আর্কাইভ  শনিবার ● ২০ এপ্রিল ২০২৪ ● ৭ বৈশাখ ১৪৩১
আর্কাইভ   শনিবার ● ২০ এপ্রিল ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: নীলফামারীতে গোপন বৈঠক থেকে জামায়াতের ৩ নেতা গ্রেপ্তার       পলাশবাড়ীতে আসামির ছুরিকাঘাতে বাদীর মৃত্যু, গ্রেফতার ১       মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের সন্তান-স্বজনের ভোটে না দাঁড়ানোর নির্দেশ       ভোজ্যতেলের দাম বাড়ল, খোলা তেলে সুখবর       বিএনপি নেতা সোহেলের নিঃশর্ত মুক্তি দাবিতে রংপুরে  মানববন্ধন ও সমাবেশ       

 width=
 

নারী এমপিদের সাথে কী চুক্তি করেছিলো জাতীয় পার্টি?

রবিবার, ২ জুন ২০১৯, রাত ১০:১৬

সংরক্ষিত মহিলা আসনের জন্য জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য রয়েছেন ৪জন। তারা হলেন- সালমা ইসলাম, রওশন আরা মান্নান, মাসুদা এম রশিদ ও নাজমা আক্তার।

সম্প্রতি সংরক্ষিত আসনে দলের মহিলা এমপি অধ্যাপিকা মাসুদা এম রশীদ চৌধুরীকে নোটিশ পাঠিয়েছেন জাপা মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা। অঙ্গীকার ভঙ্গ করায় কেন তাকে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ সকল পদ-পদবি থেকে বহিষ্কার করা হবে না, ১০ দিনের মধ্যে তা লিখিতভাবে জানাতে বলা হয়েছে মাসুদা রশীদ চৌধুরীকে।

মাসুদা রশীদ চৌধুরীকে গত ২০ মে ‘সংসদ সদস্য (সংরক্ষিত) হওয়ার পর অঙ্গীকার ভঙ্গের নোটিশ প্রসঙ্গে’ বিষয় সংবলিত পাঠানো চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন রাঙ্গা। চিঠির কপিতে দেখা যায, এই চিঠি লেখার বিষয়ে জাপা মহাসচিব লিখেছেন, পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ কর্তৃক নির্দেশিত হয়ে আপনাকে জানাচ্ছি।

চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘একাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসন নির্বাচনে জাতীয় পার্টির শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দের ফোরামে কিছু শর্ত সাপেক্ষে আপনাকে মনোনয়ন প্রদান করা হয়। যার কপি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে সংরক্ষিত আছে। আপনার স্বাক্ষরিত পার্টি সংক্রান্ত অঙ্গীকারপত্রও আছে। কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয়— আপনার দেয়া অঙ্গীকারগুলো আপনি যথাযথভাবে পালন করেননি।’

এইন নোটিশের বিষয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জানতে চাইলে মাসুদা এম রশীদ চৌধুরী এই প্রতিবেদককে প্রথমে বলেন, ‘নোটিশ দিয়েছে আমাকে, সেটা আপনার কাছে গেল কীভাবে! আপনার কাছে কি নোটিশের কপি আছে?’ কপি রয়েছে বলা হলে তখন তিনি বলেন, ‘আমি আজ এতদিন ধরে দলটা করি, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলাম, এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক ছিলাম, দীর্ঘদিন মহিলা পার্টির সভানেত্রী ছিলাম— কোনো দিন আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। এবার আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হলো। এখন এসব কী দেখছি! আমার ছেলে ব্যারিস্টার, আমি নোটিশটা তাকে দিয়েছি দেখতে, সে বিষয়টা দেখছে।’

নোটিশদাতা মসিউর রহমান রাঙ্গার প্রসঙ্গ তুলে জাপার এই মহিলা এমপি বলেন, ‘আমাকে নোটিশ দেওয়ার উনি কে! আর স্যার (দলের চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ) তো এখন অসুস্থ, ওনার তো এখন ওইভাবে আর মাথায় কাজ করে না, আমরা তার জন্য দোয়া করছি।’ কথোপকথনের শেষদিকে মাসুদা রশীদ চৌধুরী এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘তার পরও আপনি আমার ছেলের সাথে কথা বলেন, এটা...তার মোবাইল নম্বর, সে আপনাকে পুরো ঘটনা বিস্তারিত বলবে।’ তবে তার ছেলেকে গত দুই দিনে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। ফোনে পরিচয় দিয়ে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি সাড়া দেননি।

