রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার (২৬ জুন) করোনা সংক্রমণের ১১২তম দিন। এই সময়ে রংপুর বিভাগে দুই হাজার ৪৯৬ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রংপুরে—৮৩৫ জন, পঞ্চগড়ে ১৩২ জন, নীলফামারীতে ৩২৫ জন, লালমনিরহাটে ৮৮ জন, কুড়িগ্রামে ১২৯ জন, ঠাকুরগাঁওয়ে ১৯৬ জন, দিনাজপুরে ৫৫৫ জন এবং গাইবান্ধায় ২৩৬ জন রয়েছেন। সুস্থ হয়েছে এক হাজার ৩৫০ জন। আইসোলেশনে আছেন দুই হাজার ৪৯৬ জন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ১২৬ জন।
এ পর্যন্ত রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় মারা গেছেন ৪৬ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মারা গেছেন রংপুরে— ১৫ জন। এছাড়া পঞ্চগড়ে তিন জন, নীলফামারীতে ছয় জন, কুড়িগ্রামে একজন, লালমনিরহাটে একজন, ঠাকুরগাঁওয়ে দুই জন, দিনাজপুরে ১০ জন এবং গাইবান্ধায় আট জন রয়েছেন।
রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের একজন কর্মকর্তা জানান, রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় করোনা সংক্রমণের নমুনা পরীক্ষার জন্য মাত্র দু’টি পিসিআর ল্যাব আছে। এর একটি দিনাজপুরে—সেখানে দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় ও নীলফামারীর বাসিন্দাদের নমুনা পরীক্ষা হয়। অন্যটি রংপুরে। সেখানে রংপুর সিটি করপোরেশনসহ পুরো জেলা, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামের বাসিন্দাদের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। দুটি পিসিআর ল্যাবের ক্ষমতা—প্রতিদিন ১৮৮টি করে নমুন পরীক্ষা করতে সক্ষম। সোয়া কোটি মানুষের মধ্যে করোনা উপসর্গ নিয়ে আসাদের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে এই দু’টি ল্যাবে। ফলে প্রতিদিন শত শত মানুষ নমুনা পরীক্ষার জন্য বিভিন্ন দফতরে গিয়েও পরীক্ষা করাতে পারছেন না।
ওই কর্মকর্তা জানান, যেভাবে করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে রংপুর বিভাগের করোনা নমুনা পরীক্ষা করাতে ২৫ বছরেরও বেশি সময় লাগবে। ফলে এখন যে পরিমাণ করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। পিসিআর মেশিনের সংখ্যা বাড়ানো হলে এর সংখ্যা ১০ গুণ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আমিন আহাম্মেদ স্বীকার করেন মাত্র দু’টি পিসিআর ল্যাব দিয়ে কোনোভাবেই রংপুর বিভাগের নমুনা পরীক্ষা সম্ভব নয়। সে জন্য ল্যাবের সংখ্যা বাড়াতে হবে। আবার নমুনা নেওয়ার জন্য এখনও রংপুর নগরীতে কোনও বুথ খোলা হয়নি। ফলে রোগীদের নমুনা দেওয়ার ক্ষেত্রেও সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।
প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. কামরুজ্জামান তাজ জানান, প্রশাসনকে বলেও নমুনা পরীক্ষার বুথ স্থাপন করানো যায়নি। তাতেই আক্রান্তের সংখ্যা যে হারে বেড়েছে, সব ওয়ার্ডে বুথ স্থাপন করে নমুন সংগ্রহ করে পরীক্ষা করালে আক্রান্তের সংখ্যা কয়েকগুণ বাড়তে পারে।
রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. কামরুজ্জামান তাজ জানান, নগরীতে করোনা সংক্রমণের হার আশঙ্কাজন হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুক্রবার পর্যন্ত আক্রান্ত ৮৩৫ জনের মধ্যে ৭০০ জনেরও বেশি রংপুর সিটি করপোরেশন এলাকার। রংপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় ৩৩টি ওয়ার্ডে লোক সংখ্যা ১২ লাখ হলেও এখন পর্যন্ত সাড়ে চার হাজার মানুষ করোনা পরীক্ষা করাতে সক্ষম হয়েছেন।
এদিকে, রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রংপুর নগরীর ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে সবচেয়ে বেশি করোনা পজিটিভ রোগী রয়েছেন—সংখ্যা ১৩৫ জন। এ ছাড়া ৪ নম্বর ওয়ার্ডে ৫৩ জন, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে ৪৯ জন, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে ৩২ জন, ২০ নম্বর ওয়ার্ডে ২৬ জন, ২১ নম্বর ওয়ার্ডে ৫৬ জন এবং ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে ৩৪ জন রয়েছেন। তবে নগরীর ৮টি ওয়ার্ডে একজনও কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী এখও শনাক্ত হয়নি। আরও ৯টি ওয়ার্ডে আক্রান্তের সংখ্যা এক থেকে তিন জন।
এদিকে, জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশন কয়েক দফা সভা করে নগরীর কয়েকটি ওয়ার্ডকে রেড জোন ঘোষণা করলেও এখন পর্যন্ত লকডাউন করার কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশন পরস্পরবিরোধী কথা বলছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। জেলা প্রশাসক আসিব আহসান বলেছেন, সিটি করপোরেশন এলাকায় লকডাউন কার্যকর করার দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। তারপরেও রেডজোন এলাকা চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে আমাদের পক্ষ থেকে। অন্যদিকে সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলছেন, আমি প্রশাসনকে কঠোরভাবে লকডাউন কার্যকর করার কথা বলেছি। সব ধরনের সহায়তার কথাও বলেছি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নগরীর কোনও মার্কেট শপিং মলে সামাজিক দূরত্ব মানাতে নেই কোনও প্রতিরোধ ব্যবস্থা। একইভাবে নগরীতে যানবাহন চলাচলে কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই প্রশাসনের। নগরীর ব্যাংকগুলোতে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। নগরীর ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের সাত কর্মকর্তা আক্রান্ত হয়েছেন।