বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৩, দুপুর ১০:৪৬
ডেস্ক: উত্তাপ-উন্মাদনা নেই ভোটের মাঠে। নেই উৎসব ও আনন্দমূখরতা। ভোটের প্রয়োজন পড়ছেনা ১৫৪ আসনে। এরই মধ্যে দেশের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ হারিয়েছেন ভোটাধিকার। তবে রাজনীতির মাঠে ভীতি ও সহিংসতার উত্তাপ আছে। আছে পুড়ে ঝলসে যাওয়া ও লাশ হওয়ার আশঙ্কা। নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও প্রধান বিরোধীদল বিএনপির নেতৃত্বাধীন দুই জোটের পরস্পর বিরোধী অবস্থানের কারণে ভোটের মাঠ এবং রাজনীতির পথের চিত্রও দুই ধরণের। প্রথমত, জাতির প্রধান ভোট উৎসবে নেই প্রাণচাঞ্চল্য, উৎফুল্লতা, উৎসব ও উৎসাহের আমেজ। দ্বিতীয়তো, সরকার এবং বিরোধীদের একগুয়েমী কঠোর অবস্থানের কারণে গোটা জাতি অবরুদ্ধ হয়ে পড়ছে। অবরুদ্ধ হয়ে পড়ছে বাংলাদেশ। ফলে নির্বাচনী মাঠে নেই ভোটের হাওয়া। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে নিজেদেরকে সরিয়ে রেখেছে প্রধান বিরোধীদল বিএনপিসহ শরীকদলগুলো। এরই মধ্যে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে নির্বাচন থেকে নিজেদেরকে গুটিয়ে নেয় জাতীয় পার্টি। পঞ্চদশ সংশোধিত সংবিধানের আলোকে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্নে মাতোয়ারা আওয়ামী লীগ দুর্গম পথ পাড়ি দিতে চাইছে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী দশম সংসদ নির্বাচনের চূড়ান্ত দিন ধার্য করা হয় নতুন বছরের ৫ জানুয়ারি। নির্বাচন কমিশনের সূচি মতে ভোটের বাকি আছে মাত্র ১৮ দিন। ১৪৬ আসনে ভোটের আয়োজন নিয়ে কর্মব্যস্ত ও তৎপর হয়ে পড়ছে নির্বাচন কমিশন। তবে চারিদিকে নির্বাচনী ডামাডোল নেই। নেই উচ্ছ্বাস-আনন্দ। প্রত্যেকটি নির্বাচনকে ঘিরে গোটাজাতি মেতে ওঠেন অন্যরকম এক উৎসবে। বিশেষ করে সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সমগ্র দেশের মানুষ আনন্দমূখর হয়ে ওঠেন। দুঃখ, ক্লান্তি ও হতাশার শেকল ছিড়ে সবাই মাতেন ভোটের মাঠে। নানান হিসেব-নিকেশ নিয়ে ব্যস্ততার পরিমন্ডলে আবর্তিত হয়ে ওঠেন। ধণি-গরিব, ঋষি-মজুর, কামার-কুমোর, তাঁতি-ধোপা, আবালবৃদ্ধ বণিতাসহ সব শ্রেণী-পেশার মানুষ পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেয়ার জন্য ব্যকুল হয়ে ওঠেন। বিশেষ করে ভোটের আগের রাতে সবার মধ্যেই এক ধরণের উন্মাদনা কাজ করে। কখন ভোর হবে, কখন ভোট কেন্দ্রে যাবেন, কখন কাঙ্খিত ব্যক্তির প্রতিকে সীল দেবেন-এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। কোন পোশাক পরিধান করে ভোট কেন্দ্রে যাবেন-আগে থেকে এরকমটাও ভেবে রাখেন অনেকেই। চারিদিকেই ভোটের রব পড়ে যেতো। ভীন্ন এক আবহ তৈরি হয় গোটা দেশজুড়ে। না, সেই উৎসাহ গন্ডিতে পড়েছে নিরুৎসাহ ও নিরুত্তাপের হাতছানি। প্রধান বিরোধীদল বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট নির্বাচনে সামিল না হওয়ায় ফিকে হয়ে গেছে ভোটের উৎসাহ-আমেজ। শেষ মুহূর্তে এসে নাটকীয়ভাবে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নির্বাচনের মাঠ ছেড়ে দেয়ার ঘোষণা দিলে পরিস্থিতি আরো নাজুক হয়ে পড়ে। এরই মধ্যে ১৫৪ প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এসব আসনে প্রতিদ্বন্দ্বি কোনো প্রার্থী না থাকায় ফাকা মাঠে গোল দেন তারা। এখন তাদের বিজয় মুকুট পরার অপেক্ষা। ফলে ভোটাধিকার প্রয়োগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন দেশের বৃহৎ জহগোষ্ঠী। মোট আসনের থেকে অর্ধেকেরও বেশিতে ভোটের প্রয়োজন পড়বেনা। এ কারণে দেশের অর্ধেকেরও বেশি ভোটার তাদের ভোটাধিকার হারিয়ে ফেলেছেন। এসব সংসদীয় আসন এলাকায় ভোটের উত্তাল ঢেউ নেই। নেই পোস্টার, প্রচার ও প্রচারণা। সাধারণ মানুষের ভোটের দরকার হয়নি। হয়নি ব্যালট পেপারসহ আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া। তবুও তারা জনপ্রতিনিধি হিসেবে বসতে চলেছেন মহান সংসদে। এদিকে, চলমান প্রেক্ষিতে সঙ্কট ক্রমেই বাড়ছে। বাড়ছে সংঘাত-সহিংসতা। রাজনৈতিক সঙ্কটে গোটাজাতি যখন উদ্বিগ্ন, তখন ঘুরেফিরে হতাশার খবরই আসছে রাজনৈতিক নীতিনির্ধারণী মহল থেকে। সংবিধান অনুযায়ীই অনুষ্ঠিত হবে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন-এ সিদ্ধান্তে অনড় আওয়ামী লীগ। এ লক্ষ্যে তারা রয়েছে হার্ডলাইনে। পক্ষান্তরে বৈপরিত্য অবস্থানে কঠোর প্রধান বিরোধীদল বিএনপি। তারা চাইছে-নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন। মূলতঃ দুই দল দুই মেরুতে অনড় অবস্থানে থাকার কারণে মাশুল দিচ্ছেন সাধারণ গনগণ। ক্ষমতাকেন্দ্রীক রাজনীতির বলিও হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
মন্তব্য করুন
আলোচিত’র আরো খবর
সংশ্লিষ্ট
স্মৃতিসৌধের পরিদর্শন বইয়ে যা লিখলেন প্রধানমন্ত্রী
আত্মসমর্পণ ছাড়া উপায় নেই এমভি আবদুল্লাহর জলদস্যুদের
যেভাবে পাওয়া যাবে ঈদে টানা ১০ দিনের ছুটি
তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত প্রথম-দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা হবে না, মূল্যায়ন নতুন পদ্ধতিতে