আর্কাইভ  শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ● ১৫ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

 width=
 
শিরোনাম: স্বাস্থ্যের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ফজলুল হক কারাগারে       কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা       লালমনিরহাটে পুকুরে জাল ফেলতেই জালে উঠে এলো যুবকের মরদেহ       কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা       রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা      

 width=
 

উত্তরবঙ্গের বানভাসি মানুষের দুর্ভোগের শেষ কোথায়?

মঙ্গলবার, ২১ জুলাই ২০২০, সকাল ০৯:১০

এমএ হানিফ

ফরিদের মত উত্তরবঙ্গের লাখ লাখ মানুষ আজ পানিবন্দী। জুনের শেষে শুরু হওয়া বন্যা বিশ দিনেরও বেশি সময় ধরে চলমান। প্রায় চার ভাগের তিনভাগ এলাকা পানির নীচে তলিয়ে গেছে? নষ্ট হয়ে গেছে একরের পর একর আবাদী জমির ফসল, মাছের ঘের। বানভাসি মানুষ বাড়ি ঘর ভিটে মাটি ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছে উঁচু জায়গায়। খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে একদম অমানবিক জীবন যাপন করছে তারা। সামান্য চিড়া মুড়ি খেয়ে দিন কাটাচ্ছে। কারও আবার সেই ব্যবস্থাও নেই।

প্রতিনিয়ত বন্যা, নদী ভাঙ্গন ও দারিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করে তাদের টিকে থাকতে হয় । ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা সহ বেশ কয়েকটি নদীর পানি এই অঞ্চলের মানুষের দুঃখের প্রধান কারণ। তিস্তা নদী নীলফামারী জেলা দিয়ে ও ব্রহ্মপুত্র নদী কুড়িগ্রাম জেলা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। নদীগুলোতে আর নাব্যতা নেই। তাই উজানের দেশে বেশি বৃষ্টি হলে ও ভারত পানি ছেড়ে দিলে এ অঞ্চলে বন্যা হয়। বর্ষাকালে তিস্তায় অথই পানি থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে দেখা যায় তিস্তা যেন এক বিস্তীর্ণ বালুচর। মাইলের পর মাইল পানি নাই। পানির অভাবে জমিতে সেচ ও কৃষি ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়; ফসল হয় না। ফলে বছরজুড়ে বন্যা ও ক্ষরায় এ অঞ্চলের মানুষের অভাব আর দারিদ্রতার সীমা থাকে না।

এবারের বন্যায় ইতোমধ্যে ১৮টি জেলা বন্যা কবলিত। প্রায় ২৩ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী। মারা গেছে ৮ জন। প্রায় ৪০ শতাংশ এলাকা পানিতে নিমজ্জিত। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের দেয়া তথ্যমতে চলমান বন্যা আরো ১০ থেকে ১৫ দিন স্থায়ী হতে পারে। এমনকি ২১ জুলাই থেকে উজানে বৃষ্টি বেড়ে ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তা অববাহিকায় পানি আবারো বেড়ে মাসের শেষ পর্যন্ত বন্যা থাকতে পারে। এমনটা হলে এবারের বন্যা একমাসের ঊর্ধ্বে স্থায়ী হবে।

দেশের বন্যার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, প্রতিবছর দেশের প্রায় ২৬,০০০ বর্গ কিলোমিটার (১৮%) অঞ্চল বন্যাকবলিত হয়। ব্যাপকভাবে বন্যা হলে প্রায় ৫৫% অঞ্চল বন্যার কবলে পড়ে। ১৯৯৮ সালে হয়েছিল দেশের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী বন্যা, যা দুই মাসের মত স্থায়ী ছিল। দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী এ বন্যায় প্রায় ৬৮ শতাংশ এলাকা পানিতে নিমজ্জিত হয়েছিল।

