আর্কাইভ  শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ● ১৫ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

 width=
 
শিরোনাম: রংপুরবাসীর জন্য সরকারি চাকরি, পদ ১৫৯       স্বাস্থ্যের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ফজলুল হক কারাগারে       কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা       লালমনিরহাটে পুকুরে জাল ফেলতেই জালে উঠে এলো যুবকের মরদেহ       কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা      

 width=
 

শ্রদ্ধা ।। চারণ সাংবাদিক মোনাজাতউদ্দিন

রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৯, দুপুর ১২:২৫

মানিক সরকার মানিক

তাঁর কর্ম-গুণে তিনি সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনলেও আজকের সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতা দেখে হয়তো নীরবেই লজ্জা পেতেন তিনি

অবাক আর বিস্ময়ে চেয়ে চেয়ে ভাবি সত্যিই সত্যিই সময় ও নদীর স্রোত কারও জন্য অপেক্ষা করে না। ১৯৯৫ সালের আজকের এ দিনটি। মনে হয় এইতো সেদিন। কিন্তু না এ শুধু ভাবনাই। আজকের দিনেই প্রিয় স্ত্রী সন্তান, কর্মস্থল, প্রিয় সহকর্মী, মাঠ ঘাট খাল বিল নদী প্রান্তর এমনকি এই ধরাধাম ছেড়ে চিরতরে বিদায় নিয়েছিলেন যে মানুষটি তিনিই মোনাজাতউদ্দিন। বাংলাদেশর সংবাদপত্র এবং সাংবাদিক সমাজের প্রতিকৃত। ’পথ থেকে পথের মানুষ’ খ্যাত, দেশবরেণ্য চারণ সাংবাদিক মোনাজাতউদ্দিনের ২৪ তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। মনে হয় ২৬ ডিসেম্বর ১৯৯৫। এইতো সেদিনের কথা, পুরাতন প্রেসক্লাবের সামনে সাবু ভাইয়ের পাইওনিয়ার কুরিয়ার সার্ভিসে বসে রিপোর্ট লিখতে লিখতে সহসাই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। সেখানে অবস্থানরত সাবু আনসারী এবং শব্দশৈলীর মিজান তালুকদারসহ আরও ক’জন ধরাধরি করে তাকে নিয়ে এলেন প্রেসক্লাবের ভেতরে। তাকে দেখেই চমকে উঠলাম আমিসহ অনেকেই। কী হয়েছে মোনাজাত ভাইয়ের ? তাৎক্ষণিক কয়েকটি চেয়ার একত্র করে মাথার নিচে কিছু পেপার বিছিয়ে শুইয়ে দিলাম তাকে। একজনের একটা মোটর সাইকেল নিয়ে ছুটলাম পায়রা চত্ত¡রে অবস্থিত ডা. গোপালদার চেম্বারে। ( ডা. গোপাল চন্দ্র সরকার)। পেছনে বসিয়ে ছুটে নিয়ে এলাম তাকে। গোপালদা দেখে বললেন। প্রেসার বেড়েছে। সম্পূর্ণ রেস্ট দরকার। এমনকি ক’দিনের জন্য বাসা থেকে বের হওয়া বন্ধ। কিছুক্ষণ পর ভাইকে নিয়ে একটা রিকশায় করে রওনা হলাম নগরীর লালকুঠিতে তার বাড়ির উদ্দেশ্যে। বাড়িতে নামাতেই ভাবি তাকে দেখে হতচকিত। কী হয়েছে তার? ভাবিকে বললাম রিপোর্ট লিখতে লিখতে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। চিকিৎসক দেখিয়েছি। তিনি জানিয়েছেন সম্পূর্ণ রেস্টে থাকতে। কোন অবস্থাতেই যেন ক’দিন বাড়ির বাইরে না যান। আরও বললাম, ভাবি, রিকশায় বসে আমাকে কিন্তু বলেছে কাল সকালে গাইবান্ধায় যাবে। কোন অবস্থাতেই যেন বাসার বাইরে যেতে না পারেন সে ব্যাপারে সিরিয়াসলি দেখবেন। ওদিনই সন্ধ্যায় বন্ধু ছড়াকার আশাফা সেলিমকে নিয়ে আবারও গেলাম তার বাসায়। গিয়ে দেখি লেপ মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছেন। কণ্ঠ শুনেই ডেকে নিলেন আমাদের। বললেন, কাল আমি গাইবান্ধা যাবো। তুমি এ দিকটায় লক্ষ্য রেখ। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, উনি তখন জনকণ্ঠের ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি আর আমি জেলা প্রতিনিধি। তার কথা শুনে আমি বললাম, ডা. গোপালদা আপনাকে রেস্টে থাকতে বলেছেন এমনকি আপনি যাতে বাড়ি থেকে বের না হয় সে কথাতো আপনাকেই বলে গেল। এ অবস্থায় কেন বের হবেন আপনি। আপনি বাসায় থাকবেন।

