আর্কাইভ  শুক্রবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ● ৬ বৈশাখ ১৪৩১
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: পলাশবাড়ীতে আসামির ছুরিকাঘাতে বাদীর মৃত্যু, গ্রেফতার ১       মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের সন্তান-স্বজনের ভোটে না দাঁড়ানোর নির্দেশ       ভোজ্যতেলের দাম বাড়ল, খোলা তেলে সুখবর       বিএনপি নেতা সোহেলের নিঃশর্ত মুক্তি দাবিতে রংপুরে  মানববন্ধন ও সমাবেশ        খরার ঝুঁকিতে রংপুর অঞ্চল      

 width=
 

রঙ্গভরা রংপুর

সোমবার, ১০ জুন ২০১৯, সকাল ০৯:৪৬

এই হচ্ছে নারী জাগরণের পথিকৃৎ বেগম রোকেয়ার রংপুর। কৃষক-সন্ন্যাসী বিদ্রোহের নূরলদীনের রংপুর। সেই রংপুর আর এখনকার রংপুরকে মিলিয়ে দেখুন। ভালো লাগবে। খুঁজে পাবেন জ্বলজ্বলে ইতিহাস। জানা-অজানা অনেক গল্পের সঙ্গে মিলে যাবে। আপনি যা ভাবছেন, হয়তোবা এমন বিষয়টিও পেয়ে যেতে পারেন। কালের বিবর্তন হয়েছে। পথ-ঘাট-প্রান্তর বদলে গেছে। তাই বলে প্রাচীন পুরাকীর্তি তো মুছে যায়নি। বরং অনেক নতুন অধ্যায় সূচিত হয়েছে। হয়েছে অনেক পরিবর্তন। বদলে গেছে জীবন-চিত্র। এবারের ঈদে পরিবারসহ রংপুরকে ঘিরে উত্তরবঙ্গ ঘুরে বেড়াতে চলে আসুন।

শিশু-কিশোরসহ সন্তানদের বিনোদনের কথা ভাবছেন? সব বয়সী মানুষের চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে। এর সঙ্গে ইতিহাসকেও মেলাতে পারবেন। পাঠ্যবইয়ে পড়েছেন, কিন্তু দেখা হয়নি চক্ষু মেলিয়া। এবার দেখুন দুচোখ ভরে।

দেখুন, মিঠাপুকুরের পায়রাবন্দে বেগম রোকেয়ার বসতভিটার স্মৃতিচিহ্ন, যেখান থেকে এই মহীয়সী নারী আলো ছড়িয়েছেন। শহরের তাজহাটে অনিন্দ্যসুন্দর প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন জমিদারবাড়িটি ঘুরে আসুন। সে বাড়ির সিঁড়ি শ্বেতপাথরের, যা ইতালি থেকে আনা হয়েছিল। সিঁড়িটি নিচতলা থেকে দোতলা পর্যন্ত উঠে গেছে। বর্তমানে এটি জাদুঘর।

এবার একটু ভিন্ন ধরনের বিনোদন পেতে ছুটে চলুন পাগলা পীর গঞ্জিপুর এলাকায় ভিন্ন জগতে। সত্যিই যেন আলাদা জগত। রয়েছে আজব গুহা। সবারই ভালো লাগবে। বিরাট এলাকাজুড়ে গাছের ছায়ায় ঘেরা এ বিনোদন স্পট। কী নেই সেখানে? সৌরজগৎকে জানতে দেশের প্রথম প্ল্যানেটরিয়াম রয়েছে এখানে। রয়েছে তাজমহল, মস্কোর ঘণ্টা, আইফেল টাওয়ার, চীনের প্রাচীর, ট্রেন ও উড়োজাহাজ রয়েছে।

শহরের নিসবেতগঞ্জে ঘাঘট নদের তীর ঘেঁষে রয়েছে সেনাবাহিনী দ্বারা পরিচালিত ‘প্রয়াস’ বিনোদন পার্ক। পাখির কিচিরমিচির শব্দের খেলাও কানে বাজবে। ইচ্ছে হলে পানিতে ভেসে বেড়াতে পারেন পালতোলা বা ডিঙি নৌকায়। এই পার্কের পাশেই রয়েছে ‘রক্তগৌরব’ নামের স্মৃতিস্তম্ভ। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এ অঞ্চলের জনগণ লাঠিসোঁটা, তির-ধনুক নিয়ে রংপুর ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও করতে গিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতে অনেকে নিহত হন। তাঁদের স্মৃতির উদ্দেশে এখানে এই স্মৃতিস্তম্ভ টি নির্মিত হয়েছে। এটিও এক নজর দেখে নিতে পারেন।

শহরের মধ্যে রয়েছে চিকলি লেক। আর এই লেকের ধারে গড়ে তোলা হয়েছে বিনোদন পার্ক। চিকলি পার্কের পূর্ব অংশে নতুন সংযোজন চিকলি ওয়াটার পার্ক।

