আর্কাইভ  শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ● ১৫ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

 width=
 
শিরোনাম: স্বাস্থ্যের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ফজলুল হক কারাগারে       কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা       লালমনিরহাটে পুকুরে জাল ফেলতেই জালে উঠে এলো যুবকের মরদেহ       কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা       রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা      

 width=
 

বিএনপির ব্যর্থতার নেপথ্যে

শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০১৪, সকাল ০৯:৫০

বেগম জিয়া কি গৃহবন্দি? সেই প্রশ্ন তুলেছে বিএনপি। কিন্তু বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশানের বাসভবন থেকে ঢিলছোড়া দূরত্বে শতাধিক কেন্দ্রীয় নেতার বসবাস। বৃহত্তর গুলশানে বসবাস করেন এমন নেতার সংখ্যাই কয়েক হাজার। অথচ এরা কেউ একবারের জন্যও বেগম জিয়াকে একনজর দেখতে যাননি। কারণ না-কি ‘গ্রেপ্তার আতঙ্ক।' শুধুই গ্রেপ্তারের ভয়, না-কি অন্য কোন কারণও রয়েছে। বিএনপির সাংগঠনিক ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধান করেছেন হাবিবুল্লাহ ফাহাদ: বাড্ডার সাবেক কাউন্সিলর এমএ কাইয়ুমের সাংগঠনিক দক্ষতা সম্পর্কে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে খুবই উচ্চ ধারণা দেয়া হয়েছিল। প্রয়াত এলজিআরডি মন্ত্রী আবদুস সালাম তালুকদারের শ্বশুরের করণিক বর্তমানে ‘অতি ধনাঢ্য’ কাইয়ুমকে ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য করা সেই বিবেচনাতেই। সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামে তিনি না-কি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন, সেই বিষয়টিও বিভিন্ন সময় খালেদা জিয়াকে বলেছেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা। বিস্ময়কর হলো, কাইয়ুম গুলশান থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওয়াকিলউদ্দীনের ব্যবসায়িক পার্টনার। ওয়াকিলউদ্দীন গুলশান থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে এবারও চেষ্টা করেছেন। জানা গেছে, ওয়াকিলউদ্দীন স্বদেশ প্রোপার্টিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। আর এমএ কাইয়ুম অন্যতম পরিচালক। গুলশান-২ নম্বরের তাহের টাওয়ারে স্বদেশ প্রোপার্টিজের অফিস। উভয়ে প্রায় নিয়মিত সেখানে বসেন, অফিস করেন। বৃহত্তর গুলশান এলাকার আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের প্রায় সকলেই এ কথা জানেন যে, কোনো কারণে পুলিশ যখন এমএ কাইয়ুমকে খোঁজে তখন তিনি সময় কাটান আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নীতিনির্ধারকের স্নেহধন্য ওয়াকিলউদ্দীনের সঙ্গে। গুলশানে বেগম জিয়ার বাড়ি থেকে হাঁটা দূরত্বে বারিধারায় বিলাস বহুল নিজস্ব বাড়িতে এমএ কাইয়ুম থাকেন। ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসির’ প্রথম দিনে বেগম জিয়া গুলশানের বাড়িতে অবরুদ্ধ হয়ে পড়লে নেতাদের কেউ কেউ আশা করেছিলেন এমএ কাইয়ুম অন্তত দলের চেয়ারপার্সনের খোঁজখবর নেবেন এবং কিছু নেতাকর্মীকেও সঙ্গে রাখবেন। কিন্তু অনুসন্ধানে জানা গেছে, ওই সময় এমএ কাইয়ুম অবস্থান করছিলেন ব্যবসায়িক অংশীদার আওয়ামী লীগ নেতা ওয়াকিল উদ্দীনের সঙ্গে। বিএনপির সর্বশেষ শাসনামলে যে সব নেতা রীতিমতো আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন কাইয়ুম তাদের অন্যতম। গুলশান-বারিধারা-উত্তরায় নামে-বেনামে একাধিক প্লট ও বাড়িই শুধু নয়, অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকও বনেছেন। বিএনপিকে ব্যবহার করে কাঁড়িকাঁড়ি টাকা কামালেও খোদ বিএনপি চেয়ারপার্সনের চরম দুঃসময়ে দেখা মিলছে না কাইয়ুমের মতো অধিকাংশ বিএনপি নেতার। ঢাকাসহ সারাদেশে বিএনপির সাংগঠনিক দুরবস্থার পেছনে দলের রাতারাতি ‘ধনাঢ্য’ নেতৃত্বই দায়ী বলে মনে করেন দলটির মাঠ পর্যায়ের কর্মী-সমর্থকরা। গত এক বছরে বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচির ব্যর্থতার কারণ কি? একাধিকবার ক্ষমতায় থাকা দলটির বড় নেতারা মাঠে নামেন না কেন? স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে যারা সামনের কাতারে ছিলেন তারা এতটা ম্রিয়মাণ কেন? এমনকি ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ওই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের মাঠে সক্রিয় থেকে যেসব বিএনপি নেতা পরবর্তীতে সরকারে ও দলে বড় বড় পদ পেয়েছেন তারাও এভাবে নিজেদের গুটিয়ে রেখেছেন কেন? বিএনপির ভেতরে ও বাইরে প্রতিদিনই এই প্রশ্ন উঠছে। বিএনপির নেতাকর্মী, সমর্থকরা মনে করেন, দলটির সাংগঠনিক বিপর্যয়ের মূল কারণ এক শ্রেণীর নেতাদের অতিমাত্রায় আর্থিভাবে ‘ফুলে ফেঁপে ওঠা’। বিএনপির বিভিন্ন স্তরের কর্মীরা বলাবলি করছেন, এরশাদবিরোধী আন্দোলনে তৎকালীন যুবদলের সভাপতি মির্জা আব্বাস, ডাকসুর ভিপি আমানউল্লাহ আমান সামনের সারিতে ছিলেন। ওই সময় বয়সে তরুণ এই নেতারা আর্থিকভাবে সচ্ছল হলেও বিলাসী জীবন-যাপনে অভ্যস্ত ছিলেন না। জনশ্রুতি আছে, বিএনপি ক্ষমতায় আসার পরে এমপি, মন্ত্রী হওয়ার পর তারা নামে-বেনামে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন এবং অতিমাত্রায় বিলাসী জীবন-যাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এরশাদের সময় গ্রেপ্তার আতঙ্ক না থাকলেও এই নেতারা এখন আর গ্রেপ্তার হতে চান না। কেন? বিএনপি নেতাকর্মীরাই বলছেন, আগে অঢেল সম্পদ না থাকায় তা রক্ষার চিন্তা ছিল না। কিন্তু এখন সম্পদ রক্ষার চিন্তাতেই অধিকাংশ সময় ব্যস্ত থাকেন দলের নীতিনির্ধারক বলে পরিচিত বেশিরভাগ নেতা। সরকারের দু’চারজন নীতিনির্ধারকের সঙ্গেও ভেতরে ভেতরে চমৎকার সম্পর্ক