এদিককার যত বিষয়, আমি দেখবো। এসব কথা সেরে বাসার গেটে দাঁড়িয়ে ভাবিকে আবারও বললাম, ’ভাবি ডাক্তার কিন্তু সিরিয়াসলি বলেছেন। আপনি বিষয়টি চৈতির উপর ছেড়ে দেন। (চৈতি উনার বড় মেয়ে এবং তখন রংপুর মেডিক্যালের ৩য় বর্ষের ছাত্রী)। কিন্তু সংবাদ পাগল এ মানুষটি শোনে কার কথা। পরদিন ২৭ ডিসেম্বর সকালে বাসা থেকে বের হয়েই সহকর্মী (বর্তমানে দেশ টিভির সাংবাদিক।) আবু আসলামের মুখে শুনলাম ‘সকালে মোনাজাত ভাইকে তো রেলস্টেশনের দিকে যেতে দেখলাম’। মেজাজটা বিগড়ে গেল। ডিসেম্বর মাস। কনকনে শীত। এই শীত এবং অসুস্থতা উপেক্ষা করে তিনিই ঠিকই বেরিয়েছেন। পরে ক্লাবে এসে ভাবিকে ফোন দিলাম। তিনি জানালেন ‘সে কথা না শুনলে আমি আমরা কি করবো’? ২৯ তারিখ সকালে জনকণ্ঠ হাতে নিয়েই প্রথম পাতায় বক্স রিপোর্ট দেখলাম ‘গাইবান্ধায় মুলা কেজি ১টাকা’। আরও নিশ্চিত হলাম তার গাইবান্ধায় উপস্থিতির বিষয়টি। ও দিনই কনকনে শীতের বিকেলে নিজ মহল্লায় ব্যাডমিন্টন খেলছিলাম। ঠিক এমনি সময় প্রেসক্লাব এলাকার বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি শ্যামলদার মুখে প্রথম দু:সংবাদটি পেলাম এভাবে ‘মানিক তুমি এখনও এখানে ? শোনো নাই মোনাজাত ভাইয়ের সংবাদ ? বললাম, কেন কি হয়েছে মোনাজাত ভাইয়ের ? মোনাজাত ভাইতো আর নেই। বাহাদুরাবাদ ঘাটে ফেরি থেকে যমুনার ছবি তুলতে গিয়ে ফেরি থেকে নদীতে গিয়ে পড়ে মারা গেছেন। দ্রæত দৌঁড়ে চলে এলাম প্রেসক্লাবের সামনে। দেখি তৎকালীন প্রেসক্লাবের সামনে আকবর ভাইয়ের চন্দ্রবিন্দু’তে তখন শতশত শোকার্ত মুখ। এদের মধ্যে খুব বেশি তৎপর তার বন্ধু ও সহকর্মী মুকুল ভাই (প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা মুকুল মোস্তাফিজ), আকবর ভাই, মোনাজাত ভাইয়ের সম্বন্ধী পান্না ভাই (নাসিমুজ্জামান পান্না, তৎকালীন রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার।) প্রস্তুতি চলছে লাশ আনতে যাবার। আমিও যাবো তাদের সাথে। কিন্তু তারা সকলেই আমাকে বললেন, না, তুমি যেও না। এ দিককার রিপোর্ট, অন্যান্য মাধ্যমে যোগাযোগ এবং বাসার প্রস্তুতির জন্য তুমি এখানেই থাকে। রয়ে গেলাম। আমার যোগাযোগ চলছে শ্রদ্ধেয় তোয়াব ভাই এবং আমান ভাইয়ের সঙ্গে। (কূটনৈতিক রিপোর্টার, আমান উদ দৌল্লা)। অনেক রাতে এলো লাশ। পরদিন শনিবার গোটা শহর শোকাচ্ছন্ন। দোকান পাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক বীমা, স্কুল কলেজ অনেকটাই ফাঁকা। বোঝা গেল মোনাজাতউদ্দিনকে কতটাই ভালবাসতেন রংপুরের মানুষ। বেলা অনুমান ১২টায় তার বাড়ির বাড়ির সামনের লালকুঠি মসজিদে প্রথম জানাজা হলো তার। এরপর লাশ নিয়ে আসা হলো প্রেসক্লাব চত্ত¡রে সর্বস্তরের জনতার শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য। শ্রদ্ধায় যেন হাজারো মানুষের ঢল সেখানে। এর পর শুরু হলো শেষযাত্রা কেরামতিয়া মসজিদের উদ্দেশ্যে। বাদ জোহর অনুষ্ঠিত হলো জানাজা। পরে মুন্সিপাড়া কবরস্থানে দাফন। এর দু’দিন পর রংপুরবাসীর পক্ষ থেকে আহবান করা হলো শোক পালনের। তারিখটা মনে নেই। তবে নগরীর কাচারি বাজার থেকে শাপলা চত্ত¡র পর্যন্ত সড়কের দু’ধারে হাজার হাজার হাজার মানুষ। ঠিক বেলা ১১টায় নগরীর কয়েকটি পয়েন্টে মাইকে ভেসে এলো বাঁশির করুণ সুর। এ সময় সড়কে চলাচলরত সকল যানবাহন, রিকশা সাইকেল পথচারী সবাই ১০ মিনিটের জন্য নীরবতা পালন করলো চারণ সাংবাদিক মোনাজাতউদ্দিনকে শ্রদ্ধা জানাতে। একজন সাংবাদিকের জন্য দেশে এমন শ্রদ্ধা হয়তো সে সময় পর্যন্ত সেটাই প্রথম ছিল।