এখন দেশে ঘন ঘন বন্যা হচ্ছে। শুধু উত্তরাঞ্চলের নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোতে বছরে দুই থেকে চার বার বন্যা হচ্ছে। বাংলাদেশের বন্যার ধরণ ও পরিবর্তন নিয়ে স্কটল্যান্ডের ডান্ডি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক নন্দন মুখার্জীর ২০ বছরের গবেষণা থেকে জানা যায়, গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তা অববাহিকায় গড়ে তোলা প্রায় ৫০০টি বাঁধ, ব্যারাজ ও জল বিদ্যুত কেন্দ্র বিভিন্ন নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বাঁধাগ্রস্ত করছে। এগুলোর বেশির ভাগই ভারত, চীন ও নেপালে। তারা পানি ছেড়ে দিলে ও বেশি বৃষ্টি হলেই বাংলাদেশের নদ নদীতে প্রচুর পানি চলে আসে। (প্রথম আলো, ১৬ জুলাই, ২০২০)

বন্যা মোকাবেলায় সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও প্রয়োজন ও বাস্তবতার নিরীখে পর্যাপ্ত নয়। সরকার ইতোমধ্যে ১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ও ১০ হাজার ৭০০ টন খাদ্য সহায়তা দিয়েছে। কিন্তু প্রকৃত অবস্থা ও বাস্তবতা হচ্ছে উত্তরবঙ্গের বন্যা কবলিত অনেক অসহায় পরিবার এখনও সরকারি সাহায্য পায়নি। প্রতিবার সরকারি সাহায্যের পাশাপাশি বেসরকারি, ব্যক্তি উদ্যোগ ও বিভিন্ন সংগঠন থেকে ত্রাণ বিতরণ করা হয় কিন্তু এবার করোনা মহামারীর কারণে তেমন ত্রাণ বিতরণ করা হয়নি। ফলে বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ এখন চরমে।

ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসের মত প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকার সফল হলেও বন্যা মোকাবেলায় আরও বেশি পদক্ষেপ নেয়া দরকার। দেশের উপকূলবর্তী জনগোষ্ঠীর জন্য সাড়ে চার হাজারের বেশি আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ হলেও বন্যা প্রবণ এলাকায় তেমন আশ্রয় কেন্দ্র নেই। সম্প্রতি ৪২ জেলায় ৪২৩টি বহুমুখী আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে যার মধ্যে ১৫৩টি নির্মাণাধীন। কিন্তু এই আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণের ক্ষেত্রে বেশি বন্যা কবলিত এলাকার চেয়ে অপেক্ষাকৃত কম বন্যা কবলিত এলাকাকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। দেশের সবচেয়ে বন্যা কবলিত এলাকা রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটে যথাক্রমে ৪, ৮, ১২ ও ৯টি করে আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে। যদিও এখানে প্রতিবছর পানি বন্দী হয় প্রায় ৮ থেকে ১০ লাখ মানুষ। আর প্রায় ২০ থেকে ৩০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অন্যদিকে দেশের কম বন্যা প্রবণ এলাকা কিশোরগঞ্জ, কুমিল্লা, সুনামগঞ্জ, সিলেট ও নেত্রকোনায় যথাক্রমে ২৬, ২৫, ২৫, ২৩ ও ২০টি করে আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি নির্মাণ হচ্ছে চাঁদপুরে, ৩২টি।

কথায় বলে ক্ষুধার জ্বালা বড় জ্বালা। এই জ্বালার সঙ্গে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করছে উত্তরবঙ্গের বানভাসি এসব মানুষ। সরকারের উচিত এই অঞ্চলের বন্যার্ত মানুষের জন্যে বরাদ্দ বাড়ানো। সেই সঙ্গে তাদের আবাসনের ব্যবস্থা করা, গবাদি পশু, বীজতলা, ভেঙ্গে যাওয়া সড়ক দ্রুত মেরামত করে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বাঁধ নির্মাণের ব্যবস্থা করা।

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের দারিদ্র্য, ক্ষুধা ও বৈষম্যমুক্ত সোনার বাংলা বিনির্মাণে উত্তরবঙ্গের এই অবলেহিত জনগোষ্ঠীর জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি ও বন্যার মত দুর্যোগ মোকাবেলার সক্ষমতা তৈরি হবে মুজিববর্ষে অত্র অঞ্চলের মানুষদের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। সরকারের সুনজর ছাড়া যা সম্ভব নয়।

লেখক : কথাসাহিত্যিক

mhanifcu@gmail.com

মন্তব্য করুন


 

Link copied