আর্কাইভ  বৃহস্পতিবার ● ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ● ৫ বৈশাখ ১৪৩১
আর্কাইভ   বৃহস্পতিবার ● ১৮ এপ্রিল ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: খরার ঝুঁকিতে রংপুর অঞ্চল       সার্ভার ডাউন: রসিকে জন্ম নিবন্ধন নিয়ে ভোগান্তি চরমে       রংপুরে ফটোসাংবাদিক ফিরোজ চৌধুরীর একক আলোকচিত্র প্রদর্শনী       ডোমার ও ডিমলা উপজেলা নির্বাচনে ৩৫ জনের প্রার্থীতা বৈধ ॥ চেয়ারম্যান পদে ১২ জনের মধ্যে আওয়ামীলীগের ৭ জন প্রার্থী       নীলফামারীতে ঐতিহাসিক মুজিব নগর দিবস পালন      

 width=
 

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আমাদের দায়িত্ব

মঙ্গলবার, ৮ এপ্রিল ২০১৪, রাত ১১:৪১

প্রফেসর এবিএম রমাজান আলী

যে স্বপ্ন আকাঙ্খা সামনে রেখে মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল সেই স্বপ্ন নানা কারণেই গত ৪৩ বছরেও সাফল্যের লক্ষ্যমাত্রা স্পর্শ করতে পারেনি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর থেকে বাংলাদেশে পাকিস্তানি কায়দায় বাঙালি সংস্কৃতি ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংসের তৎপরতা অব্যাহত থাকে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও তথ্য বিকৃতির প্রচেষ্টাও চালানো হয় সমানতালে। স্বাধীনতার পর বার বার সামরিক অভ্যুত্থান, হত্যা রক্তপাতের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দখল, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী দেশী ও বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীদের তৎপরতা, অর্থনৈতিক বৈষম্য, যুব সমাজের মধ্যে সৃষ্ট হতাশা, বেকারত্ব, জনস্ফীতি, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি, ঘুষ, দুর্নীতি ইত্যাদি অবক্ষয় স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিপন্ন করে চলেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী কার্যকলাপ বারবার সংঘটিত হচ্ছে প্রশাসনের ভেতর এবং বাইরে। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা আজো তাদের প্রাপ্য সম্মান এবং অধিকার থেকে বঞ্চিত রয়েছেন।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে ভোট দিয়ে দেশের জনগণ মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছে। বর্তমান সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করেছে। চলতি বছরের মধ্যে মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের বিচার কাজ সম্পন্ন হবে বলে দেশের মানুষ আশা করে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করে তোলা ও তাদের চিন্তা-চেতনায় দেশাত্ববোধ, জাতীয়তাবোধ এবং তাদের চরিত্রে সুনাগরিকের গুণাবলী যথা, ন্যায়বোধ, অসামপ্রদায়িক-চেতনাবোধ, কর্তব্যবোধ, মানবাধিকার সচেতনতা, মুক্তবুদ্ধির চর্চা, শৃংখলা, সৎ জীবন -যাপনের মানসিকতা, সৌহার্দ্যতা, অধ্যবসায় ইত্যাদির বিকাশ ঘটানোর লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে জ্ঞান ও প্রযুক্তিতে দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলার জন্যে বর্তমান সরকার একটি যুযোপযোগী শিক্ষানীতি প্রণয়ণ করেছে। কিন্তু দীর্ঘদিন শিক্ষাক্রমে মুক্তিযুদ্ধ ও এর নেতৃত্ব ছিল প্রায় অনুপস্থিত। অনেক ক্ষেত্রে যাও যৎসামান্য তথ্য পরিবেশিত হয়েছিল তাতে তথ্য বিকৃতি প্রচুর।

