সর্বোচ্চ প্রাণহানি গত বছর
নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতার পাশাপাশি গত বছর রাজনৈতিক সহিংসতায় সর্বোচ্চ সংখ্যক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য মতে, গত বছর জুড়ে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের রায় এবং বছরের শেষ দিকে একতরফা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা ও বিরোধী জোটের অবরোধ কর্মসূচির মতো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সারা বছরে ৫০৭ জন মারা গেছেন। আর আহত হয়েছেন ২২ হাজার ৪০৭ জন।
তবে প্রাণহানি নতুন নয়
২০০১ সালে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলেও তার আগে সহিংসতার ঘটনা ঘটে। ওই বছরের ১ অক্টোবর অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের আগের এক সপ্তাহে নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতায় ৩৮ জন প্রাণ হারান, আহত হন কমপক্ষে এক হাজার ৬৭২ জন। নির্বাচনী এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, পেশিশক্তি প্রদর্শনসহ নানা কারণে এই সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া ওই বছরজুড়ে রাজনৈতিক সহিংসতাও ছিল অনেক।
১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি একতরফা নির্বাচন করে বিএনপি। ওই বছরের ৭ জানুয়ারি থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত ২১ দিন হরতাল করেছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ৮ ও ৯ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ডাকলেও তা উপেক্ষা করেই মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার কাজ শেষ করে বিএনপি। এরপর ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে সারা দেশে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ও নির্বাচন প্রতিহতের ঘোষণা দেয় আওয়ামী লীগ। তারপরও নির্বাচন করে বিএনপি। এরপর শুরু হয় অসহযোগ। টানা অসহযোগের পর ১৯৯৬ সালের ২৬ মার্চ খালেদা জিয়া সংসদে নির্দলীয় সরকারের বিল পাসের পর অসহযোগ আন্দোলন শেষ হয়। টানা এ আন্দোলন চললেও ১৯৯৬ সালে রাজনৈতিক সহিংসতা এত ভয়াবহ ছিল না। ওই এক বছরে রাজনৈতিক সহিংসতায় মারা যান ৪৯ জন। এর মধ্যে তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতায় মারা গেছেন মোট ৪১ জন।
‘নির্বাচনের আগে প্রাণহানি ঘটে'
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, 'দুঃখজনক হলেও সত্য যে বাংলাদেশের প্রতিটি সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক সহিংসতায় প্রাণহানি ঘটে। কিন্তু এটা খুব স্পষ্ট যে এবারের নির্বাচনের আগে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার-প্রক্রিয়া বানচালের জন্য জামায়াত-শিবির উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সারা দেশে বোমাবাজি ও পরিকল্পিত হত্যার মতো সহিংসতার ঘটনা ঘটাচ্ছে। এর সবকিছুকে রাজনৈতিক সহিংসতা বললে ঠিক বলা হবে না। তবে নির্বাচনের দিন এত বেশি প্রাণহানি অবশ্যই আমাদের উদ্বিগ্ন করে৷ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আরো বেশি সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। তাতে প্রাণহানি অনেক কমানো যেত।’