স্ত্রী যৌনাঙ্গের শিথিলতা নির্ণয়ের এই পরীক্ষাটি কতটুকু কার্যকর তা কি কেউ ভেবে দেখেন না? এখন মেডিক্যাল সায়েন্স মিনিটে মিনিটে এতো উন্নত হয়েছে যে শুধুমাত্র জেনিটিক্যাল কিছু পরীক্ষানিরীক্ষার মাধ্যমেই জানা সম্ভব যে মহিলাটি তার ধর্ষণের জন্য যাকে দায়ী করছেন তা যৌক্তিক কিনা। ধর্ষণের পর আরও একবার মানসিক ধর্ষণের শিকার হন এই নারীরা। প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা কতটুকু সচেতন এ ব্যাপারে???
এরপরও আমাদের দেশে একজন ধর্ষিত নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন কিনা তা যাচাই করার জন্য এখনও আদালতে ‘Two-finger Test’ করানো হয়। এই টেস্ট করানোর জন্য কি দেশে নারী চিকিৎসক নেই, তাদের দ্বারা কি এই টেস্ট করানো যায়না?
কেন পুরুষ চিকিৎসকদের সামনেই একজন নারীকে নগ্ন করতে হবে? এই পদ্ধতিটা কতোটা কার্যকর বা যুক্তিযুক্ত? ধর্ষণের ফলে ধর্ষিত নারী কুমারীত্ব বা সতীত্ব হারিয়েছেন কিনা তা যাচাই করা হয় এই টেস্টের মাধ্যমে।
কুমারীত্ব বা সতীত্ব শব্দগুলো পুরুষতান্ত্রিক সমাজের সৃষ্টি করা। একজন নারী অনেক ভাবেই কুমারীত্ব হারাতে পারেন, ধর্ষণ ছাড়াও। যেমন- কোনো দুর্ঘটনায় তা হয়ে থাকতে পারে। হতে পারে পূর্বে তিনি ধর্ষিত হয়েছিলেন কিংবা স্বেচ্ছায় কারো সাথে মিলিত হয়েছিল বা তিনি বিবাহিতা। তাহলে একবার ভাবুন তো, এই ‘Two-finger Test’ দ্বারা কি সুবিচার নিশ্চিত করা সম্ভব? এসব ক্ষেত্রে ফলাফল আসবে যে তার কুমারীত্ব আগেই নষ্ট হয়েছে এবং প্রতিপক্ষের আইনজীবিরা ধর্ষককে নির্দোষ প্রমাণ করে ফেলবেন সহজেই। আর তাই এ ব্যাপারে পুরুষ জাতি নয় বরং গোটা বিশ্বকে জানাতে হবে, জাগাতে হবে।
সম্প্রতি উচ্চ আদালতে ধর্ষণ পরীক্ষার আপত্তিকর, ত্রুটিপূর্ণ, নারীর প্রতি অবমাননাকর এই মেডিক্যাল টেস্ট বাতিলের লক্ষ্যে নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশ জারি করা হয়েছে। উচ্চ-আদালতের এই মানবিকতামূলক আইন প্রণয়নকে আমরা মনে-প্রাণে স্বাগত জানাই। আসুন, ভার্জিনিটি টেস্ট”কে বলি “না”।
নারী হোক অথবা পুরুষ, সকলের মানুষ হিসেবে প্রাপ্য সম্মান ও সুবিচার নিশ্চিত করা প্রত্যেকের মানবিক দায়িত্ব। আসুন নিজেদের মনকে সুন্দর করি, আজ এখন থেকে নারীদের প্রতি সহিংসতা বন্ধ করে এই পঙক্তিটি সফল করি। “সকলে আমরা সকলের তরে, প্রত্যেকে আমরা পরের তরে”। -Tasmia