৭৫ পরবর্তীকালে গণমাধ্যম ও সরকারি পর্যায়ে অপপ্রচারের ফলে জনমনে ও নতুন প্রজন্মের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ এবং এর প্রধান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সম্পর্কে অনেক সময় দ্বিধা -দ্বন্ধ কাজ করেছে। “মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিকাশ ও বঙ্গবন্ধু চর্চা”র লক্ষ্যে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ চর্চা কেন্দ্র বা গবেষণা কেন্দ্র গড়ে তোলা প্রয়োজন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সত্যিকার অর্থে প্রতিষ্ঠা করতে এবং স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আমাদেরকে বিভিন্ন বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে: * জাতীয় ঐক্য নিশ্চিত করে তার মাধ্যমে অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক স্বনিভর্রতা অর্জন করতে হবে। * দেশ প্রেমিক গণতান্ত্রিক শক্তির সংঘবদ্ধ প্রয়াস ও রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে আন্তরিক পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। * দুর্নীতিমুক্ত কল্যাণমূলক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। * মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত গৌরবগাঁথা আর আত্মত্যাগের ইতিহাস ভবিষ্যৎ বংশধরদের কাছে তুলে ধরতে হবে। * মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ, লক্ষ্য চেতনা সমাজ ও জাতীয় জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে হবে। * রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। * মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সম্পন্ন অসামপ্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। * সকল ক্ষেত্রে কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। * সামাজিকভাবে স্বাধীনতাবিরোধী, খুনী ও যুদ্ধাপরাধীদের বয়কট করতে হবে। * স্বাধীনতাবিরোধী, খুনী ও যুদ্ধাপরাধীদের আইনের আওতায় এনে অবিলম্বে বিচার নিশ্চিত করতে হবে। * সকলকে দেশপ্রেম, সততা ও নিষ্ঠার সাথে স্বীয় দায়িত্ব পালন করতে হবে। * মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসমৃদ্ধ শিক্ষা সকলের জন্যে নিশ্চিত করতে হবে। * দেশের প্রতিটি মানুষের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের মহৎ লক্ষ্যসমূহ জাগ্রত করতে হবে। * সমাজের সবস্তরে মুক্তিযুদ্ধের মহান চেতনাকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। * গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক বিধিব্যবস্থা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে সকলকে সক্রিয়ভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। * জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদেরকে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে যথাযথ মর্যাদা দিতে হবে। * নারীর অগ্রগতি নিশ্চিত করে, নারী ও পুরুষের সামাজিক বৈষম্য দূর করতে হবে। * অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, কর্মসংস্থান ইত্যাদি সম্পর্কিত যাবতীয় ব্যবস্থা ও সুযোগকে দরিদ্র জনগোষ্ঠীসহ সকলের কাছে সহজ লভ্য করতে হবে। * ব্যক্তি স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতাসহ মানবাধিকার সমূহ নিশ্চিত করতে হবে। * বাঙালির নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতির আলোকে বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। * সবস্তরে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও সমৃদ্ধশালী অর্থনীতি গড়ে তুলতে হবে। * প্রত্যেক নাগরিককে রাষ্ট্রের দেওয়া অধিকার ভোগ করার পাশাপাশি নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করতে হবে। * সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে সততার সাথে সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিকে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করতে হবে। * প্রত্যেককে রাষ্ট্রের প্রতি অনুগত থেকে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে হবে। * দেশ ও জাতির কল্যাণে সকলকে সর্বদা দলমতের উধর্্েব থাকতে হবে। * দেশের ও জনগণের চাহিদা মোতাবেক সর্বদা গণমুখী ভূমিকা পালন করতে হবে। * সশস্ত্র বাহিনী সদস্য, পুলিশ ও গণমাধ্যম কর্মীদের দক্ষ, কর্মনিষ্ঠ ও আধুনিক করে তোলার জন্যে যুগোপযোগী ও বিজ্ঞান সম্মত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। * সশস্ত্র বাহিনী, আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিত বাহিনী ও মিডিয়াকর্মীদেরকে বিজ্ঞান ভিত্তিক আধুনিক অনুসন্ধান কিংবা তথ্য সংগ্রহ পদ্ধতির ব্যবহার করতে হবে। * রাষ্ট্র, সরকার ও জনগণের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। * দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সুদৃঢ় করতে এবং সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। * সফল কূটনীতির মাধ্যমে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বাড়াতে হবে। * দেশের অভ্যন্তরীন শান্তি প্রতিষ্ঠাসহ বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে।

দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এবং সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ে তুলতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সকলকে সততা ও দেশপ্রেমের সাথে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। প্রত্যেকটি মানুষের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্যসমূহ জাগ্রত করতে হবে। তাহলেই আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্নের স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারব। এই বিষয়ে সবাইকে সর্বদা সচেষ্ট থাকতে হবে।

লেখক: ব্যবস্থাপনা বিভাগীয় প্রধান, কারমাইকেল কলেজ, রংপুর।

মন্তব্য করুন


 

Link copied