বাংলাদেশের সাংবাদিকতার ইতিহাসে মোনাজাতউদ্দিন একজন নিষ্ঠাবান ও নিবেদিতপ্রাণ সাংবাদিক, যার কর্ম-প্রেরণার শিকড় সঞ্চারিত ছিল গ্রামীণ গ্রামীণ সমাজ-জীবনের তলদেশ অবধি। পেশাগত কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নয়, স্বীয় সাধনা, বুদ্ধিমত্তা ও কর্মপদ্ধতি গুণে তিনি বিশেষ সুনাম অর্জন করেন। মফস্বল সাংবাদিকতার নামে যে উন্নাসিক মানসিকতা ছিল মানুষের মনে, তিনি তার একক প্রচেষ্টায় তার দুর করতে সক্ষম হন । বস্তুত মফস্বলের সংবাদও যে গুরুত্বের ভিত্তিতে সংবাদপত্রের প্রধান সংবাদ হতে পারে তার দৃষ্টান্ত-স্থাপক চারণ সাংবাদিক মোনাজাত হলেও বলতে লজ্জা ও দ্বিধা নেই যে, আজকের যুগের সংবাদপত্র, ইলেক্ট্রনিক, অনলাইন ভিত্তিক এবং সাংবাদিকদের সাংবাদিকতা দেখে তিনি লজ্জা-সঙ্কোচে হয়তো ছি: ছি: না করলেও তার স্বভাবসুলভ আচরণে নিশ্চুপ হয়েই বসে থাকতেন। আজকে তাঁর ২৪ তম মৃত্যুবার্ষিকীতে তার প্রতি জানাই অকৃত্রিম শ্রদ্ধা আর ভালবাসা।

লেখক : সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিককর্মী।

মন্তব্য করুন


 

Link copied