বিশেষ প্রতিনিধি॥ শারিরিক নির্যাতন সহ শ্লীলতাহানীর অভিযোগ এনে নীলফামারীর ডোমার উপজেলার ভোগডাবুড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান একরামুল হক সহ ৭ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছে ঘটনার শিকার গৃহবধুর স্বামী বাচ্চা মিয়া। ওই মামলায় পুলিশ রতন (৩২) নামের এক আসামীকে গ্রেফতার করেছে। সোমবার(৮ মার্চ/২০২০) এ ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে তার বাহিনীর সদস্যরা বিক্ষুদ্ধ হয়ে দুপুরে ইউনিয়নের চিলাহাটি বাজারে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিলে পুলিশ উপস্থিতি টের পেয়ে আসামীরা পালিয়ে যায়। নির্যাতনের শিকার ওই গৃহবধু ডোমার উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যান বাহিনীর এমন ঘটনায় এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে ইউপি চেয়ারম্যান সহ অপর আসামীদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচার দাবি করেছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ ইউপি চেয়ারম্যানের বাহিনীর অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছি। তারা একটার পর একটা কথিত ঘটনা সাজিয়ে সাধারন মানুষজনকে হয়রানী করছে ও কথিত বিচারের নামে মোটা অংকের টাকা জরিমানা করে হাতিয়ে নিচ্ছে। এমন ঘটনার শিকার এলাকার গৃহবধু রমিজা ও তার চাচাতো ভাই ইব্রাহিম(৭০)।
ডোমার থানায় মামলা সুত্রে জানা যায়, উপজেলার ভোগডাবুড়ী ইউনিয়নের গোসাইগঞ্জ ডাঙ্গা পাড়া গ্রামে বাচ্চা মিয়া (৫০) তার স্ত্রী রমিছা বেগম (৫০) মেয়ে কে রেখে বড় মেয়ে জামাইয়ের বাড়ী ঢাকায় যায়। ঘটনার দিন ৬ই মার্চ সন্ধ্যায় রমিছা চাচাতো ভাই ডাঙ্গাপাড়া আদর্শ গ্রামের মৃত আব্দুলের ছেলে ইব্রাহীম (৭০) ছোট বোনের বাড়িতে গিয়ে বাজার খরচ দিয়ে নিজবাড়িতে ফেরার পথে এলাকার ইউপি চেয়ারম্যানের বাহিনীর সদস্যরা ইব্রাহিমকে আটক করে রমিছার সঙ্গে অনৈতিক সর্ম্পকের মিথ্যা অপবাদ দিয়ে মারধর করতে থাকে। পরে ইউপি চেয়ারম্যান ঘটনা স্থলে এসে ইব্রাহীমের সাথে রমিছার অবৈধ সম্পর্ক আছে মর্মে রমিছা ও তার চাচাতো ভাই বৃদ্ধ ইব্রাহিমের কাছে জোড়পূর্বক স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে রমিছাকে বেধরক মারপিট ও মাটিতে থুতু ফেলে পূনরায় তা চাটিয়ে শাস্তি দেয়। এরপর নন জুডিশিয়াল ১৫০ টাকা মূল্যের সাদা ষ্ট্যাম্পে জোর পূর্বক বৃদ্ধ ইব্রাহীম, রমিছা ও তার মেয়ে রানী’র কাছ থেকে স্বাক্ষর নেয় ও এক লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করে। টাকা দিতে অস্বীকার হলে ইউপি চেয়ারম্যান বৃদ্ধ ইব্রাহীমের বাড়ির পালিত একটি ৪৫ হাজার টাকা মূল্যের একটি গরু লুট করে নিয়ে যায়। পরদিন ইউপি চেয়ারম্যান আমবাড়ি হাটে গরুটি বিক্রি করে গরু বিক্রির টাকা পকেস্থ করে।
রমিছার স্বামী বাচ্চা মিয়া খবর পেয়ে পরদিন ঢাকা থেকে বাড়ীতে এসে এলাকাবাসীর কাছে ঘটনা শুনে ইউপি চেয়ারম্যান একরামুল হককে প্রধান আসামী করে ৭ জনের বিরুদ্ধে নারী,শিশু আইনে ১০ ধারায় ততসহ দন্ডবিধি আইনে ডোমার থানায় মামলা দায়ের করে।
এই মামলায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে রবিবার রাতে আদর্শ গ্রামের মঙ্গলের ছেলে রতনকে (৩২) গ্রেফতার করে সোমবার আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠায়। মামলা গ্রহন সহ আসামী গ্রেফতারে ইউপি চেয়ারম্যান ও তার বাহিনী পুলিশ সহ মামলার বাদীর উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। ইউপি চেয়ারম্যানের হুমকীর কারনে মামলার বাদী বাড়ি ছাড়া হয়ে আতœগোপনে রয়েছে। অপর দিকে সোমবার ইউপি চেয়ারম্যানের বাহিনীর লোকজন সোমবার দুপুরে চিলাহাটি বাজারে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করার চেষ্টা চালায়। খবর পেয়ে পুলিশ ইউপি চেয়ারম্যান সহ অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতারে অভিযানে গেলে আসামীরা পালিয়ে যায়। চিলাহাটি বাজারে পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
এ ব্যাপারে ভোগডাবুড়ী ইউপি চেয়ারম্যান একরামুল হকের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। এমনকি তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
ডোমার থানার অফিসার ইনচার্জ মোস্তাফিজার রহমান মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে সাংবাদিকদের বলেন,এজাহারভুক্ত ৭ নম্বর আসামী গ্রেফতার হয়েছে। বাকী আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।