বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারী ২০১৪, দুপুর ১০:৩০
রাশেদ আজাদ
অপরদিকে একচাটিয়া সংখ্যাগষ্টিতা নিয়ে সরকারি দল তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী বিভিন্ন আইন পাশ ও সংবিধানের সংশোধন করেন। অনেক সময় বিরোধীদল যখন সংসদের যোগ দিয়েছে তখন সংসদ হয়েছে প্রাণবন্ত। কিন্তু আমরা যারা টেলিভিশনে সংসদ অধিবেশন নিয়মিত দেখেছি তাতে লক্ষ্য করেছি, সরকারি দল বিরোধীদলের চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করা ছাড়া বিরোধী দলের উন্থাপিত কোনো সংশোধনি গ্রহণ করেনি। বিরোধীদলের পক্ষ থেকে উন্থাপিত সব সংশোধনী বা সুপারিশ কণ্ঠভোটে বাতিল হয়ে গেছে। যা জাতীয় সংসদ মাননীয় সংসদ সদস্যদের দ্বারা অলংকৃত করেছে ঠিকই কিন্তু সংসদীয় গণতন্ত্রের বিন্দুমাত্র বিকাশ লাভ করেনি। উপরন্ত কোনো কোনো মাননীয় সংসদ যে ভাষায় অপর পক্ষকে আক্রমণ করেছেন তার আভিধানিক অর্থ খুঁজতে হলে জরুরি ভিত্তিতে নতুন করে একটি বাংলা অভিধান রচনা প্রয়োজন। তবুও মহান জাতীয় সংসদের বিরোধীদল হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ছিল যাদের আসন সংখ্যা সামান্য হলেও জনসমর্থন ছিল সরকারি দলের কাছাকাছি পর্যায়ে। সেই হিসেবে নবম জাতীয় সংসদে সামান্য কিছু সংসদীয় গণতন্ত্রের চর্চাও হয়েছিল বলা যায়। কিন্তু দশম জাতীয় সংসদে বিরোধী দল কারা হবেন? মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন, মাননীয় যোগাযোগ মন্ত্রীর আজ ১৪ দলের সভায় দেয়া বক্তব্য এবং আজ জাতীয় পার্টির প্রধান সিনিয়র প্রেসিডিয়াম রওশন এরশাদের বাড়িতে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বুঝা গেল, বিরোধীদল হিসেবে জাতীয় পার্টি দশম জাতীয় সংসদের আসন অলংকৃত করবেন। ১৫৩টি আসনে প্রত্যক্ষ ভোট ছাড়া নির্বাচিত প্রতিনিধি ও ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের বিজয়ী প্রার্থীদের নিয়ে যে সংসদ গঠিত হতে যাচ্ছে সেখানেও বিরোধী দলকে সিলেকশন দেয়া হল! আরো অবাক হবো না যদি দেখি দীর্ঘ ৫ বছর মহাজোটে থাকা জাতীয় পার্টির কিছু প্রার্থীদের মন্ত্রীত্বও দেয়া হয়। সুতরাং জাতীয় পার্টি সরকারেও থাকবে বিরোধী দলেও থাকবে! এদেশে মানুষ আজো জানে না জাতীয় পার্টি সংসদীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে কি না। কারণ পার্টি চেয়ারম্যান বহুবার বলেছেন তার দল ক্ষমতায় আসলে প্রেসিডেন্টসিয়াল পদ্ধতি চালু করবেন। সেই পার্টিকে বিরোধী দলে বসিয়ে সংসদীয় গণতন্ত্র কতদূর ফলপ্রসূ হবে তা আগে থেকেই অনুমান করা গেলেও এখনও বলার সময় আসেনি। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর আজ পর্যন্ত কোনো একটি রাষ্ট্রকে দেখিনি নির্বাচনে জয়ী দলকে তারা অভিনন্দন জানিয়েছেন। এমনকি আমাদের বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্র ভারতও এ নির্বাচনকে অভিনন্দন জানায়নি। তারা বলেছেন, সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার নির্বাচনে বিজয়ী দলের সাথেই ভারত তার দুদেশে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে কাজ চালিয়ে যাবে। বহুকষ্টে অর্জিত সংসদীয় গণতন্ত্রের ভবিষ্যত নিয়ে সাধারণ মানুষ মহা চিন্তিত। কারণ একটি অর্থবহ নির্বাচনে পরাজিত বিরোধী দল তাদের সমস্ত কৌশল, সরকারের সমালোচনা ও সরকারের ভুলগুলো নিয়ে জাতীয় সংসদকে সরব করবে তাদের পূর্ণ শক্তি দিয়ে তবেই সেটা বিরোধী দল। তাদের থাকবে ছায়া মন্ত্রীসভা। এখন দশম জাতীয় সংসদের