তাদের। যেমন, আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম ও আমানউল্লাহ আমান নির্বাচনী এলাকায় পরস্পর প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও ভেতরে ভেতরে এক ধরনের বোঝাপড়ার সম্পর্ক তাদের আছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে। সাভার ও কেরানীগঞ্জে হওয়া অধিকাংশ রাজনৈতিক মামলায় আমানউল্লাহ আমানের নাম থাকে না। অন্যদিকে ‘খালেদা জিয়ার কামান খ্যাত’ আমানও আর মাঠ গরমে আগের মতো সামনের কাতারে থাকেন না। আওয়ামী লীগ শাসনামলে প্রথম তিন বছর ঢাকার মেয়র কিভাবে থাকলেন সাদেক হোসেন খোকা? এখনও সেই রহস্য খুঁজে ফেরেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। বিএনপি নেতাকর্মীদের একাংশের বদ্ধমূল ধারণা সাদেক হোসেন খোকা আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের সঙ্গে চমৎকার বোঝাপড়া সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে, বিএনপির অনেক নেতা-কর্মী প্রতিদিনই বলাবলি করছেন, ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আন্দোলন আন্দোলন খেলার মাধ্যমে তিনি আসলে সরকারের সাহায্যই করেছেন। এমন প্রচারই এখন বিএনপির বিভিন্ন মহলে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে। যুবদলের সভাপতি হিসেবে ’৯০-এর গণআন্দোলনে মির্জা আব্বাস গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হয়ে উঠেন বিএনপিতে। এরপর তর তর করে মেয়র, মন্ত্রীও হন। কিন্তু আন্দোলন করার শক্তি যে মির্জা আব্বাস এভাবে হারিয়ে ফেলেছেন তা কি আর বিএনপির সর্বোচ্চ নেতৃত্ব জানত? সংশ্লিষ্টরা বলছেন ’৯০-এর আগে কিছু বিষয় সম্পত্তি থাকলেও মেয়র ও মন্ত্রী হিসেবে পরবর্তীতে নামে-বেনামে যে বিপুল সম্পত্তির মালিক তিনি হয়েছেন তা রক্ষার কাজেই মির্জা আব্বাসকে নানাভাবে ব্যস্ত থাকতে হয় ও সরকারের বিভিন্ন চাপ সামলাতে নানা রফা করতেও হয়েছে সময়, সময়ে। বিএনপির মাঠ পর্যায়ের অধিকাংশ নেতা-কর্মীদের বদ্ধমূল বিশ্বাস এই যে, আন্দোলন করে সরকারের পতন ঘটিয়ে তাদের কোনো ব্যক্তিগত অর্জন হবে না। বরং এর ফসল খাবেন দলের তথাকথিত এক শ্রেণীর নেতারা। যারা সরকারবিরোধী আন্দোলনে কোনো ভূমিকা না রেখে দল ক্ষমতায় এলে সরকার ও দলের প্রধান মুখ হয়ে যান। উদাহরণ হিসেবে বিএনপিতে এখন মোসাদ্দেক আলী ফালুর নাম বার বার উচ্চারিত হচ্ছে। বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে তাকে ছায়ার মতো ঘিরে থাকতেন মোসাদ্দেক আলী ফালু। একাধিক শিল্প প্রতিষ্ঠান টিভি চ্যানেলসহ দেশে ও বিদেশে নামে বেনামে অঢেল সম্পদ রয়েছে তার। বিএনপি চেয়ারপার্সনের এই উপদেষ্টা দলের দুঃসময়ে ৫ বছরে উপেক্ষা করছেন বিএনপির সর্বোচ্চ নেতৃত্বকেও। কেন? এই প্রশ্ন বিএনপির সব ধরনের নেতা-কর্মীর মুখে মুখে। উত্তরে তারাই আবার বলছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান রহমানের সঙ্গে যার ব্যবসায়িক অংশীদারিত্ব তিনি কি করে বিএনপির নীতিনির্ধারক হন?

