আর্কাইভ  বৃহস্পতিবার ● ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ● ৫ বৈশাখ ১৪৩১
আর্কাইভ   বৃহস্পতিবার ● ১৮ এপ্রিল ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: খরার ঝুঁকিতে রংপুর অঞ্চল       সার্ভার ডাউন: রসিকে জন্ম নিবন্ধন নিয়ে ভোগান্তি চরমে       রংপুরে ফটোসাংবাদিক ফিরোজ চৌধুরীর একক আলোকচিত্র প্রদর্শনী       ডোমার ও ডিমলা উপজেলা নির্বাচনে ৩৫ জনের প্রার্থীতা বৈধ ॥ চেয়ারম্যান পদে ১২ জনের মধ্যে আওয়ামীলীগের ৭ জন প্রার্থী       নীলফামারীতে ঐতিহাসিক মুজিব নগর দিবস পালন      

 width=
 

আন্দোলনে ক্লান্ত বিএনপি: শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচনে যাচ্ছে

রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০১৩, সকাল ০৯:৪৯

ডেস্ক: তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পূণ:প্রবর্তন অসম্ভব জায়গায় চলে যাওয়ায় নির্বাচনকালীন সরকারেই যোগ দিচ্ছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। ইতিমধ্যে জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি যোগ দিয়েছে। দু’একদিনের মধ্যে ঘোষণা হবে নির্বাচনী তফসিলও। এ পরিস্থিতিতে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় নির্বাচনকালীন সরকারে যোগ দেয়ার কোন বিকল্প দেখছে না দলটি। মুখে আন্দোলনের যতো কথাই বলুক না কেনো সাত বছরের আন্দোলনে অনেকটাই ক্লান্ত দলটি। এর উপরে রয়েছে দলের শীর্ষনেতাদের অনেকেই জেলে রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে এক তরফা নির্বাচন ঠেকানোর মতো সক্ষমতাও হারাচ্ছে দলটি। ফলে সমঝোতার পথে অনেক ইস্যুই ছাড় দিয়ে এগুচ্ছে বিএনপি। ওয়ান ইলেভেনের পট পরিবর্তনের পর সবচে’ বড়ো ঝড় বয়ে যায় বিএনপির উপর থেকে। দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নির্যাতন-নিপীড়ন ছাড়াও অসংখ্য নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে দলের মন্ত্রীদের অনেকেই এখন জেলে। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিএনপি লজ্জাজনক আসন নিয়ে বিরোধী দলের চেয়ারে বসে। ২০০৭ সালে শুরু হওয়া বিএনপির বিরোধী জীবন এখন সাত বছরে ঠেকেছে। এ পরিস্থিতিতে একটি এক তরফা নির্বাচন হলে সেই নির্বাচন ঠেকানো কিংবা পরবর্তী সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামানো অনেকটাই অসম্ভব বিএনপির জন্য। আর এ জন্য বিকল্প পথেই হাটছে তারা। শনিবার সৈয়দ আশরাফের সঙ্গে বৈঠকের পর বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এখন নির্বাচনকালীন সরকারে কতোটি মন্ত্রণালয় দেয়া হবে তা নিয়েই চলছে দরকষাকষি। তবে বিএনপি নির্বাচনকালীন সরকার প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনার বিকল্প চাইলেই তাতে আপাতত: রাজি হচ্ছে না আওয়ামী লীগ। শনিবার রাজধানীর বনানীর একটি বাড়িতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গোপনে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে মির্জা ফখরুলকে পরিস্কারভাবেই জানিয়ে দিয়েছেন সৈয়দ আশরাফ। কী কথা তাহাদের সাথে: দুই দলের ঘনিষ্ঠ সূত্র বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করলেও এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কেউ কিছু বলতে রাজি হননি। বৈঠকের পর সৈয়দ আশরাফ ও মির্জা ফখরুলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁদের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে রাতে মির্জা ফখরুল বৈঠকের কথা অস্বীকার করেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম শনিবার বিকেলে মতিঝিলে একটি অনুষ্ঠান শেষ করে বনানীর উদ্দেশে রওনা দেন। বনানী কবরস্থানের পাশে গাড়ি বদল করে তিনি সন্ধ্যায় ওই নির্দিষ্ট বাড়িতে পৌঁছান। বাড়িটি রাস্তার পাশে হলেও মির্জা ফখরুল আশপাশের কয়েকটি গলি ঘুরে ওই বাড়িতে ঢোকেন। এক ঘণ্টার বৈঠক শেষে সৈয়দ আশরাফ রাত আটটা সাত মিনিটে বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। মির্জা ফখরুল বেরিয়ে যান আটটা ২০ মিনিটে। তাঁরা দুজন দুই দিক দিয়ে বের হয়ে যান। নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, এই আলোচনার জন্য সৈয়দ আশরাফ ও মির্জা ফখরুল দুই দলের দুই শীর্ষ নেত্রীর কাছ থেকে অনুমতি পেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওমরাহ হজ পালনের জন্য সৌদি আরবে যাওয়ার আগে সৈয়দ আশরাফকে বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা করার দায়িত্ব দিয়ে গেছেন। বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া এর আগে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে দুই দলের সাধারণ সম্পাদক পর্যায়ে আলোচনা শুরুর বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন। ব্যবসায়ীদের ওই প্রতিনিধিদল এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও দেখা করেন। বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, বৈঠকে দুই নেতা বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। বিএনপির পক্ষ থেকে তাদের দাবিগুলো লিখিতভাবে সৈয়দ আশরাফকে দেওয়া হয়েছে। তিনি দাবিগুলো নিয়ে আলোচনা করেন। পরে সৈয়দ আশরাফ এসব দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে আবার বৈঠক হবে বলে মির্জা ফখরুলকে জানান। ওমরাহ পালন শেষে শেখ হাসিনা আজ দেশে ফিরবেন। দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে তিনি আজ বেলা তিনটায় গণভবনে বৈঠক করবেন। ধারণা করা হচ্ছে, মির্জা ফখরুলের সঙ্গে আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে সৈয়দ আশরাফ আজ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন। এদিকে শনিবার রাতেই মির্জা ফখরুল ইসলাম সৈয়দ আশরাফের সঙ্গে তাঁর আলোচনার বিষয়বস্তু বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়াকে অবহিত করেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, মির্জা ফখরুল গুলশান কার্যালয়ে গিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসনকে জানিয়েছেন যে, তিনি সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে বিএনপির দাবিগুলো লিখিতভাবে দিয়েছেন। সৈয়দ আশরাফ তাঁকে জানিয়েছেন, নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান শেখ হাসিনাই থাকবেন। তবে মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে তাঁর কোনো বৈঠক হয়নি। সরকারি সূত্র জানায়, শনিবার দুপুরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফকে টেলিফোন করেন। তাঁরা বেশ কিছুক্ষণ কথা বলেন। পরে মুখোমুখি আলোচনার জন্য সময় ও স্থান নির্ধারণ করে সন্ধ্যায় বৈঠক করেন তাঁরা। গত ১৮ অক্টোবর জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী সর্বদলীয় সরকার গঠনের ঘোষণা দেন এবং বিএনপিকে ওই সরকারে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান। এর তিন দিন পর বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলন করে নির্দলীয় সরকারের পাল্টা প্রস্তাব তুলে ধরেন। ওই প্রস্তাবের একটি কপিসহ আলোচনায় বসার জন্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফকে চিঠি দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম। তাঁরা দুজন ফোনেও কথা বলেন। গত ২৬ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়াকে টেলিফোন করেন। তিনি খালেদা জিয়াকে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে আমন্ত্রণ জানান। খালেদা জিয়া সেই আমন্ত্রণে সাড়া দেননি। সর্বশেষ ১৮ নভেম্বর মন্ত্রিসভার নতুন সদস্যদের শপথ নেওয়ার পরদিন খালেদা জিয়া রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সংলাপ ও সমঝোতার উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান। এরপর ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে সেনানিবাসে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাঁর দলের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে আলোচনার আহ্বান জানান। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে দুই দলের সাধারণ সম্পাদক পর্যায়ে আলোচনাকে সংকট নিরসনের শেষ সুযোগ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা। সংলাপে বসে সমাধান খুঁজতে দীর্ঘদিন ধরেই দুই দলের ওপর বিদেশি কূটনৈতিকদের চাপ রয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে টেলিফোন করে সমঝোতার আহ্বান জানান। সর্বশেষ দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা বিসওয়াল দেশাই দুই দলের সাধারণ সম্পাদক পর্যায়ে সংলাপের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এ আগে জাতিসংঘের রাজনীতিবিষয়ক সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো বাংলাদেশ সফর করে দুই নেত্রীর সঙ্গে দেখা করে সংলাপের আহ্বান জানান।

দিয়াম তালুকদার, খাসখবর

মন্তব্য করুন


 

Link copied