আর্কাইভ  শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ● ১৫ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

 width=
 
শিরোনাম: স্বাস্থ্যের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ফজলুল হক কারাগারে       কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা       লালমনিরহাটে পুকুরে জাল ফেলতেই জালে উঠে এলো যুবকের মরদেহ       কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা       রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা      

 width=
 

“সেনাবাহিনী দেশে জরুরি অবস্থা জারি করতে পারে”

বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর ২০১৩, বিকাল ০৬:২৫

যু

সম্প্রতি বাংলাদেশের রাজনীতির প্রধান দুই নেত্রী বেশ কয়েক বছর পর রাজনৈতিক সংকট কাটানোর জন্য টেলিফোন সংলাপ করেন। এ সময় দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ফোন করেন। প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রীর ফোনালাপ অবশ্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিরোধকে আরও প্রকট করে তুলে ধরে। স্থানীয় একটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, তাদের কথাবার্তার শুরুর দিকে ছিল শেখ হাসিনার, “আমি আপনাকে দুপুরে ফোন করেছিলাম -- আপনি ফোন ধরেননি,” এমন বক্তব্য। যার জবাবে বেগম জিয়া বলেন, “এটি সঠিক নয়।” শেখ হাসিনা বলেন, “আমি আপনাকে জানাতে চাই--” বেগম জিয়া বলেন, “আপনাকে আমার কথা আগে শুনতে হবে। আপনি বলছেন, আমাকে ফোন করেছিলেন, কিন্তু আপনি যে সময় বলছেন, তখন আমি কোনো ফোন পাইনি।” এভাবেই দুই নেত্রীর উত্তপ্ত কথাবার্তা চলতে থাকে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এ দুই নেত্রীর কথাবার্তা কোনো সমাধান আনতে পারেনি। এখন তা রূপ নিচ্ছে রক্তারক্তি ও রাজপথে দৈনন্দিন সহিংসতায়। দুই নেত্রীর বিষাক্ত বিরোধ তাদের এক বিপজ্জনক কানাগলিতে নিয়ে যাচ্ছে, যা আন্তর্জাতিকভাবে উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলছে। দুই নেত্রীই দেশের ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য তিক্ত এক প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছেন। আগামী নির্বাচন কোন পদ্ধতিতে হবে সে বিষয় নিয়েই উভয় পক্ষ প্রায় দুই বছর ধরে বিরোধে লিপ্ত রয়েছেন। বেগম জিয়া ও বিরোধীদলীয় নেতারা চাইছেন নির্বাচনের আগেই শেখ হাসিনা ও তার সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে নির্বাচনের ব্যবস্থা। বাংলাদেশে আগেও এ ধরনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে নির্বাচন হয়েছে। সরকার এ দাবি মেনে না নিলে বেগম জিয়ার নেতৃত্বাধীন দল এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। তবে শেখ হাসিনা এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলছেন, নির্বাচন আয়োজনের জন্য বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলো যথেষ্ট স্থিতিশীল। আর তিনি দেশের সংবিধান সম্পূর্ণভাবে মেনে চলছেন। এ অবস্থাতেই স্থবির হয়ে আছে পরিস্থিতি। দেশের ক্ষয়ক্ষতি হলেও কোনো পক্ষই এ অবস্থা থেকে এক চুলও নড়তে নারাজ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশের একজন প্রবীণ কূটনীতিবিদ ও রাজনীতি বিশ্লেষক বলেন, খুব সাধারণ বুদ্ধিতেও এটা বলা যায় যে, দুই নেত্রীর সমঝোতা করা উচিত। এ মুহূর্তে বাংলাদেশকে আইনের শাসন অক্ষুণ্ন রাখার জন্য অনেক বড় মূল্য দিতে হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনার গত সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর তার নিষ্ঠুর ফলাফল আগেই আঁচ করা গিয়েছিল। জনতা রাস্তায় নেমে এসে বহু গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। এর পর পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি সেগুলো নেভানোর জন্য ধোঁয়াশাচ্ছন্ন রাস্তায় সাইরেন বাজিয়ে ছোটাছুটি শুরু করে। নির্বাচন প্রতিরোধে বিরোধী দল দেশব্যাপী হরতাল, রাস্তা ও রেললাইন অবরোধ করার ফলে ২৬ নভেম্বরের পর প্রায় দুই ডজন মানুষ নিহত হয়েছে। বেগম জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিরোধী দল সারা বছর বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার জন্য সরকারকে চাপ দিতে হরতাল দেয়। এটি দেশের উদীয়মান অর্থনীতিতে বাধার সৃষ্টি করে। প্রতিবাদের জন্য অনেকটা প্রথা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হরতাল ও এ থেকে উদ্ভূত সহিংসতা বাংলাদেশে সাধারণ বিষয়। ১৯৯৬ সালে উভয় নেত্রীর এখনকার তুলনায় ঠিক বিপরীত অবস্থা ছিল। তখন দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বেগম জিয়া এবং বিরোধীদলীয় নেত্রী ছিলেন শেখ হাসিনা। সে সময় শেখ হাসিনার দল বেগম জিয়াকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে রাজি করাতে হরতালের আশ্রয় নিয়েছিলেন। বাংলাদেশের ভঙ্গুর গণতন্ত্রে সামরিক বাহিনীর শাসনের ইতিহাস রয়েছে আর বিশ্লেষকরা স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য তাদের চাইছেন। সামরিক শাসনের পর ১৯৯১ সাল থেকে বেশ কয়েকবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে নির্বাচন করা হয়েছে। তবে ২০০৭ সালে সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর এ ব্যবস্থা বিতর্কিত হয়ে পড়ে। ২০০৮ সালের নির্বাচনের তিন বছর পর শেখ হাসিনার সরকার আদালতের এক আদেশের সূত্র ধরে এ ব্যবস্থা বিলুপ্ত করে। রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের আশায় এ সপ্তাহে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘের প্রতিনিধির ঢাকা সফর করার কথা রয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন ব্যক্তিগতভাবে এ অচলাবস্থা সমাধানের চেষ্টা করেছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সেক্রেটারি নিশা দেশাই বিসওয়াল উভয় পক্ষকে একটা সমাধানে রাজি করাতে গত সপ্তাহে ঢাকা সফর করেছেন। এক সংবাদ সম্মেলনে দেশাই বিসওয়াল বলেন, আমাদের মনে হয় উভয় পক্ষকে একটা জরুরি সংলাপে বসার এটাই উপযুক্ত সময়। রাজনৈতিক দলগুলোকে একসঙ্গে বসে তাদের আশা ও সামনে এগিয়ে যাওয়ার আলোচনার ব্যবস্থা করা উচিত। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর অবিশ্বাস শুরু হয়েছে ১৯৭১ সালের পাকিস্তানের সঙ্গে রক্তস্নাত মুক্তিযুদ্ধ থেকে। যুদ্ধের পর শেখ হাসিনার পিতা শেখ মুজিবুর রহমান প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হন। ১৯৭৫ সালে তিনি, শেখ হাসিনার মাতা ও ১০ বছর বয়সী ভাইসহ আততায়ীর হাতে নিহত হন। এরপর দেশের রাষ্ট্রপতি হন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান। আততায়ীর হাতে জিয়া নিহত হওয়ার পর তার স্ত্রী বেগম জিয়া দলটির নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। বাংলাদেশের উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও রক্তাক্ত সংঘাত এখনও ছেড়ে যায়নি। বছরব্যাপী দেশে বিশেষ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হচ্ছে। এর অভিযুক্তদের অধিকাংশই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইসলামী রাজনৈতিক দলের সদস্য হওয়ায় উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বেগম জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিরোধী দল হরতালের মাধ্যমে তাদের দাবির জন্য চাপ প্রয়োগ করায় দেশের অর্থনীতির ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গ্রুপ কিছু নিয়ম উপেক্ষা করায় মানবতাবিরোধী ট্রাইব্যুনালের সমালোচনা করছেন। জামায়াতের নেতারা এ পদ্ধতিকে রাজনীতিকরণের অভিযোগ করছেন। নেতাদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলে দেশে ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হবে বলে হুমকি দিয়েছে জামায়াত। তুমুল উত্তেজনাকর এ রাজনৈতিক পরিস্থিতির ফলাফল হতে পারে আরো চিন্তার বিষয়। নির্বাচন বিষয়ে কোনো সমাধান না হলে এবং আওয়ামী লীগের নির্বাচনে বেগম জিয়া অংশ না নিলে এতে নিশ্চিতভাবেই আওয়ামী লীগের জয় হবে। এতে জনগণের অধিকাংশই কোনো পার্শ্বরাস্তা খুঁজবেন। যদি অর্ধেকেরও বেশি ভোটার নির্বাচনে অংশ নেয়, তাহলে শেখ হাসিনার অবস্থান আরও শক্ত হতে পারে। কিন্তু যদি নির্বাচনে ভোটারের অংশগ্রহণ অনেক কম হয় তাহলে বিরোধীদল নতুন করে নির্বাচনের দাবিতে রাস্তায় নেমে আসতে পারে। এতে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা আরো বাড়বে। এর ফলে জাতীয় স্থিতিশীলতার নামে জরুরি অবস্থা জারি করতে পারে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী। (That raises the possibility that the Bangladeshi military, in the name of national stability, might declare a state of emergency.)