বিরোধীদলকেও যদি সিলেকশন দেয়া হয় তাহলে তাদের বায়নাও পূরণ করতে হবে। হয়ত ছায়া মন্ত্রীর বদলে কেউ কেউ পূর্ণমন্ত্রীও হয়ে যেতে পারেন। এমনই এক আজব সংসদীয় গণতন্ত্রের দিকে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। তবে কী বলতে পারি বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্রের ভবিষ্যত অন্ধকার। যদি তাই হয় তাহলে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের চেয়ে বেশি খুশি আর কেউ হবে বলে মনে হয় না। কেননা তিনি জানেন ভেল্কির রাজ্যে রাজনীতি অন্ধকারে নাটাই বিদেশে! অতএব উপায় নাই গোলাম হোসেন! তবে আমার ব্যক্তিগত শুধু একটিই কষ্ট তা হলো, যে নেত্রী বাংলার মানুষের জন্য সারা জীবন ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দীর্ঘ সংগ্রাম করে এসেছেন, যিনি জাতির জনকের কন্যা আজ তিনিই প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় আমার মত প্রায় ৫ কোটি মানুষ নিজ নিজ ভোটাধিকার হতে বঞ্চিত হল! ইতিহাসে বিরোধী দলের নির্বাচন বর্জন লেখা থাকবে না, ইতিহাসে লেখা থাকবে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে অনুষ্ঠিত ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অর্ধেকরও বেশি ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি! ১৫৩ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্ডিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। ভালোমন্দ বিচারের ভার নেত্রীর হাতে। আমরা চাই দেশে শাস্তি আসুন, দেশ এগিয়ে যাক সামনের দিকে। সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা ছাড়া একটি দেশকে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌছানো যাবে না। লেখক ও কলামিস্ট
অপরদিকে একচাটিয়া সংখ্যাগষ্টিতা নিয়ে সরকারি দল তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী বিভিন্ন আইন পাশ ও সংবিধানের সংশোধন করেন। অনেক সময় বিরোধীদল যখন সংসদের যোগ দিয়েছে তখন সংসদ হয়েছে প্রাণবন্ত। কিন্তু আমরা যারা টেলিভিশনে সংসদ অধিবেশন নিয়মিত দেখেছি তাতে লক্ষ্য করেছি, সরকারি দল বিরোধীদলের চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করা ছাড়া বিরোধী দলের উন্থাপিত কোনো সংশোধনি গ্রহণ করেনি। বিরোধীদলের পক্ষ থেকে উন্থাপিত সব সংশোধনী বা সুপারিশ কণ্ঠভোটে বাতিল হয়ে গেছে। যা জাতীয় সংসদ মাননীয় সংসদ সদস্যদের দ্বারা অলংকৃত করেছে ঠিকই কিন্তু সংসদীয় গণতন্ত্রের বিন্দুমাত্র বিকাশ লাভ করেনি। উপরন্ত কোনো কোনো মাননীয় সংসদ যে ভাষায় অপর পক্ষকে আক্রমণ করেছেন তার আভিধানিক অর্থ খুঁজতে হলে জরুরি ভিত্তিতে নতুন করে একটি বাংলা অভিধান রচনা প্রয়োজন। তবুও মহান জাতীয় সংসদের বিরোধীদল হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ছিল যাদের আসন সংখ্যা সামান্য হলেও জনসমর্থন ছিল সরকারি দলের কাছাকাছি পর্যায়ে। সেই হিসেবে নবম জাতীয় সংসদে সামান্য কিছু সংসদীয় গণতন্ত্রের চর্চাও হয়েছিল বলা যায়।