পরদিন শুক্রবার বিষয়টি সম্পর্কে এই প্রতিবেদককে বিস্তারিত বলেন নোটিশদাতা মসিউর রহমান রাঙ্গা। তিনি বলেন, ‘সংরক্ষিত আসনে মহিলা এমপি হিসেবে যারা মনোনয়ন পেয়েছেন, তাদের কারো কারো সঙ্গে নির্বাচনের আগে দলের কিছু ছোটখাটো কমিটমেন্ট ছিল। এই ধরেন— কেউ হয়তো অফিসকে এটা দেবে, কেউ ওইটা দেবে...এই আর কি। বিষয়টি স্যার (এরশাদ), কাদের মামা (জাপার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জি এম কাদের) এবং ওই মনোনয়নের সঙ্গে আমরা যেই আটজন দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলাম— সবাই জানেন।’

রাঙ্গা আরো বলেন, ‘মাসুদা এম রশীদ চৌধুরী এমপি হওয়ার পর অঙ্গীকার রাখেননি। আমি অনেকবার তাকে ফোন করেছি, তিনি ফোন ধরেন না। অনেকবার মোবাইলে মেসেজ পাঠিয়েছি, তাও তিনি রেসপন্স করেননি। পরে একদিন আমি ওনার বাসায় যাই। তখনো ওনাকে অঙ্গীকারের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলাম। তখন উনি বললেন যে, তিনি গলব্লাডারের সমস্যায় ভুগছেন, সুস্থ হলে যা বকেয়া সেটা দিয়ে দেবেন।’

জাপার মহাসচিব বলেন, ‘এখন ঈদের সময়। দলের অনেক খরচ। দলের দুটি কার্যালয়ে স্টাফ আছেন ৫২ জনের মতো, তাদের বেতন-বোনাস মিলিয়ে প্রায় ১৬ লাখ টাকা লাগে। এরকম নানা খরচ রয়েছে।’

মাসুদা রশীদ চৌধুরীর বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে রাঙ্গা বলেন, ‘স্যারের নির্দেশেই আমি ওনাকে নোটিশ দিয়েছি। বৃহস্পতিবার ওয়েস্টিন হোটেলে আমাদের ইফতার ছিল। সেখানে স্যার ছিলেন, মাসুদা রশীদ চৌধুরীও ছিলেন। সেই ইফতার অনুষ্ঠানেই মাসুদাকে এরশাদ সাহেব বলেছেন— ক্লিয়ার ইউর অল ডিউজ। এমনকি প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে মাসে ৫ হাজার টাকা করে যে পার্টির চাঁদা সেটিও তিনি দিচ্ছেন না। কাজেই আমি নোটিশ দিয়ে অন্যায় কিছু করিনি। পার্টি চেয়ারম্যান আমাকে বলেছেন ১০ দিনের মধ্যে ওনাকে দল থেকে বহিষ্কার করে দিতে। বহিষ্কার করলে আমরা নির্বাচন কমিশনে (ইসিতে) চিঠি দিয়ে দেব, যেন ওনার সংসদ সদস্য পদ খারিজ করা হয়।’

উল্লেখ্য, চলতি একাদশ সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসনে প্রধান বিরোধী দল জাপার মোট চারজন সদস্য রয়েছেন। মাসুদা এম রশীদ চৌধুরী ছাড়াও অবশিষ্ট তিনজন এমপি হলেন— সালমা ইসলাম, অধ্যাপিকা রওশন আরা মান্নান ও নাজমা আক্তার। নির্বাচিত হওয়ার আগে দলের সঙ্গে অঙ্গীকারনামার বিষয়ে জানার জন্য এই তিনজনের সঙ্গেও যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদেরকে পাওয়া সম্ভব হয়নি। (সূত্র ইত্তেফাক)।

মন্তব্য করুন


 

Link copied