আর্কাইভ  শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ● ১৫ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

 width=
 
শিরোনাম: স্বাস্থ্যের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ফজলুল হক কারাগারে       কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা       লালমনিরহাটে পুকুরে জাল ফেলতেই জালে উঠে এলো যুবকের মরদেহ       কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা       রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা      

 width=
 

অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের পেসার শরিফুলের বাড়িতে উৎসবের আমেজ

মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০, দুপুর ১২:৫৪

বিশেষ প্রতিনিধি দেবীগঞ্জ(পঞ্চগড়) থেকে॥ অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী বাংলাদেশ দলের অন্যতম পেসার শরিফুল ইসলামের বাড়িতে চলছে উৎসবের আমেজ। আজ সোমবার(১০ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকেই পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার দন্ডপাল ইউনিয়নের নগরপাড়া এলাকায় শরিফুলের বাড়িতে ভিড় জমায় ক্রিকেট ভক্তরা। শুধু ক্রিকেট ভক্তই নয় প্রশাসনসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও শরিফুলের বাবা মা’কে শুভেচ্ছা জানাতে মিষ্টি ও ফুল নিয়ে ছুটে আসেন। অনুর্ধ্ব বিশ্বকাপ জয়ে বিশেষ নৈপুন্য দেখানো পঞ্চগড়ের দরিদ্র পরিবারের সন্তান শরিফুলের বাবা দুলাল মিয়া ও মা বুলবুলি বেগমকে মিষ্টি খাওয়ান দেবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রত্যয় হাসান, উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক চিশতী, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হাসনাত জামান চৌধুরী জর্জসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। এ সময় তারা শরিফুলের পরিবারকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। শরিফুল দেশে ফিরলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। ছেলের এমন বিজয়ে আনন্দে বাকরুদ্ধ শরিফুলের বাবা মা। আনন্দ প্রকাশ করতে গিয়ে কেঁদে ফেলছেন তারা। জীবনের এতো বড় আনন্দ তাদের জীবনে আর আসেনি। টানাপোড়েনের সংসারে শরিফুল দেশের জন্য যে সম্মান এনে দিয়েছেন তাতে ভরে গেছে দরিদ্র বাবা মায়ের বুক। তাদের প্রত্যাশা ছেলে তাদের জাতীয় দলের হয়ে এভাবেই দেশের বিজয় এনে দিবে। পঞ্চগড়ের এই বাঁ হাতি পেসার ম্যাচে একটি মেডেন ওভারসহ ৩১ রান খরচ করে দুটি উইকেট নিয়েছেন। এ ছাড়া দুটি ক্যাচ নিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে। সরাসরি থ্রোতে একটি রানআউটও করেছেন। এই বিশ^কাপের প্রতিটি ম্যাচেই বাঁ হাতের নৈপুণ্য দেখিয়ে পঞ্চগড়ের