আর্কাইভ  শুক্রবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ● ৬ বৈশাখ ১৪৩১
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: পলাশবাড়ীতে আসামির ছুরিকাঘাতে বাদীর মৃত্যু, গ্রেফতার ১       মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের সন্তান-স্বজনের ভোটে না দাঁড়ানোর নির্দেশ       ভোজ্যতেলের দাম বাড়ল, খোলা তেলে সুখবর       বিএনপি নেতা সোহেলের নিঃশর্ত মুক্তি দাবিতে রংপুরে  মানববন্ধন ও সমাবেশ        খরার ঝুঁকিতে রংপুর অঞ্চল      

 width=
 

রক্ষকই এখন ভক্ষক: বিআরডিবি পরিচালিত কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতি এখন দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য

মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০১৪, দুপুর ০২:৪৭

অভিযোগ উঠেছে, ঐ সিন্ডেকেটটি তাদের পছন্দের ব্যক্তিকে মাষ্টার রোলে চাকুরী দেয়ার কথা বলে ইতোমধ্যে ৫/৬ জনের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ পকেটস্থ করেছে। আর্থিক অডিট না করে এসব দুর্নীতির সাথে সরাসরি বিআরডিবির কর্মকর্তা জড়িয়ে পড়ায় ইউসিসির কার্যক্রম কার্যতঃ লাটে ওঠার উপক্রম হয়েছে। এসব দুর্নীতির প্রতিকার চেয়ে সদস্যরা উর্দ্ধত্বন কর্তৃপক্ষ বরাবর অভিয়োগ করলেও কোন প্রতিকার পায়নি তারা। এ পরিস্থিতিতে ইউসিসি’র আওতাধীন সমিতিগুলোর সদস্যদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।

জানা গেছে, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে গ্রামীণ কৃষি অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে সরকার সমবায় সমিতির কার্যক্রম হাতে নেয়। সারাদেশের মতো গঠন করা হয় উলিপুর কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতি লিঃ (ইউসিসি) । স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয় সমিতির কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ রুর‌্যাল ডেভেলপমেন্ট বোর্ডকে (বিআরডিবি) দায়িত্ব দেয়। তখন থেকে পর্যায়ক্রমে ২’শ ৮৬ টি সমবায় সমিতির প্রায় ১৩ হাজার সদস্যের কাছ থেকে শেয়ার ও সঞ্চয় হিসেবে ৩৭ লাখ ৪৯ হাজার টাকা সোনালী ব্যাংক লিঃ উলিপুর শাখায় এফডিআর করে রাখা হয়। যা বর্তমানে লভ্যাংশসহ প্রায় ৮০ লাখ টাকায় দাড়িয়েছে। এরপরেও সমবায় সমিতির কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। অভিযোগ রয়েছে, গত ২/৩ বছর থেকে ইউসিসির বার্ষিক সাধারণ সভা না করেই গোপনে নির্বাচিত হয়ে আসা চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন মুকুটের নেতৃত্ত্বাধীন কমিটি লাগামহীন দূর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে। ২০১৩ সালের ৬ অক্টোবর ইউসিসি’র মেয়াদ শেষ হবার ৪ দিনের মাথায় যেন আবারও অলৌকিকভাবে পূণরায় নির্বাচিত হন তিনি। নির্বাহী কমিটিতে ১২ জন নির্বাচিত প্রতিনিধি থাকার বিধান থাকলেও মাত্র ৬ জনকে নিয়েই একটি দুর্নীতির সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন তিনি। পরে অবশ্য ২ জন মহিলা সদস্যকে নির্বাহী কমিটিতে কো-অপ্ট করা হলেও তাদেরকে কিছুই জানানো হয় না। শুধু কাগজে সই দেয়াই তাদের কাজ। উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা মোক্তাসীন আলী অবশ্য দাবি করেন, অধিকাংশ সমিতি ঋণ খেলাপি হওয়ায় এখানে ৬ জনের বাইরে কমিটিতে অন্তরভুক্তির কোন সদস্য পাওয়া যায়নি। ঐ কর্মকর্তা এক বছর আগে দুর্নীতির দায়ে অন্য কর্মস্থল থেকে শাস্তিমূলক বদলী নিয়ে উলিপুরে যোগদান করার পর থেকে ইউসিসিতে দুর্নীতির মাত্রা আরও বৃদ্ধি পায়। কার্যত রক্ষকই এখন ভক্ষক।

