আর্কাইভ  শনিবার ● ২০ এপ্রিল ২০২৪ ● ৭ বৈশাখ ১৪৩১
আর্কাইভ   শনিবার ● ২০ এপ্রিল ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: লালমনিরহাটে মোবাইল ফোনে কথা বলছিল, হঠাৎ পিছন থেকে ট্রেনের ধাক্কায় কাটা পড়লেন যুবক       ঠাকুরগাঁওয়ে নিখোঁজের ২ দিন পরে ছাত্রের মরদেহ উদ্ধার       ছুটি বাড়ল সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে       ডিমলা উপজেলা নির্বাচন॥ এমপির ভাই, ভাতিজা ও ভাতিজি বউ প্রার্থী-তৃণমূলে ক্ষোভ       কিশোরী গৃহকর্মীকে খুন্তির ছ্যাকা; রংপুর মেডিকেলে মৃত্যু যন্ত্রণায় পাঞ্জা লড়ছে নাজিরা      

 width=
 

নিষ্ঠুর রসিকতা

সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০১৩, দুপুর ১১:৫৬

আওয়ামী লীগ স্পিকটি নট। জাসদ নেতা হাসানুল হক ইনু বৈঠকের খবর দিচ্ছেন। অন্যদিকে মির্জা ফখরুলও স্পিকটি নট। ব্রিগেডিয়ার (অব.) হান্নান শাহ’র বক্তব্য নিয়েও একটি একাঙ্কিকা দেখা গেল। খবরের কাগজ ও অন্যান্য সূত্রের বরাতে তিনি সতর্কতার সঙ্গে ওই বৈঠকের খবরটি দেন। এরপর রিজভী প্রেস রিলিজ পাঠিয়ে তা খণ্ডন করেন। সেটাই সঙ্গত। কারণ, দলের জ্যেষ্ঠ যা বলেছেন কনিষ্ঠ তাকে না জানিয়ে উল্টাতে পারেন না। তবে তিনি সম্ভবত গোমর ফাঁস করেছেন। বলেছেন, সৈয়দ আশরাফের কাছে মির্জা ফখরুল যা-ই জানতে চেয়েছেন, তার জবাবেই তিনি বলেছেন, নেত্রী (শেখ হাসিনা) জানেন। জাতিও সম্ভবত তা-ই অনুমান করে। যা জানেন তা শেখ হাসিনাই জানেন। হয়তো বাস্তবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকে নয়, ইতিমধ্যেই কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গেছে। সেই ক্ষণগণনা পাঁচ বছরের ব্যবধানে ব্যালট পেপারে আবার সিল মারার সুযোগ লাভের অপেক্ষার কারণে নয়। বিষাদের সঙ্গে তারা ক্ষণ গুনছেন। সর্বত্র জিজ্ঞাসা নির্বাচন নিয়ে কি হবে? সিইসি গতকাল একটু রাশ টানলেন। সোমবার তফসিল ঘোষণাজনিত উত্তেজনার পারদ নিচে নামালেন। তিনি বলছেন, জাতি সমঝোতার জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু যা বলেননি তা হলো, তিনি নিজে কি উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি নিজে কি ভাবছেন? কেন তিনি যথাসময়ের আগেই সেনা মোতায়েনের কথা ভাবছেন? দায়িত্ব নিয়ে তারা ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন সেনা মোতায়েনের বিরুদ্ধে।

এরশাদ বোল পাল্টাচ্ছেন। কিন্তু তিনি একা নন। ইসিও বোল পাল্টাচ্ছেন। তফসিলের দিন ঘোষিত হলে মানুষ ও সরকারি কর্মচারীরা যে যেখানে আছেন, নিজেদের জানমাল রক্ষা করার আশঙ্কায় পড়বেন। সারা দেশের মানুষ ঝিম মেরে আছে। স্বাভাবিক কাজকর্ম তাদের চলছে বটে। কিন্তু মনে ভয়। তারা টিভির চ্যানেল ঘোরাচ্ছেন। পত্রিকার পাতা উল্টাচ্ছেন। কোথাও যদি কোন একটি শান্তির খবর পাওয়া যায়।

