আর্কাইভ  শুক্রবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ● ৬ বৈশাখ ১৪৩১
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: পলাশবাড়ীতে আসামির ছুরিকাঘাতে বাদীর মৃত্যু, গ্রেফতার ১       মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের সন্তান-স্বজনের ভোটে না দাঁড়ানোর নির্দেশ       ভোজ্যতেলের দাম বাড়ল, খোলা তেলে সুখবর       বিএনপি নেতা সোহেলের নিঃশর্ত মুক্তি দাবিতে রংপুরে  মানববন্ধন ও সমাবেশ        খরার ঝুঁকিতে রংপুর অঞ্চল      

 width=
 

এবার পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবে বাংলাদেশ

রবিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০১৪, সকাল ০৯:২৬

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে চিহ্নিত পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাদের বিচার শুরু করবে বাংলাদেশ। এ জন্য তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিমের সঙ্গে তদন্ত সংস্থার কয়েক দফা আলোচনাও হয়েছে। ১৯৭৪ সালে ত্রিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় যে ১৯৫ জন তালিকাভুক্ত যুদ্ধবন্দি পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাকে ফেরত পাঠানো হয়েছিল তাঁদেরকেই বিচারের মুখোমুখি করা হবে। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান ত্রিপক্ষীয় চুক্তি অনুসারে অভিযুক্ত ১৯৫ জন যুদ্ধবন্দি সেনাকে পাকিস্তানের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল শর্ত সাপেক্ষে। পাকিস্তান তখন অঙ্গীকার করেছিল, দেশে নিয়ে ওই যুদ্ধবন্দিদের তারা নিজেরাই বিচার করবে। কিন্তু সে অঙ্গীকার রক্ষা করেনি দেশটি। তাই ১৯৫ জন অপরাধীর বিচারপ্রক্রিয়া শুরুর জন্য তদন্তকাজ করবে তদন্ত সংস্থা। এরই মধ্যে বেশ কিছু তথ্য-উপাত্ত তারা হাতে পেয়েছে। তদন্ত সম্পন্ন করতে বেশ কিছু সময় লাগবে। ওই ১৯৫ জনের ব্যাপারে সব তথ্য-উপাত্ত পাওয়ার জন্য পাকিস্তানে বাংলাদেশের হাইকমিশন এবং বাংলাদেশে পাকিস্তান হাইকমিশনে চিঠি পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি। জানা যায়, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর অভিযুক্ত পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের একটি তালিকা প্রস্তুত করে সরকার। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে এম কামরুজ্জামান ১৯৭১ সালের ২৪ ডিসেম্বর ঘোষণা করেন, বাংলাদেশ ৩০ জন শীর্ষস্থানীয় পাকিস্তানি সরকারি কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে এবং গণহত্যায় সহযোগিতার জন্য অচিরেই তাঁদের বিচার হবে। ১৯৭২ সালের ২৯ মার্চ লে. জে. এ এ কে নিয়াজি ও মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীসহ ১১০০ পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীর বিচারের সরকারি পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশ সরকার দুই স্তরবিশিষ্ট একটি বিচার পরিকল্পনা পেশ করেছিল। তবে আন্তর্জাতিক মহলের চাপে পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা যায়নি। সে সময় ভারত শুধু সে সব পাকিস্তানি সৈন্যকে হস্তান্তর করতে রাজি হয়, যাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকার প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত অভিযোগ হাজির করতে সক্ষম। এরপর বাংলাদেশ সরকারের সংগৃহীত প্রমাণের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭২ সালের ১৪ জুন ভারত সরকার প্রাথমিকভাবে নিয়াজিসহ ১৫০ জন যুদ্ধবন্দিকে বিচারের জন্য বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তরে সম্মত হয়। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের লক্ষ্যে ১৯৭৩ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংসদে পাস করে। তবে ১৫০ জন যুদ্ধবন্দিকে বিচারের জন্য বাংলাদেশে দিতে রাজি হয়নি ভারত। ওই সময় পাকিস্তানে আটকে পড়া কয়েক হাজার ভারতীয় সেনা সদস্য, সরকারি কর্মকর্তা ও বেসামরিক কয়েক লাখ মানুষকে মিথ্যা বিচারের মুখোমুখি করার ঘোষণা দেয় পাকিস্তান। এ পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক চাপে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সই করে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে ১৯৭৪ সালের ৯ এপ্রিল। চুক্তিতে বাংলাদেশের পক্ষে স্বাক্ষর করেন তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন। এত দিন কেউ কেউ বলে আসছিলেন, ত্রিপক্ষীয় চুক্তি মতে ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীকে পাকিস্তানে ফেরত পাঠানোর পর বাংলাদেশ আর ওই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে পারবে না। অথচ আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের আদালতে ওই সব অপরাধীর বিচার করার ক্ষেত্রে কোনো আইনি জটিলতা নেই। আইন বিশেষজ্ঞরা আরো বলছেন, যেহেতু ত্রি-দেশীয় চুক্তিটি বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে পাস হয়নি- সে কারণে এ চুক্তির আইনগত ভিত্তি নেই। শুক্রবার সংবিধান প্রণেতা ও আইন বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম বলেন, ‘পাকিস্তানে ফিরে যাওয়া ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীর বিচারের জন্য আমাদের দেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনই যথেষ্ট। যে চুক্তির মাধ্যমে ওই যুদ্ধাপরাধীরা পাকিস্তানে ফিরে গেছে ওই চুক্তি কার্যকর নয়।’ প্রবীণ আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা যে উদ্যোগ নিয়েছে তা প্রশংসাযোগ্য। ব্রাসেলস ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিষয়ের শিক্ষক এবং বাংলাদেশ জেনোসাইড স্টাডিজের প্রধান আহমেদ জিয়াউদ্দিন কয়েক বছর আগে এমন ২০০ অভিযুক্ত পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীর তালিকা প্রকাশ করেন যারা একাত্তরে গণহত্যার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত ছিল। এদের মধ্যে ১৯৪ জন সেনাবাহিনীর এবং অন্যরা বিমান ও নৌবাহিনীর কর্মকর্তা। আজাদুর রহমান চন্দনের ‘একাত্তরের ঘাতক ও দালালরা’ গ্রন্থ সূত্রে জানা যায়, তালিকাভুক্ত পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তার মধ্যে একজন ছিলেন লে. জেনারেল। এ ছাড়া পাঁচজন মেজর জেনারেল, ২০ জন ব্রিগেডিয়ার, চারজন কর্নেল, ৪০ জন লে. কর্নেল, ৮১ জন মেজর, ৪১ জন ক্যাপ্টেন ও দুজন লেফটেন্যান্ট ছিলেন। অন্যরা বিমান ও নৌবাহিনীর কর্মকর্তা। ওই গ্রন্থ সূত্রে আরো জানা যায়, অভিযুক্ত পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের মধ্যে শীর্ষস্থানে আছেন লে. জেনারেল আমির আব্দুলাহ খান নিয়াজী, মেজর জেনারেল নজর হুসেইন শাহ, মেজর জেনারেল মোহাম্মদ হুসেইন আনসারী, মেজর জেনারেল মোহাম্মদ জামশেদ, মেজর জেনারেল কাজী আব্দুল মজিদ খান ও মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী। সূত্র: কালের কণ্ঠ

মন্তব্য করুন


 

Link copied