এই "যমপুরেই" কেটেছে আমার শৈশব আর কৈশোরের সোনালী অধ্যায়। ম্যালেরিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব থাকায় আজকের বিভাগীয় শহর রংপুরকে একটা সময় ডাকা হতো "যমপুর" বলে।
আবার আদি নাম হিসেবে আজকের রংপুরকে ডাকা হতো, "জঙ্গপুর" নামে-ও। "জঙ্গ" অর্থ যুদ্ধ, "পুর"অর্থ নগর বা শহর। গ্রাম থেকে আসা মানুষরা প্রায়ই ইংরেজদের অত্যাচারে হয় বেঘোরে প্রাণ হারাতো, নয়তো ম্যালেরিয়ায় মারা যেতো। তাই সে সময়ে মানুষ সচরাচর শহরে আসতেও ভয় পেতো।
রংপুর নামকরণ নিয়ে এমন আরো অনেক কাহিনী রয়েছে। যেমন,এই অঞ্চলের মাটি উর্বর হবার কারনে এখানে প্রচুর নীলের চাষ হত। সেই নীলকে স্থানীয় লোকজন "রঙ্গ" নামেই চিনতো। কালের বিবর্তনে সেই রঙ্গ থেকে রঙ্গপুর এবং তা থেকেই আজকের রংপুর।
অভাব আর দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত "মরা কার্তিক" বা "মঙ্গা" ঘুচিয়ে রংপুরের মানুষদের আর্থিক সচ্ছলতা এনে দিয়েছেন জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার।
যাইহোক আমার আবেগ আর অনুভূতির সাথে মিশে আছে রংপুর। বাবার কর্মসূত্রে আমরা থাকতাম বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তিস্তা প্রজেক্ট কলোনিতে। শৈশব -কৈশোর পেরিয়ে এখানকার রবার্টসনগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে সাফল্যের সাথে এসএসসি পাস করে আমি ভর্তি হই ঢাকার আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজে। এইচএসসি শেষে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হই। তারপর বিসিএস দিয়ে সরাসরি প্রবেশ করি কর্মজীবনে।
মূলত স্কুল ছেড়ে কলেজে উঠার পর থেকেই রংপুরের সাথে শুরু হয় আমার বিচ্ছেদের পালা। তবে সেখানকার নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ বিশেষ করে আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক, বাল্যবন্ধু, স্বজন, প্রিয়জন - সবার সাথেই আমার আত্মার যোগাযোগ এখনও বজায় রয়েছে সেই আগের মতোই। রংপুরের সবাই তাই আমার কাছে "আত্মার আত্মীয়"।
রংপুরে বেড়ে ওঠা সেই আমি আজ মানবতার জননী, বঙ্গবন্ধু কন্যা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভার সদস্য। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে হিসেবে রংপুর সার্কিট হাউসে জেলা প্রশাসনের তরফে সম্মান গার্ড প্রদর্শনের মাধ্যমে যেন রংপুর সম্মান জানাচ্ছিলো তার নিজের সন্তানকে। কৃতজ্ঞতা রংপুর। শুভকামনা রংপুর। ভালোবাসার রংপুর।