সন্তান শরিফুল। দেশের একবারে সর্ব উত্তরের এক জেলা পঞ্চগড়। সেখানকার অনুন্নত এক গ্রামে শরিফুল ইসলাম নামের এক কিশোর প্রায়ই গভীর মনোযোগে পুকুরে মাছ শিকার করে দিন কাটাত। কারণ একটাই, নিজের ধৈর্য বাড়ানো। যত সময় বড়শির পেছনে দেয়া যাবে, ততই বড় মাছ ধরা পড়ার সম্ভাবনা বাড়বে। একইসঙ্গে বাড়বে ধৈর্য। বলা হচ্ছে অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পেস আক্রমণের প্রধান কান্ডারি শরিফুল ইসলামের গল্প। বর্তমানে এই দলের যে কয়জনকে জাতীয় দলের ভবিষ্যৎ ভাবা হচ্ছে তাদেরই একজন এই বাঁহাতি পেসার। লম্বা গড়নের কিশোরটি যেমন একই জায়গায় টানা বল ফেলে ব্যাটসম্যানকে বিরক্ত করতে ওস্তাদ, তেমনি বাউন্সারে প্রতিপকে কুপোকাত করতেও বেশ পারদর্শী। সম্প্রতি নিজের উঠে আসার গল্প জানিয়েছেন শরিফুল ইসলাম। ক্রিকেটার হওয়ার ভাবনা কিংবা ভবিষ্যৎ চিন্তা, কোনোটাই নাকি ছিল না শরিফুলের মনোজগতে। সর্বপ্রথম স্থানীয় এক ক্রিকেট টুর্নামেন্টে টেপ টেনিসে তার বল করা দেখে মুগ্ধ হন রাজশাহীর স্বনামধন্য কোচ আলমগীর কবির। তার ডাকেই দিনাজপুর থেকে রাজশাহীতে আসেন এই বোলার। সালটা তখন ২০১৬। উঠে আসার কৃতিত্ব কোচকে দিতে কার্পণ্যবোধ করেননি শরিফুল, ‘সমস্ত কৃতিত্ব আলমগীর কবির স্যারের। তিনিই আমাকে দিনাজপুর থেকে রাজশাহীতে নিয়ে আসেন। কিন্তু আমার খেলার মতো কোনো সরঞ্জাম ছিল না। তিনিই আমার হাতে ভারত থেকে আনা নাইকির একজোড়া নতুন বুট তুলে দেন। সকালে শুধু আমাকে নিয়েই একটা আলাদা প্র্যাকটিস সেশন রাখতেন। বিকেল বেলা যত্ন নিতেন নিজের সন্তানের মতো। এ পেসার যোগ করেন, ‘স্যারের একাডেমিতেই আস্তে আস্তে আমার উন্নতি ঘটতে থাকে, খুব দ্রুত ডাক আসে রাজশাহীর বয়সভিত্তিক দলে। পরে ঢাকায় তৃতীয় বিভাগের দলে সুযোগ পাই, ২০১৭ সালে খেলি ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে। প্রিমিয়ার লিগের সেই আসরেই নিজেকে চেনান শরিফুল ইসলাম। মাত্র ৮ ম্যাচে ১৭ উইকেট নিয়ে হন আসরের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী। সেই সাফল্যে বিপিএল ও বাংলাদেশ ‘এ’ দলে সুযোগ পেয়ে যান। নিজের এগিয়ে যাওয়ার গল্প বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি আমার সবচেয়ে সেরা উইকেটটা পেয়েছিলাম বাংলাদেশ এ-দলের হয়ে। আমরা শ্রীলংকা এ-দলের বিপে খেলছিলাম। উইকেটে ছিল থিসারা পেরেরা। সে সবার বলেই পেটাচ্ছিল। আমি ভেবে-চিন্তে একটা কাটার দিলাম, সে বোল্ড হয়ে গেল। আমরা শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা জিতেছিলাম।’ বিপিএলে খুলনা টাইটান্সের জার্সিতে অভিষেক হয় শরিফুলের। সেখানে অভিজ্ঞ বিদেশী ক্রিকেটারদের থেকে যখন যেটুকু পেরেছেন শেখার চেষ্টা করেছেন। সেই স্মৃতি রোমন্থন করে বলতে থাকেন, ‘খুলনা টাইটান্সে অনেকটা সময় কাটিয়েছি কার্লোস ব্র্যাথওয়েট ও ডেভিড মালানের সঙ্গে। তাদের কাছে যতটুকু সম্ভব জানার চেষ্টা করতাম। ব্র্যাথওয়েটের কাছে জানতে চেয়েছিলাম কীভাবে নিজের সেরাটা দেয়া যায়। সেদিন আমাকে তিনি যে উত্তরটা দিয়েছিলেন, সেটা কোনোদিনই ভুলতে পারবো না। তিনি বলেছিলেন, নিজের আত্মবিশ্বাসটাই সব সাফল্যের চাবিকাঠি। তুমি যদি নিজে আত্মবিশ্বাসী হও, তবে ব্যাটসম্যানের মনোভাবটা পড়া তোমার জন্য সহজ হবে। যদি তুমি ভয় পাও, যতই ভালো হও না কেনো সাফল্য পাবে না।’ একটা সময় বাংলাদেশের খেলা দেখার জন্য ১২ মিনিট সাইকেল চালিয়ে প্রতিবেশীর বাড়ি যেতেন শরিফুল। অভাবের সংসারে সারাদিনে এক বেলা পান্তাভাতের সঙ্গে লবণ-পেঁয়াজ মাখিয়ে খেয়েছেন। এত কষ্টের পরেও চালিয়ে গেছেন অনুশীলন। আজ সেই শরিফুল খেলার টাকায় গরুর ফার্ম করে দিয়েছেন বাবাকে, পঞ্চগড়ে বানাচ্ছেন নতুন বাড়ি। দেশের আর দশটা পরিবারের মতোই শরিফুলের পরিবারেরও ইচ্ছে ছিল না ছেলে ক্রিকেটার হবে। তাদের কাছে এটা ছিল আকাশকুসুম স্বপ্ন দেখার মতো, ‘আমার বাবা-মা চাইতেন না আমি ক্রিকেটার হই। তারা বলতেন, তুমি পারবে না। প্রথম ২-৩ মাস তারা আমাকে কোনো সাহায্যই করেননি, কেবলমাত্র আমার ভাই ছাড়া। আমার ভাই আমাকে বলেছিলেন, দরকার হলে গায়ের রক্ত বিক্রি করে তোকে খেলাবো। চিন্তা করিস না। এরপর আবাহনীর হয়ে ৪ উইকেট পাওয়ার পর টিভিতে একদিন বাবা-মা আমার সাাৎকার দেখতে পান। তখনই তারা প্রথম উপলব্ধি করেন যে, বড়কিছু হওয়ার সামর্থ্য আমার আছে।’ ভালো পেস বোলিংয়ের পেছনে জেলা পর্যায়ে ভলিবল খেলার অভিজ্ঞতাকে মূল কারিগর মনে করেন শরিফুল। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘ভলিবল খেলার কারণে আমি লাফিয়ে বল ডেলিভারি দিতে পারি। কাঁধ থেকে যে শক্তি আসে তার পেছনে আসল রহস্য ভলিবল।’ পছন্দের ক্রিকেটারের প্রশ্নে শরিফুল সোজা জানিয়ে দেন অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্কের কথা। তবে বাংলাদেশিদের মধ্যে মুস্তাফিজুর রহমানকে আদর্শ মানেন তিনি, ‘মোস্তাফিজ ভাইকে দেখে আমার মনে হয়েছিল তার মতো ঢ্যাঙ্গা স্বাস্থ্যের কেউ যদি পেস বোলার হতে পারে, আমি পারবো না কেন? যখন তার সঙ্গে প্রথম দেখা হয়, জিজ্ঞেস করেছিলাম, কঠিন সময়ে আপনি কী করেন? তিনি বলেছিলেন, খারাপ সময়ে অনেকে অনেক কিছু বলবে। সময়টাতে তোকে যে টেনে তুলতে পারবে সে হল আয়নার ওপাশে দাঁড়ানো মানুষটা!’ বাংলাদেশে কোয়ালিটি পেস বোলারের সংকট দীর্ঘদিনের। মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা ও মুস্তাফিজ ছাড়া আর কেউই সেভাবে দীর্ঘসময় জাতীয় দলে থিতু হতে পারেননি। তবে বয়সভিত্তিক ও ঘরোয়া ক্রিকেটে শরিফুল যে ঝলক দেখিয়েছেন সেটা জাতীয় দলে এসে পুনরাবৃত্তি করতে পারলে বাংলাদেশ একজন পেস বোলিং রত্ন পেতে যাচ্ছে সেটা বলাই যায়।

মন্তব্য করুন


 

Link copied