নির্বাচন কমিশনার ঘোষণা দিয়েছিলেন, তারা তফসিল ঘোষণা করতে যাচ্ছেন। অথচ তারা বিরোধী দলের সঙ্গে একটা লোকদেখানো সংলাপেরও আয়োজন করলো না। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা লক্ষ্য করছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বেশ আনন্দের সঙ্গে মির্জা ফখরুলের সঙ্গে সৈয়দ আশরাফের বৈঠকের খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। মনে করা হচ্ছে, সরকার কৌশলগতভাবে এতে লাভবান হয়েছে। এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগের লাভ এটা প্রচার করে বেড়ানো যে, বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে তারা অনেক চেষ্টাই করেছেন। মন্ত্রিসভা পর্যন্ত ভেঙ্গে দিয়েছেন। ভেঙে দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে পুনর্গঠন করেননি। অপেক্ষা করেছেন। মন্ত্রিসভা ভেঙে শ্রীলঙ্কা চলে গেছেন। জাতীয় পার্টির মন্ত্রীদের শপথ পড়িয়েও চটজলদি মন্ত্রিসভা পুনর্গঠন করেননি। প্রধানমন্ত্রী সৌদি আরবও ঘুরে এলেন। কিন্তু এটা লক্ষণীয় যে, বিশ্বের দুই শক্তিশালী পার্লামেন্টে বাংলাদেশকে নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বনানীর বাড়িতে হাজির হলেন। তার তো মনে হয় নতুন কিছুই বলার ছিল না। এবং তিনি তা বলেনওনি। বিএনপি নেতার কাছ থেকে একটি লিখিত বক্তব্য পাওয়া নতুন কোন মাত্রা যুক্ত করেনি। কারণ, ওই রকম লেখার কাজে বিএনপি এক রাউন্ড এগিয়ে আছে। সৈয়দ আশরাফের কাছে লেখা চিঠির জবাব আজ পর্যন্ত মির্জা ফখরুল পাননি।

দায়িত্বশীল সূত্র মতে, গত ১০ই নভেম্বর রাত ৯টা থেকে সাড়ে ৯টা- সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের কাছ থেকে একটি ফোন কল পেলেন মির্জা ফখরুল। এর আগে তিনি তার একজন লোক পাঠিয়ে খবর দিয়েছিলেন। বলেছিলেন তিনি তার সঙ্গে কথা বলতে চান। এই খবর তিনি যখন একজন বার্তা বাহকের মাধ্যমে পাঠান তখন মিডিয়া শোর তুলেছিল যে, সৈয়দ আশরাফকে টেলিফোনে খুঁজেই পাচ্ছেন না তিনি, এরপর সৈয়দ আশরাফ ফোন দিলেন। বললেন, অতীতে দুই মহাসচিব বসে কিছু করতে পারেননি। এবারেও আমরা কোন ব্যর্থ বৈঠকে বসতে পারি না। তার চেয়ে বরং ৩ থেকে ৫ জনের একটি গ্রুপ নিয়ে আলোচনায় বসি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব তাৎক্ষণিক রাজি হন। তিনি তাৎক্ষণিক একথাও বলেন যে, এই আলোচনায় বসতে তিনি তার চেয়ারপারসনের (বেগম খালেদা জিয়া) দ্বারা ইতিমধ্যেই অনুমোদন প্রাপ্ত। তখন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বললেন, তিনি যে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন তা তার ব্যক্তিগত অভিমত। এ বিষয়ে তার সভানেত্রীর (শেখ হাসিনা) কাছ থেকে অনুমোদন পাওয়া দরকার।

জবাবে মির্জা ফখরুল বলেছিলেন, ঠিক আছে, আমি আপনার ফোনের অপেক্ষায় থাকবো। সৈয়দ আশরাফও বলেছেন, নেত্রীর সঙ্গে কথা বলে তিনি তাকে ফোন করবেন। এরপর দেখা গেল আরেকটি নাটক। দুই জনের মধ্যে টেলিফোনে আলোচনার বিষয়টি পত্রিকায় ছাপা হলে সৈয়দ আশরাফ তা অস্বীকার করেন। এবারে দেখা গেল, মির্জা ফখরুল ইসলাম যেন ফিরতি চাল দিয়েছেন। এবারে সৈয়দ আশরাফ নীরব থাকলেও মির্জা ফখরুল বলে দিয়েছেন ওই বৈঠক হয়নি। একটা শোধ হলো। অবশ্য  এমনটা অস্বাভাবিক নয় যে, দুই মহাসচিব হয়তো একমত হয়েছিলেন যে, তারা প্রেসের সামনে মুখ খুলবেন না। অবশ্য তাদের মুখ খোলারও কিছু নেই। কার বাড়িতে বৈঠকে বসেছিলেন, সেখানে চা নাস্তা খেলেন কি খেলেন না, সেকথা বলা ছাড়া তাদের ঝুলিতে কিছু বলার ছিল না। জনগণ উৎসাহিত হতে পারে, যে কথা শুনে স্কুল কলেজের পরীক্ষার্থীরা সান্ত্বনা পেতে পারে সেরকম কিছুই তাদের কাছে ছিল না। শেখ হাসিনা সরকার প্রধান হিসাবেই থাকবেন।

