আর্কাইভ  শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ● ১৫ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

 width=
 
শিরোনাম: স্বাস্থ্যের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ফজলুল হক কারাগারে       কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা       লালমনিরহাটে পুকুরে জাল ফেলতেই জালে উঠে এলো যুবকের মরদেহ       কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা       রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা      

 width=
 

দিনাজপুরে অবৈধ ইটভাটার কড়াল গ্রাসে ফল-ফসল বিনষ্ট; বিপর্যস্ত পরিবেশ

সোমবার, ১৫ জুন ২০২০, সকাল ০৯:৩৮

অবৈধ ইটভাটা মেসার্স মা ব্রিক্স মেনুফ্যাকচারের নির্গত বিষাক্ত গ্যাসের কালো ধেয়ায় দিনাজপুরের বীরগঞ্জ পৌরসভার আদর্শ গ্রামের প্রায় ২১ একর জমির বোরো ধানের বিনষ্টসহ আম,লিচু ও ভুট্টা সহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়েছে। নিজপাড়া ইউনিয়নের ঢেপা ব্রীজ সংলগ্ন স্থানে অবৈধ ভাবে প্রতিষ্ঠিত ইটভাটা মেসার্স মা ব্রিক্স মেনুফ্যাকচার ইটভাটার উৎপাদন বন্ধ করেছে। এদিন তারা ভোর রাতের কোন এক সময়ের দিকে ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাস ছেড়ে দিলে আদর্শগ্রামের কয়েক কিলোমিটার এলাকায় কালো ধোয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে।স্থানীয় ২৫ জন কৃষকের লিখিত অভিযোগে ওই বিষাক্ত গ্যাসের কালো ধোয়ায় তাদের প্রায় ১৬ একর জমির বোরো ধান সম্পন্ন জ্বলে গেছে, যেখান থেকে একমুঠো ধানও পাওয়া সম্ভব হবেনা। এছাড়াও ৩ একর জমির উপর থাকা একটি আম বাগানের সম্পন্ন আমের গোঁড়া পচে যাওয়ায় সমস্ত আম ঝড়ে যাচ্ছে। ক্ষতি হয়েছে গ্রামটিতে থাকা ভুট্টা ক্ষেত এবং লিচু বাগানও। এখন সেখানে শুধুই কৃষকের আহাজারি, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক-কৃষাণীর আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠছে আদর্শ গ্রামটি। ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাস ছেড়ে দিয়ে তাদের সর্বস্বান্ত করেছেন এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর। উঠতি বোরো ধান,ভুট্টা,আম আর লিচু’র ক্ষতি হওয়ায় বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ।

ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় প্রশাসনের কাছে, অবৈধ ইটভাটার মালিকের কাছে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ আদায়সহ সরকারী অনুমোদনহীন এধরণের ইটভাটাকে স্থায়ীভাবে বন্ধের দাবী জানিয়ে অভিযোগ দিয়েছেন। অথচ এ ঘটনার পরও বীর-দর্পে রয়েছেন ইট ভাটার মালিক হাজী মো: সমশের আলী। ভাটার বৈধ কোন কাগজপত্র নেই স্বীকার করে তিনি বলছেন, তার ইট ভাটায় এ ধরণের কোন ঘটনা এ আগে ঘটেনি। তিনি প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ইটভাটা চালিয়ে আসছেন বলে জানিয়েছেন এমবিএম ইটভাটা স্বত্তাধিকারী মোঃ শমশের আলী।

