আর্কাইভ  বৃহস্পতিবার ● ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ● ৫ বৈশাখ ১৪৩১
আর্কাইভ   বৃহস্পতিবার ● ১৮ এপ্রিল ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: ডোমার ও ডিমলা উপজেলা নির্বাচনে ৩৫ জনের প্রার্থীতা বৈধ ॥ চেয়ারম্যান পদে ১২ জনের মধ্যে আওয়ামীলীগের ৭ জন প্রার্থী       নীলফামারীতে ঐতিহাসিক মুজিব নগর দিবস পালন       নীলফামারীতে ট্রেনে কাটা পড়ে যুবকের মৃত্যু       কিশোরীগঞ্জে পাঁচতলা ভবন থেকে পড়ে এক ব্যাক্তির রহস্যজনক মৃত্যু       উপজেলা নির্বাচনে জাপার প্রার্থী হতে চান না কেউ      

 width=
 

আমি আল্লাহকে সব বলে দিবো!

শুক্রবার, ৩ জানুয়ারী ২০১৪, সকাল ০৯:২৪

রফিকুজজামান রুমান

সিরিয়ার তিন বছরের এক যুদ্ধাহত শিশু মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ার ঠিক আগ মুহূর্তে বললো- ‘আমি আল্লাহকে সব বলে দিবো!’ শিশুটির রক্তমাখা ছবিটির দিকে তাকালেই বুঝে নেওয়া যায় সে আল্লাহর কাছে কী বলবে। সভ্যতার দ্বান্দ্বিক যুদ্ধ চলছে। এ দ্বন্দ্ব বিশ্বাসের, এ দ্বন্দ্ব আদর্শের। একটি আদর্শকে প্রত্যাখ্যান করতে হয় আর একটি আদর্শ দিয়ে। জোরের যুক্তি দিয়ে নয়; যুক্তির জোর দিয়ে। ক্ষমতা, শক্তি, জোর দিয়ে আদর্শকে মোকাবেলা করতে গেলেই দ্বন্দ্ব তীব্র হয়ে ওঠে। সেই দ্বান্দ্বিক যুদ্ধে আদর্শবানরা কখনো কখনো পরাজিত হলেও তাদের বিশ্বাসের পরাজয় ঘটে না। বিশ্বাসী তো সে-ই, যে  প্রয়োজনে জীবন দিয়েও প্রমাণ করতে পারে ‘আমার বিশ্বাসের প্রতি আমি অবিচল’।

সিরিয়ান এই শিশুটি সভ্যতা, যুদ্ধ, দ্বন্দ্ব, আদর্শ- এগুলো হয়তো পরিষ্কার করে বুঝতে পারেনি। কিন্তু তার ‘বিশ্বাস’ কতো প্রবল! ‘আমি আল্লাহকে সব বলে দিবো!’ সে নিশ্চিত সে আল্লাহর কাছে ফিরে যাচ্ছে। শুধু তা-ই নয়; আল্লাহর কাছে সে নালিশ করবে! যারা তাকে মেরেছে, শুধুমাত্র বিশ্বাসী হওয়ার কারণে যারা তাকে রক্তাক্ত করেছে, যারা তার আদর্শকে আদর্শ দিয়ে প্রতিহত না করে বুলেট ছুড়ে মেরেছে, তাদের বিরুদ্ধে সে আল্লাহর কাছে নালিশ করবে। এছাড়া আর কীইবা করার আছে ছোট্ট এই শিশুটির! পৃথিবীর কারো কাছে সে অভিযোগ করেনি। কারো কাছে সে তাকে মারার বিচার চায়নি।