এদিকে, গত ’৯১ সালে সরকার ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত কৃষিঋণ মওকুফ করায় সমবায় সমিতির মাধ্যমে ঋণ গ্রহিতারা এ সুযোগের বাইরে থেকে যায়। ফলে এসব সমিতির সদস্যরা ঋণখেলাপি হয়ে পড়ে। পরবর্তিতে সরকার এসব সমবায় সমিতিকে সচল করতে দু’দফায় ৬৬ লাখ ৬৪ হাজার টাকা ভর্তুকি প্রদান করেন। এ টাকার সাড়ে ৮ শতাংশ খরচের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকলেও তা যথাযথ ভাবে পালন না করে কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন অজুহাতে সিংহভাগ টাকাই খরচ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অন্যদিকে ইউসিসি কর্তৃপক্ষ শুরু থেকে এ পর্যন্ত কত টাকা ঋণ বিতরণ করেছেন এবং কত টাকা আদায় করেছেন তার হিসেব দিতে পারেনি। দীর্ঘদিন ধরে সমিতির ঋণ কার্যক্রম স্থবির হয়ে আছে। কর্মকর্তারা কতিপয় ব্যক্তিকে চাকুরি দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ঘুষ বানিজ্যের উদ্দেশে জনবল নিয়োগের অনুমতি চান। কিন্তু উর্দ্ধত্বন কর্তৃপক্ষ ইউসিসির এ নাজুক পরিস্থিতিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ রাখার কথা বললেও সিন্ডিকেটটি অর্থ হাতিয়ে নেয়ার কারনেই গোপনে সাইফুল ইসলাম নামের একজনকে নিয়োগ দেয়।

অন্যদিকে, ‘টুপামারী কৃষি কমপ্লেক্স’এ সম্প্রতি মাছের খাদ্য সংগ্রহসহ বিভিন্ন ভূয়া ভাউচার দেখিয়ে ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা খরচ দেখানো হলেও বাস্তবে বিআরডিবি কর্মকর্তাসহ ইউসিসির ঐ সিন্ডিকেটটি তা পকেটস্থ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সিন্ডিকেটটি ইচ্ছেমাফিক ঐ কমপ্লেক্সের মূল্যবান গাছ কেটে বিক্রি করে টাকা জমা না করে ভাগ বাটোয়ারা করে নেন। অভিযোগ রয়েছে, টেন্ডারের মাধ্যমে মাছ ধরার কথা থাকলেও ঐ সিন্ডিকেট কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে মাছ বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা লুটে নিচ্ছেন। গত ২১ এপ্রিল দিনের বেলা টেন্ডারের মাধ্যমে সিলভার কাপ মাছ বিক্রির সিদ্ধান্ত থাকলেও ঐদিন ‘টুপামারী কৃষি কমপ্লেক্স’এর একাউন্ট অ্যাসিস্ট্যন্ট-কাম তত্বাবধায়ক( মাষ্টাররোলে নিয়োগকৃত) মোহাব্বত আলী তড়িঘড়ি করে ভোরবেলা বিপুল পরিমান রুই,কাতলা ও মৃগেল মাছ ধরে বিক্রির সময় সদস্যদের তোপের মুখে পড়েন। বিআরডিবির হিসাবরক্ষক থাকলেও ‘টুপামারী কৃষি কমপ্লেক্স’এর কোন হিসাব তাকে দেয়া হয়না। রহস্যজনক কারনে এ হিসাব অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া ওই তত্বাবধায়কই সংরক্ষন করেন। তিনি অস্থায়ীভাবে দীর্ঘদিন ধরে ইউসিসি’তে কর্মরত থেকে চেয়ারম্যান ও পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তাকে ম্যানেজে রেখে ইউসিসিকে দূর্নীতির স্বর্গরাজ্য বানিয়েছে। ইউসিসির চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন মুকুট কর্মচারি নিয়োগ ও দুর্নীতির কথা অস্বীকার করে জানান, অডিট সম্পন্ন না হওয়ায় এজিএম করা সম্ভব হয়নি। এ ব্যাপারে উপ-পরিচালক পল্লী উন্নয়ন বোর্ড বকুল চন্দ্র রায় অভিযোগ প্রাপ্তির কথা স্বীকার করে বলেন, আমি বেশ কিছুদিন কুড়িগ্রামের বাইরে থাকায় কোন পদক্ষেপ গ্রহন করতে পারিনি।

মন্তব্য করুন


 

Link copied