এই কথাই যদি বলবেন, তাহলে সেটা বনানীতে গিয়ে বলারও কিছু ছিল না। আর বনানী কবরস্থানে গাড়ি রেখে বিভিন্ন অলিগলিতে পাক খেয়ে সৈয়দ আশরাফের কাছ থেকে এটা শোনারও কিছু ছিল না। এটাই স্পষ্ট যে, সংলাপের কোন সম্ভাবনা নেই। সংলাপের কোন পরিবেশ বাস্তবে খোলা নেই। প্রধানমন্ত্রীর ফোন কাজ দিতে পারতো। দেয়নি। এরপর বেগম খালেদা জিয়া রাষ্ট্রপতির কাছে গিয়ে আরেকটি পরিবেশ সৃষ্টি করেছিলেন। সেখানে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রথমবারের মতো একটা ঘটনা ঘটলো যা নিয়ে তারা হৈচৈ করেননি। তারা বলেননি, জামায়াত সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করায় বঙ্গভবন নাপাক হয়ে গেছে। অন্যদিকে  প্রেসিডেন্টের দিক থেকেও কিছুটা নড়াচড়ার লক্ষণ ছিল। তিনি আলোচনার বিষয়বস্তু সরকারের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন বলেও খবর বেরিয়েছে।

কিন্তু এটা অত্যন্ত লক্ষণীয় যে, বঙ্গভবন থেকে কোন একটি ইশতিহার বের হওয়ার আগেই প্রধানমন্ত্রী পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে প্রেসিডেন্টের মুখের কথা নিজেই বলে ফেলেছেন। সংসদীয় রীতিনীতিতে এ ধরনের কোন আলাপ-আলোচনার সুযোগ নেই এবং সেখানে তিনি নির্দিষ্টভাবে বলেছেন, নির্বাচন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি তাকেই দায়িত্ব চালিয়ে যেতে আহ্বান জানিয়েছেন। অথচ প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেননি। তিনি গণপদত্যাগ পত্র জমা নিলেও কাগজে কলমে কেউ পদত্যাগ করেনি। পদত্যাগী মন্ত্রীদের মধ্যে তিনি দায়িত্ব পুনর্বণ্টন করেছেন। সুতরাং প্রেসিডেন্টের দিক থেকে প্রধানমন্ত্রীকে দায়িত্ব চালিয়ে নিতে বলা একান্তই অপ্রয়োজনীয় এবং অপ্রাসঙ্গিক। বঙ্গভবন অবশ্য এ বিষয়ে নীরবতা পালন করে চলেছে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য তারা খণ্ডন করবে তেমনটা বাংলাদেশের বাস্তবতা নয়। কিন্তু এ থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার শেখ হাসিনা কিছুতেই সরকারপ্রধানের দায়িত্ব থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে চান না।

সুতরাং আশরাফ-ফখরুলের বৈঠকের সাফল্য আশা করা নাটকীয়তার অংশ ছাড়া কিছুই হওয়ার নয়। এরশাদের থুথু ও বেঈমান তত্ত্ব নতুন নয়। কাজী জাফর বিবৃতি দিয়ে নীরব। ড. কামাল হোসেনদের জোট একটা নতুন খবর। কিন্তু তাতে মানুষের মনে স্বস্তি নেই। তাই দুই নেতার গোপন বৈঠকটি শেষ বৈঠক হলে বা আদৌ কোন অগ্রগতি না ঘটলে তা প্রকারান্তরে দেশের তাবৎ জনগণের সঙ্গে একটা নিষ্ঠুর রসিকতা বলে গণ্য হবে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বিশেষ করে মন্ত্রীদের গণপদত্যাগের পর থেকে রাজনীতিতে অদ্ভুত সব কাণ্ড-কারখানা ঘটে চলেছে। মানুষ পোড়া চোখেও শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত মেঘের কোলে রোদ দেখতে চাইবে।

মন্তব্য করুন


 

Link copied