সে জানে এবং সবাইকে জানিয়ে দিয়ে গেল- এই আদর্শহীন একচোখা বিবেকহীন বিশ্বের কাছে বিশ্বাসীদের কিছু চাইতে নেই। এ এমনই এক বিশ্ব যেখানে মানবাধিকারের ডেফিনিশনই নির্মিত হয় কিছু মানুষকে ‘অমানুষ’ বিবেচনা করে। এ এমনই এক বিশ্ব যেখানে শক্তিধররা/ক্ষমতাবানরা যা বলবে তা-ই সত্য। পূর্বতিমুরের যোদ্ধারা হয় স্বাধীনতাকামী, আর আরাকানের, কাশ্মীরের যোদ্ধারা জঙ্গী কিংবা বিচ্ছিন্নতাবাদী। কালো-সাদা’র তফাত ঘোছাতে ম্যান্ডেলার ভূমিকা ইতিহাস হয়ে থাকবে, সন্দেহ নেই। কিন্তু দেড় হাজার বছর আগে মুহাম্মদ (স) কালো বেলালকে প্রথম মুয়াজ্জিন বানিয়েছিলেন। বর্ণবাদ নিয়ে কোনো আলোচনায় এই উদাহরণ দিতে পারবেন না। দিলেই আপনি ‘ব্যাকডেটেড’ কিংবা মৌলবাদী/প্রতিক্রিয়াশীল। এমন একটি ন্যায়ভ্রষ্ট পৃথিবীর কাছে বিশ্বাসীদের কিছু চাওয়ার নেই। তাদের সমস্ত চাওয়া আল্লাহর কাছে।

বাংলাদেশেও বিশ্বাসের এই দ্বন্দ্ব ক্রিয়াশীল। এখানেও আদর্শকে পরাজিত করার জন্য আরেকটি আদর্শের পরিবর্তে বেছে নেওয়া হয় বুলেট বোমা অস্ত্র। একজন বিশ্বাসী মানুষ প্রশ্নহীনভাবে মেনে চলতে চাইবে আসমানী বাণীকে। তার কাছে কুরআনকে বিশ্বাস করার মানে হলো কুরআন নির্দেশিত পথে জীবন পরিচালনা করা। কুরআনের বিধানসমূহ জানা এবং সেগুলো মেনে চলা। এখন কুরআন যদি সমাজ বদলের কথা বলে, কুরআন যদি আল্লাহর সার্বভৌমত্বের কথা বলে, তাহলে তো সেই কাজটিই তাকে করতে হবে। যদি কেই মনে করে কুরআন এগুলো বলেনি, তাকে সেটা প্রমাণ করতে হবে। আর যদি কেউ বলে, সমাজ বদলের জন্য কুরআনের চেয়েও ভালো কোনো রেসিপি তার কাছে আছে, তাহলে সে সেই আদর্শের দিকে মানুষকে ডাকবে। মানুষ যেটি মেনে নেয়। আদর্শের জবাব আদর্শ দিয়ে। কিন্তু দু:খজনক হলো, বাংলাদেশে আদর্শের এই উদারতা নেই।

প্রায়ই পত্রিকায় দেখা যায়, জিহাদী বই উদ্ধার। এর মানে কী? জিহাদী বই কি কোনো নিষিদ্ধ বই? তাহলে সবার আগে তো কুরআন নিষিদ্ধ করতে হবে। কুরআনে শতাধিক জায়গায় জিহাদের কথা বলা হয়েছে। কোনো খ্রিষ্টান কিংবা হিন্দু ধর্মাবলম্বীকে যদি নিজ ধর্মের কোনো বইসহ পাওয়া যায়, তাকে কি গ্রেফতার করা হবে? মিডিয়া, সরকার, পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র এভাবে বিশ্বাসীদের উপর আঘাত হানছে। সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক হওয়ার পরেও, শুধুমাত্র বিশ্বাসের কারণে,  কোন সংগঠনকে বলা হচ্ছে জঙ্গী। তাহলে কী করা? ‘আমি আল্লাহকে সব বলে দিবো!’-এই হোক বিশ্বাসীদের শেষ আশ্রয়।

লেখক: বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও কলাম লেখক

মন্তব্য করুন


 

Link copied