বাংলাদেশের মতো মুসলিম দেশে ধর্ম একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক। শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের অপেক্ষাকৃত ধর্মনিরপেক্ষ দল। অন্যদিকে বেগম জিয়া  অতীতে ইসলাম রক্ষাকারী সরকারের প্রয়োজনীয়তার পক্ষে কথা বলেছেন। বাংলাদেশ একটি গরিব দেশ হলেও যথেষ্ট উন্নতি লাভ করেছে। স্বাস্থ্য সূচক ও মাথাপিছু আয় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। তবে রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে অর্থনীতি ধ্বংস ও জনগণের ক্ষতি হচ্ছে। গত সপ্তাহে বিরোধী দলের আন্দোলনকারীরা একটি বাসে আগুন দিলে একজন নিহত ও বেশ কিছু ব্যক্তি আহত হন। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ী নেতারা রাজনৈতিক সমঝোতার আহ্বান জানাচ্ছেন। দেশের শক্তিশালী গার্মেন্টশিল্পের নেতারা বলছেন, হরতালের কারণে তাদের পণ্য পাঠাতে দেরি হচ্ছে। এটি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহিত করতে পারে।

সবশেষে রাজনৈতিক পরিস্থিতি নির্ভর করছে ‘দুই নেত্রী’র ওপর। তারা তিক্ত ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কোনো পথ বের করতে পারেন কি না!

মন্তব্য করুন


 

Link copied