আর্কাইভ  শুক্রবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ● ৬ বৈশাখ ১৪৩১
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: পলাশবাড়ীতে আসামির ছুরিকাঘাতে বাদীর মৃত্যু, গ্রেফতার ১       মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের সন্তান-স্বজনের ভোটে না দাঁড়ানোর নির্দেশ       ভোজ্যতেলের দাম বাড়ল, খোলা তেলে সুখবর       বিএনপি নেতা সোহেলের নিঃশর্ত মুক্তি দাবিতে রংপুরে  মানববন্ধন ও সমাবেশ        খরার ঝুঁকিতে রংপুর অঞ্চল      

 width=
 

নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতায় প্রাণহানির নতুন রেকর্ড

সোমবার, ৬ জানুয়ারী ২০১৪, দুপুর ১২:৫৪

বাংলাদেশের দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করে তা প্রতিহতের ঘোষণা আগেই দিয়েছিল বিএনপিসহ ১৮ দল। কার্যত নভেম্বরে তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন প্রতিহতে মাঠে নামে তারা। তবে তাদের ঠেকাতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছিল সরকারও। কিন্তু তারপরও প্রাণহানি থামানো যায়নি বলে জানিয়েছে ডয়েচে ভেলে। গত বছরের ২৫ নভেম্বর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর দিন থেকে শনিবার পর্যন্ত বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিরোধীদলীয় জোট ছয় দফায় ২৬ দিন অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে। এই সময় সারা দেশে প্রাণ হারিয়েছেন ১২৩ জন। আর রবিবার নির্বাচনের দিন বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এতে নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৮ জন। সব মিলিয়ে এই নির্বাচনের জন্য প্রাণ দিতে হয়েছে কমপক্ষে ১৪১ জনকে। এত প্রাণহানি আগে ঘটেনি ১৯৯১ সালে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা শুরুর পর রবিবার পর্যন্ত ছয়টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে এবারের মতো এতো প্রাণহানির ঘটনা এর আগে আর কোনো নির্বাচনে ঘটেনি। ১৯৯৬ সালে প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে বাদ দিয়েই নির্বাচন করে বিএনপি। ওই বছর নির্বাচন ঘিরে প্রাণ হারান ৪১ জন। আর ২০০১ সালের নির্বাচন ঘিরে নিহত হয়েছিল ৩৮ জন। সবশেষ ২০০৮ সালের নির্বাচনে কোনো ধরনের সহিংসতাই হয়নি। কোনো প্রাণহানির খবরও পাওয়া যায়নি। এই নির্বাচনটি সেনা সমর্থিত সরকারের অধীনে হয়েছে। নির্বাচনে এতো প্রাণহানির পরও পুলিশের মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার ডয়চে ভেলেকে বলেন, 'কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও নির্বাচন ছিল শান্তিপূর্ণ।' 'তাহলে এত প্রাণহানি কেন?'- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'সবকিছু নির্বাচনের সঙ্গে মিলিয়ে ফেললে হবে না। শুধু নির্বাচন নয়, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে। এরজন্যও একটি মহল সন্ত্রাস করছে। এতেও বিচ্ছিন্নভাবে কিছু সহিংসতার ঘটনা ঘটছে৷' তবে সবকিছু মিলিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে বলে দাবি করেন পুলিশের মহাপরিদর্শক।

সর্বোচ্চ প্রাণহানি গত বছর নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতার পাশাপাশি গত বছর রাজনৈতিক সহিংসতায় সর্বোচ্চ সংখ্যক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য মতে, গত বছর জুড়ে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের রায় এবং বছরের শেষ দিকে একতরফা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা ও বিরোধী জোটের অবরোধ কর্মসূচির মতো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সারা বছরে ৫০৭ জন মারা গেছেন। আর আহত হয়েছেন ২২ হাজার ৪০৭ জন। তবে প্রাণহানি নতুন নয় ২০০১ সালে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলেও তার আগে সহিংসতার ঘটনা ঘটে। ওই বছরের ১ অক্টোবর অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের আগের এক সপ্তাহে নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতায় ৩৮ জন প্রাণ হারান, আহত হন কমপক্ষে এক হাজার ৬৭২ জন। নির্বাচনী এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, পেশিশক্তি প্রদর্শনসহ নানা কারণে এই সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া ওই বছরজুড়ে রাজনৈতিক সহিংসতাও ছিল অনেক। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি একতরফা নির্বাচন করে বিএনপি। ওই বছরের ৭ জানুয়ারি থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত ২১ দিন হরতাল করেছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ৮ ও ৯ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ডাকলেও তা উপেক্ষা করেই মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার কাজ শেষ করে বিএনপি। এরপর ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে সারা দেশে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ও নির্বাচন প্রতিহতের ঘোষণা দেয় আওয়ামী লীগ। তারপরও নির্বাচন করে বিএনপি। এরপর শুরু হয় অসহযোগ। টানা অসহযোগের পর ১৯৯৬ সালের ২৬ মার্চ খালেদা জিয়া সংসদে নির্দলীয় সরকারের বিল পাসের পর অসহযোগ আন্দোলন শেষ হয়। টানা এ আন্দোলন চললেও ১৯৯৬ সালে রাজনৈতিক সহিংসতা এত ভয়াবহ ছিল না। ওই এক বছরে রাজনৈতিক সহিংসতায় মারা যান ৪৯ জন। এর মধ্যে তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতায় মারা গেছেন মোট ৪১ জন। ‘নির্বাচনের আগে প্রাণহানি ঘটে' জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, 'দুঃখজনক হলেও সত্য যে বাংলাদেশের প্রতিটি সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক সহিংসতায় প্রাণহানি ঘটে। কিন্তু এটা খুব স্পষ্ট যে এবারের নির্বাচনের আগে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার-প্রক্রিয়া বানচালের জন্য জামায়াত-শিবির উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সারা দেশে বোমাবাজি ও পরিকল্পিত হত্যার মতো সহিংসতার ঘটনা ঘটাচ্ছে। এর সবকিছুকে রাজনৈতিক সহিংসতা বললে ঠিক বলা হবে না। তবে নির্বাচনের দিন এত বেশি প্রাণহানি অবশ্যই আমাদের উদ্বিগ্ন করে৷ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আরো বেশি সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। তাতে প্রাণহানি অনেক কমানো যেত।’

মন্তব্য করুন


 

Link copied