স্থানীয় বীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইয়ামিন হোসেন জানিয়েছেন,অভিযোগ পেয়ে বিষটি তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শুধু এই ইট ভাটা নয়,দিনাজপুরে আবাদি জমি,আবাসিক এলাকা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঝে গড়ে উঠেছে ছোট বড় প্রায় তিন শতাধিক ইটভাটা। আর এসব ইটভাটায় ইট তৈরীর জন্য কাটা হচ্ছে, জমির উপরিভাগের মাটি। শ্রমিকেরা এসব মাটি কেটে ট্রাক্টরে করে ইট ভাটায় নিয়ে যাচ্ছে। এই মাটি পুড়িয়ে তৈরী করা হচ্ছে ইট। আর জমির উপরিভাগের মাটি কাটার ফলে জমির উপরিভাগে ৪ থেকে ৬ ইঞ্চির মধ্যে থাকা জমির খাদ্য-কণা ও জৈব উপাদান নষ্ট হচ্ছে। ফলে ওইসব জমিতে যে ফসল আবাদ হয় তার উৎপাদন কমে যাচ্ছে। এছাড়াও জমির উপরিভাগ কাটার ফলে জমি নিচু হয়ে যাচ্ছে। জমির মাটি কাটলে আবাদ কমে যাওয়ার কথা স্বীকার করেছে জমির মালিকরা । দিনাজপুরে ফসলি জমি ধ্বংস করে তৈরি হচ্ছে ইট। দিনাজপুরের ১৩টি উপজেলায় ইটভাটায় ইট তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে ফসলি জমির উর্বর ও সারযুক্ত উপরিভাগের মাটি। এতে জমির উর্বরতা হ্রাস পাচ্ছে। জমি হারিয়ে ফেলছে ফসলের উৎপাদন শক্তি । সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ ইটভাটা গড়ে উঠেছে আবাদি জমির উপর। আর এসব ইটভাটায় ইট তৈরির জন্য কেটে নেয়া হচ্ছে জমির উপরিভাগের মাটি। জমির মালিকরা মাটির গুনাগুণ সম্পর্কে ধারণা না থাকায় টাকার আশায় এসব মাটি বিক্রি করে দিচ্ছে ইটভাটা মালিকদের কাছে। উপরিভাগের মাটি কেটে ফেললে আবাদ ভালো হবে-জমির মালিকদের এমন বুঝিয়ে ইটভাটা মালিকরা দালালের মাধ্যমে এসব মাটি কিনে নিচ্ছে বলছেন এলাকাবাসীরা।

এক থেকে দেড় ফুট মাটি কেটে নেয়ার শর্তে প্রতি বিঘা প্রতি জমির মালিককে দেয়া হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। বিরল উপজেলার সোহরাব হোসেন জানান, তিনি এক ফুট গভীরতায় মাটি কেটে নেয়ার শর্তে ইটভাটা মালিকের কাছে এক একর জমির মাটি বিক্রি করেছেন ৫০ হাজার টাকায়।

ইটভাটা মালিকদের কাছে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিটি ইটভাটায় বছরে ৩০-৩৫ লাখ ইট উৎপাদিত হয়। দিনাজপুর ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক বকুস জানান, ১ হাজার বর্গফুট মাটি দিয়ে ইট তৈরি হয় ৮ হাজার ৫’শ। এর জন্য ১’শ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ১০ ফুট প্রস্থ আকারে জমির মাটির কাটার প্রয়োজন হয়। এই হিসেব অনুযায়ী ৩০ লাখ ইট তৈরির জন্য ৩ লাখ ৫৩ হাজার বর্গফুট মাটির প্রয়োজন হয়। এতে প্রতিবছর প্রায় ৬ কোটি বর্গফুট মাটির প্রয়োজন হয় জেলার ১৭৪টি ইটভাটায় ইট তৈরির জন্য। আরেক হিসেব অনুযায়ী একেকটি ইটভাটায় প্রতিবছর ইট তৈরির জন্য ১২ থেকে ১৫ একর জমির উপরিভাগের মাটি কাটতে হয়। এতে জেলার ১’শ ৭৪টি ইটভাটার প্রতি বছর কাটতে হয় প্রায় ২ হাজার ৫’শ একর জমির উপরিভাগের মাটি।

পরিবেশবিদ আবুল কালাম আজাদ জানান, সরকারি আইন অনুযায়ী একটি ইটভাটার জন্য মোট ২ একর মাটি কাটার অনুমতি রয়েছে। কিন্তু ইটভাটা মালিকরা তা উপেক্ষা করে প্রতিটি ভাটায় ১২ থেকে ১৫ একর আবাদি জমির মাটি কেটে নিচ্ছে।

দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মোঃ শাহাদৎ হোসেন খান লিখন জানান,উদ্ভিদের জন্য যা পুষ্টির প্রয়োজন, তা থাকে মাটির উপরিভাগে।তিনি বলেন, মাটির উপরিভাগের ৮ ইঞ্চির মধ্যে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, বোরন, নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সালফার, জিংকসহ ১৩ ধরনের পদার্থ থাকে। যা উদ্ভিদ বা ফসলের জন্য অতি প্রয়োজনীয়। কিন্তু জমির উপরিভাগের মাটি কেটে নেয়ার ফলে এসব পদার্থ চলে যাচ্ছে ইটভাটায়।এটি ফসলের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এসব ইট ভাটার ফলে এক দিকে যেমন আবাদি জমির উর্বরা শক্তি হারাচ্ছে অপরদিকে উজাড় হচ্ছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল। ইট ভাটার বিষাক্ত কালো ধোয়ায় ফসল ও গাছ-গাছালি বিনষ্ট হচ্ছে। ইটভাটার বিরূপ প্রভাবে বিপর্যয় ঘটছে পরিবেশের।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাটির উপরিভাগে যে গুরুত্বপূর্ণ জৈব পদার্থ থাকে তা নীচের মাটিতে থাকে না। জমির উপরিভাগের মাটি কেটে ফেলা হলে আগামী ২০ বছরেও সেই জমির প্রয়োজনীয় জৈব পদার্থের ঘাটতি পূরণ হবে না।

সরকারি কোন নিয়ম-নিতির তোয়াক্কা না করে ৩ ফসলী জমি,সংরক্ষিত বনাঞ্চল,আবাসিক এলাকা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাঝেই গড়ে উঠেছে ইট ভাটা। এসব ইট ভাটার নেই কোন পরিবেশের ছাড়পত্র বা লাইসেন্স। তার পরও বিভিন্ন কৌশলে তা চলছে। উচ্চ আদালতের মিথ্যা আদেশ দেখিয়ে ইটভাটা চালানোর অভিযোগে প্রায় অর্ধশত ইটভাটার মালিক জেল-হাজতও খেটেছেন। মামলারও চলছে বেশ কয়েকজন ইট ভাটা মালিকের বিরুদ্ধে। ইতোমধ্যে বন্ধ করে দেয়াসহ ইচভাটার মালিককে জরিমানাও করেছে প্রশাসন। প্রশাসন এসব অবৈধ ইট ভাটার বিরুদ্ধে কঠোর হস্তক্ষেপ নিচ্ছেন বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. মিজানুর রহমান। তিনি জানান,ইতোমধ্যে এ কারণে তারা বেশ কয়েকটি ভাটায় অভিযান চালিয়ে জরিমানা করেছেন। বন্ধ করে দিয়েছেন বেশ কয়েকটি ভাটা।

কিন্তু সরজমিনে ঘুরে বাস্তবে মিলেছে এর ভিন্ন চিত্র। যেসব ভাটা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সেই ভাটাগুলো চলছে, জোরে শোরে।

দিনাজপুরের বীরগঞ্জ পৌরসভার আলোচিত অবৈধ ইটভাটা মেসার্স মা ব্রিক্স মেনুফ্যাকচারের নির্গত বিষাক্ত গ্যাসের কালো ধেয়ায় ওই এলাকা আদর্শ গ্রামের প্রায় ২১ একর জমির বোরো ধানের বিনষ্টসহ আম,লিচু ও ভুট্টা সহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়েছে। সেই ইট ভাটাটি পরিবেশ অধিদপ্তর প্রায় ৫ মাস আগে জরিমানা করে বন্ধ করে দেয়। কিন্তু, সেই ভাটা আবার কিভাবে চালু করে ভাটার বিষাক্ত গ্যাস ও কালো ধোয়ায় আম-লিচু’র বাগান,গাছ-গাছালি এবং বোরো ও ভুট্টাসহ ফললের ব্যাপক ক্ষতি করেছে ? এ প্রশ্ন সচেতন মহলের। এ ঘটনার পর পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়েছে। কিন্তু,তারা ওই অবৈধ ভাটা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নিয়েছেন ? সবকিছুই অন্ধকারে রয়ে যাচ্ছে । অবৈধ অর্থ লেন দেনের কাছে সব অবৈধ ইট ভাটা বৈধতায় রূপ পাচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর তাদের বিরুদ্ধে নিচ্ছে না কোন পদক্ষেপ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, অবৈধ ইট ভাটার কড়াল গ্রাসে বিনষ্ট হচ্ছে ফসলী জমি,বিপর্যস্ত হচ্ছে পরিবেশ। তাই,ফসলি জমি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এসব অবৈধ ইট ভাটা বন্ধে স্থানীয় প্রশাসন কঠোর হস্তক্ষেপ নেবেন এমনটাই প্রত্যাশা করেছেন পরিবেশবিদ এবং কৃষি বিজ্ঞানীরা ।

মন্তব্য করুন


 

Link copied