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির জেলা পর্যায়ের এক নেতা বলেন, দলের চেয়ারপার্সন স্থায়ী কমিটিতে এমন নেতাদেরই জায়গা করে দিয়েছেন যারা হয় বয়োবৃদ্ধ, না হয় জনবিচ্ছিন্ন অথবা আর্থিক কেলেঙ্কারিতে বিভিন্ন সময়ে যুক্ত। ওই নেতার মতে, একমাত্র তরিকুল ইসলাম, মঈন খান, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া স্থায়ী কমিটিতে কিছু ভূমিকা রাখার চেষ্টা করেন। ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন নামে বড় নেতা হলেও নানা কারণে দলের চেয়ারপার্সন তার ওপর আস্থা রাখেন না। সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপি জনগণকে কেন সম্পৃক্ত করতে পারল না এই প্রশ্ন যখন বিভিন্ন মহলে বার বার উচ্চারিত হচ্ছে তখন খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে নেতাকর্মীদের কাছে যারা জননেতা হিসেবে খ্যাত তারাই মূলত আন্দোলনে কোনো না কোনোভাবে পিছুটান দিয়েছেন। বিস্ময়কর হলো, বিএনপির রাজনীতিতে যারা টেকনোক্রেট ও আমলা বলে পরিচিত তারাই এখন ফ্রন্ট লাইনে। অতি সম্প্রতি ড. এম ওসমান ফারুক, খন্দকার মাহবুব হোসেন, শমসের মবিন চৌধুরীকে অতি সক্রিয় দেখা যাচ্ছে। তারা দলে মূলত বোদ্ধা হিসেবে পরিচিত। বিএনপির কর্মীদের কাছে নেতা হিসেবে তারা মোটেও ফ্রন্টলাইনার নন। যেখানে নেতা হিসেবে খ্যাতরা সরকারের সঙ্গে বিভিন্নভাবে আপস-রফায় ব্যস্ত কিংবা চাপের মুখে দূরে সরে আছেন অথবা কেউ কেউ অঢেল সম্পদ রক্ষায় চুপসে আছেন সেখানে টেকনোক্রেট নেতারা কিছু করে দেখাতে পারবেন এ ধারণা কখনোই কর্মীদের মনে হয়নি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বিএনপি চেয়ারপার্সনের কাছে মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী, সাবেক সচিব সাবিহউদ্দিন আহমেদ, ব্যারিস্টার হায়দার আলী, সাবেক আইজিপি আব্দুল কাইউম গুরুত্বপূর্ণ হলেও ‘ক্রাউড পুলার’ হিসেবে কেউ খ্যাত নন। তারা অন্যভাবে বেগম জিয়াকে সাহায্য করতে পারলেও আন্দোলনে জনসম্পৃক্ততায় ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন বলেই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা। বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতাদের কেউ কেউ মনে করেন, গ্রেপ্তারের ভয়ে এত ভীত হলে সরকার তার সুযোগ নেবে এটাই স্বাভাবিক। বিএনপির নেতৃত্বের ওপরের দিকে যাদের বসানো হয়েছে তাদের বড় অংশই আন্দোলনের মাঠে নেতৃত্ব দেয়ার উপযুক্ত কি-না এই প্রশ্ন জোরেশোরে উঠেছে। দলের ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য, যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক, সম্পাদকম-লীর সদস্য ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সব মিলিয়ে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির কলেবর দুই শতাধিকের ওপরে। এই নেতাদের মধ্যে পরস্পর আস্থাহীনতা, একে অপরকে সন্দেহ করার প্রবণতা যেমন রয়েছে তেমনি উড়ে এসে জুড়ে বসার মতো পদধারীও বিএনপিতে কম নয়। ফলে তাদের মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। পাশাপাশি বিএনপির অঙ্গ সংগঠনগুলোতেও ‘মন পছন্দ’ নেতাদের বসাতে গিয়ে এমন অযোগ্য নেতৃত্বকে বেছে নেয়া হয়েছে যারা কার্যত কমিটি বানিয়ে টাকা খাওয়ার তালে ব্যস্ত থেকেছেন অধিকাংশ সময়। যেমন সাইফুল আলম নীরবকে যুবদলের সাধারণ সম্পাদক বানানো হয়েছিল এই বিবেচনায় যে, জ্বালাও পোড়াওয়ের রাজনীতিতে তার জুড়ি মেলা ভার। কিন্তু গত পাঁচ বছর গ্রেপ্তার আতঙ্ক তাকে এতটাই পেয়ে বসেছিল যে, তিনি প্রকাশ্যের চেয়ে অপ্রকাশ্যেই ছিলেন বেশি।