কিন্তু দশম জাতীয় সংসদে বিরোধী দল কারা হবেন? মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন, মাননীয় যোগাযোগ মন্ত্রীর আজ ১৪ দলের সভায় দেয়া বক্তব্য এবং আজ জাতীয় পার্টির প্রধান সিনিয়র প্রেসিডিয়াম রওশন এরশাদের বাড়িতে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বুঝা গেল, বিরোধীদল হিসেবে জাতীয় পার্টি দশম জাতীয় সংসদের আসন অলংকৃত করবেন। ১৫৩টি আসনে প্রত্যক্ষ ভোট ছাড়া নির্বাচিত প্রতিনিধি ও ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের বিজয়ী প্রার্থীদের নিয়ে যে সংসদ গঠিত হতে যাচ্ছে সেখানেও বিরোধী দলকে সিলেকশন দেয়া হল! আরো অবাক হবো না যদি দেখি দীর্ঘ ৫ বছর মহাজোটে থাকা জাতীয় পার্টির কিছু প্রার্থীদের মন্ত্রীত্বও দেয়া হয়। সুতরাং জাতীয় পার্টি সরকারেও থাকবে বিরোধী দলেও থাকবে! এদেশে মানুষ আজো জানে না জাতীয় পার্টি সংসদীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে কি না। কারণ পার্টি চেয়ারম্যান বহুবার বলেছেন তার দল ক্ষমতায় আসলে প্রেসিডেন্টসিয়াল পদ্ধতি চালু করবেন। সেই পার্টিকে বিরোধী দলে বসিয়ে সংসদীয় গণতন্ত্র কতদূর ফলপ্রসূ হবে তা আগে থেকেই অনুমান করা গেলেও এখনও বলার সময় আসেনি। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর আজ পর্যন্ত কোনো একটি রাষ্ট্রকে দেখিনি নির্বাচনে জয়ী দলকে তারা অভিনন্দন জানিয়েছেন। এমনকি আমাদের বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্র ভারতও এ নির্বাচনকে অভিনন্দন জানায়নি। তারা বলেছেন, সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার নির্বাচনে বিজয়ী দলের সাথেই ভারত তার দুদেশে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে কাজ চালিয়ে যাবে।
বহুকষ্টে অর্জিত সংসদীয় গণতন্ত্রের ভবিষ্যত নিয়ে সাধারণ মানুষ মহা চিন্তিত। কারণ একটি অর্থবহ নির্বাচনে পরাজিত বিরোধী দল তাদের সমস্ত কৌশল, সরকারের সমালোচনা ও সরকারের ভুলগুলো নিয়ে জাতীয় সংসদকে সরব করবে তাদের পূর্ণ শক্তি দিয়ে তবেই সেটা বিরোধী দল। তাদের থাকবে ছায়া মন্ত্রীসভা। এখন দশম জাতীয় সংসদের বিরোধীদলকেও যদি সিলেকশন দেয়া হয় তাহলে তাদের বায়নাও পূরণ করতে হবে। হয়ত ছায়া মন্ত্রীর বদলে কেউ কেউ পূর্ণমন্ত্রীও হয়ে যেতে পারেন।
এমনই এক আজব সংসদীয় গণতন্ত্রের দিকে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। তবে কী বলতে পারি বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্রের ভবিষ্যত অন্ধকার। যদি তাই হয় তাহলে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের চেয়ে বেশি খুশি আর কেউ হবে বলে মনে হয় না। কেননা তিনি জানেন ভেল্কির রাজ্যে রাজনীতি অন্ধকারে নাটাই বিদেশে! অতএব উপায় নাই গোলাম হোসেন!
তবে আমার ব্যক্তিগত শুধু একটিই কষ্ট তা হলো, যে নেত্রী বাংলার মানুষের জন্য সারা জীবন ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দীর্ঘ সংগ্রাম করে এসেছেন, যিনি জাতির জনকের কন্যা আজ তিনিই প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় আমার মত প্রায় ৫ কোটি মানুষ নিজ নিজ ভোটাধিকার হতে বঞ্চিত হল! ইতিহাসে বিরোধী দলের নির্বাচন বর্জন লেখা থাকবে না, ইতিহাসে লেখা থাকবে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে অনুষ্ঠিত ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অর্ধেকরও বেশি ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি! ১৫৩ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্ডিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। ভালোমন্দ বিচারের ভার নেত্রীর হাতে। আমরা চাই দেশে শাস্তি আসুন, দেশ এগিয়ে যাক সামনের দিকে। সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা ছাড়া একটি দেশকে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌছানো যাবে না।
লেখক ও কলামিস্ট
মন্তব্য করুন
ব্রেকিং নিউজ’র আরো খবর
সংশ্লিষ্ট