ওয়াটার পার্কের উদ্যোক্তা এডভোকেট মো. জিয়াউর রহমান এর সাথে দেখা হয় ওয়াটার পার্কে, তিনি ব্যস্ততা এড়িয়ে বলেন, যা দেখছেন তা সামান্যই, নতুন সংযোজন হবে, মন জুড়ানো যেমন, ট্রেটিশনাল এন্ট্রি ট্রেন, পেরিস হুইল (নাগর দোলা) যা ২২ তলা সমপরিমাণ উচ্চতা বিশিষ্ট হবে এবং এক সাথে ৯৬ জন ব্যবহার করতে পারবে। ওয়াটার রেইবো স্লাইড যেখানে একসাথে দেড় হাজার জন ব্যাবহার করতে পারবে। ক্যারোসোল (মেরিকো রাইডস) ডবল ডেকার যা বাংলাদেশের মধ্যে সর্ব প্রথম রংপুর ওয়াটার পার্কেই নতুন সংযোজন হবে।

রংপুর শহরে যদি প্রবেশ করেন তাহলে চিড়িয়াখানায় পশুপাখিও দেখতে ভুলবেন না। এখানে সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে নতুন নতুন পশুপাখি। এছাড়া শিশুদের জন্য রয়েছে বিনোদনের ব্যবস্থা।

কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কলকাতা থেকে এসে মঞ্চনাটক করে গেছেন রংপুর টাউন হলে। এই হলটিও দর্শন দিতে ভুলবেন না। ইতিহাসের সাক্ষী দুটি প্রাচীন বিদ্যাপীঠ কারমাইকেল কলেজ ও রংপুর জিলা স্কুলের দিগন্ত-জোড়া খোলা মাঠে ঘুরে বেড়ালে মনটা জুড়িয়ে যাবে।

এবার ছুটে চলুন এমন স্থানে, যা ইতিহাসের অমর সাক্ষী হয়ে আছে। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সময় রংপুর অঞ্চলের প্রশাসনিক কেন্দ্র ছিল রংপুরের মিঠাপুকুরের ফুলচৌকি গ্রাম। পলাশীর যুদ্ধের পর যে বীরপুরুষ রংপুর অঞ্চলকে ঘিরে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন অব্যাহত রেখেছিলেন, তিনি নুরউদ্দিন বাকের জঙ্গ। কথাসাহিত্যিক সৈয়দ শামসুল হকের সেই নূরলদীনই হলো নুরউদ্দিন বাকের জঙ্গ। ফুল-চৌকি গ্রামে তাঁর কীর্তি আজও বহমান। ঐতিহাসিক সেই ফুল-চৌকি গ্রাম ঘুরে যেতে ভুলবেন না। এর পাশের এলাকা পীরগঞ্জে রাজা নীলাম্বরের জলমহাল এলাকাও ঘুরতে পারেন।

ইতিহাসের আরেক অধ্যায় বঙ্গ-বিজয়ী ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বখতিয়ার খিলজি তিব্বত অভিযানে রংপুরে একটি এলাকায় রাত্রিযাপন করার কারণে তারই নামানুসারে গ্রামের নাম হয়েছে বখতিয়ারপুর, যা রংপুর শহরের পাশেই অবস্থিত। এখানে পদধূলি দিতে ভুলবেন না। রংপুরের আরও কিছু দর্শনিয় স্থান, হযরত মাওলানা কেরামত আলী জৌনপুরী (রহঃ) এর মাজার ও মসজিদ, জেলা পরিষদ ভবন, শিরীন পার্ক, লালদীঘির নয় গম্বুজ মসজিদ, মন্থনার জমিদার বাড়ী, পীরগাছা দেবী চৌধুরাণীর রাজবাড়ী, ইটাকুমারীর জমিদার শিবচন্দ্র রায় এর রাজবাড়ী, মাহিগঞ্জের কাজিটারী মসজিদ, রংপুর মেডিকেল কলেজ, পীরগঞ্জের ঝাড় বিশলায় কবি হেয়াত মামুদের মাজার, কাউনিয়ার আনন্দ মঠ, বেনারসি পল­ী, নিসবেতগঞ্জ শতরঞ্জি।

রংপুরে বেড়াতে বেড়াতে সময় হাতে থাকলে এবার এখান থেকেই দিনে দিনে ঘুরে আসতে পারেন দিনাজপুরের রামসাগর দিঘি, কান্তজিউ মন্দির, রাজবাড়ী। নীলফামারীর নীলসাগর। এ ছাড়াও নীলফামারী জেলার নীলসাগর এগ্রো ইনড্রাস্টিজ লিমিটেড বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ করছে মরুর প্রাণী দুম্বা ও উট, বনের সৌন্দর্য হরিণ, সুদূর আমেরিকার টার্কি মুরগী। যেখানে গেলে মনে হবে আপনি খোলা চিড়িয়া খানায় রয়েছেন। তিস্তা ব্যারেজ। আরও একটু উত্তরে গিয়ে দেশের একেবারে শেষ প্রান্ত তেঁতুলিয়া। সূত্র: খোলাকাগজ

মন্তব্য করুন


 

Link copied