যুবদলের প্রচার সম্পাদক এসএম জাহাঙ্গীর রাজধানীর উত্তরায় না-কি এমপি প্রার্থী হতে চান। কিন্তু জাতীয় পার্টির নেত্রী শাশুড়ির কল্যাণে পুরো পাঁচ বছরই বেশ আরাম-আয়েশে কাটিয়েছেন। আর আন্দোলন আন্দোলন খেলায় সময় পার করে দিয়েছেন। ছাত্রদলের বর্তমান কমিটি বেছে নেয়া হয়েছিল এই বিবেচনায় যে তারাও ভাঙচুরের রাজনীতিতে সিদ্ধহস্ত। কিন্তু তারা সমান ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন বলে ছাত্রদলের সাবেক নেতারাই দলের বিভিন্ন পর্যায়ে বলে বেড়ান। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, বিএনপির সাংগঠনিক বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ হলো দলের মধ্যে চলতে থাকা দ্বৈতশাসন। বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের অনেকেই এখনও দলীয় কর্মকান্ডে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না বলে জানা গেছে। কারণ দলে অপেক্ষাকৃত তরুণ বলে পরিচিত যে নেতারা তারেক রহমানকে ঘিরে ছিলেন তাদের অধিকাংশেরই প্রাধান্য এখনও স্পষ্ট। বিএনপির জ্যেষ্ঠ এক নেতা আলাপকালে বলেন, সর্বশেষ তারেক রহমান ও শমসের মবিন চৌধুরীর যে ফোনালাপ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে সেই আলাপচারিতায় এটি স্পষ্ট যে, দল পরিচালনায় আসল ভূমিকা কার। ওই নেতা বলেন, বিএনপিতে আন্দোলন-সংগ্রামে শুধু ভূমিকা রাখলেই হবে না, তারেক রহমানের আনুকূল্য পাওয়াটাও গুরুত্বপূর্ণ। তাই তার আস্থায় যারা নেই তারা আন্দোলনের ঝুঁকিতে যেতে চাননি। কারণ, এর ফসল কে খাবে তা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের যথেষ্ট দ্বিধা ছিল এবং এখনও আছে। আন্দোলন-সংগ্রামে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে ঢাকা মহানগর কমিটি। কিন্তু বিএনপির ঢাকা মহানগর কমিটি বিভিন্ন থানা কমিটিতে এমন সব নেতৃত্ব বেছে নিয়েছেন যাদের সঙ্গে মাঠ পর্যায়ের নেতাদের সম্পর্ক নামকাওয়াস্তে। টাকার বিনিময়ে থানা কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদ দেয়া হয়েছে এমন অভিযোগ রয়েছে। সবমিলে সরকারবিরোধী আন্দোলন করতে গেলে দলকে যতটা সংগঠিত করতে হয় বিএনপিতে এর বিপরীত অবস্থা বিরাজ করছে। দলকে ঢেলে সাজাতে না পারলে স্বচ্ছ, দক্ষ, জনপ্রিয় নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা না গেলে বর্তমান নেতৃত্ব বিএনপিকে খাদের কিনারায় নিয়ে যাবে কি-না এ প্রশ্নই বড় করে দেখা দিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. এমাজউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিএনপির নিরুত্তাপ আন্দোলনের পেছনে সাংগঠনিক দুর্বলতাকে অনুভব করি। অতীতে দলের প্রথমসারির নেতাদের আন্দোলনের মাঠে দেখা গেলেও এখন তারা আড়ালে থাকছেন। হতে পারে রাষ্ট্রশক্তির বিরুদ্ধে বিএনপি নেতারা ভয় পাচ্ছেন। গ্রেপ্তারের হয়রানি এড়াতে মাঠে নামছেন না। শোনা যাচ্ছে, আন্দোলনের চেয়ে অনেকে হয়ত ব্যবসা-বাণিজ্য টিকিয়ে রাখার চেষ্টা বেশি করছেন। ছাত্রদল-যুবদলে তরুণ নেতৃত্বও বাড়ছে না। এসব কারণে আন্দোলনে পিছিয়ে পড়েছে বিএনপি। ঢাকাটাইমস

মন্তব্য করুন


 

Link copied