বেরোবি প্রতিনিধি: প্রশাসনিক ভবনে তালা, লাগাতার কর্মবিরতি, বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ, মানববন্ধনসহ শিক্ষক-কর্মচারীদের দ্বি-মূখী আন্দোলনে এবার উত্তাল হয়ে উঠেছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।
ভিসি-রেজিস্ট্রারসহ উর্ধবতন দায়িত্বশীল কেউ ক্যাম্পাসে না আসায় একাডেমিক, প্রশাসনিক কর্মকান্ড স্থবির হয়ে পড়েছে। বন্ধ রয়েছে বিভিন্ন বিভাগের পরীক্ষা।
জানাগেছে, গত এক মাস ধরে তিন দফা দাবিতে বিশ^বিদ্যালয়ের কর্মচারীরা কর্মবিরতি পালনসহ বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ, প্রশাসনিক ভবনে তালা দেওয়াসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে। তাদের দাবিগুলো হলো ৫৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বকেয়া বেতন পরিশোধ, নীতিমালা প্রনয়ন ও সময় মতো পদোন্নতি।
এসব দাবিতে এক মাস ধরে আন্দোলন করলেও কর্তৃপক্ষ তাদের দাবি বাস্তবায়ন করছেন না বলে জানান কর্মচারী সমন্বয় পরিষদের মূখপাত্র রবিউল ইসলাম।
পরিষদে আহবায়ক মাহাবুবার রহমান বাবু বলেন, গত ২১ জুলাই ভিসি স্যার আমাদের সাথে ক্যাম্পাসের বাইরে নগরীর সার্কিট হাউসে আলোচনার জন্য বসেছিলেন। কিন্তু তিনি সাথে করে স্থানীয় সাংসদ এইচ এন আশিকুর রহমানের ছেলে রাশেক রহমানকে সঙ্গে নিয়ে আসায় আলোচনাটি ভেস্তে গেছে। আলোচনায় রাশেক রহমান নয় এবং আলোচনা ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে হওয়ার দাবি জানিয়েছেন কর্মচারীরা।
অপরদিকে ক্যাম্পাসে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ দাবিতে ২৪ জুলাই বুধবার মানববন্ধন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের একাংশ। তারা শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষায় কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা কামনা করেন। একই সাথে প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার দাবি জানান। মানববন্ধনে অর্থ ও হিসাব বিভাগের পরিচালকের দায়িত্বে থাকা গণিত বিভাগের প্রফেসর ড. আর এম হাফিজুর রহমান সেলিম, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের পরিচালকের পদে থাকা বাংলা বিভাগের প্রফেসর ড. পরিমল চন্দ্র বর্মন, হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি প্রত্যাশী আপেল মাহমুদসহ বিভিন্ন পদে পদোন্নতি প্রত্যাশী কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কর্মচারী সমন্বয় পরিষদের সদস্য সচিব মাসুম খান বলেন, ভিসি স্যার ধারাবাহিকভাবে বিশ^বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছেন। রেজিস্ট্রার আবু হেনা মোস্তফা কামাল তিনিও গত ফেব্রæয়ারি মাস থেকে প্রশাসন ভবনে আসেন না। এক মাস ধরে ক্যাম্পাসেই (রংপুরে) আসেন না। ভিসি, রেজিস্ট্রার দুই জনই ঢাকায় থাকেন। সুতরাং বিশ^বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক শৃঙ্খলা কীভাবে আসবে? জানা যায়, ভিসি প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ গত দুই বছরে সাড়ে ৭শ দিনের মধ্যে সাড়ে ৫শ দিনই ঢাকায় থেকেছেন। সম্প্রতি তিনি ক্যাম্পাসেই আসছেন না। রংপুরে আসলেও নগরীর সার্কিট হাউসে অবস্থান করে জরুরী কিছু ফাইল স্বাক্ষর করে চলে যান। তার অনুপস্থিতির কারনে বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা চলছেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. গাজী মাজহারুল আনোয়ার বলেন, ‘কর্মচারীরাও বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি পার্ট। তাদের কোন দাবী-দাওয়া থাকলে তা অবশ্যই শুনতে হবে। একটি আন্দোলন এতদিন থেকে চলছে অথচ প্রশাসন তা সমাধান করতে পারছেনা। এটি অবশ্যই প্রশসনের ব্যর্থতা। এর দায় প্রশাসন এড়াতে পারেনা। স্বাভাবিক ভাবেই প্রভাব পড়ছে শিক্ষার্থীদের উপর। শিক্ষকরা ঠিকমত ক্লাস-পরীক্ষা নিতে পারছেন না। ফলে, সেশনজট বাড়তে পারে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর (চলতি দায়িত্ব) আতিউর রহমান বলেন, ‘গত সিন্ডিকেটে কর্মচারীদের নীতিমালার ভিত্তি রচনা হয়েছে। তাদের দাবি নীতিমালা কর্মচারী বান্ধব হয়নি। সেক্ষেত্রে আলোচনার মাধ্যমে এর সুষ্ঠু সমাধান নিয়ে আসতে হবে। প্রশাসনিক ভবনে তালা লাগিয়ে আন্দোলন কোনভাবেই কাম্য নয়।
এই বিষয়ে ভিসি প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহকে একাধিকবার ফোন দিলেও ফোনটি রিসিভ হয়নি।