। একটি করে চাদর ভবনে ওঠানোর জন্য খরচ দেখানো হয়েছে ৯৩১ টাকা। বাহ কী চমৎকার। এখন আর হিসাবগুলো জটিল মনে হচ্ছে না। সহজ মনে হচ্ছে। যিনি এই সহজ হিসাব তৈরি করেছেন তার সাহস আছে বলতে হবে। তাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পুরস্কৃত করা উচিত। প্রিয় পাঠক, আপনারা কী বলেন!

লেখক: কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার, সম্পাদক- আনন্দ আলো

মন্তব্য করুন


 

Link copied